যে কারণে ডিম উৎপাদন করে লোকসানের কবলে খামারিরা by শফিকুল ইসলাম
মুরগির
ডিমের দাম কমে যাওয়ায় লোকসানের কবলে পড়েছেন ডিম উৎপাদনকারী খামারিরা।
শীতের মৌসুম শেষ হওয়ায় ডিমের চাহিদা কমেছে। অন্যদিকে একই সময়ে ডিমের উৎপাদন
বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ডিমের সরবরাহ চাহিদার তুলনায় বেশি। ফলে ডিমের দাম কমছে
আশঙ্কাজনক হারে। এদিকে, একইসঙ্গে কমেছে মুরগির মাংসের দামও। তবে মুরগির
বাচ্চার দাম কমেনি। আগের মতোই উচ্চ দামে কিনতে হচ্ছে মুরগির খাবার ও ওষুধ।
মুরগির খামারে শ্রমিকের মজুরিও বরং বেড়েছে। আর সে কারণেই লোকসান গুনতে
হচ্ছে ডিম উৎপাদনকারী খামারিদের।
খামারিরা বলছেন, এই মুহূর্তে মুরগি পালনের আনুষাঙ্গিক ব্যয় কমাতে না পারলে লোকসান ঠেকাতে খামার বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনও রাস্তা খোলা থাকবে না তাদের সামনে। ডিম ও মাংসের দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাচ্চা ও ওষুধের দাম কমলে ক্ষতি হতো না বলে মনে করছেন তারা। কিন্তু ডিম উৎপাদনকারী মুরগির একদিনের বাচ্চা উৎপাদনকারী হ্যাচারি মালিকরা সিন্ডিকেট করে বেশি দামে বাচ্চা বিক্রি করছে বলে অভিযোগ করছেন তারা।
খামারিদের দাবি, এই মূহূর্তে একদিনের বাচ্চা উৎপাদনকারী হ্যাচারি মালিকদের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। তা না পারলে এই লোকসান ঠেকানো সম্ভব নয়। একইসঙ্গে কমাতে হবে মুরগির খাবার ও ওষুধের দামও। বিদ্যমান লোকসান ঠেকাতে ব্যাংক ঋণের সুদে রেয়াতও চেয়েছেন ডিম উৎপাদনকারী খামারিরা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে খুচরা বাজারে এখন প্রতি হালি ফার্মের মুরগির ডিম (লাল) বিক্রি হচ্ছে ২৪ টাকায়। আর এক ডজন লাল ফার্মের লাল ডিমের দাম ৭০ টাকা। কয়েকদিন আগেও প্রতিডজন মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়।
জানতে চাইলে ডিম উৎপাদনকারী খামার মালিক আবু নাসের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আবহাওয়া ভালো থাকায় মুরগির রোগবালাই কম। তাই উৎপাদন ভালো হচ্ছে। কয়েকদিন ধরেই দেশের সব খামারেই ডিমের উৎপাদন বেশ ভালো।’
পর্যাপ্ত উৎপাদন ও চাহিদা কমে যাওয়ায় ডিমের দাম পাচ্ছেন না বলে অনেকটাই হতাশা জানিয়েছেন আবু নাসের। তিনি বলেন, ‘আমরা তো এরই মধ্যে লোকসানের মুখে পড়েছি। মুরগির ওষুধ ও খাবারের দাম কমেনি, কিন্তু দাম কমেছে ডিমের। সঙ্গে ব্রয়লার মুরগি ও লেয়ার মুরগির দামও কমেছে। এভাবে চলতে থাকলে খামারিরা বাঁচবে কিভাবে?’
