ক্যাম্পাসে ফিরলেন জাফর ইকবাল: ওদের ওপর রাগ নেই by ওয়েছ খছরু ও আরাফ আহমদ
এগার
দিন পর প্রিয় ক্যাম্পাসে ফিরলেন প্রফেসর ড. জাফর ইকবাল। হাসিমাখা মুখে
ক্যাম্পাসে পা রেখেই জড়িয়ে ধরলেন প্রিয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। জাফর ইকবালের
ফিরে আসায় উচ্ছ্বসিত ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। যে মুক্তমঞ্চে
আহত হয়েছিলেন প্রফেসর জাফর, সেই মুক্তমঞ্চেই গতকাল বিকালে দাঁড়িয়ে
বক্তব্য দেন তিনি। প্রিয় ক্যাম্পাস, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী এবং দেশের মানুষের
কাছে জানালেন নিজের কৃতজ্ঞতা। বললেন, ফয়জুরের প্রতি কোনো রাগ নেই। তার
পেছনে কারা তাদের খুঁজে বের করার দাবি জানান তিনি। গত ৩রা মার্চ শাহজালাল
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে গুরুতর আহত হয়েছিলেন
প্রফেসর জাফর ইকবাল। ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী শেখপাড়া গ্রামের বাসিন্দা
ফয়জুর রহমান মুক্তমঞ্চে বসা অবস্থায় প্রফেসর জাফরের ওপর হামলা চালিয়েছিল।
ফয়জুর একটি ছুরি দিয়ে প্রফেসর জাফরের মাথা, পিঠ ও হাতে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত
করে। এতে গুরুতর আহত হন প্রফেসর জাফর। ওই দিন সন্ধ্যায় প্রফেসর জাফরকে
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা
শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এয়ারএম্বুলেন্স যোগে ঢাকার
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেয়া হয়। দীর্ঘ ১১ দিন ঢাকার সিএমএইচে
চিকিৎসাধীন ছিলেন। সোমবার দুপুরে সিএমএইচে তার সেলাই অপসারণ করা হয়। এরপর
প্রফেসর জাফরকে সিলেট আসার অনুমতি দেন ডাক্তাররা। গতকাল সকালে ঢাকা থেকে
নভোএয়ারের একটি ফ্লাইটে সিলেটের পথে রওনা দেন প্রফেসর জাফর। এ সময় সিলেটের
ওসমানী মেডিকেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বেলা
১টার দিকে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রফেসর জাফর। এ সময় তার
সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াসমীন হক, মেয়ে ইয়াশিম ইকবাল। ওসমানী
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি
অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাসসহ
বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যান্য সিনিয়র শিক্ষক ও কর্মকর্তারা। তারা ফুলেল
শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ করে নেন প্রফেসর জাফরকে। ওসমানী আন্তর্জাতিক
বিমানবন্দরেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জাফর ইকবাল। তিনি বলেন, ‘ফয়জুরের
প্রতি তার কোনো রাগ নেই। তিনি কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করছেন না। ফয়জুরের
পেছনে কারা রয়েছে সেটি এখন খুঁজে বের করতে হবে।’ হামলার পর পুলিশের আচরণ
সম্পর্কে প্রফেসর জাফর বলেন- ‘হামলার দুই মিনিটের মধ্যে পুলিশের গাড়ি
এসেছে। তাদের গাড়ি করে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। পুলিশ কোনো গাফিলতি
করেনি। তারা ছিল বলেই আমি দ্রুত হাসপাতালে আসতে পেরেছি।’ ওসমানী
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন, ভিসি প্রফেসর ফরিদ
উদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে আমাদের নিরাপত্তার চেয়ে অধ্যাপক
জাফরের নিরাপত্তা বেশি দরকার। তিনি হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রান্ডেড। তাকে
