সকল ধর্মীয় উপধারার নিরাপত্তা চাই
গত শুক্রবার রাজশাহীর বাগমারায় একটি আহমদিয়া মসজিদে জুমার নামাজ চলাকালে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা স্পষ্টতই বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। কয়েক মাস ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপাসনালয়ে সন্ত্রাসী হামলার যেসব ঘটনা ঘটেছে, এটি তারই ধারাবাহিকতা বলে ধারণা করা হচ্ছে। উদ্বেগের বিষয় হলো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর জোরালো তৎপরতা সত্ত্বেও এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ হচ্ছে না। বাগমারার আহমদিয়া মসজিদে বোমা বিস্ফোরণে যে একমাত্র ব্যক্তির মৃত্যু ঘটেছে, বোমাটি তিনিই বহন করছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন। ওই তরুণের পরিচয় এখনো অজ্ঞাত রয়ে গেছে। প্রত্যন্ত একটি অঞ্চলে, যেখানে মসজিদগামী মুসল্লিদের সবাই পরস্পরের পরিচিত, সেখানে সম্পূর্ণ অপরিচিত এক তরুণ নিজের পোশাকের ভেতরে বোমা নিয়ে নামাজে শামিল হয়েছিলেন—এটা নিঃসন্দেহে রহস্যজনক। তবে তিনি যে নিরীহ মুসল্লিদের প্রাণহানি ঘটানোর উদ্দেশ্যেই সেখানে ঢুকেছিলেন, এটা সন্দেহাতীত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব তাঁর পরিচয় বের করা এবং সেই সূত্রে তাঁর নেপথ্যের শক্তিকে চিহ্নিত করা। এই দেশে হিন্দুদের মন্দির, খ্রিষ্টানদের গির্জা আক্রান্ত হয়েছে।
খুন বা জখম করা হয়েছে খ্রিষ্টান যাজকদের। ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর ওপর এ ধরনের দুঃখজনক আক্রমণ বেশ কিছুদিন ধরেই কমবেশি ঘটে চলেছে। তবে খ্রিষ্টান যাজকদের হত্যার উদ্দেশ্যে আক্রমণ করা সম্প্রতি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তদুপরি ইসলামেরই আরেকটি ধারা শিয়া মুসলমানদের তাজিয়া মিছিলে কিংবা শিয়া মসজিদে হামলার সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো দেশবাসীকে বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। শিয়া সম্প্রদায়ের পর বাগমারায় আহমদিয়া মসজিদের এই বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠল, একই ধর্মের অন্যান্য ধারা–উপধারার মানুষও এখন আর নিরাপদে নেই। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী হামলা ইসলামি জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর আচরণের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। মধ্যপ্রাচ্য ও পাকিস্তান- আফগানিস্তানে এ ধরনের ঘটনার খবর আমরা পাই। বাংলাদেশ যেন তেমন ইসলামি জঙ্গিবাদের শিকারে পরিণত না হয়, সে জন্য সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো এবং জনগণকে মিলিতভাবে সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
No comments