‘আমি হিন্দু শিবির নই’ by মাহমুদ মানজুর
জগন্নাথ
বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ছাত্র নয়ন বাছার। ছিলেন হাসি-খুশি তরতাজা
এক তরুণ। হঠাৎ ৪ঠা ফেব্রুয়ারি বদলে যায় তার জীবনের কাহিনী। পুলিশের গুলিতে
আহত নয়ন বাছারের এখনকার ঠিকানা পঙ্গু হাসপাতালের এবি ওয়ার্ডের ৬৯ নম্বর
বিছানা। গতকাল একটি ইনজেকশন দেয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু অর্থাভাবে ১১৫০ টাকা
দামের সে ইনজেকশন কেনা সম্ভব হয়নি। মা শিখা রানী মজুমদার ও ছেলের আহজারিতে
ভারি এখন ওই ওয়ার্ডের পরিবেশ। একটু পরপর কান্নার শব্দ। মাকে নয়ন বলছিলেন,
আমার পা যদি কেটে ফেলতে হয়। তোমার কি হবে মা? একজীবনে আর কত কষ্ট করবা?
কিভাবে বদলে গেল নয়ন বাছারের জীবন। নিজেই তিনি বর্ণনা করছিলেন সেদিনের কথা। রাত প্রায় সাড়ে আটটা। টিউশনি শেষ করে এলেন ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে। মীরহাজীরবাগ যাওয়ার উদ্দেশে ওঠেন একটি বাসে। এ সময় বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বাস থেকে নামার পর পুলিশ তার কাছে জানতে চায়, তিনি জামায়াত-শিবির করেন কিনা? জবাবে তিনি বলেন, আমার নাম নয়ন বাছার, আমি হিন্দু সম্প্রদায়ের। এর পরই হাঁটুর ওপরে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে সাদা পোশাকের পুলিশ। তারপর আর মনে নেই।
কেন এমন হলো। মা-ছেলের কাছে সে প্রশ্নের জবাব নেই। শিখা রানী মজুমদার বলছিলেন, আমি তো পাথর হয়ে গেছি। নয়ন গর্ভে থাকতেই ওর বাবা ভারতে চলে গেছে। আর ফিরেনি। এর পর এই বুকের মানিককে নিয়ে একা একা জীবন সংগ্রাম করে টিকে আছি ২২টি বছর ধরে। এ ছেলেটিকে বুকে আগলে রেখে তিল তিল করে স্বপ্ন বুনেছি। নিজে না খেয়ে, না পরে ওকে মানুষের মতো মানুষ করার প্রতিজ্ঞা করেছি। ও জগন্নাথে ভর্তি হওয়ার পর ভেবেছি এই বুঝি আমার যুদ্ধের দিন শেষ হলো। এই তো আর কয়টা দিন। ও পড়াশোনা শেষ করে ভাল একটি চাকরি করবে। সুন্দরী মেয়ে দেখে ধুমধাম করে বিয়ে করাবো। আমি-ছেলে আর ছেলের বৌ মিলে বাকি জীবনটা শান্তিতে কাটিয়ে দেবো। এই বলে শিখা রানী মজুমদার ফুঁফিয়ে কেঁদে ওঠেন। হাসপাতালে দেখতে আসা নয়ন বাছারের এক বন্ধু জানালেন, শিখা রানী মজুমদার তার বাবারবাড়িতে ছোট্ট একটি ঘর তুলে নয়নকে নিয়ে থাকতেন। বাগেরহাটের স্থানীয় একটি রেজিস্ট্রার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নামমাত্র বেতনে চাকরি করেই সংসার চলতো মা-ছেলের। এই ছেলের ভবিষ্যৎ আর পড়াশোনার কথা চিন্তা করে নতুন সংসারের কথা না ভেবে একাই থেকে গেছেন ছেলেকে আঁকড়ে ধরে। নয়ন বাছারের বন্ধু আরও জানান, ১৩ দিন ধরে প্রতিদিন নয়ন বাছারের চিকিৎসা খরচ লাগে প্রায় ৫০০০ টাকা। প্রতিদিন ১১৫০ টাকা দামের একটি ইনজেকশন কিনতে হয়। এ টাকা জোগাড় করতে শিখা রানীর হিমশিম খেতে হচ্ছে। হাত বাড়িয়ে দেয়ার মতো তেমন কোন সামর্থ্যবান স্বজনও নেই। নিজের স্বজন এবং সঞ্চয়ের সব টাকা শেষ এরই মধ্যে। গতকাল ইনজেকশনের অভাবে নয়নের পা ড্রেসিং করানো হয়নি। এ প্রতিবেদককে হাতজোড় করে শিখা রানী বলেন, দয়া করে আপনারা (সাংবাদিক) আমার গ্রামের এমপি-চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে খবর নিন। আমার ছেলের ভার্সিটিতে-মেসে খবর নিন। তারপর লেখেন। তবুও পুলিশের বানানো কথাগুলো লেখবেন না। আমার ছেলে জীবনে কোন দিন মিটিং-মিছিলে যায়নি। আমাকে আর আমার ছেলেটাকে বাঁচতে দিন। নয়ন বাছারের চিকিৎসা খরচের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার আবেদনও করেছেন এই অসহায় স্কুলশিক্ষিকা। এদিকে গতকাল পঙ্গু হাসপাতালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পুলিশের গুলিতে আহত পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ১৭। এক মাসে এমন রোগীর তিনজনের পা কাটা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্তব্যরত নার্স বলেন, ইদানীং পুলিশ কেইসে যে কয়জন গুলিবিদ্ধ রোগী আসেন, তার বেশির ভাগই হাঁটুতে গুলিবিদ্ধ। আর হাঁটুতে গুলি করা মানে হচ্ছে আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করা।
