ঢাকার আড়াই হাজার মামলা যাচ্ছে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে by মহিউদ্দিন অদুল
দ্রুত
বিচার ট্রাইব্যুনালের ঢাকার ৪টি আদালতে এবার যাচ্ছে আড়াই সহস্রাধিক দায়রা
মামলা। সরকারের সরাসরি সিদ্ধান্তে এই ট্রাইব্যুনালটিগুলোতে একসঙ্গে এত বেশি
সংখ্যায় মামলা পাঠানোর প্রক্রিয়া এই প্রথম। ফলে দায়রা মামলাগুলোর দ্রুত
বিচারের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও এই ট্রাইব্যুনালে দ্রুততার সঙ্গেই
মামলাগুলোর বিচারকাজ শেষ করার তৎপরতা থাকবে বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের
বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর ও সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ওমর ফারুক ফারুকী মানবজমিনকে বলেন, যেহেতু দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্ট নির্দিষ্ট আইনে গঠিত এবং সেখানে সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গেজেটে মামলা স্থানান্তর হয়। সেহেতু সেখানে অন্য সাধারণ বা বিশেষ দায়রা মামলা পাঠানো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালেরই নীতিবিরুদ্ধ। রাজনৈতিক তদবির এবং উদ্দেশ্যেও সরকার নিজেদের সিদ্ধান্তে ট্রাইব্যুনালটিতে মামলা পাঠিয়ে থাকে। এ ছাড়া সাধারণ মামলা সেখানে পাঠানো হলেও অন্যান্য সাধারণ আদালতের মতো করে তা পরিচালিত হবে না। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অনেকটা দ্রুত বিচারের আদলে দ্রুততার সঙ্গে পরিচালনা করবেন বলে জানা গেছে। গুরুতর অপরাধের চাঞ্চল্যকর মামলার পরিবর্তে এভাবে এত বেশি পরিমাণ বিশেষ দায়রা মামলার বিচার এ ট্রাইব্যুনালে পরিচালিত হলে এর মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়ে ট্রাইব্যুনালটি সাধারণ মানুষের আস্থা হারাতে পারে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী কতিপয় অপরাধের দ্রুত বিচারের লক্ষ্যে ২০০২ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে প্রণীত হয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন ২০০২। ওই বছরের ২৪শে অক্টোবর থেকে আইনটি কার্যকর হয়। দ্রুত বিচার আইন ২০০২ অনুযায়ী সরকার সরকারি গেজেটে জনস্বার্থে হত্যা, ধর্ষণ, আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য এবং মাদকদ্রব্য-সংক্রান্ত অপরাধের বিচারাধীন কোনো মামলা এর যে কোনো পর্যায়ে ক্ষেত্রমতো দায়রা আদালত বা বিশেষ আদালত বা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করে থাকে। বর্তমানে সারা দেশের অধিকাংশ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মতো ঢাকার ৪টি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালেও মামলা সংকট চলছে। গত সোমবার পর্যন্ত রাজধানী ও ঢাকা বিভাগের আওতাধীন ৪টি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলা ছিল মাত্র ১০৩টি। উচ্চ আদালতের আদেশে এর মধ্যে ৩৮টি মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। চার ট্রাইব্যুনালে সচল রয়েছে মাত্র ৬৫টি মামলা। এর মধ্যে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ ৩৬টি মামলার মধ্যে ১০টি স্থগিত ও ২৬টি সচল, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২-এ ২৯টি মামলার মধ্যে ১১টি স্থগিত ও ১৮টি সচল, ট্রাইব্যুনাল-৩-এর ২৮ মামলার ১৩টি স্থগিত ও ১৫টি সচল এবং ট্রাইব্যুনাল-৪-এ ১০ মামলার ৪টি স্থগিত ও ৬টি সচল রয়েছে। এ অবস্থায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দ্রুত বিচার আইনে ট্রাইব্যুনাল চারটিতে হাতেগুনা কয়েকটি মামলা পাঠানো হলেও সেখানে
কয়েক গুণ বেশি বিশেষ দায়রা মামলা পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে চার ট্রাইব্যুনালে ৫৯৬টি দায়রা মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে ট্রাইব্যুনাল-১-এ ৯৬, ২-এ ১৬১, ৩-এ ১১৪ এবং ট্রাইব্যুনাল-৪-এ ২২৯ বিশেষ দায়রা মামলার বিচারকাজ চলছে।
