সিলেটে জঙ্গি আস্তানার অদূরে বিস্ফোরণ, নিহত বেড়ে ৫
সিলেটের
শিববাড়ির জঙ্গি আস্তানার অদূরে দুদফা বোমা বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে
দাঁড়িয়েছে পাঁচজনে। নিহতদের মধ্যে পুলিশের এক ইন্সপেক্টর ও ছাত্রলীগের একজন
কর্মী রয়েছেন। বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত হয়েছেন অর্ধশত। তাদের মধ্যে গুরুতর
আহত র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম
আজাদকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) আনা হয়েছে। অন্যদের
সিলেটেই চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এদিকে শনিবার দিনরাত দেড়টার দিকে জঙ্গি
আস্তানা 'আতিয়া মহল'কে কেন্দ্র করে শিববাড়ি থেকে কদমতলী পর্যন্ত এক
কিলোমিটার জায়গা জুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করেছে সিলেট মহানগর পুলিশ-এসএমপি। এর
আগে শনিবার সন্ধ্যার পর আতিয়া মহলের অদূরে দুটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পুলিশ
জানিয়েছে, প্রথম দফা বিস্ফোরণের পর কর্ডন করে রাখা এলাকা 'ক্রাইম সিন'
করতে গেলে দ্বিতীয় দফা বিস্ফোরণ ঘটে। দুদফা বিস্ফোরণে পুলিশ কর্মকর্তাসহ
পাঁচজন নিহত হন। আহত হন অর্ধশত। নিহতরা হলেন সিলেট পুলিশের বিশেষ শাখার
(এসবি) ইন্সপেক্টর আবু কয়সর, সিলেট নগরীর ঝালোপাড়া চাঁদনীঘাট এলাকার
সিরাজুল ইসলাম আওলাদের পুত্র ওয়াহিদুল ইসলাম অপু, নগরীর দাঁড়িয়াপাড়ার
বাসিন্দা ব্যবসায়ী শহীদুল ইসলাম (৩৮), জান্নাতুল ইসলাম ফাহিম এবং অজ্ঞাত
পরিচয়ের আরও একজন। নিহত অপু সিলেটের মদন মোহন কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের
তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ও ছাত্রলীগের কর্মী। সিলেট মহানগর পুলিশ-এসএমপির
অতিরিক্ত কমিশনার এসএম রুকন উদ্দিন বিস্ফোরণ ও হতাহতের খবর নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রথম দফা বোমা বিস্ফোরণে ফারুক, সিরাজ, আলম, বক্কর,
আব্দুর রহিম, জুয়েল, রুবেল, রনি, সৈয়দ আলী, সুলেমান, মোসতাক, কানু দাস,
আজমল আলী ও সেলিমসহ অজ্ঞাত কয়েকজন আহতরা হয়েছে। দ্বিতীয় দফা বিস্ফোফরণে
দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি শাহ হারুনুর রশীদসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর আরও কয়েক
সদস্য আহত হয়েছেন। আহতদেরকে তিনটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রাত ৯টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎক
সুবল জ্যোতি চাকমা জানিয়েছেন, আহত ৩৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতালে অপু নামের একজনের লাশ রয়েছে।
অপর একজন ক্লিনিক্যালি ডেড। পরে
হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত আরেক চিকিৎক ডা. তারেক আহমেদ চারজন নিহত
হওয়ার খবর নিশ্চিত করেন। মধ্যরাতের পর আরও একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।
প্রসঙ্গত, 'আতিয়া মহলে' জঙ্গিদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে শুক্রবার ভোর থেকে ওই
আস্তানাসহ শিববাড়ি পাঠানপাড়া এলাকা ঘিরে রাখে আইনশৃংখলা বাহিনী। শনিবার
সকাল পৌনে ৯টা থেকে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোর নেতৃত্বে 'আতিয়া মহলে'
অভিযান 'অপারেশন টোয়াইলাইট' শুরু হয়। দুপুর থেকে টানা কয়েক ঘণ্টা
মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ এবং একাধিক শক্তিশালী বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যায়
অভিযানের বিষয়ে সেনাবাহিনী প্রেস ব্রিফিং করে। ব্রিফিংয়ের পর পরই পাঠানপাড়া
জামে মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে প্রথমে বিস্ফোরণ ঘটে।
সেখানে পুলিশের একটি চৌকি ছিল। এরপর কর্ডন করে রাখা এলাকা 'ক্রাইম সিন'
করতে গেলে রাত ৮টার দিকে ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা বস্তাসদৃশ একটি বস্তু পরীক্ষা
করার সময় দ্বিতীয় দফায় বিস্ফোরণ ঘটে। এসএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এসএম রুকন
উদ্দিন জানান, 'আতিয়া মহলের অদূরে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কে আত্মঘাতী বোমা
হামলার ঘটনা ঘটে। এতে হতাহতদের জরুরি ভিত্তিতে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে পাঠানো হয়।' তিনি জানান, ঘটনাস্থলে দুটি মোটরসাইকেল পড়ে রয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে- এই দুটি মোটরসাইকেলে করেই হামলাকারী এসে আত্মঘাতী
বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
No comments