কর কর্মকর্তা তাহেরের খুনির স্বীকারোক্তি: ‘খাটে উঠে ঘুমন্ত স্যারের গলা টিপে ধরি’ by নুরুজ্জামান লাবু
‘খাটে
উঠে ঘুমন্ত স্যারের গলা টিপে ধরি। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই উনি নিস্তেজ হয়ে
পড়েন। আমরা খালাম্মাকে অস্ত্রের মুখে চেয়ারে বসিয়ে হাত-পা ও মুখ স্কচটেপ
দিয়ে বেঁধে রাখি। ঘরের আলমারি খুলে নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে বাসা
থেকে বেরিয়ে আসি।’ এই ভাষ্যগুলো এক খুনির। তার নাম রাসেল তালুকদার (২২)।
পেশায় প্রাইভেটকার চালক। খালাত ভাই নাছির ও তার কয়েক সহযোগীর সঙ্গে গত ১লা
মার্চ রামপুরার টিভি রোডের সাবেক কর কর্মকর্তা আবু তাহেরের বাড়িতে ডাকাতি
করতে গিয়েছিল সে। ডাকাতি করার আগে আবু তাহেরকে নিমর্মভাবে হত্যা করে তারা।
ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পারে আবু তাহেরের গাড়িচালক
নাছির এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। গত ৯ই মার্চ পুলিশ রাসেল ও নাছিরকে
গ্রেপ্তার করে। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকাণ্ডের আদ্যোপান্ত বর্ণনা
করে। গতকাল রাসেল হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায়
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
জবানবন্দিতে রাসেল বলেছে, ৫-৬ বছর আগে সে গ্রামের বাড়ি বরিশাল থেকে ঢাকায় আসে। প্রথমে শ্যামপুরের একটি জুতার কারখানায় কাজ করে। পরে ড্রাইভিং শিখে ড্রাইভার হিসেবে চাকরি শুরু করে। রাসেল জানায়, নাছির তার খালাত ভাই। গত ১লা মার্চ সকালে নাছির তাকে ফোন করে তার বাসায় যেতে বলে। সেদিন বিকালে সে নাছিরের মেরাদিয়ার বাসায় যায়। কিন্তু বাসায় নাছিরকে না পেয়ে সে নাছিলের আড্ডাস্থল হালিমের রিকশার গ্যারেজে যায়। সেখানে নাছির ছাড়াও আমির হোসেন, রুস্তম, সোহেল, সুজন, নূর আলম ও মাসুদ ছিল। নাছির তাকে জানায়, তারা তার আগের মালিক কর কর্মকর্তা আবু তাহেরের বাসায় ডাকাতি করবে। তাকে থাকার জন্য বলে। নাছিরের অনুরোধে সেও রাজি হয়ে যায়।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে রাসেলের ভাষ্য, আমরা আটজনে মিলে কিভাবে ডাকাতি করবো তা নিয়ে শলা-পরামর্শ করতে থাকি। পরে আমরা বনশ্রী হয়ে হাতিরঝিল এলাকায় সময় কাটাই। রাত সাড়ে ১২টা থেকে ১টার দিকে আমরা একজন-দু’জন করে টিভি রোডের ৩৪৭ নম্বর তাহেরের বাসার সামনে যাই। এ সময় নাছিরের হাতে দু’টি ব্যাগ ছিল। একটি ব্যাগে তিনটি ছোরা ছিল, অপর ব্যাগটিতে একটি হাতুড়ি, একটি স্লাইরেঞ্জ ও কিছু লাল এবং কালো কাপড় ছিল। আমরা এক এক করে বাড়ির সীমানা প্রাচীর টপকিয়ে ভেতরে ঢুকি। ভেতরে আমরা সবাই মাথায় লালকাপড় ও মুখে কালো কাপড় বাঁধি। নাছির ওই বাসার কাজের মেয়ে সেলিনাকে ফোন দেয়। সেলিনা নিচতলার দরজা খুলে দিলে আমরা দোতলায় গিয়ে তাহের স্যারের ফ্ল্যাটের দরজার সামনে যাই। এ সময় আবার কাজের মেয়ে সেলিনাকে ফোন দিয়ে দরজা খুলে দিতে বললে সে দরজা খুলে দিতে পারবে না বলে জানায়। তবে সে দোতলার পশ্চিমদিকের জানালা খুলে দিয়েছে বলে জানায়। পরে আমরা দোতলা থেকে নেমে বাড়ির পাশের বাগান অতিক্রম করে বিল্ডিংয়ের পশ্চিম দিকে যাই। জানালা খোলা ছিল। আমির ও রুস্তম প্রথমে হাতুড়ি ও স্লাইরেঞ্জ নিয়ে সানসেট বেয়ে দোতলার জানালার কাছে যায়। ধীরে ধীরে জানালার