নিরাপত্তা দেয়া আমাদের শিক্ষক-ছাত্র সবার দায়িত্ব।’ এ সময় ভিসি বলেন,
‘আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম ক্যাম্পাসকে জঙ্গিমুক্ত করবো। সেই কাজ আমরা করছি।
ক্যাম্পাস ছোটো জায়গা। সেখানে আমরা জঙ্গিমুক্ত করতে পারবো।’ ওসমানী
আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আগে-পিছে পুলিশের গাড়ি কর্ডন করে প্রফেসর জাফর
ইকবালকে নিয়ে যাওয়া হয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের
ক্যাম্পাসে। দুপুর দেড়টায় হামলার ১১ দিন পর শাবিতে প্রবেশ করেন অধ্যাপক
জাফর। ক্যাম্পাসে প্রবেশের পর গাড়ি থেকে নেমে উপস্থিত শিক্ষক ও ছাত্রদের
জড়িয়ে ধরেন। তাকে কাছে পেয়ে উচ্ছ্বসিত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও
ছাত্ররা। প্রফেসর ড. জাফর ইকবাল ক্যাম্পাসে পৌঁছানোর আগে বিপুল পরিমাণ
পুলিশ মোতায়েন করা হয় সেখানে। ছুটে যান সিলেট মহানগর পুলিশের ডিসি ফয়সাল
মাহমুদ। ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়ায় প্রফেসর জাফর বলেন,
আমার খুব ভালো লাগছে আমি ক্যাম্পাসে ফিরে এসেছি। এই ঘটনার পর আমার জন্য
সবাই অনেক কিছু করেছে, আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বিশেষ করে ধন্যবাদ
জানাচ্ছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে, তিনি সিএমএইচে আমার চিকিৎসার
ব্যবস্থা করেছেন। আমি এসেছি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদের বলতে, আমি ভালো
আছি। তারপর আমি আবার ঢাকা চলে যাবো। এই দুর্ঘটনা না ঘটলে আমি বুঝতেই পারতাম
না মানুষ আমাকে এত ভালোবাসে। তিনি বলেন, আমি মৃত্যুর খুব কাছাকাছি থেকে
ফিরে এসেছি। কারো প্রতি আমার কোনো রাগ নেই। ওই ছেলেটার প্রতিও আমার কোনো
রাগ নেই। বরং ছেলেটির প্রতি আমার মায়া হয়, সে খুবই বিভ্রান্ত। এই সুন্দর
পৃথিবীতে যে সুন্দরভাবে বসবাস করা সম্ভব, সেটা না করে মানুষ হত্যা করে
ইসলামের সেবা করছে। আমি আশা করবো আমাদের ছেলেরা এসবে জড়াবে না।
মুক্তমঞ্চে প্রফেসর জাফর ইকবাল: বিকালে ৪টার একটু পর ক্যাম্পাসের সেই মুক্তমঞ্চে আসেন প্রফেসর জাফর ইকবাল। হাজারো শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে মুক্তমঞ্চে এসে বসেন তিনি। এ সময় তাকে করতালি দিয়ে স্বাগত জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
মুক্তমঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রফেসর ড. জাফর ইকবাল বলেন- ‘আমি কোরআর শরীফ পড়েছি। কোরআন শরীফে লিখা রয়েছে- এক মানুষকে হত্যা করা সবাইকে হত্যা করার সমান। তোমরা চাপাতি, দা, রামদা রেখে আলোচনায় আসো। বুঝার চেষ্ঠা করো। এভাবে মানুষকে মেরো না।’
সুস্থ হয়ে ক্যাম্পাসে ফেরার পর বুধবার বিকেলে মুক্তমঞ্চে তাকে নিয়ে সাদাসিদে ‘কথা’র আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমদ, বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদ খান, জাফর ইকবালপত্নী প্রফেসর ইয়াসমনি হক সহ শিক্ষকরা বক্তব্য রাখেন। ড. জাফর ইকবাল তার বক্তব্যে ঘটনাকালীন সময়ের বর্ণনা দেন। এ সময় তিনি বলেন- ‘ঘটনার পর আমি আমার স্ত্রী ও মেয়েকে ফোন করেছি। নিজেকে স্বাভাবিক রেখেছি। ডাক্তারদের বলেছি-এনেসথিয়া দিও না। স্মৃতিকে স্বাভাবিক রেখেছি।’