রাজধানীর কাওরান বাজারের ডিম ব্যবসায়ী আরিফুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, এক ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা দরে। যাত্রাবাড়ী আড়তে গত সপ্তাহে একশ পিস ডিমের দাম ছিল ৪৮৫ টাকা। শুক্রবার তা নেমে আসে ৪৬৫ টাকায়। অন্যদিকে, মাস দেড়েক আগেও প্রতি একশ ডিমের দাম ছিল ৫৪০ থেকে ৫৫০ টাকা। ব্যবসায়ীরা জানান, দাম কমার বড় কারণ সরবরাহ বেশি।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের হিসাবে, দেশে ছয় বছর আগে ২০০৯-১০ অর্থবছরে ডিমের উৎপাদন ছিল ৫৭৪ কোটি পিস। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছাড়িয়ে যায় আড়াই গুণ। এই অর্থবছরে ডিমের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৪৯৬ কোটি।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাব অনুযায়ী, ২০০৯ সালে প্রতি হালি ডিমের গড় দাম ছিল ২৮ টাকা। ২০১৬ সালে এসে এর দাম দাঁড়ায় ৩৪ টাকায়। ২০১৭ সালে আবার তা কমে ৩২ টাকায় নামে। এখন বাজারে প্রতি হালি ডিমের দাম ২৪ টাকা।
খামারিরা জানিয়েছেন, লোকসানের কারণে বাচ্চার চাহিদা কমে যাওয়ায় বাচ্চা ফোটানোর জন্য প্রতিটি হ্যাচিং ডিম আগে যেখানে বিক্রি হতো ১৪ টাকায়, এখন সেই ডিম বিক্রি হচ্ছে মাত্র আট টাকায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পোল্ট্রি খামারিদের সংগঠনের কর্মকর্তা আবু জাফর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ডিমের মূল্য, বাচ্চা ফোটানোর খরচ, বিনিয়োগের লাভসহ একটি ডিম থেকে একটি মুরগির বাচ্চার উৎপাদন খরচ ২৪ থেকে ৩০ টাকা। কিন্তু চাহিদার বিপরীতে অতিরিক্ত ডিম উৎপাদন হওয়ায় খামারিরা বর্তমানে বাজারে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। ফলে তাদের দুঃখ হতাশা ও ক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে।
কৃষির উপখাত পোল্ট্রি-ডেইরি তথা প্রাণিসম্পদের উন্নয়নে সরকারের আচরণ বিমাতাসুলভ উল্লেখ করে আবু জাফর বলেন, ‘খামারিদেরক্ষোভ প্রশমনে সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। অতিরিক্ত উৎপাদিত ডিম ও মাংস রফতানির অনুমতি দিতে হবে।’ এ ছাড়া, অবৈধ পথে ডিম ও মুরগির বাচ্চা প্রবেশ ঠেকানো ও খামারিদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্যও তিনি সরকারের কাছে আহ্বান জানান।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মৎস্য ও পাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে। খামারিরা যেন লোকসানের মুখে না পড়েন, সে বিষয়ে সরকার সচেতন রয়েছে। পরিস্থিতি এমন থাকবে না।’ শিগগিরই এ পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।
খামারিরা বলছেন, এই মুহূর্তে মুরগি পালনের আনুষাঙ্গিক ব্যয় কমাতে না পারলে লোকসান ঠেকাতে খামার বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনও রাস্তা খোলা থাকবে না তাদের সামনে। ডিম ও মাংসের দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাচ্চা ও ওষুধের দাম কমলে ক্ষতি হতো না বলে মনে করছেন তারা। কিন্তু ডিম উৎপাদনকারী মুরগির একদিনের বাচ্চা উৎপাদনকারী হ্যাচারি মালিকরা সিন্ডিকেট করে বেশি দামে বাচ্চা বিক্রি করছে বলে অভিযোগ করছেন তারা।
খামারিদের দাবি, এই মূহূর্তে একদিনের বাচ্চা উৎপাদনকারী হ্যাচারি মালিকদের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। তা না পারলে এই লোকসান ঠেকানো সম্ভব নয়। একইসঙ্গে কমাতে হবে মুরগির খাবার ও ওষুধের দামও। বিদ্যমান লোকসান ঠেকাতে ব্যাংক ঋণের সুদে রেয়াতও চেয়েছেন ডিম উৎপাদনকারী খামারিরা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে খুচরা বাজারে এখন প্রতি হালি ফার্মের মুরগির ডিম (লাল) বিক্রি হচ্ছে ২৪ টাকায়। আর এক ডজন লাল ফার্মের লাল ডিমের দাম ৭০ টাকা। কয়েকদিন আগেও প্রতিডজন মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়।
জানতে চাইলে ডিম উৎপাদনকারী খামার মালিক আবু নাসের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আবহাওয়া ভালো থাকায় মুরগির রোগবালাই কম। তাই উৎপাদন ভালো হচ্ছে। কয়েকদিন ধরেই দেশের সব খামারেই ডিমের উৎপাদন বেশ ভালো।’
পর্যাপ্ত উৎপাদন ও চাহিদা কমে যাওয়ায় ডিমের দাম পাচ্ছেন না বলে অনেকটাই হতাশা জানিয়েছেন আবু নাসের। তিনি বলেন, ‘আমরা তো এরই মধ্যে লোকসানের মুখে পড়েছি। মুরগির ওষুধ ও খাবারের দাম কমেনি, কিন্তু দাম কমেছে ডিমের। সঙ্গে ব্রয়লার মুরগি ও লেয়ার মুরগির দামও কমেছে। এভাবে চলতে থাকলে খামারিরা বাঁচবে কিভাবে?’
