জলজট যানজটে সীমাহীন দুর্ভোগে রাজধানীবাসী
বৃষ্টির সঙ্গে যানজটে রাজধানীবাসীর দুর্ভোগের মাত্রা বেড়েছে কয়েক গুণ। সোমবার দিনইভরই বৃষ্টির সঙ্গে যানজট যেন পাল্লা দিয়েছিল। অপরিকল্পিতভাবে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি, ড্রেনের পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। আর এ কারণে যানবাহনের ধীরগতি যানজটকে সহনীয় মাত্রার বাইরে নিয়ে যায়। এতে ঈদের কেনাকাটায় মার্কেটমুখী মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হন। যানজটে আটকা পড়ে ১০ মিনিটের দূরত্ব পাড়ি দিতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা পার হয়ে যায় অনেকের। কোনো কোনো স্পটে ভোগান্তি ছিল মাত্রাতিরিক্ত। বলা চলে ভোগান্তির পাহাড় ঠেলে কর্মব্যস্ত নগরবাসী নিজ নিজ গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও খোঁজখবরে সর্বত্রই ভোগান্তির চিত্র দেখা গেছে। মহানগরীর নতুন বাজার থেকে জোয়ার সাহারা, সাতরাস্তা থেকে কারওয়ানবাজার মোড়, সায়েন্সল্যাব থেকে নিউমার্কেট-নীলক্ষেত এলাকা, গুলশান-১ ও গুলশান-২ মার্কেট এলাকার সড়ক, গুলশান পিংক সিটি মার্কেট সড়ক, গুলিস্তান, পুরান ঢাকার বিপণিবিতান ও মিরপুর এলাকার বিপণিবিতানে যাতায়াতের সড়কগুলোয় তীব্র যানজট ছিল। এসব সড়কের সামনে রিকশা, সিএনজি, মাইক্রোবাস, বাস, মোটরবাইকে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে দেখা গেছে। অপ্রস্তুত অনেকে বৃষ্টিতে ভিজে একাকার হয়েছেন। আবাসিক এলাকা ধানমণ্ডি, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর, আদাবরের বিপণিবিতানগুলোর সামনের সড়কেও তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এছাড়া যাত্রাবাড়ী, শান্তিনগর, পুরান ঢাকার আলাউদ্দিন রোড, নাজিম উদ্দিন রোড, শহীদ নগর এলাকার অলিগলি, মালিবাগ, মধুবাজার, খিলক্ষেত এলাকাসহ মহানগীর বিভিন্ন এলাকার সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এর ফলে ওই এলাকার বাসিন্দাদের সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। ভুক্তভোগীরা জানান, নতুন বাজার থেকে কুড়িল চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়কের দু’পাশের যানজট নিত্যদিনের। ঈদের সময় যত এগিয়ে আসছে যানজটের মাত্রা তত বাড়ছে। আর এ সড়কের যানজটের মূল কারণ হচ্ছে- ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না করে মাসের পর মাস সড়ক খুঁড়ে ফেলে রাখা হচ্ছে। সোমবার এ সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, ড্রেনের ময়লা তুলে সড়কে ফেলে রাখা হয়েছে। আর সড়কের অর্ধেক গভীর গর্ত করে ফেলে রাখা হয়েছে। এতে করে সড়কের অর্ধেক ব্যবহার হচ্ছে যান চলাচলে। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে যানবাহন, ঘটছে দুর্ঘটনাও। মিরপুর মধ্য পাইকপাড়ার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সোমবারের বৃষ্টিতে মধ্য পাইকপাড়া, মিরপুর-১ নম্বর এলাকার সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হলেই সড়ক তলিয়ে যাচ্ছে। অথচ গত বছরও এ এলাকার সড়ক এত জলাবদ্ধতা হতো না। এবার এলাকার ড্রেনেজ লাইন সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। আমরা আশা করেছিলাম, জলজট ও জলাবদ্ধতা থেকে পুরোপুরি মুক্তি পাব। কিন্তু ফলাফল হয়েছে উল্টো। বনানী ১১ নম্বর সড়কের বাসিন্দা আবুল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ব্যক্তিগত কাজে সকালে তেজগাঁও, মহাখালী ও গুলশান এলাকায় চলাচল করতে হয়েছে। যানজট ও জলাবদ্ধতার ভোগান্তিতে নাকাল হয়েছি। মহাখালী, বনানী ও গুলশানের বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা দেখে অবাক হয়েছি। কেননা এসব এলাকার ড্রেনেজ লাইনের উন্নয়নে গত দুই বছরে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে।
এরপরও কেন জলাবদ্ধতা, তার কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। কুড়িল চৌরাস্তা এলাকার মোবারক হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে আমাদের। বৃষ্টিতে জলজট-জলাবদ্ধতা আর অন্য সময় যানজটের ধকলে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে জীবন। আর এখন তো নিত্যদিন বৃষ্টি আর যানজটের ধকল সইতে হচ্ছে। ঈদ যত কাছাকাছি আসছে, এই সড়কে যানজটের মাত্রা তত বাড়ছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ কুদরত উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, নতুন বাজার থেকে জোয়ার সাহারা সড়কসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়ন কাজের জন্যই সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করা হচ্ছে। এটা দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করতে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি। এই অবস্থার মধ্যে নগরবাসী ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এটা সত্য, কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের বাড়তি তেমন কিছু করার নেই। তিনি আরও বলেন, জলাবদ্ধতা ও জলজটের সমস্যা সমাধানেরও চেষ্টা চলছে। অনেক এলাকার উন্নতি হয়েছে। অনেক এলাকায় কাজ চলমান রয়েছে। ধাপে ধাপে নগরীর জলাবদ্ধতাও কমে আসবে। আর এক্ষেত্রে তারা ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছেন বলেও জানান। এ প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, ঢাকা দক্ষিণের কিছু এলাকায় উন্নয়ন কাজ চলছে, এ কারণে জলজট ও জলাবদ্ধতায় নগরবাসীর কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছে সত্য। তবে আমরা ভোগান্তির মাত্রা কমিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। তিনি আরও বলেন, জলজট ও জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এ বছর ঢাকার দক্ষিণাংশের জলাবদ্ধতা অনেক কমেছে। আশা করছি এবারের বর্ষায় বড় ধরনের কোনো জলজট বা জলাবদ্ধতা হবে না দক্ষিণ ঢাকায়। এ উদ্দেশ্যে নিরলসভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
No comments