দিনে চাঁদা ৬ কোটি টাকা
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, সারা দেশে পরিবহন খাতে দিনে কমপক্ষে ৬ কোটি টাকার বেশি চাঁদাবাজি হয়। বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কের নির্ধারিত যানবাহন থেকে প্রকাশ্যে তোলা হয় এ চাঁদা। আর অপ্রকাশ্যে কত কোটি টাকার চাঁদা তোলা হয়, তার কোনো সঠিক হিসাব নেই। তবে এর পরিমাণ প্রকশ্যে তোলা চাঁদার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হবে বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ চাঁদা পরিবহন শ্রমিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন ও এর অধীন ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতিসহ বিভিন্ন মালিক সমিতির মধ্যে ভাগবাটোয়ারা হয়। এর মধ্যে ফেডারেশনের হয়ে সারা দেশে প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে প্রতিদিন চাঁদা তুলছে তালিকাভুক্ত ১৮৬টি শ্রমিক ইউনিয়ন। পাশাপাশি অন্য সমিতির প্রতিনিধিরাও আদায় করছেন এ চাঁদা। বিভিন্ন পরিবহন সংগঠন এ চাঁদা আদায় করলেও মূলত শ্রমিক ফেডারেশনের কাছেই দেশের গোটা পরিবহন খাত জিম্মি হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ অনেক যানবাহন মালিক ও শ্রমিকের। সরকার সমর্থিত এ সংগঠনটি বছরের পর বছর সারা দেশে পরিবহন খাতে ছড়ি ঘুরাচ্ছে।
পাশাপাশি যখন-তখন ইচ্ছেমাফিক বাস-ট্রাকসহ নির্ধারিত যানবাহনে চাঁদার টাকা ধার্য করে দিচ্ছে। তবে প্রতিদিন গাড়ি থেকে আদায় করা এ চাঁদা শ্রম আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা। আরও জানা গেছে, শ্রমিক ফেডারেশন ও মালিক সমিতি নিয়ন্ত্রণ করছেন সরকারের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী। এর মধ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি পদে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি হচ্ছেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা। তারা দুজনই সরকারের সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, যার মূল কাজ এ খাতে চাঁদাবাজি বন্ধ করা। পাশাপাশি তারা জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলেরও সদস্য। যে কাউন্সিলের প্রধান কাজ হচ্ছে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। অথচ তাদের বিরুদ্ধেই রয়েছে সড়ক নিরাপত্তা বিঘিœত করার সব দাবি আদায়ের অভিযোগ। পরিবহন খাতে শ্রমিক ফেডারেশনের চাঁদাবাজির বৈধতার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি নৌমন্ত্রী ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলতে পারবেন। উনাদের সঙ্গে কথা বলার পরমর্শ দেন তিনি। এর বাইরে আর কোনো প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। জানতে চাইলে বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান যুগান্তরকে বলেন, শ্রমিক ফেডারেশন এবং মালিক ও শ্রমিক সংগঠন যৌথ সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতি গাড়ি থেকে দৈনিক ৭০ টাকা পরিচালনা ব্যয় নেয়া হয়। তবে তিনি দাবি করেন, শুধু ঢাকায় গাড়িপ্রতি ১০ টাকা আদায় করা হয় শ্রমিক ফেডারেশনের নামে, সারা দেশ থেকে নয়। পরিবহন খাতে কোথাও কোথাও প্রতি গাড়ি থেকে দৈনিক ৩০০-৫০০ টাকা আদায় করা হয়।
