গণতন্ত্র না থাকলে জঙ্গিপনার উত্থান -ড. নাসিম আখতার হুসাইন
দু
পক্ষই একটা অনড় অবস্থান নিয়ে আছে সেটা আমরা দেখতে পারছি। এই অনড় অবস্থা
থেকে সরে আসতে সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। সরকার যদি বসতে নাও চায়, সংলাপের
কথা যদি ভাবতে নাও পারে কিন্তু তারা তো জানে নির্বাচন কেন্দ্রিকই সব
ঘটনাগুলো ঘটছে, সহিংসতা হচ্ছে এবং তারা এটাও জানে কেন নির্বাচনটা সেই অর্থে
যথার্থ হয়নি। তাহলে নির্বাচন নিয়ে, নির্বাচনের ব্যবস্থা নিয়ে আলাপ-আলোচনা
এবং সংস্কারের উদ্যোগ কেন সরকার গ্রহণ করছে না? এটা নিয়ে সরকারের উদ্যোগ
গ্রহণ করা উচিত।
মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নাসিম আখতার হুসাইন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন স্টাফ রিপোর্টার রোকনুজ্জামান পিয়াস।
অধ্যাপক ড. নাসিম আখতার হুসাইন বলেন, দেশটা কেবল বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের নয়। দেশটা সবার। দেশের আরও অনেক পক্ষ রয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে যাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। আমি মনে করি সরকারের এখনই এ উদ্যোগ নেয়া উচিত। যেভাবে মানুষকে ধরপাকড় করছে, গুম করছে এবং একটি দলকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার মতো অবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে তাতে গণতন্ত্র টিকবে না। কিংবা এটাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে চালিয়ে দেয়ারও কোন কারণ দেখি না। এটা অগণতান্ত্রিক এবং অমুক্তিযোদ্ধাসুলভ আচরণ। সুতরাং এখান থেকে সরকার পক্ষকে সরে আসতে হবে। আর বিরোধীপক্ষ হিসেবে বিএনপি যা করছে- হয়তো তারা বলছে আমাদের আর উপায় নেই, এছাড়া আমরা আর কি করবো। কিন্তু সেটাও তো কোন কথা নয়। তাদের উচিত ছিল ছোট ছোট কর্মসূচি দেয়া। বিশাল কর্মসূচি, বিশাল সমাবেশ বা সরকার ফেলে দেবো এমন কোন আন্দোলনই কি একমাত্র কৌশল? ছোট ছোট কর্মসূচি দিয়ে তারা তাদের বক্তব্যগুলো নিয়ে জনগণকে সঙ্গে রাখতে পারতো। এখন কি হচ্ছে? জনগণ কিন্তু বিএনপি’র সঙ্গেও নেই, সরকারের সঙ্গেও নেই। তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেকে আছেন যারা মনে করেন দেশে একটা সিভিল ওয়ার হয়ে যেতে পারে। আমি তাদের মতো মনে করি না, কারণ জনগণ কিন্তু তাদের বাঁচার রাস্তা বের করেছে। হরতাল অবরোধের মধ্যে জীবিকার প্রয়োজনে তারা রাস্তায় বের হয়েছে আরেকটা হচ্ছে দেশটাকে দুইভাগ করার যে প্রচারণা চালিয়েছিল দু’টি দল তারা সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে। জনগণ একরকমের বোঝাপড়ার মধ্যে এসেছে যে- আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি’র কারণে নিজেরা নিজেরা মারামারি করে আমরা মারা যাবো না। কারণ তাদের মধ্যে এক রকমের আত্মীয়তার বন্ধন রয়েছে। আমাদের সমাজ এক্ষেত্রে এতটাই মজবুত যে সিভিল ওয়ার হওয়ার মতো কোন অবস্থায় তারা নিয়ে যেতে পারবে না। এটা জনগণের ক্রেডিট, সমাজের ক্রেডিট। ঐতিহাসিকভাবে তারা যে সমাজবদ্ধভাবে বাস করতে অভ্যস্ত তার কারণে তাদের উপলব্ধি হয়েছে- আওয়ামী লীগ করুক, বিএনপি করুক তাদের তো মারামারি করে কোন লাভ নেই। এখানে শ্রেণী একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। একটা শ্রেণী তারা অর্থনৈতিকভাবে খুব লাভবান হয়, তাই তারা ক্ষমতায় যেতে চায়, ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়, সহিংসতা করতে চায়। সাধারণ মানুষ হয়তো বা বিএনপি এবং আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে