টাকার অভাবে গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণকাজ শুরু হচ্ছে না, পদ্মায় ২ কিলোমিটার ব্যারাজ নির্মাণের পরিকল্পনা : ব্যয় হবে ৩১ হাজার কোটি টাকা by মুহম্মদ আব্দুল মজিদ
দেশের
মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশকে সুফলভোগীর আওতায় এনে ফারাক্কার বিকল্প হিসেবে
পদ্মা নদীর ওপর ‘গঙ্গা ব্যারাজ’ নির্মাণ করা হবে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত
থেকে ৮২ কিলোমিটার ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজ (পাকশী ব্রিজ) ও রূপপুর পরমাণু
বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ৫২ কিলোমিটার ভাটিতে এ ব্যারাজ নির্মিত হবে। এর
অবস্থান হবে পাবনার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া ও নদীর ডান তীর অর্থাৎ নদীর
ওপার রাজবাড়ী জেলার পাংশা উপজেলার হাবাসপুর। এর দৈর্ঘ্য হবে ২ দশমিক ১
কিলোমিটার। প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। এ ব্যারাজ
প্রকল্প থেকে উৎপাদিত হবে ১১৩ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ। এ মহাপরিকল্পনার আওতায়
ব্যারাজের মাধ্যমে ধরে রাখা পানি চ্যানেলে সরবরাহ করে ২৬ জেলার ১৬৫ উপজেলায়
কৃষিকাজের সেচে ব্যবহার করা হবে, যা দেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ এ
প্রকল্পের সুফলভোগী হবেন। চালু হওয়ার পর সাত বছরের মধ্যেই প্রকল্পের জন্য
ব্যয়িত সব টাকা উঠে আসবে। সরকারের প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অর্থের কোনো
সংস্থান না হওয়ায় এ প্রকল্পটি একনেক অনুমোদন ও কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। প্রসঙ্গত, প্রায় অনুরূপ একটি ‘গঙ্গা
ব্যারাজ শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলেন এবং
১৯৮১ সালে পদ্মা নদীর পাড়ে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের চার কিলোমিটার ভাটিতে
ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু পরে সে প্রকল্প আর আলোর মুখ
দেখেনি।
প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা জানায়, ১৯৯৬ সালে ফারাক্কা চুক্তির ফলে পদ্মায় শুষ্ক মওসুমে সর্বনি¤œ যে ৪০ হাজার কিউসেক পানি পাওয়া যায় তার সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতসহ বর্ষা মওসুমের পানি ধরে রেখে কৃষি কাজে সর্বোচ্চ ব্যবহার করার লক্ষ্যে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ১৯৯৬ সালে ফারাক্কা চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ১০ দিন অন্তর অন্তর ৪০ হাজার কিউসেক পানি পায় বলে দাবি করা হয়। সংরণের অভাবে এ পানি বিনা বাধায় সাগরে চলে যায়। শুষ্ক মওসুমে এ পানি বাংলাদেশের কোনো কাজে লাগে না। ভারত গঙ্গায় ১৯৭৫ সালেই ফারাক্কা বাঁধ চালু করেছে। সে আদলে বাংলাদেশও ব্যারাজ নির্মাণের জন্য এখন চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সার্ভেসহ প্রকল্প তৈরির সাথে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, দেশের বৃহত্তম এ প্রকল্পটি সেই পাকিস্তান আমল থেকে করার পরিকল্পনা ছিল। এ জন্য তখন থেকে বিগত সব সরকারই কাজ করে যাচ্ছে। বিগত সময়ের সব সার্ভে রিপোর্টসহ সব টেকনিক্যাল দিকগুলো পর্যালোচনা করে ২০০৪ সাল থেকে পুনরায় সরেজমিনর আপডেটে ডাটা প্রকল্প তৈরির কাজ শুরু করা হয়। দীর্ঘ সময় সমীক্ষা শেষে প্রকল্পটি ডিজাইন ২০১৩-১৪ অর্থবছরে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়। এ খাতে ব্যয় হবে ৩১ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা ও সময়কাল ধরা হয় সাত বছর। সূত্র আরো জানায়, যেহেতু দেশের মধ্যে এটা একটি বৃহত্তম প্রকল্প