নান্দনিক ‘সুপারমুন’ দেখলেন জোছনাপ্রেমীরা
হেমন্তের
স্বচ্ছ আকাশে ‘সুপারমুন’। চাঁদকে দেখা গেল আরও কাছ থেকে আরও উজ্জ্বল।
চাঁদের সৌন্দর্যপিপাসুদের জন্য এ যেন এক বিশেষ রাত। রোববার রাতে বাংলাদেশের
আকাশে খুব কাছ থেকে দেখা যায় চাঁদের পূর্ণ অবয়ব। রাত ৯টা ৪৬ মিনিটে ঢাকাসহ
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নান্দনিক এ দৃশ্য উপভোগ করেন জোছনাপ্রেমীরা।
‘সুপারমুন’-এর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে ‘পেরিগি মুন’। পেরিগি মানে ‘পৃথিবীর
নিকটতম’। চাঁদ যখন পূর্ণ পূর্ণিমায় থাকে এবং বার্ষিক প্রদক্ষিণের সময়
পৃথিবীর কাছাকাছি চলে আসে, তখন একে সুপারমুন বলা হয়। পৃথিবীর কাছাকাছি আসায়
এ চাঁদকে স্বাভাবিক পূর্ণিমার চাঁদের তুলনায় বেশ বড় ও উজ্জ্বল দেখায়। এবার
স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় ৭ শতাংশ বড় ও ১৫ শতাংশ উজ্জ্বল দেখা গেছে
চাঁদ। তবে খালি চোখে এ পার্থক্য খুব একটা বুঝতে পারেননি অনেকে। সুপারমুন
দেখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এবং রাজধানীর
হাতিরঝিলে ভিড় করেন নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বিভিন্ন
স্থান থেকে দেখা যায় বহুল আকাক্সিক্ষত এ পূর্ণ চাঁদ। টিএসসি ছাড়াও
বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার আরও কয়েকটি স্থানে সুপারমুন দেখতে মানুষের উপস্থিতি
লক্ষ্য করা গেছে। এর মধ্যে কার্জন হল, শহীদুল্লাহ হলের পুকুর পাড়,
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ উল্লেখযোগ্য। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার
বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষার্র্থী ছাড়াও অন্যান্য স্থান থেকে আগত
দর্শনার্থীরা সুপারমুন দেখতে আকাশ পানে চেয়ে থাকেন। টিএসসিতে সুপারমুন
দেখছিলেন মনোবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের তিন ছাত্রী লুবাবা সুলতানা
সিসিলি, নাসরিন শিলা ও তানজিয়া এম মৌ। তারা জানান, আকাশের উজ্জ্বলতম চাঁদ
দেখতে ক্যাম্পাসে এসেছেন। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান থেকে সুপারমুন
দেখেছেন। এটি একটি অন্যরকম স্মৃতি হয়ে থাকবে বলেও উল্লেখ করেন তারা। ঢাকা
রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র মেহেদী হাসান নাফিজ এসেছেন
টিএসসিতে সুপারমুন দেখতে। তিনি জানান, সুপারমুন উপভোগ করতে ধানমণ্ডি থেকে
তিনি টিএসসি এসেছেন। সুপারমুন দেখতে রাজধানীর হাতিরঝিলেও দেখা গেছে ভিড়।
হাতিরঝিলের ব্রিজগুলোর ওপরে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। এছাড়া অনেককে শখের
মুঠোফোনে সুপারমুনসহ নিজেকে ফ্রেমবন্দি করতেও দেখা গেছে। এমন একজন সাদিকা
তাবাস্সুম জানান, হাতিরঝিলের খোলা পরিবেশে সুপারমুন দেখতেই এখানে আসা। এ
সময়টিকে স্মরণীয় করে রাখতেই তিনি মুঠোফোনে সুপারমুনসহ নিজের ছবি তুলেছেন।
জানা যায়, ১৯৪৮ সালের পর গত বছর চাঁদ পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে এসেছিল। ২০৩০
সালের ২৫ নভেম্বরের আগে চাঁদ আর পৃথিবীর এত কাছে আসবে না। রোববারকে নাসা
আগামী ২ মাসের সুপারমুন ট্রিলজির প্রথম পর্ব হিসেবে আখ্যায়িত করেছে, যার
পরের দুটি দেখা যাবে ১ ও ৩১ জানুয়ারি। ডিসেম্বরের পূর্ণিমাকে সাধারণত শীতল
চাঁদ (কোল্ডমুন) বলা হয়। রোববার দুপুরে চাঁদ যখন সূর্যের বিপরীতে থাকে,
পৃথিবী থেকে তার দূরত্ব হয় ২ লাখ ২২ হাজার ৭৬১ মাইল, যা গড় দূরত্ব ২ লাখ ৩৮
হাজার ৯০০ মাইলের চেয়ে কম। যুক্তরাষ্ট্রের রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিকাল
সোসাইটির রবার্ট ম্যাসে বলেছেন, সবচেয়ে নান্দনিক দৃশ্য দেখা যাবে রোববার
চাঁদ ওঠার সময় আর সোমবার ভোরে চাঁদ ডুবে যাওয়ার সময়। এটি এক ধরনের
দৃষ্টিবিভ্রম, যা চন্দ্রবিভ্রম নামে পরিচিত। দিগন্তরেখার কাছাকাছি অবস্থানে
এসময় চাঁদকে অস্বাভাবিক বড় দেখা যায়। রবার্ট ম্যাসে আরও বলেন, এটি চমৎকার
একটি ঘটনা। মানুষের দেখার জন্য দারুণ একটি ব্যাপার। আপনার মনে নাও হতে পারে
এটি বিশাল। স্বাভাবিকের চেয়ে সামান্য বড় দেখা যাবে এটিকে। তবে পাঁচগুণ বড়
চাঁদ দেখার আশা করবেন না। চাঁদ পৃথিবীর চারপাশে বৃত্তাকারে ঘোরে না। এটি
অনেকটা উপবৃত্তাকার কক্ষপথে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। অর্থাৎ পৃথিবী থেকে এর
দূরত্ব সব সময় সমান হয় না, কক্ষপথের বিভিন্ন স্থানে দূরত্বের তারতম্য হয়।
কিন্তু সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর পরিভ্রমণের কারণে এ অসম কক্ষপথের মাঝেও
পরিবর্তন হয়ে থাকে। এর অর্থ পৃথিবী থেকে চাঁদের কক্ষপথের নিকটতম অবস্থান আর
পূর্ণ চন্দ্রের অবস্থান সব সময় এক হয় না। কক্ষপথের এ নিকটতম অবস্থান পূর্ণ
চন্দ্রের অবস্থানের সঙ্গে মিলে গেলে সেই উপলক্ষকে সুপারমুন বলা হয়।
No comments