তবে বর্তমানে দ্রুত বিচার আইনে চাঞ্চল্যকর মামলা স্থানান্তরের বিশেষ উদ্যোগ না থাকলেও ট্রাইব্যুনালগুলোতে আড়াই হাজারের বেশি বিশেষ দায়রা মামলা পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে। গত ২২শে নভেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. কামরুল হোসেন মোল্লা ১০৬ (এ)/১৫ নম্বর আদেশে অধীন তিন আদালতের ৬৮৪টি মামলা ঢাকা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ৪-এ বদলি করার নির্দেশ দেন। আদেশে বলা হয় ‘বিশেষ আদালত (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আইন, ২০০৩ (২০০৩ সালের ৩৫নং আইন) এর ধারা ৪(খ) এবং এসআরও নং-৩৬/২০০৭-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মামলাগুলো নিষ্পত্তির লক্ষ্যে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল নং-৪-এর সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ দায়রা আদালত ঢাকায় বদলি করা হইল।’ এর মধ্যে অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ প্রথম আদালত থেকে ২৯৯টি ও পঞ্চম আদালত থেকে ২৩৭ এবং যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালত থেকে ১৪৮টি মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪-এ বদলির আদেশ হয়েছে। এ ছাড়া দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩-এ প্রায় ১ হাজার মামলা বদলির প্রক্রিয়ায় রয়েছে। বাকি ঢাকা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এবং ২-এ আরও এক হাজারের বেশি মামলা বদলি হবে বলে জানা গেছে।
অথচ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালগুলোতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গেজেটে আসা চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো বর্তমানে দ্রুততার সঙ্গে শেষ হচ্ছে না। দেশের যে কোনো থানায় এসব গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হলে স্থানীয় থানায় মামলা হয়। কোনো মামলা চাঞ্চল্যকর বিচেনায় দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা জেলা পুলিশ কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখতে পারেন। জেলা প্রশাসক সরকারের আইন কর্মকর্তা বা জেলা পিপির মতামত নিয়ে বাছাই করে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে থাকেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের মনিটরিং সেল সিদ্ধান্ত নেয় এর মধ্যে কোন কোন মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে যাবে। সিদ্ধান্তের পর বাছাইকৃত মামলাগুলো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের জন্য গেজেট প্রকাশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর মামলাগুলো সংশ্লিষ্ট জেলা বা মহানগরে স্থাপিত দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। মামলাগুলো যে অবস্থায়ই এ ট্রাইব্যুনালে যাক না কেন ১৩৫ কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তির বাধ্যবাধকতা ছিল। এ সময়ের মধ্যে শেষ না হলে ৩০ কার্যদিবস সময় বাড়ানোর সুযোগ ছিল। এর পরও শেষে যে আদালত থেকে মামলাটি ট্রাইব্যুনালটিতে গেছে পুনরায় সে আদালতে ফেরত পাঠানোর নিয়ম ছিল। প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে এই নিয়ম পালিত হয়। দ্রুততার সঙ্গে মামলা নিষ্পত্তি হয়ে আসছিল। পরে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি সম্ভব না হলে সংশ্লিষ্ট মামলা পূর্বের আদালতে ফেরত পাঠানোর বাধ্যবাধকতা নেই বলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এক রায় আসে। এরপর থেকে ওই নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হলেও মামলাগুলোর বিচারকাজ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে চলে আসছে। বর্তমানে রাজধানী ও ঢাকা জেলার চাঞ্চল্যকর মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল চারটি থাকলেও তা শেষ হওয়ার আগেই এত বেশিসংখ্যক দায়রা মামলা গেলে ওই সব মামলা আরও দীর্ঘ সূত্রতায় পড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টারও একাধিক মামলা রয়েছে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা মামলা। তিনি বিরোধীদলীয় নেত্রী থাকাকালে ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট রাজধানীর