আমরা চাই, এ খাতে চাঁদাবাজি বন্ধ হোক। বিভিন্ন সময়ে এ চাঁদাবাজি বন্ধে আমরা বক্তব্য দিয়েছি। শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক চুন্নু যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের নামে দৈনিক গাড়ি থেকে চাঁদা আদায়ের বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। আইন অনুযায়ী বেসিক ইউনিয়ন শুধু তাদের সদস্যদের কাছ থেকে মাসিক হারে চাঁদা আদায় করতে পারবে এবং ফেডারেশন তাদের অন্তর্ভুক্ত ইউনিয়ন থেকে মাসিক হারে চাঁদা নিতে পারবে। এর বাইরে নেয়ার সুযোগ নেই। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শ্রমিক ফেডারেশন আইনের বাইরে গিয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ পেলে শ্রম আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা দেশের বাইরে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এ সংগঠনের মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ চাঁদা আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, কোথাও ৭০ টাকা আবার কোথাও তারও বেশি আদায় করা হয়। এটি মূলত পরিবহন খাতে শৃংখলা ধরে রাখতে পরিচালন ব্যয় হিসেবে নেয়া হয়। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, বাসটার্মিনাল ও রুটগুলোয় নিজস্ব লোক দিয়ে গাড়ির শৃংখলা বজায় রাখা হয়। যাত্রীদের সুবিধার্থে এসব লোকজন কাজ করছে। তাদের বেতন-ভাতা দেয়ার জন্য এ টাকা নেয়া হয়। বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) সর্বশেষ হিসাব মতে, সারা দেশে রেজিস্ট্রিকৃত যানবাহনের সংখ্যা ২৯ লাখ ৪৮ হাজার ৯০৬টি। এর মধ্যে বাস-ট্রাক, মিনিবাস, কাভার্ডভ্যান, পিকআপ, ডেলিভারি ভ্যান, অয়েল ট্যাংকার ও লং ভেহিক্যালসহ ফেডারেশন কর্তৃক চাঁদা আদায়যোগ্য যানবাহনের সংখ্যা গড়ে প্রায় তিন লাখ। অনুসন্ধানে জানা গেছে, পরিবহন সেক্টর থেকে প্রতিদিন প্রকাশ্যে ৬ কোটি ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি হচ্ছে। এ হিসেবে প্রতি মাসে এ চাঁদার অংক দাঁড়াচ্ছে ১৮৩ কোটি টাকা এবং বছরে ২ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রতিদিন চলাচলকারী তিন লাখ গাড়ি (গড়ে) থেকে ৭০ টাকা হারে পরিচালন ব্যয় বাবদ আদায় করে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো। এতে দৈনিক আদায় হয় ২ কোটি ১০ লাখ টাকা।
আর শ্রমিকদের কল্যাণের কথা বলে সারা দেশ থেকে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিকের কাছ থেকে ১০ টাকা হারে প্রতিদিন প্রায় ৪ কোটি টাকা আদায় করা হচ্ছে। চাঁদার হিসাব নেই : তবে চাঁদার এ মোটা অংকের টাকা কোথায় ব্যয় হয়, তার সঠিক তথ্য নেই সংশ্লিষ্ট কারও কাছে। পরিবহন নেতারা এ ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো কিছুই বলতে রাজি হননি। এমনকি শ্রম অধিদফতরসহ বিভিন্ন দফতরে যোগাযোগ করেও এর সদুত্তর মেলেনি। এমনকি শ্রমিক কল্যাণ ফান্ডের টাকা কোন ব্যাংকে এবং কী পরিমাণ জমা আছে, এ ব্যাপারে একাধিক নেতার কাছে জানতে চাইলেও সুনির্দিষ্টভাবে কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি তারা। কল্যাণ ফান্ডে এ মুহূর্তে কত টাকা জমা আছে- জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সিনিয়র সহসভাপতি আবদুর রহিম বখত বুধবার টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, ৯ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকার মতো ব্যাংকে জমা আছে। তিনি আরও বলেন, গত দুই বছরে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ১৩০ থেকে ১৩৫ জন শ্রমিক মারা গেছেন। নিহত শ্রমিকদের প্রতি