শিশু হত্যায় পুলিশ! সরকারের টনক নড়বে কবে?
সিলেটের
শিশু সাঈদ হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত তিন কুশীলবের পরিচয় আঁতকে ওঠার মতো:
একজন পুলিশ কনস্টেবল, একজন সরকার-সমর্থক ওলামা লীগ নেতা ও পুলিশের একজন
তথ্যদাতা বা সোর্স। এই তিনজনেরই জনগণের জানমালের পক্ষে থাকার কথা। কিন্তু
তাঁরাই একটি শিশুকে অপহরণ, হত্যা ও লাশ গুমের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ
এসেছে। সিলেটের নয় বছরের শিশু আবু সাঈদকে অপহরণ করে তার পরিবারের কাছ থেকে
মুক্তিপণ বাবদ টাকা আদায়ের পর শিশুটিকে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশের তদন্তে
হত্যাকারী হিসেবে অভিযুক্ত হয়েছেন পুলিশেরই এক কনস্টেবল। তাঁর
স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অপহরণ ও হত্যায় জড়িত অন্যদের মধ্যে রয়েছেন সিলেটের
জেলা ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদকও। তৃতীয় ব্যক্তিটি পুলিশেরই অপরাধ ও অপরাধ
বিষয়ে তথ্যদাতা। সরকার-সমর্থক সংগঠনের নেতার এ রকম একটি হত্যায় জড়িত থাকা
ভয়াবহ আলামত। এ ঘটনা নারায়ণগঞ্জের মেধাবী কিশোর ত্বকী হত্যার কথা মনে
করিয়ে দেয়। সেই ঘটনাতেও সরকারি দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জড়িত থাকার
আলামত পাওয়া গেছে। আবু সাঈদ হত্যা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর আগেও বিভিন্ন
হত্যা, অপহরণ ও
গুম-নির্যাতনের সঙ্গে র্যাব ও পুলিশ সদস্যদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া
গেছে। অতীতে এসব ঘটনার বিচার না হওয়া কিংবা তদন্তে দীর্ঘসূত্রতায় অন্য
অপরাধীরা উৎসাহিত হয়েছে বলে ধারণা করা যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর
সদস্য ও সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের এ রকম ভয়ানক অপরাধে জড়িয়ে পড়া কিসের
ইঙ্গিত? গত বছর নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় র্যাব সদস্যদের সম্পৃক্ততার
প্রমাণ পাওয়া গেছে। এবারে শিশু হত্যায় পুলিশ কনস্টেবলের নাম এসেছে। যাদের
হাতে জনগণের নিরাপত্তার দায়িত্ব তারাই যদি এ ধরনের গুরুতর অপরাধে সম্পৃক্ত
হয়ে পড়ে, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? আমরা শিশু সাঈদ হত্যার সঙ্গে
জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তির দাবি করছি।
সিলেটে অপহরণের পর শিশু হত্যা, এক পুলিশ জড়িত
১৬,মার্চ ২০১৫ প্রথম আলো
স্কুলছাত্রকে অপহরণের পর ওই ছাত্রেরই বাড়ি গিয়ে স্বজনদের সান্ত্বনা দেওয়া, ছাত্রের পরিবারকে মুক্তিপণ দিতে রাজি করানো, পরে হত্যা ও লাশ গুমের চেষ্টা—পুরো কাজটিই বেশ দক্ষতার সঙ্গে করেছিলেন পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর রহমান। কিন্তু শেষে পুলিশের মুঠোফোন ট্র্যাকিংয়ে ধরা পড়ে গেলেন তিনি।
সিলেট মহানগর পুলিশের বিমানবন্দর থানার কনস্টেবল এবাদুর রহমান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অপহরণ ও হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
স্কুলছাত্রকে অপহরণের পর ওই ছাত্রেরই বাড়ি গিয়ে স্বজনদের সান্ত্বনা দেওয়া, ছাত্রের পরিবারকে মুক্তিপণ দিতে রাজি করানো, পরে হত্যা ও লাশ গুমের চেষ্টা—পুরো কাজটিই বেশ দক্ষতার সঙ্গে করেছিলেন পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর রহমান। কিন্তু শেষে পুলিশের মুঠোফোন ট্র্যাকিংয়ে ধরা পড়ে গেলেন তিনি।
সিলেট মহানগর পুলিশের বিমানবন্দর থানার কনস্টেবল এবাদুর রহমান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অপহরণ ও হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন।
