সাধারণ ছাত্র থেকে যেভাবে বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী হলেন হকিং
মোটর
নিউরন রোগে আক্রান্ত। হুইলচেয়ার বন্দি জীবন। এতদিন বেঁচে থাকাই যেন
বিস্ময়ের। আরও বিস্ময় যেন লুকিয়ে আছে তার জীবনের পরতে পরতে। প্রতিবন্ধকতাকে
জয় করেও যে বিশ্বখ্যাত হওয়া যায়, তার এত বড় প্রেরণাপুরুষ বোধহয় এক
শতাব্দীতে আর পাবে না পৃথিবী। স্টিফেন হকিংয়ের জীবনের সেই চমকপ্রদ দিকের
দিকে তাকালে সত্যিই বিস্মিত হতে হয়। একেবারেই মাঝারি মানের ছাত্র ছিলেন
হকিং। বহুদিন ঠিকঠাক পড়তে পর্যন্ত পারতেন না। ক্লাসে যা নম্বর পেতেন তাতে
পিছনের সারির ছাত্রের তকমাই জুটেছিল ভবিষ্যতের বিজ্ঞানীর। ক্লাসে
পড়াশোনার যখন এরকম হাল, তখনই হকিংয়ের চমক। মোটে ১৭ বছর বয়সে তখনই
অক্সফোর্ডে পদার্থবিদ্যা পড়ার এন্ট্রান্স পরীক্ষায় পাশ করেন। শুধু তাই
নয়, পান স্কলারশিপও। ছোটবেলা থেকেই বিশ্বের সৃষ্টিরহস্য তাকে বুঁদ করে
রাখত। পড়াশোনায় যেমনই হোন না কেন, তাকে আইনস্টাইন বলেই ডাকতেন অনেকে।
ঘটনাচক্রে আইনস্টাইনের জন্মদিনেই পরলোকে পাড়ি দিলেন হকিং। গ্যালিলিওর
মৃত্যু দিনে তার জন্ম। আর আইনস্টাইনের জন্মদিনে তার মৃত্যু। এ যেন আশ্চর্য
সমাপতন। ২০০৭ সালে জিরো গ্রাভিটি ফ্লাইটে শামিল হয়েছিলেন হকিং। তাঁর
বিশ্বাস ছিল, এ পৃথিবী একদিন মানুষের বসবাসের উপযোগী থাকবে না।
তাই জিরো
গ্রাভিটিতে বসবাসের জন্য মানুষকে তৈরি হতে হবে। অন্য কোনো দুনিয়াও যাতে
মানুষের অধীনে আসে, সে কারণেই ছিল তার এই প্রয়াস। যে স্পিচ সিন্থেসাইজারের
মাধ্যমে হকিংয়ের আওয়াজ শোনা যেত, তা আসলে ছিল আমেরিকান উচ্চারণ। এদিকে
হকিং জন্মসূত্রে ব্রিটিশ। তাও পরিবর্তনের ভাবনাকে আমল দেননি বিজ্ঞানী। তার
মতে, এই স্পিচ সিন্থেসাইজারটিও ছিল তার পরিচয়ের একটি অংশ। কৃষ্ণগহ্বর থেকে
কোনো কিছু বেরিয়ে যেতে পারে না। এমনকী কোনো তথ্যও নয়। বাজি ধরেছিলেন
হকিং। দীর্ঘদিন তার দাবি অক্ষত ছিল। শেষমেশ অবশ্য বাজি হারতে হয়েছিল
হকিংকেও। ব্ল্যাক হোল নিয়ে গবেষণার জন্যই তার খ্যাতি। আবার এর জন্যই
নোবেলের জন্য কখনো মনোনীত হননি তিনি। ২০১৪-তে তার জীবন অবলম্বন করেই হয়
ছবি- দ্য থিওরি অফ এভরিথিং। পাঁচটি বিভাগে অস্কারে নমিনেশন পেয়েছিল ছবিটি।
টেলিভিশনেও দেখা যেত এই বিজ্ঞানীকে। ‘দ্য সিম্পসনস’ নামে একটি কার্টুন
শো-তে তার অ্যানিমেটেড ভার্সনেরও দেখা মিলেছিল। সেখানে ব্যবহৃত কণ্ঠস্বর
ছিল হকিংয়ের স্পিচ সিন্থেসাইজারের স্বর। লেখার ক্ষমতা হারিয়েছিলেন হকিং।
কিন্তু এমন একটি ভিজুয়াল পদ্ধতি তিনি তৈরি করেছিলেন যার ফলে জ্যামিতির
মাধ্যমেই সমাধান করতেন জটিল অঙ্ক।
No comments