চার বছর ধরে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি
মৌচাক-মালিবাগ উড়ালসড়ক নির্মাণকাজের জন্য প্রায় চার বছর ধরে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে রামপুরা-ডিআইটি রোড ও আউটার সার্কুলার রোডে। মালিবাগ, গুলবাগ, বকশীবাগ, শান্তিবাগ ও ইন্দ্রপুরীতে যাতায়াতের প্রধান এই দুটি সড়ক চলাচলের অনুপযোগী থাকায় দুর্ভোগে পড়েছে বাসিন্দারা। এলাকাবাসীর দাবি উড়ালসড়কের কাজ দ্রুত শেষ করার।
এলাকাগুলো ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১২ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। ডিআইটি সড়ক, আউটার সার্কুলার রোড, মালিবাগ কলেজ রোড, মালিবাগ প্রথম লেন, মালিবাগ পাবনা কলোনি রোড, ঝিলপাড়, লেক রোড, খিলগাঁও-গুলবাগ রোড, শান্তিবাগ মসজিদ রোড, শান্তিবাগ প্রাথমিক বিদ্যালয় রোড, পশ্চিম শান্তিবাগ এলাকা নিয়ে এই ওয়ার্ড গঠিত। ওয়ার্ডে লক্ষাধিক লোকের বাস। গতকাল বুধবার এই এলাকাগুলো ঘুরে এবং স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওয়ার্ডে শিশু-কিশোরদের জন্য খেলাধুলার পার্ক ও মাঠ নেই, সরকারি কমিউনিটি সেন্টার ও সিটি করপোরেশনের কাঁচাবাজার নেই। আছে জলাবদ্ধতা ও মাদকের সমস্যা। এলাকার ফুটপাতে গড়ে উঠেছে অবৈধ দোকানপাট। এলাকাগুলোতে ব্যাটারিচালিত অবৈধ রিকশা চলছে দেদার। এতে মাঝেমধ্যেই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। সরেজমিন দেখা যায়, মালিবাগ রেলগেট থেকে মৌচাক মোড় পর্যন্ত ডিআইটি সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের পূর্ব পাশে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের নালা তৈরির কাজ চলছে। এতে পুরো সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। পশ্চিম পাশের লেনে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সড়কে এলোমেলোভাবে উড়ালসড়কের নির্মাণসামগ্রী রাখা। একইভাবে মৌচাক মোড় থেকে মালিবাগ মোড় পর্যন্ত সড়কে পানি জমে আছে। সড়কে লেগে আছে তীব্র যানজট। ময়লা পানির দুর্গন্ধে নাক-মুখ ঢেকে চলাচল করছে পথচারীরা। যানবাহনও চলছে ধীরগতিতে। ফুটপাতে গড়ে উঠেছে অবৈধ দোকানপাট। এতে পথচারীদের চলাচলে আরও বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। পাশ দিয়ে যানবাহন গেলে কাদাপানি পথচারীদের গায়ে ছিটকে পড়ছে। এই পানির মধ্য দিয়েই পথ চলতে হচ্ছে। মৌচাক মার্কেটে কেনাকাটা করে কাদাপানি মাড়িয়ে গুলবাগের বাসায় ফিরছিলেন শারমিন আক্তার ও তাঁর দুই ছেলে। তিনি বলেন, ‘তিন বছর ধরে এই এলাকায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে। ১২ মাসই এই সড়কে পানি জমে থাকে। একবার রিকশা উল্টে পড়ে গিয়েছিলাম। এই দুর্ভোগের শেষ কোথায় জানি না।’ মালিবাগ, গুলবাগ, বকশীবাগ, শান্তিবাগ ও ইন্দ্রপুরীর সড়কে অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা চলছে প্রচুর। রিকশাচালকেরা সরু সড়কে দ্রুতগতিতে পাল্লা দিয়ে রিকশা চালানোয় মাঝেমধ্যেই ঘটছে দুর্ঘটনা। পাবনা কলোনির বাসিন্দা আলতাফ হোসেন বলেন,
এসব রিকশার দ্রুতগতির কারণে মহল্লার সড়কে হাঁটা যায় না। রিকশার ধাক্কায় প্রায়ই মহল্লার মানুষ আহত হন। অনেক সময় রিকশার গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় দুর্ঘটনা ঘটে। দেখা যায়, মালিবাগ রেলগেট থেকে ল কলেজ পর্যন্ত রেললাইন ঘেঁষে সড়ক ও ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে কাঁচাবাজার। এতে এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বাজারের বর্জ্য রেললাইনের ওপর ফেলা হচ্ছে। এতে বাতাসে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। স্থানীয় বাসিন্দা আলী আজম ও দোকানি মো. সুজন বলেন, এই ওয়ার্ডে ডিএসসিসির কোনো কাঁচাবাজার নেই। তাই এই রেললাইন ঘেঁষে কাঁচামালের দোকানপাট গড়ে উঠেছে। গুলবাগ থেকে শাহজাহানপুর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৩ একর আয়তনের একটি ঝিল রয়েছে। ঝিলের চারপাশে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী দোকানপাট। এসব দোকান ও আশপাশের বাসাবাড়ির বর্জ্য এই ঝিলে ফেলা হচ্ছে। এতে ঝিলের পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নাক-মুখ চেপে চলাচল করছে পথচারীরা। বিকেলে ইন্দ্রপুরীর একটি গলিতে ক্রিকেট খেলছিল কয়েকজন কিশোর। মনির হোসেন নামে এক কিশোর বলে, তাদের এলাকায় খেলাধুলা করার কোনো মাঠ নেই। সময় পেলেই গলিতে তারা খেলাধুলা করে। তবে গলিতে খেলাধুলা করতে অনেকে বাধা দেয়। এলাকার বাসিন্দা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এলাকায় খেলার মাঠ না থাকায় খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিশু-কিশোরেরা৷ এতে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ এই এলাকায় মাঠ ও পার্ক নির্মাণ করার মতো সরকারের বিভিন্ন সংস্থার অব্যবহৃত অনেক জায়গা রয়েছে।
No comments