দলীয় কার্যালয়ের সামনে গ্রেনেড হামলা হয়। ব্যাপক হতাহতের এ ঘটনায় হওয়া ২টি মামলা ২০১১ সালে ট্রাইব্যুনালটি গেছে। ২০১২ সালের ১৮ই মার্চ ট্রাইব্যুনালে মামলার অভিযোগ গঠন হয়। শেখ হাসিনা বর্তমানে দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকলেও এ পর্যন্ত মামলাটি কার্যক্রম শেষ হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। প্রায় ১০০০ সাক্ষীর মধ্যে গত ২২শে ডিসেম্বর দুই মামলায় ২০৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া ২০০০ সালের ১৯শে জুলাই গোপালগঞ্জ থানার কোটালিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাস্থলে মাটির নিচ থেকে ৬০ কেজি বোমা উদ্ধার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাটির ২০০১ সালের ৮ই এপ্রিল অভিযোগপত্র এবং ২০০৯ সালের ২৯শে জুন সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়া হয়। পরের বছর ২০১০ সালে মামলাটি ঢাকা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২-এ গেলেও এখন পর্যন্ত মামলাটি নিষ্পত্তি হয়নি। এ মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ওই আদালতে ২০১১ সালের পর থেকে দ্রুত বিচার আইনে তেমন মামলা না পাঠানো হলেও এবার যাচ্ছে অধিকসংখ্যক দায়রা মামলা। একইভাবে চলতি বছরের ১১ই মে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যা মামলাটি ঢাকা দ্রুত বিচার ট্রইব্যুনাল-৩-এ গেলেও এখনও তা শেষ হয়নি। ৫৫ সাক্ষীর মধ্যে ৩৫তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে মাত্র।
ঢাকা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিশেষ পিপি আবু আবদুল্লাহ ভূইয়া মানবজমিনকে বলেন, গত এক বছরে দ্রুত বিচার আইনের প্রক্রিয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গেজেটে হাতেগুনা দু-একটি মামলা এসেছে। সম্প্রতি বেশ কয়েক শ মামলা আমার আদালতে আসার প্রক্রিয়ার কথা জেনেছি। কিন্তু গেজেট আকারে নয়, বিশেষ দায়রা মামলা হিসেবেই তা আসছে। আশা করি জানুয়ারির প্রথম দিকে সাধারণ আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে তা ট্রাইব্যুনালে এসে পৌঁছাবে। তা সত্ত্বেও অনেকটা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মামলা পরিচালনার আদলে ঘন ঘন দিন-তারিখ নির্ধারণ করে বিশেষ দায়রা মামলাগুলোও দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হবে।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ওমর ফারুক ফারুকী মানবজমিনকে বলেন, যেহেতু দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্ট নির্দিষ্ট আইনে গঠিত এবং সেখানে সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গেজেটে মামলা স্থানান্তর হয়। সেহেতু সেখানে অন্য সাধারণ বা বিশেষ দায়রা মামলা পাঠানো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালেরই নীতিবিরুদ্ধ। রাজনৈতিক তদবির এবং উদ্দেশ্যেও সরকার নিজেদের সিদ্ধান্তে ট্রাইব্যুনালটিতে মামলা পাঠিয়ে থাকে। এ ছাড়া সাধারণ মামলা সেখানে পাঠানো হলেও অন্যান্য সাধারণ আদালতের মতো করে তা পরিচালিত হবে না। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অনেকটা দ্রুত বিচারের আদলে দ্রুততার সঙ্গে পরিচালনা করবেন বলে জানা গেছে। গুরুতর অপরাধের চাঞ্চল্যকর মামলার পরিবর্তে এভাবে এত বেশি পরিমাণ বিশেষ দায়রা মামলার বিচার এ ট্রাইব্যুনালে পরিচালিত হলে এর মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়ে ট্রাইব্যুনালটি সাধারণ মানুষের আস্থা হারাতে পারে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী কতিপয় অপরাধের দ্রুত বিচারের লক্ষ্যে ২০০২ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে প্রণীত হয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন ২০০২। ওই বছরের ২৪শে অক্টোবর থেকে আইনটি কার্যকর হয়। দ্রুত বিচার আইন ২০০২ অনুযায়ী সরকার সরকারি গেজেটে জনস্বার্থে হত্যা, ধর্ষণ, আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য এবং মাদকদ্রব্য-সংক্রান্ত অপরাধের বিচারাধীন কোনো মামলা এর যে কোনো পর্যায়ে ক্ষেত্রমতো