পরিবারকে ৪০ হাজার টাকা করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের চিকিৎসা ও তাদের সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি এবং বইখাতা কেনা বাবদ বড় অংকের টাকা খরচ হয়েছে। শ্রমিক ফেডারেশনের কল্যাণ তহবিলে জমা থাকা অর্থের পরিমাণসহ হিসাব-নিকাশ সংক্রান্ত তথ্য জানতে চাইলে তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন শ্রম অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট শাখার উপপরিচালক শামীমা সুলতানা বারী। তিনি বলেন, এ ধরনের তথ্য জানানোর কোনো বিধান নেই।
চাঁদা আদায় : যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা গেছে, গাড়িপ্রতি প্রতিদিন যে ৭০ টাকা আদায় করা হয়, তার মধ্যে শ্রমিক ফেডারেশন ১০ টাকা, শ্রমিক ইউনিয়ন ২০ টাকা এবং মালিক সমিতি পায় ৪০ টাকা। এ হিসাবে প্রতিদিন দেশের সড়ক ও মহাসড়কগুলো থেকে প্রকাশ্য চাঁদাবাজির ৩০ লাখ টাকা পায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। বাকি চাঁদার মধ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ও চাঁদা উত্তোলনকারী স্থানীয় শ্রমিক ইউনিয়নগুলো প্রতিদিন ৬০ লাখ টাকা পাচ্ছে। এর বাইরে শ্রমিকদের কাছ থেকে কল্যাণের নামে ১০ টাকা হারে আরও ৪ কোটি টাকা পায় শ্রমিক ফেডারেশন। এছাড়া তালিকাভুক্ত ১৮৬টি ইউনিয়ন থেকে ‘পরিচালন ব্যয়’ নামে ৫০০ টাকা হারে মাসে ৯৩ হাজার টাকা চাঁদা নিচ্ছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। বছরের হিসাবে যা দাঁড়ায় ১১ লাখ ১৬ হাজার টাকা। তবে ফেডারেশন থেকে এ চাঁদার হার ৫০০ টাকা বলা হলেও ইউনিয়নগুলো থেকে ন্যূনতম ৫ হাজার টাকা করে আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এবং শ্রম অধিদফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন প্রতি গাড়ি থেকে ফেডারেশনের নামে টাকা আদায় আইনবহির্ভূত। ফেডারেশন তাদের সদস্য ইউনিয়ন থেকে অনুমোদিত চাঁদা আদায় করতে পারবে।
এর বাইরে কোনো চাঁদা আদায় করতে পারবে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ এলে কর্তৃপক্ষকে বিবেচনার জন্য দেয়া হবে। মঙ্গলবার সরেজমিন মহাখালী বাসটার্মিনালে দেখা গেছে, পুরো টার্মিনালে ২০-২৫ জন গাড়ি থেকে চাঁদা তুলছেন। তাদের প্রত্যেকের হাতেই রয়েছে লাঠি। টাকা নিলেও তার কোনো রসিদ দিচ্ছেন না। তবে প্রতিটি গাড়ি টার্মিনাল থেকে বের হওয়ার সময় এসব ব্যক্তি থেকে নির্দিষ্ট স্লিপ নিতে হয়। এটিই গাড়ি বের করার পাস হিসেবে গণ্য করা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইসলাম পরিবহনের এক কন্ডাক্টর বলেন, মালিক সংগঠন, শ্রমিক সংগঠনকে আলাদা চাঁদা দিতে হয়। প্রতি ট্রিপে ২০০-৩০০ টাকা হিসাবে দৈনিক দুই ট্রিপে ৬০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। তিনি বলেন, এটাই প্রচলিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই টাকা না দিলে গাড়ি ছাড়তে পারব না। টাকা আদায়ের বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি নন এসব পরিবহন কর্মী। রতন নামের এক কর্মীকে টাকা নেয়ার কারণ ও হার জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে মানা আছে। আপনি নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে নেতার নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি ওই কর্মী। পরিবহন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, শ্রমিক ফেডারেশনের হয়ে দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা রেজিস্ট্রেশনভুক্ত ১৮৬টি মালিক-শ্রমিক ইউনিয়ন ও তাদের শাখা কার্যালয় প্রতিদিন নির্ধারিত পরিবহন থেকে চাঁদা তুলছে। আর চাঁদার নির্ধারিত অংক সাধারণত দিনশেষে অথবা কখনও সপ্তাহ শেষে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় অফিসে। এজন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে আলাদা আলাদা রুট হিসেবে ভাগ করে বেতনভুক্ত কর্মচারী রাখা হয়েছে। ব্যাংক অথবা আর্থিক কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নয়, এসব বেতনভুক্ত কর্মচারীই দেশের বিভিন্ন এলাকার সমিতি অফিস থেকে সরাসরি ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় অফিসে টাকা পৌঁছে দেন। তারা আরও জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যার পর মতিঝিলে সড়ক ভবনের ফেডারেশন কার্যালয়ে ভিড় জমে শ্রমিক নেতাদের। দামি গাড়ি আর একাধিক সশস্ত্র দেহরক্ষী নিয়ে তারা (নেতারা) হাজির হন ফেডারেশন কার্যালয়ে। গভীর রাত পর্যন্ত সেখানে চলে চাঁদার ভাগবাটোয়ারা। ৮, ৯ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ফেডারেশন কার্যালয়ে সরেজমিন ঘুরে পাওয়া গেছে এসব তথ্যের সত্যতা। সাদা পোশাকে অসংখ্য অস্ত্রধারী ও দামি গাড়ির মালিক কারা, তা জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট থানার (পল্টন) ওসি রফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘আরে ভাই, এটা নিয়ে প্রতিরাতে আলাদা একটা টেনশন কাজ করে। ওই ভবনে প্রতিরাতে যে পরিমাণ ভিআইপি ব্যক্তি সশস্ত্র দেহরক্ষী নিয়ে আসেন, সেসব সশস্ত্র ব্যক্তির পাহারা দিতে থানা পুলিশ তটস্থ থাকে। এসব অস্ত্রধারীকে পাহারা দিতে প্রতিরাতে সেখানে পুলিশের একটি টিম স্ট্যান্ডবাই রাখতে হয়।’
তিনি আশংকা প্রকাশ করে বলেন, ‘আল্লাহ না করুক, এসব দেহরক্ষী কিংবা তাদের মালিকদের মধ্যে যদি কখনও কোনো ঝামেলা হয় অথবা কেউ একটি ফায়ার ওপেন করে, তাহলে পুরো এলাকা রণক্ষেত্র হয়ে যাবে।’ তবে ভাগাভাগির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই। তারা বলছেন, চাঁদা ভাগাভাগি নয়, পরিচালন ব্যয় থেকে নির্ধারিত টাকার একটি অংশ প্রতিদিন নেতারা সম্মানী বাবদ (অনারিয়াম) পেয়ে থাকেন। নেতৃত্ব (ক্রমানুসারে) অনুযায়ী ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়। এসব অভিযোগের বিষয়ে শ্রমিক ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান যুগান্তরকে বলেন, ফেডারেশনের অধীন ইউনিয়নগুলো প্রতি মাসে ৫০০ টাকা হারে চাঁদা দেয়। ওই চাঁদার টাকায় সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রমের ব্যয় নির্বাহ করা হয়। প্রতি গাড়ি থেকে শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর ৭০ টাকা আদায় এবং সেখান থেকে গাড়িপ্রতি শ্রমিক ফেডারেশনের জন্য ১০ টাকা আদায়ের বৈধতা প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, সড়ক খাতের চাঁদা নিয়ন্ত্রণ করতেই আমরা গাড়িপ্রতি ৭০ টাকা পরিচালন ব্যয় আদায়ের প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এক সভায় তা ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। শ্রমিক ফেডারেশনের নেতৃত্বের সম্মানী প্রসঙ্গে হুমায়ুন কবির খান বলেন, সংগঠনের সভাপতি ওয়াজিউদ্দিন খান গুরুতর অসুস্থ। শ্রমিকদের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে তিনি পা হারিয়েছেন। এজন্য তার চিকিৎসার জন্য কিছু সম্মানী দেয়া হয়। তবে অন্য কেউ মাসিক সম্মানী পান না।
