দেশে অপারেশনজনিত ফিস্টুলার হার বাড়ছে
দেশে অপারেশনজনিত বা সার্জিক্যাল আঘাতজনিত ফিস্টুলার হার বাড়ছে। সম্প্রতি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিচালিত জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, ফিস্টুলার চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ১০ থেকে ৫০ ভাগই সার্জিক্যাল আঘাতজনিত। গড়ে প্রতিবছর অন্তত দুই হাজার নারী ফিস্টুলায় নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন। সেই হিসেবে দিনে ৫ জনের বেশি ফিস্টুলায় আক্রান্ত হন। সংশ্লিষ্টদের মতে, সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে মায়ের জীবন বাঁচাতে কখনও কখনও ‘সিজার’ করা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, অপ্রয়োজনে ‘সিজার’ করা হয়ে থাকে। একইভাবে ক্ষেত্রবিশেষ নারীর জীবনের সুরক্ষা ও সুস্থতায় জরায়ু অপসারণজনিত অপারেশন করতে হয়। অদক্ষ, অযোগ্যদের হাতে জরায়ুর অপারেশন করানোর ফলে অপারেশনজনিত ফিস্টুলার হার বাড়ছে। এ প্রসঙ্গে এনজেন্ডারহেলথ্ বাংলাদেশের ফিস্টুলা কেয়ার প্লাস প্রকল্পের দেশীয় প্রকল্প ব্যবস্থাপক ডা. এসকে নাজমুল হুদা যুগান্তরকে বলেন, দেশের আনাচে-কানাচে ভুয়া ক্লিনিক রয়েছে। যেখানে হাতুড়ে ডাক্তার ও অদক্ষ ধাত্রীরা চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। এসব অদক্ষ, অপ্রশিক্ষিত লোকদের হাতে অপারেশন করাতে গিয়ে অনেক নারী ফিস্টুলায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এভাবে অপারেশনজনিত ফিস্টুলার হার বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ মতে, সর্বশেষ পরিচালিত জরিপ অনুযায়ী দেশে প্রসবজনিত ফিস্টুলা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭১ হাজার। বাংলাদেশে প্রতিবছর অন্তত দুই হাজার নারী ফিস্টুলায় নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতি হাজার বিবাহিত নারীর মধ্যে ১ দশমিক ৭ জন ফিস্টুলায় আক্রান্ত। ২০১৪ সালের এক জরিপ অনুযায়ী ফিস্টুলায় আক্রান্তদের ৭৬ শতাংশই প্রসবজনিত এবং ২৪ শতাংশ সার্জিক্যাল বা আঘাতজনিত। দেশে প্রতি এক হাজার বিবাহিত নারীর মধ্যে প্রায় ১ দশমিক ৬৯ জনই প্রসবকালীন ফিস্টুলায় আক্রান্ত। প্রসবকালীন ফিস্টুলায় নারীদের যোনিপথ, মূত্রনালি ও পায়ুপথের মধ্যে ক্ষত সৃষ্টি হয়।
এতে করে প্রসবের রাস্তা দিয়ে সবসময় প্রস্রাব বা পায়খানা বা উভয়ই ঝরতে থাকে। দেশে প্রতিবছর গড়ে ৯শ’ থেকে ১১শ’ ফিস্টুলায় আক্রান্ত রোগীর সফল অপারেশন করা হচ্ছে। দেশে বর্তমানে ২০ জন অভিজ্ঞ এবং দক্ষ ফিস্টুলা সার্জন রয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী একজন ফিস্টুলা সার্জনকে বছরে অন্তত ১২০টি সার্জারি করতে হবে। দেশের সরকারি ও বেসরকারি ১৭টি হাসপাতাল ও সেবাকেন্দ্রে বিনামূল্যে প্রসবজনিত ফিস্টুলায় আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। তবে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে এ চিকিৎসাসেবা খুবই অপ্রতুল। এছাড়া রয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্স সংকট। জানা গেছে, ফিস্টুলায় আক্রান্ত রোগীদের নতুন তালিকা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ২৩ মে আন্তর্জাতিক ফিস্টুলা দিবসকে কেন্দ্র করে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ফিস্টুলা রোগী চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিশ্বের ৫০টির মতো দেশে প্রায় ১০ থেকে ২০ লক্ষাধিক মহিলা ফিস্টুলা রোগ নিয়ে দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছেন। বাংলাদেশেও প্রায় ৭০ হাজার মহিলা এ সমস্যায় আক্রান্ত বলে অনুমান করা হয়। এ প্রসঙ্গে ডা. এসকে নাজমুল হুদা বলেন, এ কথা সত্যি যে দেশে ফিস্টুলা আক্রান্ত রোগীর হালনাগাদ তথ্য নেই। তবে সরকার এই তথ্য হালনাগাদ করতে একটি জরিপ পরিচালনা করছে। জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট (নিপোর্ট), আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, আইসিডিডিআরবি, ফিস্টুলা কেয়ার প্লাস এনজেন্ডারহেলথ্, মিজার ইভালুয়েশন যৌথভাবে এ জরিপের কাজ করছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
No comments