রাজধানীর কাওরান বাজারের ডিম ব্যবসায়ী আরিফুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, এক ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা দরে। যাত্রাবাড়ী আড়তে গত সপ্তাহে একশ পিস ডিমের দাম ছিল ৪৮৫ টাকা। শুক্রবার তা নেমে আসে ৪৬৫ টাকায়। অন্যদিকে, মাস দেড়েক আগেও প্রতি একশ ডিমের দাম ছিল ৫৪০ থেকে ৫৫০ টাকা। ব্যবসায়ীরা জানান, দাম কমার বড় কারণ সরবরাহ বেশি।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের হিসাবে, দেশে ছয় বছর আগে ২০০৯-১০ অর্থবছরে ডিমের উৎপাদন ছিল ৫৭৪ কোটি পিস। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছাড়িয়ে যায় আড়াই গুণ। এই অর্থবছরে ডিমের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৪৯৬ কোটি।
ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) হিসাব অনুযায়ী, ২০০৯ সালে প্রতি হালি ডিমের গড় দাম ছিল ২৮ টাকা। ২০১৬ সালে এসে এর দাম দাঁড়ায় ৩৪ টাকায়। ২০১৭ সালে আবার তা কমে ৩২ টাকায় নামে। এখন বাজারে প্রতি হালি ডিমের দাম ২৪ টাকা।
খামারিরা জানিয়েছেন, লোকসানের কারণে বাচ্চার চাহিদা কমে যাওয়ায় বাচ্চা ফোটানোর জন্য প্রতিটি হ্যাচিং ডিম আগে যেখানে বিক্রি হতো ১৪ টাকায়, এখন সেই ডিম বিক্রি হচ্ছে মাত্র আট টাকায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পোল্ট্রি খামারিদের সংগঠনের কর্মকর্তা আবু জাফর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ডিমের মূল্য, বাচ্চা ফোটানোর খরচ, বিনিয়োগের লাভসহ একটি ডিম থেকে একটি মুরগির বাচ্চার উৎপাদন খরচ ২৪ থেকে ৩০ টাকা। কিন্তু চাহিদার বিপরীতে অতিরিক্ত ডিম উৎপাদন হওয়ায় খামারিরা বর্তমানে বাজারে ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না। ফলে তাদের দুঃখ হতাশা ও ক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে।
কৃষির উপখাত পোল্ট্রি-ডেইরি তথা প্রাণিসম্পদের উন্নয়নে সরকারের আচরণ বিমাতাসুলভ উল্লেখ করে আবু জাফর বলেন, ‘খামারিদেরক্ষোভ প্রশমনে সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। অতিরিক্ত উৎপাদিত ডিম ও মাংস রফতানির অনুমতি দিতে হবে।’ এ ছাড়া, অবৈধ পথে ডিম ও মুরগির বাচ্চা প্রবেশ ঠেকানো ও খামারিদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্যও তিনি সরকারের কাছে আহ্বান জানান।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মৎস্য ও পাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে। খামারিরা যেন লোকসানের মুখে না পড়েন, সে বিষয়ে সরকার সচেতন রয়েছে। পরিস্থিতি এমন থাকবে না।’ শিগগিরই এ পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলেও আশ্বস্ত করেন তিনি।
No comments