তাই এর সব টাকা সরকার বহন করতে পারবে না তাই বিদেশী দাতাসংস্থা থেকে টাকার প্রয়োজন হবে। এ জন্য প্রজেক্ট প্রোফাইলে টাকা সংস্থানের সম্ভাব্য সূত্রগুলোও উল্লেখ করে সুপারিশ করা হয় এ প্রকল্পে। প্রকল্পটি এখন প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প (ডিপিপি) হিসেবে একনেকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রক্রিয়া চলছে ও একটি সারসংক্ষেপ পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেয়া হয়েছে। এতে চীন ও মালয়েশিয়া অর্থায়নের আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অর্থায়ন নিশ্চিত হলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সাত বছর লাগবে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সমীায় বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত ব্যারাজ ও আনুষঙ্গিক কাজ সমাপ্ত হলে সাত বছরের মধ্যেই প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় উঠে আসবে।
গঙ্গা ব্যারাজ বাংলাদেশের দণি-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে অন্যান্য অঞ্চলের সরাসরি সড়ক সংযোগ স্থাপন করবে উল্লেখ করে সমীা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যারাজের ডেকের ওপর স্থাপিত চার লেনবিশিষ্ট সড়ক সেতু বাঁ প্রান্তে সাত কিলোমিটার সংযোগ সড়কের মাধ্যমে ডান প্রান্তে পশ্চিম ও দণি-পশ্চিমাঞ্চলকে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া হাইওয়ের সাথে ৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের মাধ্যমে যুক্ত করবে। একই সাথে উত্তর, উত্তর-পশ্চিম এবং মধ্যাঞ্চলকে পাবনা-সিরাজগঞ্জ-বগুড়া হাইওয়ের কাশীনাথপুর পয়েন্টে সংযুক্ত করবে। অন্য দিকে সড়কের ব্যারাজের ডেকের ওপর প্রস্তাবিত সড়কসেতু মংলাবন্দর, বেনাপোল, বাংলাবান্ধা ও বুড়িমারী সীমান্ত বন্দরগুলোর সাথে নেপাল, ভুটান ও ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে সংযুক্ত করবে। প্রস্তাবিত সড়কসেতু থেকে প্রকল্প চালু হওয়ার পর সাত বছরে ৩৪১ কোটি টাকা টোল আদায় সম্ভব হবে বলে সমীায় বলা হয়েছে। ধূলিয়ান-গোদাগাড়ী-রাজশাহী আন্তর্জাতিক নৌরুটটি পুনরুজ্জীবিত হবে। আর মংলাবন্দরে পণ্য আনানেয়ার েেত্র গুরুত্বপূর্ণ রূপসা-মধুমতী-গড়াই নৌপথকে সম্পৃক্ত করা হবে। এতে নৌপরিবহন খাতে আর্থিক সুবিধা পাওয়া যাবে বছরে ১৮৮ কোটি টাকা।
প্রকল্পের প্রাথমিক সমীা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, রাজবাড়ীর পাংশা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাংখা পর্যন্ত মোট ১৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ হবে। ৬২ হাজার ৫০০ হেক্টর এলাকাজুড়ে জলাধার তৈরি করা হবে। এর পানি বাঁ পাড়ে গোদাগাড়ী পাম্পহাউজ, রূপপুর আণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, পাবনার বড়াল ও ইছামতি এবং ডান পাড়ে গড়াই, হিসনা, চন্দনা ও জিকে পাম্পের ন্যূনতম গড় প্রয়োজন ৬৯৮ কিউসেক, গড়াই হাইড্রোপাওয়ারের জন্য অতিরিক্ত ২৫ কিউসেক ও গঙ্গা ব্যারাজের জন্য ৬৪২ কিউসেকসহ মোট এক হাজার ৩৬৫ কিউসেকের প্রয়োজন মেটাবে। এর মাধ্যমে গঙ্গানির্ভর (পদ্মা নদী) এলাকার ২৬ জেলার ১৬৫ উপজেলায় পানি পৌঁছে দেয়া হবে। এতে সেচযোগ্য জমির পরিমাণ বাড়ায় ২৬ লাখ ৫৭ হাজার টন ধান ও ১০ লাখ ৫০ হাজার টন অন্যান্য ফসলের উৎপাদন বাড়বে। এতে প্রকল্প এলাকার মানুষের আয় ও জীবনযাত্রার মান অনেক বৃদ্ধি পাবে।
