মার্কিন জঙ্গিবিমানের গুলিতে সিরীয় ফাইটার ভূপাতিত
সিরিয়ার রাকা প্রদেশে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমানের গুলিতে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর একটি জঙ্গিবিমান ভূপাতিত হয়েছে। ২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এই প্রথম কোনো সিরীয় সামরিক বিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করল যুক্তরাষ্ট্র। রোববারের এ ঘটনায় সেনাবাহিনীর জঙ্গি বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। এরপর থেকে বিমানের পাইলট নিখোঁজ রয়েছেন বলে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক বিবৃতিতে জানিয়েছে সিরিয়ার সেনাবাহিনী। রোববার বিকালে রাকার রাসাফাহ গ্রামের কাছে ঘটনাটি ঘটে। খবর বিবিসির। ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর সময় জঙ্গিবিমানটিকে গুলি করে ভূপাতিত করা হয় বলে অভিযোগ করেছে দামেস্ক। অন্যদিকে ওয়াশিংটনের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের এফ/এ-১৮ই সুপার হরনেট বিমানটি সিরিয়ার এসইউ-২২ ফাইটার বিমানটিকে মার্কিন সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সের (এসডিএফ) অবস্থানের কাছে বোমা ফেলার পর সিরীয় জঙ্গিবিমানটিকে ভূপাতিত করা হয়েছে। সিরীয় সেনাবাহিনী। তারা জানায়, ‘নিজেদের এলাকার ভেতরে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াইরত একমাত্র কার্যকর বাহিনী হিসেবে সেনাবাহিনীর উদ্যোগ দুর্বল করতে ‘অসৎ’ এ হামলাটি চালান হয়েছে। এমন একসময় এটি ঘটানো হয়েছে যখন সিরীয় সেনাবাহিনী ও তার মিত্ররা আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পরিষ্কার অগ্রগতি অর্জন করছে।’ বিবৃতিতে এই ঘটনাকে ‘সুস্পষ্ট আগ্রাসন’ হিসেবে অভিহিত করে বলেছে, সন্ত্রাসবিরোধী হামলায় রত বিমান ভূপাতিত করে আমেরিকা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নিজের প্রকৃত অবস্থান পরিষ্কার করে দিয়েছে। এই হামলার মাধ্যমে দায়েশের সঙ্গে আমেরিকার গোপন আঁতাতের বিষয়টি ফুটে উঠেছে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়। পরে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড এক বিবৃতিতে জানায়, তাবকা শহরের কাছে এসডিএফের যোদ্ধাদের রক্ষা করতে ‘জোট অংশীদারদের সম্মিলিত আত্মরক্ষার প্রচেষ্টা হিসেবে’ সিরীয় বিমানটি ভূপাতিত করা হয়েছে। তারা দাবি করেছে, এর আগে ‘সিরীয় জান্তার বাহিনীগুলো’ তাবকার দক্ষিণে এসডিএফ অধিকৃত একটি শহরে হামলা চালিয়ে বহু যোদ্ধাকে আহত করে তাদের ওই শহর থেকে হটিয়ে দিয়েছে। পরে জোট বাহিনীর বিমানগুলো শক্তি প্রদর্শন করে তাদের থামানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সিরীয় সেনাবাহিনীর একটি এসইউ-২২ জঙ্গিবিমান এসডিএফ বাহিনীর অবস্থানের কাছে বোমা ফেললে যুক্তরাষ্ট্রের এফ/এ-১৮ই সুপার হরনেট জঙ্গিবিমান তাৎক্ষণিকভাবে সিরীয় বিমানটিকে গুলি করে ফেলে দেয়।
সিরীয় বিমানটি ফেলে দেয়ার আগে ‘পরিস্থিতি যেন আরও নাজুক না হয়ে পড়ে তার জন্য’ রাশিয়ার বাহিনীর সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করে নেয় বলে জানিয়েছে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড। সম্প্রতি উত্তর সিরিয়া ও দেশটির রাকা প্রদেশে আকাশ থেকে বোমাবর্ষণ বৃদ্ধি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোট বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থিত সিরীয় বিদ্রোহী বাহিনীগুলো আইএসের তথাকথিত রাজধানী রাকা শহর ঘিরে ফেলেছে এবং জঙ্গিদের হাত থেকে কয়েকটি এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। অপরদিকে সিরিয়ার সেনাবাহিনী আলেপ্পোর পূর্বাঞ্চলীয় গ্রামীণ এলাকাগুলোতে পশ্চাৎপসারণরত আইএস জঙ্গিদের কাছ থেকে বিভিন্ন এলাকা পুনরুদ্ধার করছে। ওই সেনাবাহিনী এখন রাকা প্রদেশে প্রবেশ করে আইএসের কাছ থেকে বেশকিছু তেলক্ষেত্র ও গ্রাম পুনরুদ্ধার করেছে। যে এলাকাগুলো গত তিন বছর ধরে জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। পেন্টাগনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, সিরিয়া সরকার, রাশিয়া কিংবা সরকারপন্থী বাহিনীরগুলোর বিরুদ্ধে তারা যুদ্ধ করতে চায় না। তবে যে কোনো হুমকি থেকে জোটের শরিকদের রক্ষা করতে তারা পিছপা হবে না। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেছেন, সব দেশকেই সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে অবশ্যই সম্মান করতে হবে। সিরিয়ার কোনো জঙ্গিবিমানকে মার্কিন বিমানের ভূপাতিত করার ঘটনা এটাই প্রথম হলেও দুই দেশের মধ্যে সম্প্রতি বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। চলতি মাসের শুরুর দিকে সিরীয় সরকারি বাহিনীর পক্ষের একটি ড্রোনকে ভূপাতিত করে যুক্তরাষ্ট্র।
No comments