সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য by ড. একেএম শাহনাওয়াজ
১৫১
ব্যাপ্টিস্টরা বরিশাল অঞ্চলে অনেক নমশূদ্রকে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করতে পেরেছিলেন। উনিশ শতকে হিন্দু ও মুসলিম সমাজের প্রতিরোধের মুখে মিশনারি তৎপরতা কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়ে। তবে কোনো কোনো মিশনারি গ্রামের দরিদ্র মানুষের সংকটে পাশে দাঁড়িয়ে জনপ্রিয় হয়েছিলেন। এক্ষেত্রে চার্চ মিশনারি সোসাইটির জেমস লংয়ের নাম করা যেতে পারে। তিনি নীলকরদের অত্যাচার থেকে গরিব চাষীদের মুক্ত করতে ভূমিকা রেখেছিলেন। লং সাহেব দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটকটি ১৮৬১ সালে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। সে সময় নীলকররা তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছিল।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এসে খ্রিস্টান মিশনারিরা হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের সঙ্গে সহজ সম্পর্ক স্থাপন করতে পেরেছিলেন। উনিশ শতকের মাঝামাঝি বাংলায় রোমান ক্যাথলিক চার্চ শক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়। বেলজিয়ামের যাজকরা কলকাতায় সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এ কলেজ শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। খ্রিস্টান মিশনগুলো থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হতো। ভারত বিভাগের পর অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের পর ঢাকায় রোমান ক্যাথলিক আর্চ বিশপ ও অ্যাঙ্গলিকান বিশপের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি হয়।
উনিশ শতকের সমাজ সংস্কার : ১৫ শতকের মধ্যভাগে আধুনিক যুগে পদার্পণ করেছিল ইউরোপ। বিশেষত ১৪৫৩ সালে অটোমান তুর্কিদের হাতে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের পতনের পর থেকে এই সময়কাল নির্ধারণ করা হয়। মধ্যযুগের ইউরোপে কনস্টান্টিনোপল রোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। গ্রেকো-রোমান সভ্যতার অন্যতম কেন্দ্র ভূমি হিসেবে পরিচিতি পায় কনস্টান্টিনোপল। পরবর্তীকালে মুসলিম শক্তির হাতে কনস্টান্টিনোপলের পতনের পর এ স্থান থেকে অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তি ইউরোপের নানা স্থানে ছড়িয়ে পড়েন। তাদের সিংহভাগ গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন ইতালিতে। এই জ্ঞানী ব্যক্তিরা দেশান্তরী হওয়ার সময় সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন অনেক মূল্যবান গ্রন্থ। তারা ইতালিতে বসে যে জ্ঞানচর্চা করার সুযোগ পান, মূলত তার ফলেই সেখানে রেনেসাঁ বা নবজাগরণ ঘটে। এই রেনেসাঁ ছিল মধ্যযুগ অতিক্রম করে আধুনিক যুগে প্রবেশের অন্যতম চালিকাশক্তি।
এদিক থেকে বাংলায় মধ্যযুগ প্রলম্বিত ছিল ১৮ শতকের মাঝপর্ব পর্যন্ত। ইউরোপীয়দের আগমন ও রাজক্ষমতা গ্রহণের মধ্য দিয়ে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার রূপান্তর না ঘটলে হয়তো মধ্যযুগের চরিত্র আরও প্রলম্বিত হতো। ইংরেজদের আগমন ও ক্ষমতাসীন হওয়া বাংলার সাধারণ হিন্দু ও মুসলমান দুই সমাজেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল।
ধর্মীয় রক্ষণশীলতা ও সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে শাসক ইংরেজদের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছিল উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ। রক্ষণশীল হিন্দু সমাজ অনুমোদন দেয়নি ইংরেজদের সংস্পর্শে আসার। ইংরেজ সান্নিধ্যকে তারা ধর্মীয় অনাচার হিসেবে মনে করতে থাকে। এ কারণে আধুনিক ইউরোপীয় জ্ঞানের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে পারেনি। ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণকে পাপ বিবেচনা করতে থাকে। এদিক থেকে অনেক বেশি পিছিয়ে পড়েছিল মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ। রাজনৈতিক দিক থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের হারানোর কিছু ছিল না। তাদের শুধু প্রভু বদল হয়েছে। প্রায় ছয়শ’ বছর তারা মুসলমান শাসনের অধীনে ছিল। এবার ক্ষমতায় এসেছে ইংরেজ শাসক। অন্যদিকে মুসলমানদের মানসিক কষ্ট ও হতাশা ছিল বেশি। কারণ ইংরেজরা তাদের ছয়শ’ বছরের শাসনক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে। রাজ্যহারা মুসলমানদের তাই অভিমান ছিল ইংরেজ শাসকদের প্রতি। তাই তারা ইংরেজদের ছায়া না মাড়ানোর কারণে অনেকটা পিছিয়ে গেল।