ছেলেহারা মায়ের আহাজারি। স্কুলছাত্র সাঈদকে হত্যার খবর পেয়ে পাগলপ্রায় মা সালেহা বেগম। কাঁদছেন স্বজনেরাও। সিলেট নগরের রায়নগরে তাঁদের বাড়ি থেকে শনিবার রাতে তোলা ছবি (ইনসেটে আবু সাঈদ) l প্রথম আলো |
হত্যার
শিকার হয়েছে সিলেট নগরের রায়নগর এলাকার বাসিন্দা মতিন মিয়ার ছেলে আবু সাঈদ
(৯)। সে রায়নগরের হাজি শাহমীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে
পড়ত।
গত বুধবার দুপুরে স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে সে অপহৃত হয়। গত শনিবার রাত ১১টার দিকে নগরের কুমারপাড়ার ঝেরঝেরিপাড়ায় কনস্টেবল এবাদুরের বাসা থেকেই সাঈদের বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় কনস্টেবল এবাদুর তাঁর সহযোগী গেদা মিয়া ও জেলা ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক এন ইসলাম তালুকদার ওরফে রাকীবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গেদা মিয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘সোর্স’ হিসেবে পরিচিত।
পরিবার ও পুলিশ সূত্র জানায়, প্রায় তিন মাস আগেও সাঈদদের বাসায় সাবলেট থাকতেন কনস্টেবল এবাদুর। পরে তিনি নগরের কুমারপাড়ার ঝেরঝেরিপাড়ায় বাসা ভাড়া নেন। তবে সাঈদদের বাসায় যাতায়াত ছিল এবাদুরের। সাঈদের মা সালেহা বেগমকে বোন ডাকতেন তিনি। সাঈদও এবাদুরকে মামা ডাকত। সালেহা বেগমের ভাই জয়নাল আবেদীন জানান, সাঈদ অপহরণের খবর শুনে কনস্টেবল এবাদুর বাসায় আসেন। কান্নাকাটি করে সান্ত্বনা দেন। বুধবার রাতে যখন পাঁচ লাখ টাকার মুক্তিপণ দাবি করে ফোন আসে, তখন এবাদুরই অপহরণকারীদের টাকা দিয়ে দেওয়ার জন্য তাগিদ দেন। এবাদুরের মাধ্যমে প্রথম দফায় দুই লাখ টাকা দেওয়া হয় জানিয়ে জয়নাল বলেন, ‘এবাদুরই যে অপহরণকারী, এটা কেউ ঘুণাক্ষরে টের পাইনি।’
সিলেট কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফায়েজ আহমদ জানান, এ ঘটনায় সাঈদের মামা জয়নাল আবেদীন গত বুধবার রাতে কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। মুঠোফোনে মুক্তিপণ চাওয়া নম্বরটির ওপর নজরদাবি শুরু করা হয়। এতেই কনস্টেবল এবাদুরের সংশ্লিষ্টতা মেলে। গত শনিবার রাতে এবাদুরকে কোতোয়ালি থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অপহরণ ও লাশ নিজের বাড়িতে রাখার কথা স্বীকার করেন তিনি।
গত বুধবার দুপুরে স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে সে অপহৃত হয়। গত শনিবার রাত ১১টার দিকে নগরের কুমারপাড়ার ঝেরঝেরিপাড়ায় কনস্টেবল এবাদুরের বাসা থেকেই সাঈদের বস্তাবন্দী লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় কনস্টেবল এবাদুর তাঁর সহযোগী গেদা মিয়া ও জেলা ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক এন ইসলাম তালুকদার ওরফে রাকীবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গেদা মিয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘সোর্স’ হিসেবে পরিচিত।
পরিবার ও পুলিশ সূত্র জানায়, প্রায় তিন মাস আগেও সাঈদদের বাসায় সাবলেট থাকতেন কনস্টেবল এবাদুর। পরে তিনি নগরের কুমারপাড়ার ঝেরঝেরিপাড়ায় বাসা ভাড়া নেন। তবে সাঈদদের বাসায় যাতায়াত ছিল এবাদুরের। সাঈদের মা সালেহা বেগমকে বোন ডাকতেন তিনি। সাঈদও এবাদুরকে মামা ডাকত। সালেহা বেগমের ভাই জয়নাল আবেদীন জানান, সাঈদ অপহরণের খবর শুনে কনস্টেবল এবাদুর বাসায় আসেন। কান্নাকাটি করে সান্ত্বনা দেন। বুধবার রাতে যখন পাঁচ লাখ টাকার মুক্তিপণ দাবি করে ফোন আসে, তখন এবাদুরই অপহরণকারীদের টাকা দিয়ে দেওয়ার জন্য তাগিদ দেন। এবাদুরের মাধ্যমে প্রথম দফায় দুই লাখ টাকা দেওয়া হয় জানিয়ে জয়নাল বলেন, ‘এবাদুরই যে অপহরণকারী, এটা কেউ ঘুণাক্ষরে টের পাইনি।’
