দোষ আমাকেই দিন: ক্যামেরন
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন স্বীকার করেছেন, তিনি পরিবারের অফশোর ফান্ড নিয়ে বিতর্কের বিষয়টি সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে পারেননি। এটা তাঁরই দোষ। ক্যামেরন আরও বলেন, তিনি তাঁর কর বিবরণী জনসমক্ষে প্রকাশ করবেন। লন্ডনে গতকাল শনিবার ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের বসন্তকালীন ফোরামে ক্যামেরন বলেন, নিজের আর্থিক বিষয়গুলো নিয়ে বিতর্কের জন্য তিনি নিজেই দায়ী। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ সপ্তাহটা আমার ভালো যায়নি। এটা আরও ভালোভাবে মোকাবিলা করা উচিত ছিল আমার। আরও ভালোভাবে তা করতে পারতামও। ’ ক্যামেরন বলেন, ‘আমি জানি, এ থেকে শেখার বিষয় আছে। আমি সে শিক্ষাটা নেব।...১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট বা অজ্ঞাত উপদেষ্টাদের দুষবেন না। দোষটা আমাকেই দিন।’ সম্প্রতি ফাঁস হওয়া আলোচিত পানামা পেপারসের নথি অনুযায়ী ডেভিড ক্যামেরনের বাবা ইয়ান ক্যামেরন অফশোর ট্রাস্ট ‘ব্লেয়ারমোর হোল্ডিংস ইনকরপোরেট’-এর মালিক ছিলেন। নথি বলছে, এর মাধ্যমে ইয়ান যুক্তরাজ্যে কর ফাঁকি দিয়ে বিদেশে ৩০ বছর ধরে অর্থ জমা রেখেছিলেন। উত্তরাধিকার সূত্রে ওই তহবিলের লভ্যাংশ পেয়েছেন ডেভিড ক্যামেরন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর প্রথমে আর্থিক বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের ‘একান্ত ব্যাপার’ দাবি করলেও পরে সমালোচনার মুখে একাধিকবার ব্যাখ্যা দেয়। এতে বলা হয়, ভবিষ্যতে আর ওই তহবিল থেকে লাভবান হবে না ক্যামেরন পরিবার। এ ছাড়া পানামা পেপারস ফাঁস হওয়ার পরপরই যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ান পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কর ফাঁকির বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সমন্বিত পদক্ষেপ থেকে অফশোর ট্রাস্ট রক্ষায় ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা চালিয়েছিলেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী। মোসাক ফনসেকার কার্যালয়ে তল্লাশি: পানামা পেপারসের ঘটনায় জড়িত বহুজাতিক আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকার একটি কার্যালয়ে তল্লাশি চালিয়েছে এল সালভাদরের পুলিশ। এল সালভাদরের রাজধানী স্যান সালভাদরের ওই কার্যালয়টিতে গত শুক্রবার তল্লাশি চালিয়ে বেশ কয়েকটি কম্পিউটার ও অনেক নথিপত্র জব্দ করা হয়। পানামা পেপারসের কর ফাঁকিবাজ তথা অর্থ পাচারকারীদের তালিকায় এল সালভাদরের ৩৩ জন বিত্তবানের নাম থাকায় গত বুধবার দেশটির সরকার ঘোষণা দেয়, ওই ব্যক্তিরা আদতেই কোনো আইন ভেঙেছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। এরপরই মোসাক ফনসেকার কার্যালয়ে তল্লাশি চালানো হলো। সরকারি কৌঁসুলি ডগলাস মেলেন্দেস শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, সেখান থেকে ২০টি কম্পিউটার এবং বেশ কিছু নথিপত্র জব্দ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির সাতজন কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে কাউকে আটক করা হয়নি।
প্রতিষ্ঠানটি বাইরের সাইনবোর্ড খুলে ফেলার পরই তাঁরা সেখানে তল্লাশির সিদ্ধান্ত নেন। এদিকে আইসল্যান্ডের পার্লামেন্ট শুক্রবার নতুন সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দলের অনাস্থা ভোট প্রত্যাখ্যান করেছে। পানামা পেপারস নথি ফাঁসের পর ওই সরকার ব্যাপক চাপের মুখে পড়েছে। কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। দেড় ঘণ্টা আলোচনার পর অনাস্থা প্রস্তাবটি ৩৮-২৫ ভোটে নাকচ হয়ে যায়। অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের একটি আন্তর্জাতিক জোট সম্প্রতি বিশ্বের শত শত ক্ষমতাসীন নেতা এবং ক্রীড়া ও সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের তারকাদের কর ফাঁকি দেওয়ার বিপুল পরিমাণ তথ্য ফাঁস করে। পানামাভিত্তিক আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকার কাছ থেকে ওই নথিগুলো ফাঁস করা হয় বলে এগুলো পানামা পেপারস নামে পরিচিতি পেয়েছে।
No comments