ব্যাপ্টিস্টরা বরিশাল অঞ্চলে অনেক নমশূদ্রকে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করতে পেরেছিলেন। উনিশ শতকে হিন্দু ও মুসলিম সমাজের প্রতিরোধের মুখে মিশনারি তৎপরতা কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়ে। তবে কোনো কোনো মিশনারি গ্রামের দরিদ্র মানুষের সংকটে পাশে দাঁড়িয়ে জনপ্রিয় হয়েছিলেন। এক্ষেত্রে চার্চ মিশনারি সোসাইটির জেমস লংয়ের নাম করা যেতে পারে। তিনি নীলকরদের অত্যাচার থেকে গরিব চাষীদের মুক্ত করতে ভূমিকা রেখেছিলেন। লং সাহেব দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটকটি ১৮৬১ সালে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। সে সময় নীলকররা তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছিল।
উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এসে খ্রিস্টান মিশনারিরা হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের সঙ্গে সহজ সম্পর্ক স্থাপন করতে পেরেছিলেন। উনিশ শতকের মাঝামাঝি বাংলায় রোমান ক্যাথলিক চার্চ শক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়। বেলজিয়ামের যাজকরা কলকাতায় সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এ কলেজ শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। খ্রিস্টান মিশনগুলো থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হতো। ভারত বিভাগের পর অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের পর ঢাকায় রোমান ক্যাথলিক আর্চ বিশপ ও অ্যাঙ্গলিকান বিশপের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি হয়।
উনিশ শতকের সমাজ সংস্কার : ১৫ শতকের মধ্যভাগে আধুনিক যুগে পদার্পণ করেছিল ইউরোপ। বিশেষত ১৪৫৩ সালে অটোমান তুর্কিদের হাতে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের পতনের পর থেকে এই সময়কাল নির্ধারণ করা হয়। মধ্যযুগের ইউরোপে কনস্টান্টিনোপল রোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। গ্রেকো-রোমান সভ্যতার অন্যতম কেন্দ্র ভূমি হিসেবে পরিচিতি পায় কনস্টান্টিনোপল। পরবর্তীকালে মুসলিম শক্তির হাতে কনস্টান্টিনোপলের পতনের পর এ স্থান থেকে অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তি ইউরোপের নানা স্থানে ছড়িয়ে পড়েন। তাদের সিংহভাগ গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন ইতালিতে। এই জ্ঞানী ব্যক্তিরা দেশান্তরী হওয়ার সময় সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন অনেক মূল্যবান গ্রন্থ। তারা ইতালিতে বসে যে জ্ঞানচর্চা করার সুযোগ পান, মূলত তার ফলেই সেখানে রেনেসাঁ বা নবজাগরণ ঘটে। এই রেনেসাঁ ছিল মধ্যযুগ অতিক্রম করে আধুনিক যুগে প্রবেশের অন্যতম চালিকাশক্তি।
এদিক থেকে বাংলায় মধ্যযুগ প্রলম্বিত ছিল ১৮ শতকের মাঝপর্ব পর্যন্ত। ইউরোপীয়দের আগমন ও রাজক্ষমতা গ্রহণের মধ্য দিয়ে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার রূপান্তর না ঘটলে হয়তো মধ্যযুগের চরিত্র আরও প্রলম্বিত হতো। ইংরেজদের আগমন ও ক্ষমতাসীন হওয়া বাংলার সাধারণ হিন্দু ও মুসলমান দুই সমাজেই বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল।
ধর্মীয় রক্ষণশীলতা ও সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে শাসক ইংরেজদের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছিল উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ। রক্ষণশীল হিন্দু সমাজ অনুমোদন দেয়নি ইংরেজদের সংস্পর্শে আসার। ইংরেজ সান্নিধ্যকে তারা ধর্মীয় অনাচার হিসেবে মনে করতে থাকে। এ কারণে আধুনিক ইউরোপীয় জ্ঞানের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে পারেনি। ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণকে পাপ বিবেচনা করতে থাকে। এদিক থেকে অনেক বেশি পিছিয়ে পড়েছিল মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ। রাজনৈতিক দিক থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের হারানোর কিছু ছিল না। তাদের শুধু প্রভু বদল হয়েছে। প্রায় ছয়শ’ বছর তারা মুসলমান শাসনের অধীনে ছিল। এবার ক্ষমতায় এসেছে ইংরেজ শাসক। অন্যদিকে মুসলমানদের মানসিক কষ্ট ও হতাশা ছিল বেশি। কারণ ইংরেজরা তাদের ছয়শ’ বছরের শাসনক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে। রাজ্যহারা মুসলমানদের তাই অভিমান ছিল ইংরেজ শাসকদের প্রতি। তাই তারা ইংরেজদের ছায়া না মাড়ানোর কারণে অনেকটা পিছিয়ে গেল।
No comments