মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের নারী কর্মী
মধ্যপ্রাচ্যে
কাজ করতে গিয়ে বাংলাদেশের নারীরা কী মাত্রায় নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন,
গতকাল শনিবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে তা পরিষ্কার। নির্যাতনের যে
ঘটনাগুলো জানা গেছে, এর পরিসংখ্যান এবং নির্যাতনের যে ধরন ও কায়দা, তাতে
এগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। মধ্যপ্রাচ্যে
বাংলাদেশের নারী কর্মী পাঠানোর বিষয়টি নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা জরুরি হয়ে
পড়েছে। গত ১ বছরে শুধু সৌদি আরবে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে যাওয়া দেড় শর
বেশি নারী শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে প্রথম আলো তার
অনুসন্ধানে জানতে পেরেছে। বোঝা যায় বাস্তব পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ।
কুড়িগ্রামের এক নারীর কথা বলা হয়েছে, যিনি গৃহকর্তার ধর্ষণের শিকার হয়ে
অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর দেশে ফিরে এসেছেন। সেই নারী ও তাঁর পরিবারের
অসহায়ত্বের বিষয়টি আমরা অনুমান করতে পারি। তাঁর নিরুপায় স্বামী ও ভাই প্রথম
আলোর কাছে জানতে চেয়েছেন, ‘এখন আমরা কী করব বলে দেন।’ ফিলিপাইন,
ইন্দোনেশিয়া ও ভারতের মতো দেশ গৃহকর্মী হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে
নারীদের পাঠানো নিষিদ্ধ করার পর বাংলাদেশ থেকে নারী গৃহকর্মী পাঠানো শুরু
হয়। কিন্তু কোন পরিস্থিতিতে সেই দেশগুলো মধ্যপ্রাচ্যে নারী কর্মী পাঠানো
বন্ধ করেছিল, সেটা আমাদের বিবেচনায় নেওয়া উচিত ছিল। ফিলিপাইনের একটি সংসদীয়
প্রতিনিধিদল ২০১১ সালে সে দেশের নারী কর্মীদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে
সৌদি আরবে গিয়েছিল। সেই তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছিল, ‘আমরা
আমাদের মেয়েদের ধর্ষিত বা নির্যাতিত হওয়ার জন্য সৌদি আরবে বিক্রি করতে পারি
না।’ মধ্যপ্রাচ্যে নারী গৃহকর্মী পাঠিয়ে বাংলাদেশের যে অভিজ্ঞতা হলো, তা
বিবেচনায় নিয়ে করণীয় ঠিক করা জরুরি হয়ে পড়েছে। নারী গৃহকর্মীদের নিরাপত্তা
নিশ্চিত করার কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া যায় কি না, তা দেখতে হবে। যদি তা
সম্ভব না হয়, তবে নারী কর্মী পাঠানো বন্ধ করে দেওয়ার মতো চূড়ান্ত
সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
No comments