প্রকল্পের সমীা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মূল ব্যারাজের সাথে ৭৬ দশমিক ৪ মেগাওয়াট উৎপাদন মতার একটি ও গড়াইয়ে ৩৬ দশমিক ৬ মেগাওয়াট উৎপাদন মতার আরেকটি জলবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া পদ্মা নদীনির্ভর জলাধারে মৎস্যসম্পদ সংরণ, অব্যাহত নৌপরিবহন ও নদীর পানির লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। পদ্মানির্ভর নদ-নদীর লবণাক্ততার সীমারেখা জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত উজানের দিক থেকে ভাটির দিকে (সমুদ্রের দিকে) ঠেলে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে,পদ্মায় প্রতি বছর প্রায় ১৬ কোটি ২০ লাখ টন পলি প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে ৮৫ শতাংশ আসে বন্যা মওসুমে মধ্য জুলাই থেকে মধ্য অক্টোবরে। বাকি ১৫ শতাংশ জমা হয় শুষ্ক মওসুমে। জলাধার হলে শুষ্ক মওসুমে আসা পলি উজানে জমা হবে, যা বন্যা মওসুমে সহজেই পানির সাথে ধুয়ে যাবে। তাই ব্যারাজ নির্মাণের ফলে পলিজনিত কোনো সমস্যা হবে না। গঙ্গা ব্যারাজের ১৬৫ কিলোমিটার বিস্তৃত জলাধার বিভিন্ন প্রজাতির মাছের অভয়ারণ্য হয়ে উঠবে। এতে প্রতি বছর বাড়তি যে মাছ পাওয়া যাবে, তার মূল্য দাঁড়াবে ৬৬ কোটি টাকা।
পদ্মার পানি পরিমাপ ও নদী নিয়ে কাজ করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডে এমন একজন অভিজ্ঞ প্রকৌশলী ও পাবনার বেড়া পওরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কবিবুর রহমান জানান, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গড়াই, মধুমতী, নবগঙ্গা, চিত্রা, আত্রাই, ভৈরব নদসহ সুন্দরবনের নদী ও খালগুলোর লবণাক্ততা কমবে। সুন্দরবনের ৫১ শতাংশ অর্থাৎ ২ লাখ ১১ হাজার হেক্টর এলাকায় এ প্রকল্পের প্রভাব পড়বে। এর মধ্যে ৩৩ শতাংশ এলাকার উচ্চমাত্রার লবণাক্ততা নিম্নœ বা মাঝারি অবস্থায় আসবে। এতে সুন্দরী গাছ আরো বাড়বে, যার আর্থিকমূল্য হবে ৭৫২ কোটি টাকা। এতে বাংলাদেশের দণি-পশ্চিমাঞ্চলের বৃহত্তর রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, ফরিদপুর ও বরিশাল অঞ্চলে সমন্বিত গঙ্গার পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। এ ফলে বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের মরুকরণ থেকে রক্ষা পাবে এবং এ অঞ্চলের সব মরা নদী পুনরুজ্জীবন হবে। তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার ভিশন টুয়েন্টি ওয়ান গড়ে তোলার যে পরিকল্পনা করেছে তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ও সহায়ক প্রকল্প।
গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আব্দুল হাই বাকী বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের ইচ্ছা প্রবল; তবে প্রকল্পের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের জোগান দেয়া সরকারের নিজস্ব উৎস থেকে সম্ভব নয়। এ কারণে সরকার বিভিন্ন দাতাসংস্থা ও দেশের সাথে যোগাযোগ করছে। তার বিশ্বাস সরকার এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে শিগগিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা জানায়, ১৯৯৬ সালে ফারাক্কা চুক্তির ফলে পদ্মায় শুষ্ক মওসুমে সর্বনি¤œ যে ৪০ হাজার কিউসেক পানি পাওয়া যায় তার সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতসহ বর্ষা মওসুমের পানি ধরে রেখে কৃষি কাজে সর্বোচ্চ ব্যবহার করার লক্ষ্যে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ১৯৯৬ সালে ফারাক্কা চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ১০ দিন অন্তর অন্তর ৪০ হাজার কিউসেক পানি পায় বলে দাবি করা হয়। সংরণের অভাবে এ পানি বিনা বাধায় সাগরে চলে যায়। শুষ্ক মওসুমে এ পানি বাংলাদেশের কোনো কাজে লাগে না। ভারত গঙ্গায় ১৯৭৫ সালেই ফারাক্কা বাঁধ চালু করেছে। সে আদলে বাংলাদেশও ব্যারাজ নির্মাণের জন্য এখন চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সার্ভেসহ প্রকল্প তৈরির সাথে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা জানান, দেশের বৃহত্তম এ প্রকল্পটি সেই পাকিস্তান আমল থেকে করার পরিকল্পনা ছিল। এ জন্য তখন থেকে বিগত সব সরকারই কাজ করে যাচ্ছে। বিগত সময়ের সব সার্ভে রিপোর্টসহ সব টেকনিক্যাল দিকগুলো পর্যালোচনা করে ২০০৪ সাল থেকে পুনরায় সরেজমিনর আপডেটে ডাটা প্রকল্প তৈরির কাজ শুরু করা হয়। দীর্ঘ সময় সমীক্ষা শেষে প্রকল্পটি ডিজাইন ২০১৩-১৪ অর্থবছরে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়। এ খাতে ব্যয় হবে ৩১ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা ও সময়কাল ধরা হয় সাত বছর। সূত্র আরো জানায়, যেহেতু দেশের মধ্যে এটা একটি বৃহত্তম প্রকল্প তাই এর সব টাকা সরকার বহন করতে পারবে না তাই বিদেশী দাতাসংস্থা থেকে টাকার প্রয়োজন হবে। এ জন্য প্রজেক্ট প্রোফাইলে টাকা সংস্থানের সম্ভাব্য সূত্রগুলোও উল্লেখ করে সুপারিশ করা হয় এ প্রকল্পে। প্রকল্পটি এখন প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প (ডিপিপি) হিসেবে একনেকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রক্রিয়া চলছে ও একটি সারসংক্ষেপ পরিকল্পনা কমিশনে জমা দেয়া হয়েছে। এতে চীন ও মালয়েশিয়া অর্থায়নের আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অর্থায়ন নিশ্চিত হলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সাত বছর লাগবে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সমীায় বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত ব্যারাজ ও আনুষঙ্গিক কাজ সমাপ্ত হলে সাত বছরের মধ্যেই প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় উঠে আসবে।
গঙ্গা ব্যারাজ বাংলাদেশের দণি-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে অন্যান্য অঞ্চলের সরাসরি সড়ক সংযোগ স্থাপন করবে উল্লেখ করে সমীা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যারাজের ডেকের ওপর স্থাপিত চার লেনবিশিষ্ট সড়ক সেতু বাঁ প্রান্তে সাত কিলোমিটার সংযোগ সড়কের মাধ্যমে ডান প্রান্তে পশ্চিম ও দণি-পশ্চিমাঞ্চলকে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া হাইওয়ের সাথে ৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের মাধ্যমে যুক্ত করবে। একই সাথে উত্তর, উত্তর-পশ্চিম এবং মধ্যাঞ্চলকে পাবনা-সিরাজগঞ্জ-বগুড়া হাইওয়ের কাশীনাথপুর পয়েন্টে সংযুক্ত করবে। অন্য দিকে সড়কের ব্যারাজের ডেকের ওপর প্রস্তাবিত সড়কসেতু মংলাবন্দর, বেনাপোল, বাংলাবান্ধা ও বুড়িমারী সীমান্ত বন্দরগুলোর সাথে নেপাল, ভুটান ও ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে সংযুক্ত করবে। প্রস্তাবিত সড়কসেতু থেকে প্রকল্প চালু হওয়ার পর সাত বছরে ৩৪১ কোটি টাকা টোল আদায় সম্ভব হবে বলে সমীায় বলা হয়েছে। ধূলিয়ান-গোদাগাড়ী-রাজশাহী আন্তর্জাতিক নৌরুটটি পুনরুজ্জীবিত হবে। আর মংলাবন্দরে পণ্য আনানেয়ার েেত্র গুরুত্বপূর্ণ রূপসা-মধুমতী-গড়াই নৌপথকে সম্পৃক্ত করা হবে। এতে নৌপরিবহন খাতে আর্থিক সুবিধা পাওয়া যাবে বছরে ১৮৮ কোটি টাকা।
প্রকল্পের প্রাথমিক সমীা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, রাজবাড়ীর পাংশা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাংখা পর্যন্ত মোট ১৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ হবে। ৬২ হাজার ৫০০ হেক্টর এলাকাজুড়ে জলাধার তৈরি করা হবে। এর পানি বাঁ পাড়ে গোদাগাড়ী পাম্পহাউজ, রূপপুর আণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, পাবনার বড়াল ও ইছামতি এবং ডান পাড়ে গড়াই, হিসনা, চন্দনা ও জিকে পাম্পের ন্যূনতম গড় প্রয়োজন ৬৯৮ কিউসেক, গড়াই হাইড্রোপাওয়ারের জন্য অতিরিক্ত ২৫ কিউসেক ও গঙ্গা ব্যারাজের জন্য ৬৪২ কিউসেকসহ মোট এক হাজার ৩৬৫ কিউসেকের প্রয়োজন মেটাবে। এর মাধ্যমে গঙ্গানির্ভর (পদ্মা নদী) এলাকার ২৬ জেলার ১৬৫ উপজেলায় পানি পৌঁছে দেয়া হবে। এতে সেচযোগ্য জমির পরিমাণ বাড়ায় ২৬ লাখ ৫৭ হাজার টন ধান ও ১০ লাখ ৫০ হাজার টন অন্যান্য ফসলের উৎপাদন বাড়বে। এতে প্রকল্প এলাকার মানুষের আয় ও জীবনযাত্রার মান অনেক বৃদ্ধি পাবে।
