ইসরাইলে ফের যুদ্ধের দামামা
ইসরাইল
ও ফিলিস্তিনের মধ্যে পুনরায় যুদ্ধের আশংকা দেখা দিচ্ছে। নতুন একটা যুদ্ধের
জন্য সব পক্ষই প্রস্তুতি শুরু করেছে। ইতিমধ্যে সীমান্ত এলাকা থেকে ইসরাইল
তার জনগণকে ব্যাপকহারে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করছে। ইসরাইলের সঙ্গে
ফিলিস্তিনের সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাসের যদি যুদ্ধ বেধেই যায়, তাহলে হামাস
সাধারণত যে এলাকাগুলোকে টার্গেট করে সেই এলাকাগুলো থেকে জনগণকে সরিয়ে নেয়া
হবে। খবর ভয়েস অব আমেরিকার। হামাস, হেজবুল্লাহ ও অন্যান্য সংগঠনের আক্রমণ
থেকে রক্ষা করতে সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত দুই লক্ষাধিক লোককে অন্যত্র সরিয়ে
নেয়ার পরিকল্পনা ইসরাইলের। এটাই হবে ইসরাইলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা
পরিকল্পনা। আর এ পরিকল্পনার আওতায় সীমান্তবর্তী পৌরসভাগুলোর সঙ্গে কাজ করবে
ইসরাইলি সেনাবাহিনী। নতুন একটি যুদ্ধ যে কোনো সময় শুরু হতে পারে। আর সে
লক্ষ্যেই সব পক্ষই প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইরান সমর্থিত হেজবুল্লাহ গোষ্ঠী
ইতিমধ্যে ইসরাইলকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার শপথ নিয়েছে। গোষ্ঠীটি বর্তমানে
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পক্ষে লড়াই করছে। ইতিমধ্যে ইসরাইল ও
সিরিয়া-হেজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়েছে। গত সপ্তাহে সিরিয়ার
প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের অনুগত বাহিনীর ওপর ব্যাপক বিমান হামলা চালায়
ইসরাইল।
বিপরীতে বাশার বাহিনীও পাল্টা বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে।
প্রত্যেক পক্ষই হুশিয়ারি দিয়েছে যে, নতুন একটি সংঘাত আগের সংঘাতগুলোর চেয়ে
আরও ভয়াবহ হবে। ২০০৬ সালের ইসরাইল ও হেজবুল্লাহর মধ্যকার যুদ্ধে ৪ হাজারের
বেশি রকেট লঞ্চার ছোড়ে হেজবুল্লাহ। অন্যদিকে ইসরাইলি বিমানবাহিনী দক্ষিণ
লেবাননে হেজবুল্লাহর ঘাঁটিগুলোকে টার্গেট করে ব্যাপক হামলা চালায়।
মাসব্যাপী ওই যুদ্ধে লেবাননের ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয়। এদের বেশিরভাগই
বেসামরিক নাগরিক। পক্ষান্তরে ইসরাইলের ৪৪ জন বেসামরিক নাগরিক ও ১২১ জন
সৈন্য নিহত হয়। ২০১৪ সালে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের ইসলামী গোষ্ঠী হামাসের
মধ্যকার ৫০ দিনের যুদ্ধে ২ হাজার ১০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়। অন্যদিকে ৬ জন
ইসরাইলি নাগরিক ও ৬৬ জন সৈন্য নিহত হয়। ইসরাইলি বিমান হামলায় গাজার বহু
এলাকা ধ্বংস হয়ে যায়। এ যুদ্ধে হামাস ইসরাইলে কয়েক হাজার রকেট নিক্ষেপ করে।
ইসরাইল দাবি করছে, হেজবুল্লাহ ও হামাস সমগ্র ইসরাইলে আঘাত হানতে সক্ষম-
এমন অস্ত্রাগার গড়ে তুলেছে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর
একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, হেজবুল্লাহ ও হামাসের হামলা থেকে রক্ষার
জন্য ‘সেফ ডিসট্যান্স’ নামে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ইসরাইল। ইতজিক বার
নামের ওই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘২০১৭ সালে এসে সমগ্র ইসরাইল হুমকির মুখে
রয়েছে। বিশাল আকারের রকেট হামলা ঠেকাতে তাই প্রস্তুতি নেয়া শুরু হয়েছে।’
ইতজিক বার আরও বলেন, বাশার আল আসাদের অনুগত বাহিনীর পাশাপাশি বিরোধীদের
সঙ্গে লড়াই করে যুদ্ধের ক্ষেত্রে হেজবুল্লাহ গোষ্ঠী আরও অভিজ্ঞতা অর্জন
করেছে এবং গোষ্ঠীটির নেতা হাসান নাসরুল্লাহ সম্প্রতি ইসরাইলে হামলার
ব্যাপারে বেশ কয়েকবার ইঙ্গিত দিয়েছেন। বার বলেন, যেসব এলাকায় বিপদের
সম্ভাবনা বেশি এবং আমরা নাগরিকদের জন্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে
সক্ষম হব না, সেই এলাকাগুলো থেকে তাদের সরিয়ে নিরাপদ এলাকার হোটেল,
স্কুল ও
কিবুজ নামক অতিথি কেন্দ্রগুলোতে নেয়া হবে। ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর অপর
এক সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন,
২০১৪ সালের গাজা-ইসরাইল যুদ্ধ থেকে শিক্ষা নিয়ে এ পরিকল্পনা গ্রহণ করা
হয়েছে। ওই যুদ্ধের সময় সীমান্তবর্তী এলাকার জনগণকে না সরিয়ে নিয়ে তাদের
ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। যুদ্ধ শুরু হলে কয়েক লক্ষ ইসরাইলি নাগরিক
তাদের বাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিল। ওই সময় তাদের বাড়িগুলো ভূতের বাড়িতে
রূপান্তরিত হয়। বার বলেন, মর্টার ও রকেট নিক্ষেপের কারণে সীমান্তবর্তী
জনগণই সবচেয়ে বেশি বিপদে থাকে। ইতজিক বার জানান, ২০০৬ সালের যুদ্ধের পর
হেজবুল্লাহ তার অস্ত্রভাণ্ডারকে তাৎপর্যপূর্ণভাবে সমৃদ্ধ করেছে। প্রায় ১
লাখ ৫০ হাজার ক্ষেপণাস্ত্রের মজুদ তারা গড়ে তুলেছে। তবে ইসরাইল পরিষ্কার
করে বলেছে, হেজবুল্লাহর বিরুদ্ধে তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। আর এক্ষেত্রে
ইসরাইলি বাহিনীর ‘আয়রন ডোম’ অতিরিক্ত সুবিধা হিসেবে কাজ করবে। গত শুক্রবার
সিরিয়ায় ইসরাইলি বিমান হামলার পর বাশার বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়লে একটি
ক্ষেপণাস্ত্র ধরে ফেলে ইসরাইলের আয়রন ডোম ব্যবস্থা। তবে হেজবুল্লাহ বাহিনীর
কাছে বিমানবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে বলে আশংকা রয়েছে ইসরাইলের।
No comments