অনির্ধারিত চাঁদাবাজি : নির্ধারিত ৭০ টাকার বাইরে বিভিন্ন খাত উল্লেখ করে টার্মিনাল ও মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা হারে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্যে চাঁদা আদায় করা হয়। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যাত্রী পরিবহনে নিয়োজিত ঈগল পরিবহনের শীর্ষ এক কর্মকর্তা সোমবার রাতে যুগান্তরকে বলেন, ফেডারেশনের নির্ধারিত ৭০ টাকার বাইরে খুলনা, সাতক্ষীরা, বেনাপোল, বাগেরহাট থেকে তাদের একেকটি বাসকে প্রতি টিপে ৫০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। তবে এর বাইরে বিভিন্ন ব্রিজে সরকার নির্ধারিত টোলের বাইরে অতিরিক্ত টাকা ও ফেরিঘাটে নির্ধারিত চাঁদা দিতে হচ্ছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নির্ধারিত চাঁদা ছাড়াও রাজধানীর টার্মিনালগুলো থেকে প্রতিটি বের হতে যানজট বাহিনীকে দিতে হয় ২০ টাকা (যা কাঙালি চাঁদা হিসেবে পরিচিত), লাইনম্যানকে ২০ টাকা, টার্মিনালের গেট থেকে বের হলে সার্জেন্টের হাজিরা ফি ৫০ থেকে ১০০ টাকা দিতে হয়। টার্মিনালে প্রবেশের সময়ও দিতে হয় ২০ টাকা। এর বাইরে পার্কিং বাবদ টার্মিনালের ইজারাদারকে দিতে হয় আরও ৪০ টাকা। সব মিলিয়ে প্রতি গাড়ির জন্য মালিককে চাঁদা গুনতে হয় দিনে ৭০০ থেকে ৮৫০ টাকা। সায়েদাবাদ থেকে নোয়াখালী চলাচলরত একটি পরিবহনের মালিক আজিজ ভূঁইয়া যুগান্তরকে জানান, প্রতিদিন এ রুটের মালিকদের বিভিন্ন খাতে গাড়িপ্রতি ৭৫০ টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে। অন্যথায় সড়কে গাড়ি নামানো কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অনির্ধারিত চাঁদাবাজি : নির্ধারিত ৭০ টাকার বাইরে বিভিন্ন খাত উল্লেখ করে টার্মিনাল ও মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে ৩৫০ থেকে ৫৫০ টাকা হারে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্যে চাঁদা আদায় করা হয়। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যাত্রী পরিবহনে নিয়োজিত ঈগল পরিবহনের শীর্ষ এক কর্মকর্তা সোমবার রাতে যুগান্তরকে বলেন, ফেডারেশনের নির্ধারিত ৭০ টাকার বাইরে খুলনা, সাতক্ষীরা, বেনাপোল, বাগেরহাট থেকে তাদের একেকটি বাসকে প্রতি টিপে ৫০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। তবে এর বাইরে বিভিন্ন ব্রিজে সরকার নির্ধারিত টোলের বাইরে অতিরিক্ত টাকা ও ফেরিঘাটে নির্ধারিত চাঁদা দিতে হচ্ছে। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নির্ধারিত চাঁদা ছাড়াও রাজধানীর টার্মিনালগুলো থেকে প্রতিটি বের হতে যানজট বাহিনীকে দিতে হয় ২০ টাকা (যা কাঙালি চাঁদা হিসেবে পরিচিত), লাইনম্যানকে ২০ টাকা, টার্মিনালের গেট থেকে বের হলে সার্জেন্টের হাজিরা ফি ৫০ থেকে ১০০ টাকা দিতে হয়। টার্মিনালে প্রবেশের সময়ও দিতে হয় ২০ টাকা। এর বাইরে পার্কিং বাবদ টার্মিনালের ইজারাদারকে দিতে হয় আরও ৪০ টাকা। সব মিলিয়ে প্রতি গাড়ির জন্য মালিককে চাঁদা গুনতে হয় দিনে ৭০০ থেকে ৮৫০ টাকা। সায়েদাবাদ থেকে নোয়াখালী চলাচলরত একটি পরিবহনের মালিক আজিজ ভূঁইয়া যুগান্তরকে জানান, প্রতিদিন এ রুটের মালিকদের বিভিন্ন খাতে গাড়িপ্রতি ৭৫০ টাকা চাঁদা দিতে হচ্ছে। অন্যথায় সড়কে গাড়ি নামানো কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
No comments