কিভাবে বদলে গেল নয়ন বাছারের জীবন। নিজেই তিনি বর্ণনা করছিলেন সেদিনের কথা। রাত প্রায় সাড়ে আটটা। টিউশনি শেষ করে এলেন ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে। মীরহাজীরবাগ যাওয়ার উদ্দেশে ওঠেন একটি বাসে। এ সময় বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বাস থেকে নামার পর পুলিশ তার কাছে জানতে চায়, তিনি জামায়াত-শিবির করেন কিনা? জবাবে তিনি বলেন, আমার নাম নয়ন বাছার, আমি হিন্দু সম্প্রদায়ের। এর পরই হাঁটুর ওপরে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে সাদা পোশাকের পুলিশ। তারপর আর মনে নেই।
কেন এমন হলো। মা-ছেলের কাছে সে প্রশ্নের জবাব নেই। শিখা রানী মজুমদার বলছিলেন, আমি তো পাথর হয়ে গেছি। নয়ন গর্ভে থাকতেই ওর বাবা ভারতে চলে গেছে। আর ফিরেনি। এর পর এই বুকের মানিককে নিয়ে একা একা জীবন সংগ্রাম করে টিকে আছি ২২টি বছর ধরে। এ ছেলেটিকে বুকে আগলে রেখে তিল তিল করে স্বপ্ন বুনেছি। নিজে না খেয়ে, না পরে ওকে মানুষের মতো মানুষ করার প্রতিজ্ঞা করেছি। ও জগন্নাথে ভর্তি হওয়ার পর ভেবেছি এই বুঝি আমার যুদ্ধের দিন শেষ হলো। এই তো আর কয়টা দিন। ও পড়াশোনা শেষ করে ভাল একটি চাকরি করবে। সুন্দরী মেয়ে দেখে ধুমধাম করে বিয়ে করাবো। আমি-ছেলে আর ছেলের বৌ মিলে বাকি জীবনটা শান্তিতে কাটিয়ে দেবো। এই বলে শিখা রানী মজুমদার ফুঁফিয়ে কেঁদে ওঠেন। হাসপাতালে দেখতে আসা নয়ন বাছারের এক বন্ধু জানালেন, শিখা রানী মজুমদার তার বাবারবাড়িতে ছোট্ট একটি ঘর তুলে নয়নকে নিয়ে থাকতেন। বাগেরহাটের স্থানীয় একটি রেজিস্ট্রার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নামমাত্র বেতনে চাকরি করেই সংসার চলতো মা-ছেলের। এই ছেলের ভবিষ্যৎ আর পড়াশোনার কথা চিন্তা করে নতুন সংসারের কথা না ভেবে একাই থেকে গেছেন ছেলেকে আঁকড়ে ধরে। নয়ন বাছারের বন্ধু আরও জানান, ১৩ দিন ধরে প্রতিদিন নয়ন বাছারের চিকিৎসা খরচ লাগে প্রায় ৫০০০ টাকা। প্রতিদিন ১১৫০ টাকা দামের একটি ইনজেকশন কিনতে হয়। এ টাকা জোগাড় করতে শিখা রানীর হিমশিম খেতে হচ্ছে। হাত বাড়িয়ে দেয়ার মতো তেমন কোন সামর্থ্যবান স্বজনও নেই। নিজের স্বজন এবং সঞ্চয়ের সব টাকা শেষ এরই মধ্যে। গতকাল ইনজেকশনের অভাবে নয়নের পা ড্রেসিং করানো হয়নি। এ প্রতিবেদককে হাতজোড় করে শিখা রানী বলেন, দয়া করে আপনারা (সাংবাদিক) আমার গ্রামের এমপি-চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে খবর নিন। আমার ছেলের ভার্সিটিতে-মেসে খবর নিন। তারপর লেখেন। তবুও পুলিশের বানানো কথাগুলো লেখবেন না। আমার ছেলে জীবনে কোন দিন মিটিং-মিছিলে যায়নি। আমাকে আর আমার ছেলেটাকে বাঁচতে দিন। নয়ন বাছারের চিকিৎসা খরচের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার আবেদনও করেছেন এই অসহায় স্কুলশিক্ষিকা। এদিকে গতকাল পঙ্গু হাসপাতালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পুলিশের গুলিতে আহত পুলিশ পাহারায় চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা ১৭। এক মাসে এমন রোগীর তিনজনের পা কাটা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্তব্যরত নার্স বলেন, ইদানীং পুলিশ কেইসে যে কয়জন গুলিবিদ্ধ রোগী আসেন, তার বেশির ভাগই হাঁটুতে গুলিবিদ্ধ। আর হাঁটুতে গুলি করা মানে হচ্ছে আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করা।
amar dese tai chole
ReplyDelete