গ্রিল ভেঙে ফেলে। পরে আমরা সবাই ওই জানালা দিয়ে বাসার ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করি। দোতলার ড্রয়িং রুমে ঢুকে আমরা সবাই একটি করে ছুরি হাতে নিই। আমরা কাজের মেয়ে সেলিনা ও নূরজাহানকে ডেকে আনি। পরে স্যারের (তাহের) শোবার ঘরের সামনে যাই। সেলিনা দরজায় টোকা দেয়। খালাম্মা (তাহেরের স্ত্রী) দরজা খুলে দিলে আমার হুড়মুড় করে ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ি। আমি ছুরির ভয় দেখিয়ে সেলিনা ও নূরজাহানকে তাদের ঘরে পাঠিয়ে দিই। নাছির, আমির ও রুস্তম খালাম্মাকে অস্ত্র দেখিয়ে জিম্মি করে ফেলে। আমরা তিনজন খাটে উঠে স্যারের গলা টিপে ধরি। কিছুক্ষণের মধ্যে স্যার নিস্তেজ হয়ে যায়। এরপর খালাম্মার কাছ থেকে আলমারীর চাবি নিয়ে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা নিয়ে নেই। জিনিসপত্রগুলো একটি চাদরের মধ্যে পোঁটলা বেঁধে ফেলি। সবাই মিলে খালাম্মার হাত-পা ও চোখ চেয়ারের সঙ্গে স্কচটেপ দিয়ে বেঁধে ফেলি। এরপর আমরা আমাদের ছুরি ও অন্য জিনিসপত্র নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে আসি। বাসা থেকে পেরিয়ে আমরা বনশ্রী এলাকাতে যাই। বনশ্রী প্রজেক্টের বাউন্ডারি ওয়াল টপকিয়ে বালুর মাঠ দিয়ে মেরাদিয়া চলে যাই। যাওয়ার সময় ছুরির ব্যাগটা বালুর মাঠের কিনারে ঝিলের পাশে ফেলে দেই। এরপর গহনা ও টাকার ব্যাগটা আমির এবং নাছিরের হেফাজতে দিয়ে যে যার মতো করে চলে যাই। দুইদিন পর নাছির আমাকে সাড়ে ৯ হাজার টাকা দেয়। এর কয়েকদিনের মধ্যে পুলিশ আমাকে ধরে ফেলে। পুলিশ আমাদের দেখানো ছোরাগুলো ও আমার বাসার বালিশের কভারের মধ্য থেকে ৬ হাজার ৩০০ টাকা উদ্ধার করে।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের খিলগাঁও জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) ইকবাল হোছাইন জানান, মূলত নাছিরের পরিকল্পনাততেই এই ডাকাতি ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে। রাসেল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও নাছির স্বীকারোক্তি দিতে রাজি হয়নি। তাকে আবারও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এছাড়া এই ডাকাত চক্রের অন্যতম সদস্য আমিরসহ অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
জবানবন্দিতে রাসেল বলেছে, ৫-৬ বছর আগে সে গ্রামের বাড়ি বরিশাল থেকে ঢাকায় আসে। প্রথমে শ্যামপুরের একটি জুতার কারখানায় কাজ করে। পরে ড্রাইভিং শিখে ড্রাইভার হিসেবে চাকরি শুরু করে। রাসেল জানায়, নাছির তার খালাত ভাই। গত ১লা মার্চ সকালে নাছির তাকে ফোন করে তার বাসায় যেতে বলে। সেদিন বিকালে সে নাছিরের মেরাদিয়ার বাসায় যায়। কিন্তু বাসায় নাছিরকে না পেয়ে সে নাছিলের আড্ডাস্থল হালিমের রিকশার গ্যারেজে যায়। সেখানে নাছির ছাড়াও আমির হোসেন, রুস্তম, সোহেল, সুজন, নূর আলম ও মাসুদ ছিল। নাছির তাকে জানায়, তারা তার আগের মালিক কর কর্মকর্তা আবু তাহেরের বাসায় ডাকাতি করবে। তাকে থাকার জন্য বলে। নাছিরের অনুরোধে সেও রাজি হয়ে যায়।
