‘বর্তমান সঙ্কটের মূলে অনির্বাচিত সরকার’ -ইইউ প্রতিনিধি দলকে বিএনপি
বিএনপি
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ সফররত ইউরোপীয়
ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল। বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে
গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক হয়। বর্তমান সরকারের নানা
অনিয়ম, রাজনৈতিক জটিলতা সৃষ্টিকারী একতরফা পদক্ষেপ, ২০ দলীয় জোটের
নেতাকর্মীদের গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দমন-পীড়ন,
বিভিন্ন সহিংস কর্মকা- ও বিরোধী গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চায় প্রতিবন্ধকতার
কথা বৈঠকে তুলে ধরেন খালেদা জিয়া। এ সময় সরকারের নানা কর্মকা- ও বিরোধী
রাজনৈতিক কর্মীদের ওপর নির্মমতার সচিত্র প্রতিবেদনসহ ভিডিও ফুটেজ ও দালিলিক
তথ্য-উপাত্ত ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দলের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সেই সঙ্গে চলমান আন্দোলনে সহিংসতার ব্যাপারে সরকারের তরফে বিএনপিকে দায়ী
করা হলেও এসব ঘটনায় সরকারি দলের লোকজনের সংশ্লিষ্টতার ব্যাপারে নানা তথ্যও
তাদের কাছে দেয়া হয়। পরে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান
সোহেল জানান, বৈঠকে মানবাধিকার, শ্রম অধিকার ও চলমান রাজনৈতিক সঙ্কটের
বিভিন্ন দিক নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে।
বৈঠক সূত্র জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছাতে বিএনপির ইতিবাচক মনোভাবের জন্য স্বস্তি প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে নাশকতামূলক কার্যকলাপে না জড়ানোর জন্যও বিএনপির প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রতিনিধি দলটি বিভিন্ন বিষয়ে বিএনপির অবস্থান জানতে চেয়েছে।
ওদিকে সূত্রে জানা গেছেÑ বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বর্তমান সঙ্কটের মূলে হচ্ছে অনির্বাচিত সরকার। এর সমাধানের পথ হচ্ছেÑ একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই এ সঙ্কট সমাধান হতে হবে। আমরা যে কোন সময় আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। কিন্তু এ সরকার আলোচনায় বসতে রাজি নয়। চলমান সহিংসতা সম্পর্কে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, বিরোধী দলের সঙ্গে এ সহিংসতার কোন সম্পর্ক নেই। যে নাশকতা চলছে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচার করা হোক। কিন্তু সরকার সেটা করছে না। কারণ সরকারের ভয় সুষ্ঠু তদন্ত হলে তাদের লোকজনেরই নাম বেরিয়ে আসবে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনায় সরকারি দলের অঙ্গ সংগঠন যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ধরা পড়ছে। আমাদের আন্দোলনকে কলুষিত করতেই সরকার নিজেদের লোক দিয়ে এসব সহিংসতা ঘটাচ্ছে। আমরা প্রতিদিনই এ সহিংস ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা কোনদিনই এ রকম সহিংসতা করার নির্দেশনা আমাদের নেতাকর্মীদের দিইনি। সরকার সুষ্ঠু তদন্ত না করে উল্টো সহিংসতার অভিযোগে পাইকারিভাবে বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে, নির্যাতন করছে। ক্রসফায়ার ও বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করছে। যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। নিজেদের লোকজনের নাম বেরিয়ে আসার ভয়ে সরকার ২০১৩ সালের সহিংস ঘটনারও তদন্ত করেনি। ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক উপকমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রিশ্চিয়ান দান প্রেদা (রুমানিয়ান)’র নেতৃত্বে বৈঠকে অংশ নেয়া প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হলেনÑ ক্যারল ক্রাসকি (পোল্যান্ড), ইয়োসেফ ভেইডেনহোলজার (অস্ট্রিয়া), ব্রিজিটি বাটেইলি, মার্সিন গাসিক ও লেভেন্তে সাসি। এছাড়া পার্লামেন্টের তিন কর্মকর্তাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির পক্ষে খালেদা জিয়া ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক আইজিপি এমএ কাইয়ুম বৈঠকে অংশ নেন। সূত্র জানায়, বৈঠকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সুনির্দিষ্ট দাবি এবং আন্দোলনের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-ের অভিযোগ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব উত্থাপন হয়েছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এই প্রতিনিধি দলটি সরজমিনে পরিস্থিতি দেখতে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের পতাকাবাহী গাড়িতে করে প্রতিনিধি দলটি কার্যালয়ে যান। ফটকের সামনে গাড়ি থেকে নেমে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হেঁটে ওই কার্যালয়ে ঢোকেন। ফটক দিয়ে ঢোকার পর তাদের অভ্যর্থনা জানান বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। তিনি প্রতিনিধি দলের সদস্যদের কার্যালয়ের দোতলায় খালেদা জিয়ার বৈঠক কক্ষে নিয়ে যান। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দল পৌঁছার ঘণ্টা খানেক আগে চেয়ারপারসন কার্যালয়ে যান বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। বিএনপি চেয়ারপারসনের ওই কার্যালয়ে ঢোকা-বের হওয়া নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশের বিশেষ শাখার সদস্যরা। নজরুল ইসলাম খান এসবি সদস্যদের কাছে নিজের পরিচয় দিয়ে কার্যালয়ে ঢোকেন। প্রসঙ্গত, নিজ কার্যালয়ে দেড় মাস ধরে প্রথমে অবরুদ্ধ ও পরে কৌশলগত অবস্থান করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এমন পরিস্থিতিতে দেড় মাসের মাথায় কয়েকদিন আগে প্রথম কূটনীতিক হিসেবে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে গিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করেন যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন।
কলা-রুটিও ফিরিয়ে দিলো পুলিশ
অবরুদ্ধ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে কলা-রুটিও নিতে দেয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল দুপুরে দু’দফা খাবার ফিরিয়ে দেয় তারা। কার্যালয়ে খাবার প্রবেশে বাধা দেয়ায় গত ৭ দিন ধরে খাবার সঙ্কটে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন কয়েকজন নেতাসহ কার্যালয়ে অবস্থানরত অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। গতকাল বেলা ২টার দিকে একটি রিকশাযোগে ৩০ প্যাকেট খাবার কার্যালয়ের উত্তরদিক দিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করানো হয়। এসময় ৮৬ নম্বর সড়কের প্রবেশমুখেই রিকশাটি আটকে দেয় পুলিশ। খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের জন্য ওই খাবার আনা হয়েছেÑবলা হলে রিকশাচালককে ফিরিয়ে দেয় তারা। এরপর বেলা পৌনে তিনটার দিকে খালেদা জিয়ার জন্য কিছু শুকনা খাবার নিয়ে আসেন সিএনজিচালক নূরুজ্জামান। শুকনা খাবারের মধ্যে ছিলÑ চিড়া, গুড়, ২ বোতল পানি, ৪ প্যাকেট রুটি ও ৪ হালি কলা। তবে তাকে কার্যালয়ের প্রবেশ করতে দেয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। মিনিট পাঁচেক পর চলে যান তিনি। এসময় সাংবাদিকদের কাছে নূরুজ্জামান বলেন, তার বাড়ি শরীয়তপুরের গজারিয়া থানায়। ঢাকার কেরানীগঞ্জে থেকে সিএনজি চালান তিনি। খালেদা জিয়ার জন্য ওই খাবার নিয়ে এসেছিলেন বলে দাবি করেন ওই সিএনজিচালক। এদিকে সকাল ১১টার দিকে খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও করতে এসেছিলেন আওয়ামী লীগপন্থি মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদের শতাধিক নেতাকর্মী। তবে পুলিশ তাদের গুলশান-২ নম্বর গোলচত্বরেই আটকে দেয়। পুলিশি বাধা পেয়ে সেখানেই তারা অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেন। ঘণ্টাখানেক অবস্থান করে চলে যান তারা। এরপর বেলা পৌনে ১২টার দিকে খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও করতে ঝাড়– মিছিল নিয়ে আসেন মহিলা লীগের একদল কর্মী। তাদের গুলশান-২ নম্বর গোলচত্বরে আটকে দেয়। কিছুক্ষণ অবস্থানের পর তারা চলে যান।
