টিলারসনের বিদায় কতটা চ্যালেঞ্জে ফেলবে ট্রাম্পকে
এক্সন
মবিলের মতো প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীর পদে দীর্ঘদিন ছিলেন কর্পোরেট
বিশ্বে টিলারসন। সেখান থেকে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে
নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই পদে টিলারসনকে
বেছে নেয়ায় অবাক হয়েছিলেন অনেকে। অবাক হওয়ার কারণও ছিল। কিন্তু
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই টিলারসনের ভবিষ্যৎ যেন
সুতায় ঝুলছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দীর্ঘদিন ধরে যেসব কর্মকর্তা কাজ
করছেন, তারা তাকে ঠিক বিশ্বাস করতেন না। তারা তাকে দেখতেন বহিরাগত
আগন্তুকের মতো। প্রথম প্রথম টিলারসনকে দেখে মনে হতো, টেক্সাসের দুর্বিনীত
এই লোকটির প্রতি তিনি মুগ্ধ। কিন্তু তারপর তাদের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠতে
সময় লাগেনি। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে হোয়াইট হাউজের সাধে প্রায়ই মতপার্থক্য
দেখা দিয়েছিল তার। মাঝে একবার খবরে আসে, প্রেসিডেন্টকে তিনি ‘বেকুব’
বলেছেন। এটিও নিশ্চয়ই তার পক্ষে যায়নি। অনেক বিতর্কের মধ্যেও টিকে ছিলেন
টিলারসন। গত বছরের শেষের দিকেই তাকে বরখাস্ত করার কথা শোনা যাচ্ছিল। সেই
হিসেবে অনুমিত সময়ের চেয়ে বেশি পদে বহাল ছিলেন তিনি। অবশ্য প্রেসিডেন্ট
ট্রাম্প ওই খবরের তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন। টিলারসনকে বরখাস্ত করা হবে, এমন
গুঞ্জনকে তিনি ‘ফেইক নিউজ’ বা ভুয়া খবর হিসেবেও আখ্যা দেন। যেমন, এক টুইটে
ট্রাম্প লিখেছিলেন, ‘কিছু কিছু বিষয়ে আমাদের মতপার্থক্য রয়েছে। কিন্তু
আমরা একত্রে ভালোই কাজ করছি। আমেরিকাকে ফের সবাই সম্মানের চোখে দেখছে।’
কিন্তু এখন এসে দেখা যাচ্ছে, যেমনটা প্রায়ই হয়ে থাকে যে, ট্রাম্প যেই
গুঞ্জনকে ‘ভুয়া খবর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন, সেটাই সত্য হয়েছে। অর্থাৎ,
ট্রাম্প নিজেই নিজের বলা ‘ফেইক নিউজে’র সত্য বলে প্রমাণ করেছেন। নিউ ইয়র্ক
টাইমস কিছু সূত্রের বরাতে ছেপেছিল যে, টিলারসনের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার দৌঁড়ে
প্রথমেই রয়েছেন সিআইএ পরিচালক মাইক পম্পেও। বাস্তবেও হয়েছে তাই। টিলারসন
মার্চ পর্যন্ত টিকে ছিলেন। কিন্তু এটি স্পষ্ট যে, তাকে বরখাস্তের
চিন্তাভাবনা আগে থেকেই করা হচ্ছিল। গত সপ্তাহে টিলারসন আফ্রিকায় ছিলেন। তখন
পম্পেও সহ হোয়াইট হাউজের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা দক্ষিণ কোরিয়ার
কূটনীতিকদের সাথে প্রেসিডেন্ট সমেত ওভাল অফিসে বৈঠকে বসেন। তখন বিষয়টি
স্পষ্ট হয় যে, দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে উত্তর কোরিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ
ইস্যুতে বাইরে রাখা হচ্ছে। শুক্রবারই টিলারসনকে বলা হয় যে, তাকে আর প্রয়োজন
হবে না। এখন পর্যন্ত যেসব ইঙ্গিত ও আলামত পাওয়া গেছে, তা থেকে এ নিয়ে কোনো
সন্দেহই থাকে না যে, টিলারসনকে বরখাস্তের বিষয়টি মোটেই হৃদ্যতাপূর্ণ ছিল