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে রাসেলের ভাষ্য, আমরা আটজনে মিলে কিভাবে ডাকাতি করবো তা নিয়ে শলা-পরামর্শ করতে থাকি। পরে আমরা বনশ্রী হয়ে হাতিরঝিল এলাকায় সময় কাটাই। রাত সাড়ে ১২টা থেকে ১টার দিকে আমরা একজন-দু’জন করে টিভি রোডের ৩৪৭ নম্বর তাহেরের বাসার সামনে যাই। এ সময় নাছিরের হাতে দু’টি ব্যাগ ছিল। একটি ব্যাগে তিনটি ছোরা ছিল, অপর ব্যাগটিতে একটি হাতুড়ি, একটি স্লাইরেঞ্জ ও কিছু লাল এবং কালো কাপড় ছিল। আমরা এক এক করে বাড়ির সীমানা প্রাচীর টপকিয়ে ভেতরে ঢুকি। ভেতরে আমরা সবাই মাথায় লালকাপড় ও মুখে কালো কাপড় বাঁধি। নাছির ওই বাসার কাজের মেয়ে সেলিনাকে ফোন দেয়। সেলিনা নিচতলার দরজা খুলে দিলে আমরা দোতলায় গিয়ে তাহের স্যারের ফ্ল্যাটের দরজার সামনে যাই। এ সময় আবার কাজের মেয়ে সেলিনাকে ফোন দিয়ে দরজা খুলে দিতে বললে সে দরজা খুলে দিতে পারবে না বলে জানায়। তবে সে দোতলার পশ্চিমদিকের জানালা খুলে দিয়েছে বলে জানায়। পরে আমরা দোতলা থেকে নেমে বাড়ির পাশের বাগান অতিক্রম করে বিল্ডিংয়ের পশ্চিম দিকে যাই। জানালা খোলা ছিল। আমির ও রুস্তম প্রথমে হাতুড়ি ও স্লাইরেঞ্জ নিয়ে সানসেট বেয়ে দোতলার জানালার কাছে যায়। ধীরে ধীরে জানালার গ্রিল ভেঙে ফেলে। পরে আমরা সবাই ওই জানালা দিয়ে বাসার ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করি। দোতলার ড্রয়িং রুমে ঢুকে আমরা সবাই একটি করে ছুরি হাতে নিই। আমরা কাজের মেয়ে সেলিনা ও নূরজাহানকে ডেকে আনি। পরে স্যারের (তাহের) শোবার ঘরের সামনে যাই। সেলিনা দরজায় টোকা দেয়। খালাম্মা (তাহেরের স্ত্রী) দরজা খুলে দিলে আমার হুড়মুড় করে ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ি। আমি ছুরির ভয় দেখিয়ে সেলিনা ও নূরজাহানকে তাদের ঘরে পাঠিয়ে দিই। নাছির, আমির ও রুস্তম খালাম্মাকে অস্ত্র দেখিয়ে জিম্মি করে ফেলে। আমরা তিনজন খাটে উঠে স্যারের গলা টিপে ধরি। কিছুক্ষণের মধ্যে স্যার নিস্তেজ হয়ে যায়। এরপর খালাম্মার কাছ থেকে আলমারীর চাবি নিয়ে স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা নিয়ে নেই। জিনিসপত্রগুলো একটি চাদরের মধ্যে পোঁটলা বেঁধে ফেলি। সবাই মিলে খালাম্মার হাত-পা ও চোখ চেয়ারের সঙ্গে স্কচটেপ দিয়ে বেঁধে ফেলি। এরপর আমরা আমাদের ছুরি ও অন্য জিনিসপত্র নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে আসি। বাসা থেকে পেরিয়ে আমরা বনশ্রী এলাকাতে যাই। বনশ্রী প্রজেক্টের বাউন্ডারি ওয়াল টপকিয়ে বালুর মাঠ দিয়ে মেরাদিয়া চলে যাই। যাওয়ার সময় ছুরির ব্যাগটা বালুর মাঠের কিনারে ঝিলের পাশে ফেলে দেই। এরপর গহনা ও টাকার ব্যাগটা আমির এবং নাছিরের হেফাজতে দিয়ে যে যার মতো করে চলে যাই। দুইদিন পর নাছির আমাকে সাড়ে ৯ হাজার টাকা দেয়। এর কয়েকদিনের মধ্যে পুলিশ আমাকে ধরে ফেলে। পুলিশ আমাদের দেখানো ছোরাগুলো ও আমার বাসার বালিশের কভারের মধ্য থেকে ৬ হাজার ৩০০ টাকা উদ্ধার করে।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের খিলগাঁও জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) ইকবাল হোছাইন জানান, মূলত নাছিরের পরিকল্পনাততেই এই ডাকাতি ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটে। রাসেল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও নাছির স্বীকারোক্তি দিতে রাজি হয়নি। তাকে আবারও রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এছাড়া এই ডাকাত চক্রের অন্যতম সদস্য আমিরসহ অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
No comments