সেই লেস্টারে রানিয়েরি এখন...
এক বছর আগে যখন লেস্টারে নাম লেখান, অনেকেই ভুরু কুঁচকে ফেলেছিলেন। শেষ পর্যন্ত কিনা ৬৩ বছর বয়সী ক্লদিও রানিয়েরি, কদিন আগে যাঁকে গ্রিসের কোচের দায়িত্ব ছাড়তে হয়েছে? ওটা ছিল আসলে পুঁচকে ফারো আইল্যান্ডের কাছে গ্রিসের হারের মূল্য। আগের মৌসুমে অবনমন থেকে একটুর জন্য বেঁচে যাওয়া লেস্টারে রানিয়েরি কতটা কী করতে পারবেন, সেটা নিয়ে সংশয়বাদীদের অভাব ছিল না। এখন নিশ্চয়ই সেই সংশয়-দ্বিধা সব উড়ে গেছে। গত মৌসুমের ঠিক এই সময়ে যে দলটির অবনমন নিশ্চিত বলে মনে হচ্ছিল, তাদের সামনে এখন প্রিমিয়ার লিগ জয়ের হাতছানি। রূপকথা শব্দটা ফুটবলে অতি ব্যবহারে কিছুটা ক্লিশে হয়ে গেছে, তবে এই মৌসুমে লেস্টারের ক্ষেত্রে সেটি বাহুল্য মনে হচ্ছে না। ছয় ম্যাচ বাকি থাকতে লেস্টার এখন দুইয়ে থাকা টটেনহামের চেয়ে ৭ পয়েন্ট এগিয়ে। শিরোপা জয়ের রাঙা সকালটা যেন এখন একটু একটু করে কাছে আসছে। তবে রানিয়েরি এখনই অত দূরে তাকাতে চাইছেন না। একটা একটা ম্যাচ হিসাব করেই এগোতে চান এই ইতালিয়ান কোচ। আজ অবনমন অঞ্চলে থাকা সান্ডারল্যান্ডের বাধা আগে পার হতে হবে! সেটা হলে চ্যাম্পিয়নস লিগও নিশ্চিত হয়ে যেতে পারে। তবে রানিয়েরি দূরের বাদ্যে বিভোর না হয়ে কাছের সুরেই আচ্ছন্ন, ‘চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে পারলে সেটা হবে অসাধারণ। কল্পনা করুন তো পরের মৌসুমে এখানে বায়ার্ন মিউনিখ, বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদের মতো ক্লাব খেলছে। আমাদের সমর্থক আর গোটা ক্লাবের জন্যই এটা হবে দারুণ একটা অর্জন। তবে এ মুহূর্তে আমাদের ধ্যানজ্ঞান শুধু সান্ডারল্যান্ড।’ পা মাটিতে রেখে নিজেদের কাজ ঠিকঠাক করে যাওয়া—এটাই রানিয়েরির সাফল্যের গোপন ফর্মুলা। এই মৌসুমে লেস্টারের দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম ম্যাচের আগে খেলোয়াড়দের যে কথাগুলো বলেছিলেন, সেগুলো অন্য সব ক্লাবের জন্যই প্রেরণা, ‘আমরা হয়তো দল হিসেবে ছোট, কিন্তু আমি চাই সবাই হৃদয় দিয়ে খেলুক। প্রতিপক্ষ কে, সেটি নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। আমি চাই, তোমরা যেন হারার আগে না হারো। যদি প্রতিপক্ষ আমাদের চেয়ে ভালো হয়, তাহলে ঠিক আছে, আমি অভিনন্দন জানাব। কিন্তু ওদের দেখাতে হবে ওরা আমাদের চেয়ে ভালো।’ নিচে পড়ে থাকা কোনো ক্লাবকে টেনে তোলার কীর্তি রানিয়েরির এটাই প্রথম নয়। ১৯৮৮ সালে যখন ইতালিয়ান ক্লাব ক্যালিয়ারির দায়িত্ব নেন, তখন তারা তৃতীয় বিভাগ সিরি ‘সি’তে ধুঁকছে। পর পর দুই মৌসুমে উত্তরণে সেই ক্যালিয়ারিই উঠে আসে সিরি ‘আ’তে। ১৯৯৩ সালে ফিওরেন্টিনার দায়িত্ব নিয়ে তুলে আনেন সিরি ‘আ’তে, পরে তাদের জেতান কোপা ইতালিয়া। ২০০৪ সালে ভ্যালেন্সিয়ার হয়ে জেতেন উয়েফা সুপার কাপ। ২০০৭ সালে সিরি ‘বি’ থেকে মাত্রই উঠে আসা জুভেন্টাসকে তুলে আনেন তিনে। ৬৪ বছর বয়সী এই কোচের গল্পই এ রকম—ধুঁকতে থাকা ক্লাবকে চূড়ায় নিয়ে যাওয়া!
No comments