বিদ্যালয় সরিয়ে দোকানঘর!
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরিয়ে দিয়ে সেই জায়গায় দোকানঘর নির্মাণ করছে পাশের মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে ক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে দোকানঘর উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নের ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম বহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর পাশেই রয়েছে এমপিওভুক্ত বহরপুর উচ্চবিদ্যালয়।
বহরপুর বাজারের কাছে বিদ্যালয় দুটির অবস্থান। বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদ ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি তিন শতক জায়গার ওপর গড়ে ওঠে। এই জমি দিয়েছিল পাশের বহরপুর উচ্চবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সরকারি হয়ে যায়। সম্প্রতি বিদ্যালয়টি এখান থেকে সরিয়ে দিয়ে সেখানে দোকানঘর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় উচ্চবিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, প্রাচীর দিয়ে ঘেরা তিন একরের বেশি জায়গায় অবস্থিত বিদ্যালয় দুটি। যে জায়গায় প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল, সেটি সড়ক ঘেঁষে অবস্থিত। সেখানে এখন দোকান নির্মাণের কাজ চলছে। ১৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট প্রস্থ করে ১৮টি দোকান হচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গায় পড়েছে চারটি। বহরপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মজিদ শেখ বলেন, গত বছরের ১৫ অক্টোবর বিদ্যালয়ের মাঠে জঙ্গিবিরোধী সমাবেশ হয়। এতে জেলা প্রশাসক, জেলা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) অনেকে উপস্থিত ছিলেন। তখন বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সরিয়ে দোকান নির্মাণের অনুমতি চাইলে তাঁরা মৌখিক সম্মতি দেন। তবে উপজেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুল হক বলেন, ওই অনুষ্ঠানে অনুমতি চাইলেও তা পেয়েছিল কি না, তাঁর জানা নেই। তিনি আরও বলেন, ১৬ ফেব্রুয়ারি উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভায় উপস্থিত অনেকে বিদ্যালয় সরিয়ে দোকানঘর নির্মাণের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সভায় ওই দোকানঘর উচ্ছেদের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। উপজেলা প্রশাসন বলছে,
কোনো সরকারি বিদ্যালয় স্থানান্তর করতে হলে শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের লিখিত অনুমতি নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে সেটা অনুসরণ করা হয়নি। বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, নিয়মবহির্ভূত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ আটকে দোকানঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। বিষয়টি দুঃখজনক। তিনি অভিযোগ করেন, বহরপুর উচ্চবিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি খলিলুর রহমান দোকানঘর বরাদ্দ দিয়ে জামানত হিসেবে বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়েছেন। সেই টাকা ব্যাংকে জমা না রেখে তিনি ইচ্ছামতো খরচ করছেন। অভিযোগ অস্বীকার করে খলিলুর রহমান বলেন, ওই টাকা দিয়ে দোকান নির্মাণের ব্যয় মেটানো হচ্ছে। এ কারণে টাকা ব্যাংকে রাখা হয়নি। বিদ্যালয়ের স্বার্থেই দোকানঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের ৩৪ জন শিক্ষকের মধ্যে মাত্র ১২ জন এমপিওভুক্ত। অন্যদের বিদ্যালয়ের আয় থেকে বেতন দেওয়া হয়। এসব টাকার জোগান দেওয়া ও উন্নয়নকাজ করতেই দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে।
কাটা পড়েছে গাছ
এদিকে ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমিতে থাকা মূল্যবান কয়েকটি মেহগনিগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, ১০টির মতো গাছ কাটা পড়েছে। তবে অন্যরা বলছেন, সংখ্যাটা অনেক বেশি। চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ওই স্থানে ৩০-৪০টি মেহগনিগাছ ছিল। সেগুলো কেটে বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। তবে বহরপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, সেখানে মেহগনিগাছ ছিল ১০টি। গাছগুলো দিয়ে উভয় বিদ্যালয়ের চেয়ার-বেঞ্চসহ আসবাব বানানো হয়েছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখন
যে স্থানে দোকানঘর নির্মাণ চলছে, সেখান থেকে কিছুটা উত্তরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। এখানে আট কক্ষবিশিষ্ট দ্বিতল ভবন হবে। ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ কোটি টাকা। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এই টাকা দিচ্ছে। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়টির পাঠদান কার্যক্রম চলছে পাশের একটি টিনশেড ঘরে। বহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের জন্য বহরপুর উচ্চবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই জমি দিয়েছিল। তাদের প্রয়োজনে এখন জায়গাটা নিচ্ছে। তবে তারাই নতুন জায়গা দেওয়ায় আমাদের আপত্তির কিছু নেই।’ তবে বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এইচ এম রকিব হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যালয় সরিয়ে দেওয়া এবং সেখানে দোকানঘর নির্মাণের বিষয়ে কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। সঠিক প্রক্রিয়া না মানায় খুব শিগগিরই ওই দোকান উচ্ছেদে অভিযান চালানো হবে।
কাটা পড়েছে গাছ
এদিকে ওই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমিতে থাকা মূল্যবান কয়েকটি মেহগনিগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, ১০টির মতো গাছ কাটা পড়েছে। তবে অন্যরা বলছেন, সংখ্যাটা অনেক বেশি। চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, ওই স্থানে ৩০-৪০টি মেহগনিগাছ ছিল। সেগুলো কেটে বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। তবে বহরপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, সেখানে মেহগনিগাছ ছিল ১০টি। গাছগুলো দিয়ে উভয় বিদ্যালয়ের চেয়ার-বেঞ্চসহ আসবাব বানানো হয়েছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখন
যে স্থানে দোকানঘর নির্মাণ চলছে, সেখান থেকে কিছুটা উত্তরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। এখানে আট কক্ষবিশিষ্ট দ্বিতল ভবন হবে। ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ কোটি টাকা। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এই টাকা দিচ্ছে। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়টির পাঠদান কার্যক্রম চলছে পাশের একটি টিনশেড ঘরে। বহরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাপস কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের জন্য বহরপুর উচ্চবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই জমি দিয়েছিল। তাদের প্রয়োজনে এখন জায়গাটা নিচ্ছে। তবে তারাই নতুন জায়গা দেওয়ায় আমাদের আপত্তির কিছু নেই।’ তবে বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এইচ এম রকিব হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যালয় সরিয়ে দেওয়া এবং সেখানে দোকানঘর নির্মাণের বিষয়ে কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। সঠিক প্রক্রিয়া না মানায় খুব শিগগিরই ওই দোকান উচ্ছেদে অভিযান চালানো হবে।
No comments