একটি ট্রেন্ড তৈরি করেছে তবে তারা নিজেরা মারামারি করবে বলে মনে করি না। তাহলে বিএনপি কিসের আশায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মসূচি ডেকে বসে আছে? আরেকটা যেটা বলা হচ্ছিল আমেরিকাসহ বাইরের কোন শক্তি তাদের সঙ্গে আছে, এখন তো সেটাও নেই কারণ অভিজিৎ হত্যার পর দেশের যে সহিংসতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, জঙ্গিপনা এগুলোও বিদেশী শক্তি বিবেচনায় নিয়েছে। কাজেই এ বিতর্ক যেখানে জারি আছে সেখানে বিদেশীদের সমর্থনের যে জায়গাটা সেটাও সরকারের পকেট হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং আমার ধারণা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার জন্য, দেশেকে মুক্ত করার জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে এবং শুরু করতে হবে নির্বাচন কমিশনের সংস্কার, নির্বাচন ব্যবস্থাপনার সংস্কার এবং একটা গ্রহণযোগ্য অবস্থায় যাওয়ার জন্য বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলা। বিএনপিকে এতে যোগ দেয়া উচিত। ডাকলেই যেতে হবে। না যাবো না- এ রকম নাটক বা থিয়েটারের পলিটিকস বাংলাদেশের মানুষ আর চায় না। কাজেই সরকার উদ্যোগ নিয়ে শুরু করলে আমার ধারণা এ অবস্থা থেকে উত্তরণ হবে। আর বিরোধী দলকে দমন-পীড়ন করে প্রকারান্তরে নিঃশেষ করার যে পন্থা দেখতে পাচ্ছি তা বন্ধ করতেই হবে। কারণ বিরোধী দল ছাড়া শুধু একটি দলের রাজত্ব কায়েম হবে এজন্য তো মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন হয়নি। সরকারকে মনে রাখতে হবে কোন দলকে এভাবে নিঃশেষ করা যায় না। আপাত স্থবিরতা দেখা যেতে পারে। কিন্তু এতে করে গণতন্ত্রই নিঃশেষ হয়ে যাবে। আর এখান থেকে ফিরে আসা খুব কঠিন। কারণ গণতন্ত্র না থাকলে জঙ্গিপনা মাথা চাড়া দিয়ে উঠবেই। সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে একটা ব্যালান্স অব পাওয়ারেও যেতে হবে। বর্তমান দেশ একটা ফাঁদে আটকা পড়ে গেছে। সে অর্থে এখন গণতন্ত্র নেই। এখান থেকে সরকারকে উদ্যোগ নিয়েই বের হতে হবে। আর এর প্রধান পন্থা নির্বাচনের সংস্কার করা।
মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নাসিম আখতার হুসাইন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন স্টাফ রিপোর্টার রোকনুজ্জামান পিয়াস।
অধ্যাপক ড. নাসিম আখতার হুসাইন বলেন, দেশটা কেবল বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের নয়। দেশটা সবার। দেশের আরও অনেক পক্ষ রয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে যাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। আমি মনে করি সরকারের এখনই এ উদ্যোগ নেয়া উচিত। যেভাবে মানুষকে ধরপাকড় করছে, গুম করছে এবং একটি দলকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার মতো অবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে তাতে গণতন্ত্র টিকবে না। কিংবা এটাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলে চালিয়ে দেয়ারও কোন কারণ দেখি না। এটা অগণতান্ত্রিক এবং অমুক্তিযোদ্ধাসুলভ আচরণ। সুতরাং এখান থেকে সরকার পক্ষকে সরে আসতে হবে। আর বিরোধীপক্ষ হিসেবে বিএনপি যা করছে- হয়তো তারা বলছে আমাদের আর উপায় নেই, এছাড়া আমরা আর কি করবো। কিন্তু সেটাও তো কোন কথা নয়। তাদের উচিত ছিল ছোট ছোট কর্মসূচি দেয়া। বিশাল কর্মসূচি, বিশাল সমাবেশ বা সরকার ফেলে দেবো এমন কোন আন্দোলনই কি একমাত্র কৌশল? ছোট ছোট কর্মসূচি দিয়ে তারা তাদের বক্তব্যগুলো নিয়ে জনগণকে সঙ্গে রাখতে পারতো। এখন কি হচ্ছে? জনগণ কিন্তু বিএনপি’র সঙ্গেও