ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এলাকায় হামলা : নিহত ৫, আহত ৪০
ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এলাকায় 'সন্ত্রাসী' হামলায় নিহতের সংখ্যা পাঁচে দাঁড়িয়েছে, আহত হয়েছে সবমিলিয়ে ৪০-এর বেশি। নিহতদের মধ্যে এক পুলিশ অফিসার এবং হামলাকারীও রয়েছে। পুলিশ বলছে, এই হামলার সাথে 'ইসলামি সন্ত্রাসবাদের' সম্পর্ক থাকতে পারে। বুধবার বিকেলে পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে পুলিশের ওপর ছুরি নিয়ে হামলার পাশাপাশি ওয়েস্ট মিনস্টার সেতুতে পথচারীদের ওপর গাড়ি চালিয়ে দেয়া হয়। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউজ অব কমন্সের অধিবেশন চলাকালে এই হামলা হয়। এ সময় পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। লন্ডন মেট্রোপলিটান পুলিশ কমিশনার মার্ক রাউিল বলেন, তদন্তকারীরা সন্দেহ করছেন, বুধবারের হামলায় 'ইসলামি সন্ত্রাসবাদ' জড়িত থাকতে পারে। তিনি বলেন, পুলিশ মনে করছে, তারা হামলাকারীর পরিচয় জানে। তবে তিনি বিস্তারিত জানাতে অস্বীকার করেন। নিহত পুলিশ অফিসারের বয়স ৪৮ বছর। লন্ডনে স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার বিকেল পৌনে ৩টা নাগাদ এই হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার পর পার্লামেন্টের উভয় কক্ষ হাউজ অব কমন্স এবং হাউজ অব লর্ডস বন্ধ করে দেয়া হয়। কাছের সেন্ট টমাস হাসপাতাল এলাকাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জনসাধারণকে ওই এলাকায় যেতে বারণ করা হয়েছে এবং ওই এলাকার ওয়েস্ট মিনস্টার পাতাল রেলস্টেশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ব্রিটিশ পুলিশ এ হামলার ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসী ঘটনা’ হিসেবেই দেখছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রাথমিক খবরে বলা হয়েছিল, হামলাকারী নিকটবর্তী ওয়েস্ট মিনস্টার সেতুর ওপর ছাই রঙা একটি হুন্দাই গাড়ি নিয়ে উঠে বেশ কিছু পথচারীর ওপর গাড়িটি চালিয়ে দেয়।
হামলাকারী পরে গাড়িটি রেলিংয়ে ধাক্কা লাগানোর পরপরই ওয়েস্ট মিনস্টার পার্লামেন্ট ভবনের ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে এবং একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ছুরিকাঘাত করে বলে খবরে বলা হয়েছে। এরপর পুলিশ হামলাকারীকে গুলি করে। পথচারী একজন মহিলা যাকে গাড়ি দিয়ে পিষে দেয়া হয়েছিল, তিনি মারা গেছেন। এ দিকে স্টিভ ভোক নামের একজন পথচারী জানান, তিনি ওয়েস্ট মিনস্টার সেতু দিয়ে হাঁটার সময় রাস্তায় অন্তত দু’টি লাশ এবং নদীর পানিতে একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখেছেন। পার্লামেন্টের একজন কর্মকর্তাও অন্তত দু’জনের গুলিতে নিহত হওয়ার কথা রয়টার্সকে জানিয়েছেন। পার্লামেন্ট ভবনে অবস্থানরত রয়টার্সের এক সাংবাদিক বলেছেন, ফটকের ভেতরে আহত দু’জনকে চিকিৎসাকর্মীরা চিকিৎসা দিচ্ছেন। পার্লামেন্ট এলাকার ভেতর থেকে রাজনীতিক ও সাংবাদিকেরা টুইট করে জানিয়েছেন, তারা ভবনের বাইরে জোরালো আওয়াজ শুনতে পেয়েছেন। স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড জানিয়েছে, তাদের বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞরা ঘটনাস্থলে রওনা হয়েছেন। লন্ডন পুলিশ কর্তৃপ বলেছে, সংসদ ভবনের কাছে এবং ওয়েস্টমিন্সটার ব্রিজের ওপর সন্ত্রাসী হামলায় চারজন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে একজন পুলিশ অফিসার, একজন হামলাকারী এবং দু’জন পথচারী রয়েছেন। মেট্রোপলিটান পুলিশের ভারপ্রাপ্ত ডেপুটি কমিশনার মার্ক রোলি বলেছেন, ২০ জন আহত হয়েছে। হামলাকারী ক’জন ছিল? প্রত্যদর্শীরা দু’জন হামলাকারীর কথা বলছেন। বিবিসির ড্যানিয়েল স্যানফোর্ড বলছেন সংসদের ওপর হামলার ঘটনায় সম্ভবত দু’জন জড়িত ছিল। তিনি বলছেন প্রত্যদর্শীরা তাদের বিবরণে একজন ‘টাকমাথা শ্বেতাঙ্গ’ ব্যক্তি এবং আরেকজন ‘অল্প দাড়িওয়ালা কৃষ্ণাঙ্গ’ ব্যক্তির জড়িত থাকার কথা বলেছেন। ড্যানিয়েল স্যানফোর্ড জোর দিয়ে বলেছেন যদিও বিষয়টি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না কিন্তু এ দুই ব্যক্তি ওয়েস্ট মিনস্টার ব্রিজের ওপর দিয়ে সম্ভবত ‘খুবই দ্রুতগতিতে’ গাড়ি চালিয়ে যায় এবং আনুমানিক আটজন পথচারীকে ধরাশায়ী করে। এর অল্পণের মধ্যেই গাড়িটি পার্লামেন্ট ভবনের রেলিংয়ে গিয়ে ধাক্কা মারে। এখনো পর্যন্ত কেউ হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেনি। হামলাকারী মধ্যবয়সী : প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে ডেইলি মেইল জানায়, হামলাকারী মধ্যবয়সী এবং কালো জ্যাকেট পরা ছিল। সে দেখতে এশিয়ানদের মতো।
সে পার্লামেন্ট ভবনের দিকে দৌড়ে গিয়ে একজন পুলিশ অফিসারকে পেছন থেকে ছুরি দিয়ে হামলা করে এবং আশপাশের পুলিশরা এ সময় তাকে সতর্ক করার পর গুলি ছুড়ে। আহতাবস্থায় হামলাকারীকে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থলে একটি বড় ছুরি পড়ে থাকতে দেখা যায়। এই ঘটনার সময় বিগবেন ঘড়ি দেখতে আসা অনেক পর্যটক ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। গুলির শব্দে চতুর্দিকে ছোটাছুটি শুরু হয়ে যায়। ফলে এলাকাতে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনীর বহু সদস্য ওই এলাকায় এসে দেখেন, টেমস নদী ও ব্রিজের ওপর ইস্তত বিক্ষিপ্ত, রক্তাক্ত দেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এই ঘটনার পর লন্ডনসহ গোটা ব্রিটেনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ ঘটনাস্থলের আশপাশে সবাইকে চলাফেরায় সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়। মেট্রোপলিটন পুলিশের কমান্ডার বিজে হেরিংটন জনসাধারণকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন। পার্লামেন্টের দুই হাউজের স্পিকার জন বার্কাউ ও লর্ড ফাউলার হতাহতদের জন্য সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। রাতে ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের সভাপতিত্বে জরুরি নিরাপত্তা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেনের নিন্দা : মুসলিম কাউন্সিল অব ব্রিটেন এই হামলার নিন্দা করেছে। ব্রিটেনের মুসলিম কাউন্সিল এক বিবৃতি দিয়ে এই হামলার নিন্দা করেছে। মুসলিম কাউন্সিল তাদের বিবৃতিতে বলেছে ওয়েস্ট মিনস্টারের ঘটনায় তারা স্তম্ভিত ও মর্মাহত। আমরা এই হামলার নিন্দা জানাচ্ছি। হামলার উদ্দেশ্য নিয়ে আঁচ করার সময় এখনো আসেনি। হতাহতদের প্রতি আমাদের সমবেদনা জানাই। পুলিশ এবং জরুরি সেবাব্যবস্থার সাথে জড়িতরা যেভাবে সাহসিকতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে আমরা তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। ব্রিটেনের সবচেয়ে নিরাপদ এলাকার একটি ওয়েস্ট মিনস্টার বলে পরিচিত পার্লামেন্ট এলাকায় সংঘটিত এই ঘটনায় দেশজুড়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পাশাপাশি সমালোচনারও ঝড় উঠেছে।
No comments