কক্সবাজারের সাবেক ডিসি রুহুল আমিন কারাগারে
মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে দুর্নীতির মামলায় কক্সবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. রুহুল আমিনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। সোমবার দুপুর ১২টায় তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করতে গেলে কক্সবাজার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তৌফিক আজিজ তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। রোববার তার উচ্চ আদালতের দেয়া জামিনের মেয়াদ শেষ হয়। এ কারণে তিনি নিন্ম আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর সাবেক ভূমি হুকুম দখল কর্মকর্তা এমএম মাহমুদুর রহমান কক্সবাজার সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন। চলতি বছরের ৩ এপ্রিল মামলার চার্জশিট দাখিল করেন দুদক চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক সৈয়দ আহমেদ। বর্তমানে মো. রুহুল আমিন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতি সম্পর্ক বিভাগের উপসচিব হিসেবে আছেন। আদালতের আদেশের পর দুর্নীতি দমন কমিশনের কক্সবাজার আদালতের প্রসিকিউটর মো. সিরাজউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ভুয়া কাগজপত্র উপস্থাপন করে ৪৬ কোটি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাতের আয়োজন করেন তৎকালীন ডিসি রুহুল আমিন, এডিসি (রাজস্ব) জাফর আলমসহ ৩৬ জনের একটি চক্র। তারা প্রথম ২০ কোটি টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। বাকি টাকা তুলতে ৫টি চেকও ইস্যু করে সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে দুর্নীতির অভিযোগ পেয়ে দুদক তদন্তে নেমে ইস্যু হওয়া চেকগুলো উত্তোলন স্থগিত করে দেয়। পরে প্রমাণ হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের অভিযুক্ত করে মামলা করে দুদক। এ মামলায় চক্রের মূল হোতা কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার সাবেক উচ্চমান সহকারী আবুল কাশেম মজুমদার, সার্ভেয়ার ফখরুল ইসলাম ও সাবেক এডিসি জাফর আলম কারগারে রয়েছেন। দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তরা ছাড়া পেয়ে গেলে অন্যরা দুর্নীতি করার সাহস পাবে। প্রায় ১৫ মিনিট শুনানি শেষে সাবেক ডিসির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এদিকে সাবেক ডিসি মো. রুহুল আমিন আত্মসমর্পণ করছেন- এ খবর পেয়ে উৎসুক জনতা ও গণমাধ্যমকর্মীরা আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হন। আদালতের আদেশের পর সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরিহিত রুহুল আমিনকে গাড়িতে তোলার সময় সাংবাদিকরা ছবি তুলতে এগিয়ে গেলে তিনি পত্রিকা দিয়ে মুখ আড়াল করার চেষ্টা করেন। আদালত সূত্র জানায়, দুদকের দায়ের করা মামলার চার্জশিট দেয়ার পর থেকে আসামিদের গ্রেফতার অভিযান চলে। চলতি বছরের তিন এপ্রিল প্রধান আসামি উচ্চমান সহকারী আবুল কাশেম ও সাভেয়ার ফখরুল গ্রেফতার হলে ৪ এপ্রিল হাইকোর্ট থেকে ৬ সপ্তাহের জন্য আগাম জামিন নেন কক্সবাজারের রুহুল আমিন। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসারে সোমবার তিনি চুপিসারে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট নুর সুলতান এবং অ্যাডভোকেট রণজিৎ দাশসহ কয়েকজন। আর দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মো. সিরাজউল্লাহ ও অ্যাডভোকেট আবদুর রহিম। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক চট্টগ্রাম-২ এর উপ-পরিচালক ছৈয়দ আহমদ বলেন, দুর্নীতিতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতি সম্পর্ক বিভাগের উপ-সচিব মো. রুহুল আমিন, সাবেক এডিসি (রাজস্ব) জাফর আলমসহ অনেকের সমর্থন ছিল। তারা নির্দিষ্ট একটি অংক নিজেরা গ্রহণও করেছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
No comments