সিলেট কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফায়েজ আহমদ জানান, এ ঘটনায় সাঈদের মামা জয়নাল আবেদীন গত বুধবার রাতে কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। মুঠোফোনে মুক্তিপণ চাওয়া নম্বরটির ওপর নজরদাবি শুরু করা হয়। এতেই কনস্টেবল এবাদুরের সংশ্লিষ্টতা মেলে। গত শনিবার রাতে এবাদুরকে কোতোয়ালি থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অপহরণ ও লাশ নিজের বাড়িতে রাখার কথা স্বীকার করেন তিনি।
স্কুলছাত্র আবু সাঈদকে হত্যার দায় স্বীকার করা পুলিশ কনস্টেবল এবাদুর রহমানকে (মাঝে) থানায় নেওয়া হয় l প্রথম আলো |
এসআই
ফায়েজ জানান, এবাদুরের দেওয়া তথ্য মতে শনিবার রাত ১১টার দিকে
ঝেরঝেরিপাড়ায় তাঁর বাসার চিলেকোঠা থেকে সাতটি বস্তা দিয়ে মোড়ানো
অবস্থায় সাঈদের লাশ পাওয়া যায়। পরে তাঁর দুই সহযোগী গেদু মিয়া ও রকীবকে
নগরের বন্দরবাজার থেকে আটক করা হয়। এদিকে কনস্টেবল এবাদুর গতকাল রোববার
সিলেট মহানগর হাকিম আদালত-১-এর বিচারক শাহেদুল করিমের কাছে ১৬৪ ধারায়
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দির বরাত দিয়ে সিলেট মহানগর
পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মো. রহমত উল্লাহ গতকাল প্রথম
আলোকে জানান, এবাদুর টাকার জন্যই সাঈদকে অপহরণ করেন। সাঈদ তাঁকে (এবাদুর)
চিনে ফেলায় হত্যার সিদ্ধান্ত নেন। অপহরণ ও হত্যায় এবাদুরসহ পাঁচজন জড়িত।
সিলেট পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক শামীমুর রহমান পীর
জানান, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শ্বাসরোধে শিশুটিকে হত্যা করা হয়।
শিশুটির গলায় প্রায় দুই হাত লম্বা একটি রশি লাগানো ও গলায় রশির দাগ দেখা
গেছে।’ গতকাল দুপুরে আবু সাঈদের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, তাঁর মা সালেহা বেগম
বিলাপ করছেন। কনস্টেবল এবাদুরকে ইঙ্গিত করে তিনি বলছিলেন, ‘আমার পরিবারও
থাইকা আমার কোল খালি করল গো...এর বিচার আমি কই পাইতাম...।’ কাঁদছিলেন
সালেহাকে সান্ত্বনা দিতে আসা স্বজনেরাও।
লাশ উদ্ধারের পর শনিবার রাতেই এলাকাবাসী খুনিদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। আজ সোমবার সাঈদের স্কুলের সামনে বেলা ১১টায় খুনিদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করবেন শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।
সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান জানান, আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার পর এ ঘটনায় ছয়জনের বিরুদ্ধে অপহরণ করে হত্যা ও লাশ গুম করার চেষ্টার অভিযোগে দুটি মামলা হয়েছে। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে সাঈদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
লাশ উদ্ধারের পর শনিবার রাতেই এলাকাবাসী খুনিদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। আজ সোমবার সাঈদের স্কুলের সামনে বেলা ১১টায় খুনিদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করবেন শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।
সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান জানান, আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার পর এ ঘটনায় ছয়জনের বিরুদ্ধে অপহরণ করে হত্যা ও লাশ গুম করার চেষ্টার অভিযোগে দুটি মামলা হয়েছে। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে সাঈদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
No comments