নব্য জেএমবির নতুন কৌশল ‘আত্মঘাতী’
আইনশৃংখলা
বাহিনীর একের পর এক সফল অভিযানে কোণঠাসা নব্য জেএমবি ঘুরে দাঁড়াতে ঘন ঘন
কৌশল বদল করছে। তাদের সবশেষ কৌশল হচ্ছে, ধরা পড়লেই আত্মঘাতী হয়ে ওঠা।
পুলিশের হাতে ধরা পড়লে গোপন তথ্য ফাঁস ঠেকাতেই নিজেকে উৎসর্গ করে দেয়ার এ
কৌশল নেয়া হয়েছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, জঙ্গিরা মনে করছে বিভিন্ন
স্থানে অভিযানে গ্রেফতার সদস্যরা জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য ফাঁস করে দিচ্ছে।
আর এসব ঠেকাতেই এ নতুন কৌশল নিয়েছে তারা। সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিদের
আত্মঘাতী হয়ে ওঠার একাধিক ঘটনা ঘটেছে।
কয়েকটি অভিযানে গ্রেফতার জঙ্গিদের
স্বীকারোক্তির পর বেশ কয়েকটি স্থানে সফল অভিযান চালায় পুলিশ। আর এটিই
জঙ্গিদের জন্য ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যার পর বিমানবন্দর
গোলচত্বর এলাকায় আত্মঘাতী বিস্ফোরণে যুবক নিহত হয়। সামনে পুলিশ চেকপোস্টে
ধরা পড়ার শংকা থেকেই সে নিজেকে উড়িয়ে দেয়। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, এক
স্থান থেকে অন্য স্থানে বোমাবহনকারী জঙ্গিরা আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে ধরা
পড়লে সংগঠনের অনেক গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। গ্রেফতারদের দেয়া তথ্যে অনেক
জঙ্গি ধরাও পড়েছে। এ কারণে এই নতুন কৌশল নিয়েছে তারা। শুক্রবার সন্ধ্যার পর
বিমানবন্দর গোলচত্বরে বিস্ফোরণে নিহত যুবকও বোমা বহন করছিল। পুলিশের
বিমানবন্দর জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) রুহুল আমিন সাগর শনিবার বিকালে
যুগান্তরকে বলেন, বিমানবন্দর এলাকার গোলচত্বরে আত্মঘাতী বিস্ফোরণের ঘটনায়
অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজন ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। নিহতের পরিচয়
এখনও পাওয়া যায়নি। ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৫ সালে হোসেনি দালানে বোমা হামলার পর নব্য
জেএমবির বেশ কয়েকজন জঙ্গি কমান্ডার ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়। ওই সময় টার্গেট
ছিল ভিন্নমতাবলম্বীদের টার্গেট করে বড় ধরনের হামলা করা। ওই সময় কয়েকজন
জঙ্গি কমান্ডার নিহত হওয়ার পর তারা কৌশল পরিবর্তন করে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার
মানুষকে টার্গেট করে একের পর এক মিশন বাস্তবায়ন করে। তখনও তারা আত্মঘাতী
হামলার কৌশলে যায়নি। পরে তারা কৌশল বদল করে ‘আত্মঘাতী’ জঙ্গিদের দিয়ে বড়
মিশন বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করে। ওই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১৬ সালে
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি এবং কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ভয়াবহ হামলার ঘটনা
ঘটায় নব্য জেএমবি। গুলশান হামলার পর আইনশৃংখলা বাহিনীর তৎপরতা বেড়ে যায়।
এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বোমা,
অস্ত্র ও বিস্ফোরক বহনে জঙ্গিরা সমস্যায়
পড়েছে। তল্লাশির মুখে ধরাও পড়েছে অনেক জঙ্গি। এ কারণে অস্ত্র, বোমা ও
বিস্ফোরক বহনেও আত্মঘাতী জঙ্গিদের ব্যবহার করার নতুন কৌশল নিয়েছে নব্য
জেএমবি। একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, গুলশান হামলার পর
আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা তামিম আহমেদ
চৌধুরীসহ অন্তত ৪৩ জঙ্গি নিহত হয়। বেশ কয়েকজন জঙ্গি ধরা পড়ে। আইনশৃংখলা
বাহিনীর তৎপরতার মুখে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে তারা। ফলে তারা ঘন ঘন কৌশল
পরিবর্তন করছে। জঙ্গি হামলার পরপরই আইএসের দায় স্বীকার সম্পর্কে পুলিশ
কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটলেই সাইট ইন্টেলিজেন্স দায়
স্বীকারের বার্তা দেয়। এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এ বিষয়ে
পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সহেলী ফেরদৌস
যুগান্তরকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স কোনো স্বীকৃত
সংগঠন নয়। এমনকি কোনো অফিসিয়াল অর্গানাইজেশনও নয়। তারা তাদের মতো করে মতামত
দেয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে আইএসের কোনো অস্তিত্ব নেই। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে
জঙ্গিরা সব সময় মিডিয়া কাভারেজ চায়। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো
ঘটনা ঘটলে তারা দায় স্বীকারের মাধ্যমে ক্রেডিট নেয়ার চেষ্টা করে। তারা সাইট
ইন্টেলিজেন্সকে ব্যবহার করতে পারে অথবা সাইট ইন্টেলিজেন্সের কোনো স্বার্থ
থাকতে পারে।
বিমানবন্দরে বিস্ফোরণের সময় কয়েকজন জঙ্গি আশপাশে ছিল :
বিমানবন্দরের ঘটনার সময় কয়েক জঙ্গি ঘটনাস্থলের আশপাশে ছিল বলে পুলিশের
ধারণা। এ বিষয়ে পুলিশের বিমানবন্দর জোনের এসি রুহুল আমিন সাগর যুগান্তরকে
বলেন, নিহত যুবকের সঙ্গে আরও কয়েকজন ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকতে পারে। মামলায় এ
বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বিস্ফোরণে
নিহত যুবকের হামলার উদ্দেশ্য ছিল না। সে হয়তো কোনো আস্তানায় বোমা নিয়ে
যাচ্ছিল। তার কাঁধের ব্যাগ ও ট্রুলি তল্লাশি করে তিনটি শক্তিশালী বোমা
পাওয়া গেছে। বোমা বহনের ধরন দেখে মনে হয়েছে, সে নব্য জেএমবির আত্মঘাতী
জঙ্গি দলের সদস্য। শরীরে বাঁধা বোমার বিস্ফোরণেই তার মৃত্যু হয়েছে। নিহত
যুবকের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ : বিমানবন্দর সড়কের গোলচত্বরে পুলিশের তল্লাশি
চৌকির কাছে শুক্রবার সন্ধ্যায় বোমা বিস্ফোরণে যুবকের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ এ তথ্য
জানান। তিনি বলেন, নিহত ব্যক্তির চুল ও দাঁত সংগ্রহ করা হয়েছে ডিএনএ
পরীক্ষার জন্য। ওই ব্যক্তি নেশাজাতীয় কিছু খেয়েছিল কিনা, তা পরীক্ষার জন্য
রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। এর আগে ১৭ মার্চ দুপুরে রাজধানীর বিমানবন্দর সংলগ্ন
প্রস্তাবিত র্যাব সদর দফতরের অস্থায়ী ব্যারাকে দেয়াল টপকে ঢুকে পড়ে এক
জঙ্গি। তাকে জিজ্ঞাসা করতেই সঙ্গে থাকা সুইসাইডাল ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটায়।
আত্মঘাতী বোমার আঘাতে মুহূর্তেই ছিন্নভিন্ন হয় ওই জঙ্গির দেহ।
No comments