না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন উপমন্ত্রী বলেন, বরখাস্তের কারণ ব্যাখ্যা
করতে প্রেসিডেন্ট সরাসরি টিলারসনের সাথে একবারও কথা বলেন নি। ওই উপমন্ত্রী
আরও বলেন, টিলারসন এই পদে থাকতে চেয়েছিলেন। টিলারসন হলেন ট্রাম্পের
মন্ত্রীসভার ২০ তম সদস্য, যারা তার ১৩ মাসের শাসনামলে হয় বরখাস্ত হয়েছেন,
নয়তো পদত্যাগ করেছেন। সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহ ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য বেশ
উত্তাল ছিল। এই কয়েকদিনে পদত্যাগ করেছেন ট্রাম্পের শীর্ষ অর্থনৈতিক
উপদেষ্টা গ্যারি কোন, যোগাযোগ পরিচালক ও দীর্ঘদিনের কর্মী হোপ হিকস ও
হোয়াইট হাউজের স্টাফ সেক্রেটারি রব পোর্টার। কিন্তু টিলারসনকে বরখাস্তের
বিষয়টি আলাদা। তাকে বিদায় দিয়ে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিআইএ পরিচালক হিসেবে
পম্পেও ও গিনা হাসপেলকে মনোনীত করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তাদের নিয়োগ
চূড়ান্ত করবে সিনেট। সিনেটে এ নিয়ে বিশাল লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হবে
ট্রাম্পকে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে পম্পেও পররাষ্ট্র নীতির দিক
থেকে কট্টরপন্থী বলে পরিচিত। তিনি ওবামার আমলে হওয়া ইরান পারমাণবিক চুক্তির
কড়া সমালোচনা করেছেন। তবে ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ
নিয়ে ট্রাম্পের চেয়েও তিনি বেশ সরব ছিলেন। সিনেটে তার নিয়োগ শুনানি
চলাকালে পম্পেও প্রায় নিশ্চিতভাবেই কিছু ইস্যুতে প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন।
বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে কিছু কিছু ইস্যুতে তার দ্বিমত থাকতে
পারে। সেসব ইস্যুতে তাকে বিস্তারিত উত্তর দিতে বলা হবে। যেমন, সিআইএ
পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে সাবেক এফবিআই পরিচালক জেমস কমির দেওয়া কিছু
তথ্যের গুরুত্ব খাটো করেছিলেন পম্পেও। এ কাজে তাকে প্রশাসন থেকে চাপ দেওয়া
হয়েছে কিনা, সেই ব্যাপারে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারেন পম্পেও। পম্পেও যদি
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন, তখন সিআইএ পরিচালক হিসেবে তার স্থলাভিষিক্ত হবেন ৩০
বছর ধরে এই গোয়েন্দা সংস্থায় কাজ করা গিনা হাসপেল। তার নিয়োগকালীন শুনানিও
বেশ তিক্ত হবে। কারণ, সিআইএ’র নিষ্ঠুর নির্যাতন পদ্ধতি নিয়ে চলা বিতর্কে
তার নাম বারবার আসে। ৯/১১’র পরে বন্দী সন্দেহভাজনদের ওপর নির্মম নির্যাতনের
সমর্থক ছিলেন তিনি। সিনেটে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও, বিভিন্ন
ইস্যুতে খোদ তাদের সাথেই প্রেসিডেন্টের বিরোধ দেখা গেছে। এই এপ্রিলে
মিসিসিপির রিপাবলিকান সিনেটর থাড কোচরান পদত্যাগ করবেন। ফলে সিনেটে
রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটদের ব্যবধান হবে মাত্র ১ ভোট। ডেমোক্রেটরা যদি
একতাবদ্ধ থাকে, তাহলে মাত্র ১ জন রিপাবলিকান সিনেটরের সমর্থন পেলেই তারা
পম্পেও বা গিনা হাসপেলের নিয়োগ ঠেকিয়ে দিতে পারবেন। ফলে বলতেই হচ্ছে, সামনে
বরং ঝঞ্ঝাটময় সময় অপেক্ষা করছে প্রেসিডেন্টের জন্য।
No comments