২৭ জুন পর্যন্ত থাকতে পারে বৃষ্টির বিড়ম্বনা
আঁধার-কালো মেঘে ঢাকা আকাশ। তার থেকে ঝরছে ঝরঝর বৃষ্টি। হালকা থেকে ভারি। কখনোবা এক নাগাড়ে। সঙ্গে গুড়–ম গুড়–ম শব্দে পড়ছে বাজ। আষাঢ়ের প্রথম পাঁচ দিন ঢাকাসহ প্রায় সারা দেশের মানুষের এভাবেই কেটেছে। টানা বৃষ্টির কারণে শহরে রাজপথে জলজট। গ্রামের মেঠোপথের সঙ্গে দিগন্তজোড়া ফসলের ক্ষেত ডুবে একাকার। দীর্ঘ খরতাপের পর অবশ্য নতুন পানির ছোঁয়ায় প্রকৃতি পেয়েছে নতুন জীবন। গ্রামে গেলে এখন দিনেও শোনা যায় কোলা ব্যাঙের গান। আবহাওয়া অধিদফতর (বিএমডি) বলছে, বঙ্গোপসাগর নিস্তরঙ্গ নয়। তবে কোনো লঘু বা নিন্মচাপ নেই। কেবল মৌসুমি বায়ুর প্রভাবেই এমন বৃষ্টিপাত। তাৎক্ষণিক পূর্বাভাস অনুযায়ী আরও দু’দিন থাকবে এই পরিস্থিতি। যদিও মার্কিন স্যাটেলাইট টেলিভিশন দ্য ওয়েদার চ্যানেলের ওয়েবসাইট বলছে, এই অবস্থা ২৭ জুন পর্যন্ত থাকতে পারে। বাংলাদেশে ২৬ বা ২৭ জুন ঈদুল ফিতরের উৎসব হতে পারে। সোমবার সকাল থেকেই ঢাকায় প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। বিকাল ৫টার দিকে এ রিপোর্ট লেখাকালে বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি হয়। সকালে বড় ফোঁটায় এমনই বৃষ্টি হয়েছিল যে, দু’ঘণ্টায় রাজধানীর অনেক প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে মহল্লার গলি পানিতে ডুবে যায়। দুপুর ১২টার মধ্যে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোড, বকশিবাজার, লালবাগ, সায়েদাবাদ, মিরহাজিরবাগ, সূত্রাপুর, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, বনশ্রী, রামপুরা, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, ধানমন্ডি, মিরপুরের বিভিন্ন এলাকা, কালশী, উত্তরা, বনানী ও গুলশানের রাস্তায় পানি জমে। বিশেষ করে পুরান ঢাকায় বৃষ্টি মানুষকে ব্যাপক ভুগিয়েছে। বিএমডির কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন যুগান্তরকে জানান, সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৬ ঘণ্টায় ঢাকায় ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সকাল থেকে ১২টা পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে নিকলিতে। সেখানে ৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
তবে ১২টার পর ৩ ঘণ্টায় ফেনীতে ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। প্রায় সারা দেশেই কমবেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তবে ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে দেশের নদ-নদীগুলোয় পানির সমতল বেড়েছে। সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা, সারিগোয়াইন, খোয়াই এবং সাঙ্গু নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এগুলোর মধ্যে সুরমা কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছিল। সারিগোয়াইন সারিঘাট এলাকায় বিপদসীমার ৪৮ সেন্টিমিটার উপরে ছিল। তবে বৃষ্টির কারণে খোয়াই নদীতে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৫০ সেন্টিমিটারের বেশি পানি বেড়েছে। সাঙ্গু চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারি পয়েন্টে বিপদসীমার উপরে চলে গেছে। বিএমডি বলছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল থেকে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। এ কারণে প্রায় সারা দেশেই অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ সহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে।
No comments