একুশে ১৯৭২ by জুলিয়ান ফ্রান্সিস
অক্সফামের
ত্রাণ তৎপরতার সমন্বয়ক হিসেবে আমি কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে শরণার্থী ত্রাণ
কার্যালয়ে বসে ছিলাম। দিনটি ছিল ১৯৭২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। সে সময়
কার্যালয়ের এক বার্তাবাহক হন্তদন্ত হয়ে এসে আমাকে বললেন, কয়েক শ নারী,
পুরুষ ও শিশু আমার জন্য বাইরে অপেক্ষা করছে। তারা আমার নাম ধরে ডাকছে। আমি
ভাবলাম, তারা কি কোনো ত্রাণশিবির থেকে অভিযোগ করতে এসেছে? আমি বাইরে
গেলে সমবেত শ পাঁচেক মানুষের মুখপাত্র বললেন, তাঁরা একটা ভালো দিনে বাড়ি
ফেরার যাত্রা শুরু করতে চান। তাঁরা আমাকে ‘২১ ফেব্রুয়ারি’র গুরুত্ব
বোঝানোর চেষ্টা করেন। সেবার ছিল দিবসটির ২০তম বার্ষিকী। ২০ বছর আগের এই
দিনে বাঙালিরা মাতৃভাষার জন্য পাকিস্তানি পুলিশের গুলিতে প্রাণ দেয়। ‘আজ
আমাদের এই দেশ পাওয়ার পেছনে একুশ অন্যতম কারণ,’ লোকে আমাকে বলল,
শরণার্থীরা কলকাতার কাছাকাছি দিগবাড়িয়া নামক স্থান থেকে এসেছে।
সেই দলের আয়োজকেরা আমাকে জানান, ১৯৭১ সালের বর্ষাকালে অক্সফামের সঙ্গে সম্পর্কিত শিবিরগুলোতে আমি হারমোনিয়াম ও তবলা সরবরাহ করায় তাঁরা কৃতজ্ঞ। তাঁরা বললেন, সংগীত শুধু শিবিরের মানুষের স্বাস্থ্যেরই উন্নতি ঘটায়নি, এটা বাঙালির সংগীত, সংস্কৃতি ও ভাষাকেও জীবন্ত রেখেছে। এর ফলে শিশুদের বিশেষ উপকার হয়েছে বলে তাঁরা আমাকে জানান। আমাকে তাঁরা বলেন, বাড়ি ফিরতে পারলে এর ফলে তাঁদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে।
তাঁরা আমাকে বলেন, তাঁদের জন্য অক্সফাম যা করেছে, তার জন্য তাঁরা আমাদের ধন্যবাদ দিতে এসেছেন; বিদায় জানাতে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে একজন বাঁশের তৈরি ফুলদানি নিয়ে আসেন, তাতে তারের মাথায় গাঁথা কিছু কাগজের ফুলও ছিল। এই উপহারটি আমি দীর্ঘদিন ধরে সযত্নে লালন করেছি।
একজন বললেন, তিনি শুনেছেন যে আমি দিন কয়েক আগে সড়কপথে ঢাকায় গিয়েছিলাম। সেই ভ্রমণে আমি কী দেখেছি, তা তিনি আমার কাছে জানতে চান। আমার ভ্রমণ সম্পর্কেও তিনি বিস্তারিত জানতে চান। ফলে আমি তাঁদের সবচেয়ে খারাপ পরিণতির জন্য প্রস্তুত করতে পারি। যদিও আমি ভালো কিছুর আশা করছিলাম, সব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও। আমার কাছে মনে হয়, গত ৪৩ বছরে বাংলাদেশ যেভাবে উন্নতি করেছে, তার মধ্যেই বাংলাদেশিদের চেতনা নিহিত রয়েছে। যাঁরা আমার সঙ্গে ৪৩ বছর আগে দেখা করতে এসেছিলেন, ঠিক তাঁদের মতো। তাঁদের সীমা হচ্ছে আকাশ। আরও অনেক কিছুই এখানে সম্ভব।
‘১৯৭২ সালের একুশে’ আমার কাছে এমন ব্যঞ্জনা নিয়েই ধরা দেয়।
ইংরেজি থেকে অনূদিত
লেখক: ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় অক্সফামের হয়ে ত্রাণ তৎপরতা সমন্বয় করেছেন। ‘মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু সম্মাননা’ খেতাবে ভূষিত।
সেই দলের আয়োজকেরা আমাকে জানান, ১৯৭১ সালের বর্ষাকালে অক্সফামের সঙ্গে সম্পর্কিত শিবিরগুলোতে আমি হারমোনিয়াম ও তবলা সরবরাহ করায় তাঁরা কৃতজ্ঞ। তাঁরা বললেন, সংগীত শুধু শিবিরের মানুষের স্বাস্থ্যেরই উন্নতি ঘটায়নি, এটা বাঙালির সংগীত, সংস্কৃতি ও ভাষাকেও জীবন্ত রেখেছে। এর ফলে শিশুদের বিশেষ উপকার হয়েছে বলে তাঁরা আমাকে জানান। আমাকে তাঁরা বলেন, বাড়ি ফিরতে পারলে এর ফলে তাঁদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে।
তাঁরা আমাকে বলেন, তাঁদের জন্য অক্সফাম যা করেছে, তার জন্য তাঁরা আমাদের ধন্যবাদ দিতে এসেছেন; বিদায় জানাতে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে একজন বাঁশের তৈরি ফুলদানি নিয়ে আসেন, তাতে তারের মাথায় গাঁথা কিছু কাগজের ফুলও ছিল। এই উপহারটি আমি দীর্ঘদিন ধরে সযত্নে লালন করেছি।
একজন বললেন, তিনি শুনেছেন যে আমি দিন কয়েক আগে সড়কপথে ঢাকায় গিয়েছিলাম। সেই ভ্রমণে আমি কী দেখেছি, তা তিনি আমার কাছে জানতে চান। আমার ভ্রমণ সম্পর্কেও তিনি বিস্তারিত জানতে চান। ফলে আমি তাঁদের সবচেয়ে খারাপ পরিণতির জন্য প্রস্তুত করতে পারি। যদিও আমি ভালো কিছুর আশা করছিলাম, সব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও। আমার কাছে মনে হয়, গত ৪৩ বছরে বাংলাদেশ যেভাবে উন্নতি করেছে, তার মধ্যেই বাংলাদেশিদের চেতনা নিহিত রয়েছে। যাঁরা আমার সঙ্গে ৪৩ বছর আগে দেখা করতে এসেছিলেন, ঠিক তাঁদের মতো। তাঁদের সীমা হচ্ছে আকাশ। আরও অনেক কিছুই এখানে সম্ভব।
‘১৯৭২ সালের একুশে’ আমার কাছে এমন ব্যঞ্জনা নিয়েই ধরা দেয়।
ইংরেজি থেকে অনূদিত
লেখক: ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় অক্সফামের হয়ে ত্রাণ তৎপরতা সমন্বয় করেছেন। ‘মুক্তিযুদ্ধের বন্ধু সম্মাননা’ খেতাবে ভূষিত।
No comments