মুফতি হান্নানসহ তিন জঙ্গির মৃত্যু পরোয়ানা কারাগারে
সাবেক
ব্রিটিশ হাইকমিশনারের ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় তিন আসামির মৃত্যুদণ্ড
সংক্রান্ত সরকারের নির্বাহী আদেশ কারাগারে পৌঁছেছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত
আসামির মধ্যে হরতাকুল জিহাদের শীর্ষনেতা মুফতি আবদুল হান্নান ও শরীফ
শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয়
কারাগারে আছে। অন্য আসামি দেলোয়ার ওরফে রিপনকে রাখা হয়েছে সিলেট কেন্দ্রীয়
কারাগারে। বুধবার বিকালে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদণ্ড সংক্রান্ত
সরকারের নির্বাহী আদেশ পৌঁছায়। এরপর রিপনকে তার মৃত্যু পরোয়ানার আদেশ পড়ে
শোনানো হয়।
অন্যদিকে মুফতি হান্নান ও বিপুলের মৃত্যু পরোয়ানা সংক্রান্ত
আদেশ সিলেট থেকে বিশেষ বাহকের মাধ্যমে বিকালেই কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি
কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্দেশে পাঠানো হয়েছে। কারা মহাপরিদর্শক (আইজি
প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন জানিয়েছেন, মুফতি
হান্নানসহ তিনজনের দণ্ড কার্যকর করতে প্রস্তুত কারা কর্তৃপক্ষ। সরকারের
আদেশ ও জেলকোড অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। মৃত্যু পরোয়ানা শোনানো হল
জঙ্গি রিপনকে : সিলেট ব্যুরো জানায়, রিপনকে বুধবার বিকালে মৃত্যু পরোয়ানা
সংক্রান্ত সরকারের নির্বাহী আদেশ পড়ে শোনানো হয়েছে। এর আগে সকালে তাকে
রিভিউ খারিজের চূড়ান্ত রায় পড়ে শোনানো হয়। কারাগারের সিনিয়র জেলার সগীর আলী
জানান, সকালে রিপন কারা কর্তৃপক্ষকে জানায়, রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা
চাওয়ার ব্যাপারে পরিবার ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।
পরে বিকালে জানায়, এ জন্য সে তার আইনজীবীর সঙ্গেও পরামর্শ করবে। জেলার
সগীর আলী আরও জানান, ফাঁসি কার্যকরের সব প্রস্তুতি রয়েছে সিলেট কেন্দ্রীয়
কারা কর্তৃপক্ষের। তবে প্রাণভিক্ষার আবেদন করলে এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির আদেশ
আসার আগ পর্যন্ত ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া স্থগিত রাখবে কারা কর্তৃপক্ষ।
প্রাণভিক্ষা চাইবে হান্নান ও এক সহযোগী : গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, জঙ্গি
নেতা মুফতি আবদুল হান্নান ও তার সহযোগী শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল রাষ্ট্রপতির
কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করবে। কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মিজানুর রহমান
জানান, বুধবার সকালে রিভিউ আবেদন খারিজের রায় শুনানোর পর প্রাণভিক্ষার
আবেদন করবেন কিনা জানতে চাইলে তারা প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা
জানান।
এর আগে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে রায়ের কপি কাশিমপুর হাই
সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে এসে পৌঁছায়। রাত গভীর হয়ে যাওয়ায় তখন তাদের
পড়ে শুনানো হয়নি। পরে সকাল ১০টার দিকে মুফতি হান্নানসহ দুই জঙ্গিকে রিভিউ
আবেদন খারিজের রায় পড়ে শুনানো হয়। সিনিয়র জেল সুপার মিজানুর রহমান রাত ৮টার
দিকে জানান, মৃত্যু পরোয়ানা সংক্রান্ত সরকারের নির্বাহী আদেশ পৌঁছার পর
তাদের (মুফতি হান্নান ও বিপুল) কাছে আবার জিজ্ঞাসা করা হবে প্রাণভিক্ষার
আবেদন করবে কিনা। প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে চাইলে ২৪ ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ ৭
দিন সময় পাবে। রায় কার্যকরের ব্যাপারে জেল সুপার বলেন, সব ধরনের আইনি
প্রক্রিয়া শেষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পেলেই কেবল রায় কার্যকরের
ব্যবস্থা নেবে কারা কর্তৃপক্ষ। সরকারি আদেশ বাস্তবায়নের জন্য কারা
কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ প্রস্তুত। প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে তৎকালীন
ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দুই পুলিশ
কর্মকর্তাসহ তিনজন নিহত হন। ওই হামলায় আনোয়ার চৌধুরী ও সিলেটের জেলা
প্রশাসকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২০০৮ সালের
২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত ৫ আসামির মধ্যে মুফতি হান্নান, বিপুল ও রিপনকে
মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এ
রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে আসামিপক্ষ। গত বছরের ৭ ডিসেম্বর আসামিদের আপিল
খারিজ হয়ে যায়। আসামিরা মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন
করলেও আপিল বিভাগ ১৯ মার্চ তা খারিজ করে দেন।
একসময় জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল
জিহাদের নেতৃত্বদানকারী মুফতি হান্নানের বিরুদ্ধে আনোয়ার চৌধুরীর ওপর বোমা
হামলার অভিযোগ ছাড়াও নাশকতার অজস অভিযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে
হত্যাচেষ্টাসহ একশ’রও বেশি মানুষকে হত্যার ঘটনায় এসেছে তার নাম। অন্তত
১৩টি মামলায় তার বিচার চলছে। ২০০০ সালের ২০ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়
শেখ হাসিনার সভামঞ্চের কাছে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখার ঘটনায় করা
মামলায় মুফতি হান্নানের নাম আসে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে
আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলাতেও সে জড়িত ছিল বলে অভিযোগ আছে। ২০০১
সালে রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার মামলায়ও তার মৃত্যুদণ্ড
হয়েছে। ওই হত্যা মামলায় মুফতি হান্নানসহ আসামিদের ডেথ রেফারেন্সের ওপর
হাইকোর্টে শুনানি প্রায় শেষপর্যায়ে রয়েছে। ৬ মার্চ একটি মামলার শুনানি শেষে
মুফতি হান্নান ও তার সহযোগীদের আদালত থেকে কাশিমপুর কারাগারে ফিরিয়ে নেয়ার
পথে টঙ্গীতে প্রিজনভ্যানে হামলা চালিয়ে তাদের ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা হয়।
No comments