নেই, সরকারের সঙ্গেও নেই। তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অনেকে আছেন যারা মনে করেন দেশে একটা সিভিল ওয়ার হয়ে যেতে পারে। আমি তাদের মতো মনে করি না, কারণ জনগণ কিন্তু তাদের বাঁচার রাস্তা বের করেছে। হরতাল অবরোধের মধ্যে জীবিকার প্রয়োজনে তারা রাস্তায় বের হয়েছে আরেকটা হচ্ছে দেশটাকে দুইভাগ করার যে প্রচারণা চালিয়েছিল দু’টি দল তারা সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে। জনগণ একরকমের বোঝাপড়ার মধ্যে এসেছে যে- আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি’র কারণে নিজেরা নিজেরা মারামারি করে আমরা মারা যাবো না। কারণ তাদের মধ্যে এক রকমের আত্মীয়তার বন্ধন রয়েছে। আমাদের সমাজ এক্ষেত্রে এতটাই মজবুত যে সিভিল ওয়ার হওয়ার মতো কোন অবস্থায় তারা নিয়ে যেতে পারবে না। এটা জনগণের ক্রেডিট, সমাজের ক্রেডিট। ঐতিহাসিকভাবে তারা যে সমাজবদ্ধভাবে বাস করতে অভ্যস্ত তার কারণে তাদের উপলব্ধি হয়েছে- আওয়ামী লীগ করুক, বিএনপি করুক তাদের তো মারামারি করে কোন লাভ নেই। এখানে শ্রেণী একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। একটা শ্রেণী তারা অর্থনৈতিকভাবে খুব লাভবান হয়, তাই তারা ক্ষমতায় যেতে চায়, ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়, সহিংসতা করতে চায়। সাধারণ মানুষ হয়তো বা বিএনপি এবং আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে একটি ট্রেন্ড তৈরি করেছে তবে তারা নিজেরা মারামারি করবে বলে মনে করি না। তাহলে বিএনপি কিসের আশায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মসূচি ডেকে বসে আছে? আরেকটা যেটা বলা হচ্ছিল আমেরিকাসহ বাইরের কোন শক্তি তাদের সঙ্গে আছে, এখন তো সেটাও নেই কারণ অভিজিৎ হত্যার পর দেশের যে সহিংসতা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, জঙ্গিপনা এগুলোও বিদেশী শক্তি বিবেচনায় নিয়েছে। কাজেই এ বিতর্ক যেখানে জারি আছে সেখানে বিদেশীদের সমর্থনের যে জায়গাটা সেটাও সরকারের পকেট হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং আমার ধারণা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনার জন্য, দেশেকে মুক্ত করার জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে এবং শুরু করতে হবে নির্বাচন কমিশনের সংস্কার, নির্বাচন ব্যবস্থাপনার সংস্কার এবং একটা গ্রহণযোগ্য অবস্থায় যাওয়ার জন্য বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলা। বিএনপিকে এতে যোগ দেয়া উচিত। ডাকলেই যেতে হবে। না যাবো না- এ রকম নাটক বা থিয়েটারের পলিটিকস বাংলাদেশের মানুষ আর চায় না। কাজেই সরকার উদ্যোগ নিয়ে শুরু করলে আমার ধারণা এ অবস্থা থেকে উত্তরণ হবে। আর বিরোধী দলকে দমন-পীড়ন করে প্রকারান্তরে নিঃশেষ করার যে পন্থা দেখতে পাচ্ছি তা বন্ধ করতেই হবে। কারণ বিরোধী দল ছাড়া শুধু একটি দলের রাজত্ব কায়েম হবে এজন্য তো মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন হয়নি। সরকারকে মনে রাখতে হবে কোন দলকে এভাবে নিঃশেষ করা যায় না। আপাত স্থবিরতা দেখা যেতে পারে। কিন্তু এতে করে গণতন্ত্রই নিঃশেষ হয়ে যাবে। আর এখান থেকে ফিরে আসা খুব কঠিন। কারণ গণতন্ত্র না থাকলে জঙ্গিপনা মাথা চাড়া দিয়ে উঠবেই। সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে একটা ব্যালান্স অব পাওয়ারেও যেতে হবে। বর্তমান দেশ একটা ফাঁদে আটকা পড়ে গেছে। সে অর্থে এখন গণতন্ত্র নেই। এখান থেকে সরকারকে উদ্যোগ নিয়েই বের হতে হবে। আর এর প্রধান পন্থা নির্বাচনের সংস্কার করা।
No comments