দায়রা আদালত বা বিশেষ আদালত বা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করে থাকে। বর্তমানে সারা দেশের অধিকাংশ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মতো ঢাকার ৪টি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালেও মামলা সংকট চলছে। গত সোমবার পর্যন্ত রাজধানী ও ঢাকা বিভাগের আওতাধীন ৪টি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলা ছিল মাত্র ১০৩টি। উচ্চ আদালতের আদেশে এর মধ্যে ৩৮টি মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। চার ট্রাইব্যুনালে সচল রয়েছে মাত্র ৬৫টি মামলা। এর মধ্যে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ ৩৬টি মামলার মধ্যে ১০টি স্থগিত ও ২৬টি সচল, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২-এ ২৯টি মামলার মধ্যে ১১টি স্থগিত ও ১৮টি সচল, ট্রাইব্যুনাল-৩-এর ২৮ মামলার ১৩টি স্থগিত ও ১৫টি সচল এবং ট্রাইব্যুনাল-৪-এ ১০ মামলার ৪টি স্থগিত ও ৬টি সচল রয়েছে। এ অবস্থায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দ্রুত বিচার আইনে ট্রাইব্যুনাল চারটিতে হাতেগুনা কয়েকটি মামলা পাঠানো হলেও সেখানে
কয়েক গুণ বেশি বিশেষ দায়রা মামলা পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে চার ট্রাইব্যুনালে ৫৯৬টি দায়রা মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে ট্রাইব্যুনাল-১-এ ৯৬, ২-এ ১৬১, ৩-এ ১১৪ এবং ট্রাইব্যুনাল-৪-এ ২২৯ বিশেষ দায়রা মামলার বিচারকাজ চলছে।
তবে বর্তমানে দ্রুত বিচার আইনে চাঞ্চল্যকর মামলা স্থানান্তরের বিশেষ উদ্যোগ না থাকলেও ট্রাইব্যুনালগুলোতে আড়াই হাজারের বেশি বিশেষ দায়রা মামলা পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে। গত ২২শে নভেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. কামরুল হোসেন মোল্লা ১০৬ (এ)/১৫ নম্বর আদেশে অধীন তিন আদালতের ৬৮৪টি মামলা ঢাকা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ৪-এ বদলি করার নির্দেশ দেন। আদেশে বলা হয় ‘বিশেষ আদালত (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আইন, ২০০৩ (২০০৩ সালের ৩৫নং আইন) এর ধারা ৪(খ) এবং এসআরও নং-৩৬/২০০৭-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মামলাগুলো নিষ্পত্তির লক্ষ্যে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল নং-৪-এর সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ দায়রা আদালত ঢাকায় বদলি করা হইল।’ এর মধ্যে অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ প্রথম আদালত থেকে ২৯৯টি ও পঞ্চম আদালত থেকে ২৩৭ এবং যুগ্ম মহানগর দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালত থেকে ১৪৮টি মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪-এ বদলির আদেশ হয়েছে। এ ছাড়া দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩-এ প্রায় ১ হাজার মামলা বদলির প্রক্রিয়ায় রয়েছে। বাকি ঢাকা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এবং ২-এ আরও এক হাজারের বেশি মামলা বদলি হবে বলে জানা গেছে।
অথচ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালগুলোতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গেজেটে আসা চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো বর্তমানে দ্রুততার সঙ্গে শেষ হচ্ছে না। দেশের যে কোনো থানায় এসব গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হলে স্থানীয় থানায় মামলা হয়। কোনো মামলা চাঞ্চল্যকর বিচেনায় দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা জেলা পুলিশ কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখতে পারেন। জেলা প্রশাসক সরকারের আইন কর্মকর্তা বা জেলা পিপির মতামত নিয়ে বাছাই করে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে থাকেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের মনিটরিং সেল সিদ্ধান্ত নেয় এর মধ্যে কোন কোন মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে যাবে। সিদ্ধান্তের পর বাছাইকৃত মামলাগুলো দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের জন্য গেজেট প্রকাশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর মামলাগুলো সংশ্লিষ্ট জেলা বা মহানগরে স্থাপিত দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। মামলাগুলো যে অবস্থায়ই এ ট্রাইব্যুনালে যাক না কেন ১৩৫ কার্যদিবসের মধ্যে নিষ্পত্তির বাধ্যবাধকতা ছিল। এ সময়ের মধ্যে শেষ না হলে ৩০ কার্যদিবস সময় বাড়ানোর সুযোগ ছিল। এর পরও শেষে যে আদালত থেকে মামলাটি ট্রাইব্যুনালটিতে গেছে পুনরায় সে আদালতে ফেরত পাঠানোর নিয়ম ছিল। প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে এই নিয়ম পালিত হয়। দ্রুততার সঙ্গে মামলা নিষ্পত্তি হয়ে আসছিল। পরে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি সম্ভব না হলে সংশ্লিষ্ট মামলা পূর্বের আদালতে ফেরত পাঠানোর বাধ্যবাধকতা নেই বলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এক রায় আসে। এরপর থেকে ওই নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হলেও মামলাগুলোর বিচারকাজ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে চলে আসছে। বর্তমানে রাজধানী ও ঢাকা জেলার চাঞ্চল্যকর মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল চারটি থাকলেও তা শেষ হওয়ার আগেই এত বেশিসংখ্যক দায়রা মামলা গেলে ওই সব মামলা আরও দীর্ঘ সূত্রতায় পড়বে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টারও একাধিক মামলা রয়েছে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা মামলা। তিনি বিরোধীদলীয় নেত্রী থাকাকালে ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট রাজধানীর দলীয় কার্যালয়ের সামনে গ্রেনেড হামলা হয়। ব্যাপক হতাহতের এ ঘটনায় হওয়া ২টি মামলা ২০১১ সালে ট্রাইব্যুনালটি গেছে। ২০১২ সালের ১৮ই মার্চ ট্রাইব্যুনালে মামলার অভিযোগ গঠন হয়। শেখ হাসিনা বর্তমানে দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকলেও এ পর্যন্ত মামলাটি কার্যক্রম শেষ হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। প্রায় ১০০০ সাক্ষীর মধ্যে গত ২২শে ডিসেম্বর দুই মামলায় ২০৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া ২০০০ সালের ১৯শে জুলাই গোপালগঞ্জ থানার কোটালিপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাস্থলে মাটির নিচ থেকে ৬০ কেজি বোমা উদ্ধার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাটির ২০০১ সালের ৮ই এপ্রিল অভিযোগপত্র এবং ২০০৯ সালের ২৯শে জুন সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়া হয়। পরের বছর ২০১০ সালে মামলাটি ঢাকা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২-এ গেলেও এখন পর্যন্ত মামলাটি নিষ্পত্তি হয়নি। এ মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ওই আদালতে ২০১১ সালের পর থেকে দ্রুত বিচার আইনে তেমন মামলা না পাঠানো হলেও এবার যাচ্ছে অধিকসংখ্যক দায়রা মামলা। একইভাবে চলতি বছরের ১১ই মে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যা মামলাটি ঢাকা দ্রুত বিচার ট্রইব্যুনাল-৩-এ গেলেও এখনও তা শেষ হয়নি। ৫৫ সাক্ষীর মধ্যে ৩৫তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে মাত্র।
ঢাকা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিশেষ পিপি আবু আবদুল্লাহ ভূইয়া মানবজমিনকে বলেন, গত এক বছরে দ্রুত বিচার আইনের প্রক্রিয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গেজেটে হাতেগুনা দু-একটি মামলা এসেছে। সম্প্রতি বেশ কয়েক শ মামলা আমার আদালতে আসার প্রক্রিয়ার কথা জেনেছি। কিন্তু গেজেট আকারে নয়, বিশেষ দায়রা মামলা হিসেবেই তা আসছে। আশা করি জানুয়ারির প্রথম দিকে সাধারণ আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে তা ট্রাইব্যুনালে এসে পৌঁছাবে। তা সত্ত্বেও অনেকটা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মামলা পরিচালনার আদলে ঘন ঘন দিন-তারিখ নির্ধারণ করে বিশেষ দায়রা মামলাগুলোও দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হবে।
No comments