তিনি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সিএমইচের ডাক্তারদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানান। বলেন- ওসমানী মেডিকেল কলেজের ডাক্তাররা ভালো চিকিৎসা দিয়েছেন। তখন ওখানে বহু লোক ছিল। টেনশন ছিল। এতো কিছুর মধ্যেও তারা ভালো চিকিৎসা দিয়েছেন।
মুক্তমঞ্চের অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আবারো ক্যাম্পাসকে জঙ্গিমুক্ত রাখার ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি প্রফেসর ড. জাফর ইকবালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে আহবান জানান।
এদিকে আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ অধিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, অধ্যাপক জাফর ইকবাল সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ায় বুধবার সকালে ঢাকা সিএসএইচ ত্যাগ করেন। তার চিকিৎসার সঙ্গে সম্পৃক্ত সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ সিএমএইচে তাকে বিদায় জানান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে সাত দিনের জন্য সম্পূর্ণ বিশ্রামের উপদেশ দিয়েছেন।
মুক্তমঞ্চে প্রফেসর জাফর ইকবাল: বিকালে ৪টার একটু পর ক্যাম্পাসের সেই মুক্তমঞ্চে আসেন প্রফেসর জাফর ইকবাল। হাজারো শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে মুক্তমঞ্চে এসে বসেন তিনি। এ সময় তাকে করতালি দিয়ে স্বাগত জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
মুক্তমঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রফেসর ড. জাফর ইকবাল বলেন- ‘আমি কোরআর শরীফ পড়েছি। কোরআন শরীফে লিখা রয়েছে- এক মানুষকে হত্যা করা সবাইকে হত্যা করার সমান। তোমরা চাপাতি, দা, রামদা রেখে আলোচনায় আসো। বুঝার চেষ্ঠা করো। এভাবে মানুষকে মেরো না।’
সুস্থ হয়ে ক্যাম্পাসে ফেরার পর বুধবার বিকেলে মুক্তমঞ্চে তাকে নিয়ে সাদাসিদে ‘কথা’র আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমদ, বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদ খান, জাফর ইকবালপত্নী প্রফেসর ইয়াসমনি হক সহ শিক্ষকরা বক্তব্য রাখেন। ড. জাফর ইকবাল তার বক্তব্যে ঘটনাকালীন সময়ের বর্ণনা দেন। এ সময় তিনি বলেন- ‘ঘটনার পর আমি আমার স্ত্রী ও মেয়েকে ফোন করেছি। নিজেকে স্বাভাবিক রেখেছি। ডাক্তারদের বলেছি-এনেসথিয়া দিও না। স্মৃতিকে স্বাভাবিক রেখেছি।’
তিনি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সিএমইচের ডাক্তারদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানান। বলেন- ওসমানী মেডিকেল কলেজের ডাক্তাররা ভালো চিকিৎসা দিয়েছেন। তখন ওখানে বহু লোক ছিল। টেনশন ছিল। এতো কিছুর মধ্যেও তারা ভালো চিকিৎসা দিয়েছেন।
মুক্তমঞ্চের অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আবারো ক্যাম্পাসকে জঙ্গিমুক্ত রাখার ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি প্রফেসর ড. জাফর ইকবালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে আহবান জানান।
এদিকে আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ অধিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, অধ্যাপক জাফর ইকবাল সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ায় বুধবার সকালে ঢাকা সিএসএইচ ত্যাগ করেন। তার চিকিৎসার সঙ্গে সম্পৃক্ত সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ সিএমএইচে তাকে বিদায় জানান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে সাত দিনের জন্য সম্পূর্ণ বিশ্রামের উপদেশ দিয়েছেন।
No comments