প্রকল্পের সমীা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, মূল ব্যারাজের সাথে ৭৬ দশমিক ৪ মেগাওয়াট উৎপাদন মতার একটি ও গড়াইয়ে ৩৬ দশমিক ৬ মেগাওয়াট উৎপাদন মতার আরেকটি জলবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া পদ্মা নদীনির্ভর জলাধারে মৎস্যসম্পদ সংরণ, অব্যাহত নৌপরিবহন ও নদীর পানির লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। পদ্মানির্ভর নদ-নদীর লবণাক্ততার সীমারেখা জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত উজানের দিক থেকে ভাটির দিকে (সমুদ্রের দিকে) ঠেলে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে,পদ্মায় প্রতি বছর প্রায় ১৬ কোটি ২০ লাখ টন পলি প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে ৮৫ শতাংশ আসে বন্যা মওসুমে মধ্য জুলাই থেকে মধ্য অক্টোবরে। বাকি ১৫ শতাংশ জমা হয় শুষ্ক মওসুমে। জলাধার হলে শুষ্ক মওসুমে আসা পলি উজানে জমা হবে, যা বন্যা মওসুমে সহজেই পানির সাথে ধুয়ে যাবে। তাই ব্যারাজ নির্মাণের ফলে পলিজনিত কোনো সমস্যা হবে না। গঙ্গা ব্যারাজের ১৬৫ কিলোমিটার বিস্তৃত জলাধার বিভিন্ন প্রজাতির মাছের অভয়ারণ্য হয়ে উঠবে। এতে প্রতি বছর বাড়তি যে মাছ পাওয়া যাবে, তার মূল্য দাঁড়াবে ৬৬ কোটি টাকা।
পদ্মার পানি পরিমাপ ও নদী নিয়ে কাজ করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডে এমন একজন অভিজ্ঞ প্রকৌশলী ও পাবনার বেড়া পওরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: কবিবুর রহমান জানান, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গড়াই, মধুমতী, নবগঙ্গা, চিত্রা, আত্রাই, ভৈরব নদসহ সুন্দরবনের নদী ও খালগুলোর লবণাক্ততা কমবে। সুন্দরবনের ৫১ শতাংশ অর্থাৎ ২ লাখ ১১ হাজার হেক্টর এলাকায় এ প্রকল্পের প্রভাব পড়বে। এর মধ্যে ৩৩ শতাংশ এলাকার উচ্চমাত্রার লবণাক্ততা নিম্নœ বা মাঝারি অবস্থায় আসবে। এতে সুন্দরী গাছ আরো বাড়বে, যার আর্থিকমূল্য হবে ৭৫২ কোটি টাকা। এতে বাংলাদেশের দণি-পশ্চিমাঞ্চলের বৃহত্তর রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, ফরিদপুর ও বরিশাল অঞ্চলে সমন্বিত গঙ্গার পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। এ ফলে বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের মরুকরণ থেকে রক্ষা পাবে এবং এ অঞ্চলের সব মরা নদী পুনরুজ্জীবন হবে। তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার ভিশন টুয়েন্টি ওয়ান গড়ে তোলার যে পরিকল্পনা করেছে তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ও সহায়ক প্রকল্প।
গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আব্দুল হাই বাকী বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের ইচ্ছা প্রবল; তবে প্রকল্পের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের জোগান দেয়া সরকারের নিজস্ব উৎস থেকে সম্ভব নয়। এ কারণে সরকার বিভিন্ন দাতাসংস্থা ও দেশের সাথে যোগাযোগ করছে। তার বিশ্বাস সরকার এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে শিগগিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
No comments