১১ই ফেব্রুয়ারি রাত থেকে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে খাবার প্রবেশ দেয়নি পুলিশ। তবে খালেদা জিয়ার জন্য তার স্বজনদের আনা খাবার প্রবেশ করতে বাধা দেয়া হয়নি। ওদিকে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে খাবার নিতে বাধা দেয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ‘ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা। কার্যালয়ে খাবার প্রবেশে বাধা দেয়াকে মানবতাবিরোধী কাজ বলে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে, খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে খাবার সরবরাহে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বাধা দেয়া হচ্ছে। বিগত কয়েকদিন ধরে কার্যালয়ে অবস্থানরত স্টাফ, নিরাপত্তা কর্মীসহ নেতাকর্মীরা না খেয়ে মানবতের জীবনযাপন করছেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছাতে বিএনপির ইতিবাচক মনোভাবের জন্য স্বস্তি প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে নাশকতামূলক কার্যকলাপে না জড়ানোর জন্যও বিএনপির প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রতিনিধি দলটি বিভিন্ন বিষয়ে বিএনপির অবস্থান জানতে চেয়েছে।
ওদিকে সূত্রে জানা গেছেÑ বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বর্তমান সঙ্কটের মূলে হচ্ছে অনির্বাচিত সরকার। এর সমাধানের পথ হচ্ছেÑ একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই এ সঙ্কট সমাধান হতে হবে। আমরা যে কোন সময় আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। কিন্তু এ সরকার আলোচনায় বসতে রাজি নয়। চলমান সহিংসতা সম্পর্কে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, বিরোধী দলের সঙ্গে এ সহিংসতার কোন সম্পর্ক নেই। যে নাশকতা চলছে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিচার করা হোক। কিন্তু সরকার সেটা করছে না। কারণ সরকারের ভয় সুষ্ঠু তদন্ত হলে তাদের লোকজনেরই নাম বেরিয়ে আসবে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনায় সরকারি দলের অঙ্গ সংগঠন যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ধরা পড়ছে। আমাদের আন্দোলনকে কলুষিত করতেই সরকার নিজেদের লোক দিয়ে এসব সহিংসতা ঘটাচ্ছে। আমরা প্রতিদিনই এ সহিংস ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা কোনদিনই এ রকম সহিংসতা করার নির্দেশনা আমাদের নেতাকর্মীদের দিইনি। সরকার সুষ্ঠু তদন্ত না করে উল্টো সহিংসতার অভিযোগে পাইকারিভাবে বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে, নির্যাতন করছে। ক্রসফায়ার ও বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করছে। যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। নিজেদের লোকজনের নাম বেরিয়ে আসার ভয়ে সরকার ২০১৩ সালের সহিংস ঘটনারও তদন্ত করেনি। ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক উপকমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্রিশ্চিয়ান দান প্রেদা (রুমানিয়ান)’র নেতৃত্বে বৈঠকে অংশ নেয়া প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হলেনÑ ক্যারল ক্রাসকি (পোল্যান্ড), ইয়োসেফ ভেইডেনহোলজার (অস্ট্রিয়া), ব্রিজিটি বাটেইলি, মার্সিন গাসিক ও লেভেন্তে সাসি। এছাড়া পার্লামেন্টের তিন কর্মকর্তাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির পক্ষে খালেদা জিয়া ছাড়াও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক আইজিপি এমএ কাইয়ুম বৈঠকে অংশ নেন। সূত্র জানায়, বৈঠকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সুনির্দিষ্ট দাবি এবং আন্দোলনের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়। উল্লেখ্য, সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-ের অভিযোগ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব উত্থাপন হয়েছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের এই প্রতিনিধি দলটি সরজমিনে পরিস্থিতি দেখতে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের পতাকাবাহী গাড়িতে করে প্রতিনিধি দলটি কার্যালয়ে যান। ফটকের সামনে গাড়ি থেকে নেমে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হেঁটে ওই কার্যালয়ে ঢোকেন। ফটক দিয়ে ঢোকার পর তাদের অভ্যর্থনা জানান বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস। তিনি প্রতিনিধি দলের সদস্যদের কার্যালয়ের দোতলায় খালেদা জিয়ার বৈঠক কক্ষে নিয়ে যান। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধি দল পৌঁছার ঘণ্টা খানেক আগে চেয়ারপারসন কার্যালয়ে যান বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। বিএনপি চেয়ারপারসনের ওই কার্যালয়ে ঢোকা-বের হওয়া নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশের বিশেষ শাখার সদস্যরা। নজরুল ইসলাম খান এসবি সদস্যদের কাছে নিজের পরিচয় দিয়ে কার্যালয়ে ঢোকেন। প্রসঙ্গত, নিজ কার্যালয়ে দেড় মাস ধরে প্রথমে অবরুদ্ধ ও পরে কৌশলগত অবস্থান করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এমন পরিস্থিতিতে দেড় মাসের মাথায় কয়েকদিন আগে প্রথম কূটনীতিক হিসেবে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে গিয়ে তার সঙ্গে বৈঠক করেন যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন।
কলা-রুটিও ফিরিয়ে দিলো পুলিশ
অবরুদ্ধ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে কলা-রুটিও নিতে দেয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল দুপুরে দু’দফা খাবার ফিরিয়ে দেয় তারা। কার্যালয়ে খাবার প্রবেশে বাধা দেয়ায় গত ৭ দিন ধরে খাবার সঙ্কটে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন কয়েকজন নেতাসহ কার্যালয়ে অবস্থানরত অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। গতকাল বেলা ২টার দিকে একটি রিকশাযোগে ৩০ প্যাকেট খাবার কার্যালয়ের উত্তরদিক দিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করানো হয়। এসময় ৮৬ নম্বর সড়কের প্রবেশমুখেই রিকশাটি আটকে দেয় পুলিশ। খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের জন্য ওই খাবার আনা হয়েছেÑবলা হলে রিকশাচালককে ফিরিয়ে দেয় তারা। এরপর বেলা পৌনে তিনটার দিকে খালেদা জিয়ার জন্য কিছু শুকনা খাবার নিয়ে আসেন সিএনজিচালক নূরুজ্জামান। শুকনা খাবারের মধ্যে ছিলÑ চিড়া, গুড়, ২ বোতল পানি, ৪ প্যাকেট রুটি ও ৪ হালি কলা। তবে তাকে কার্যালয়ের প্রবেশ করতে দেয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। মিনিট পাঁচেক পর চলে যান তিনি। এসময় সাংবাদিকদের কাছে নূরুজ্জামান বলেন, তার বাড়ি শরীয়তপুরের গজারিয়া থানায়। ঢাকার কেরানীগঞ্জে থেকে সিএনজি চালান তিনি। খালেদা জিয়ার জন্য ওই খাবার নিয়ে এসেছিলেন বলে দাবি করেন ওই সিএনজিচালক। এদিকে সকাল ১১টার দিকে খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও করতে এসেছিলেন আওয়ামী লীগপন্থি মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদের শতাধিক নেতাকর্মী। তবে পুলিশ তাদের গুলশান-২ নম্বর গোলচত্বরেই আটকে দেয়। পুলিশি বাধা পেয়ে সেখানেই তারা অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেন। ঘণ্টাখানেক অবস্থান করে চলে যান তারা। এরপর বেলা পৌনে ১২টার দিকে খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও করতে ঝাড়– মিছিল নিয়ে আসেন মহিলা লীগের একদল কর্মী। তাদের গুলশান-২ নম্বর গোলচত্বরে আটকে দেয়। কিছুক্ষণ অবস্থানের পর তারা চলে যান।
১১ই ফেব্রুয়ারি রাত থেকে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে খাবার প্রবেশ দেয়নি পুলিশ। তবে খালেদা জিয়ার জন্য তার স্বজনদের আনা খাবার প্রবেশ করতে বাধা দেয়া হয়নি। ওদিকে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে খাবার নিতে বাধা দেয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ‘ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা। কার্যালয়ে খাবার প্রবেশে বাধা দেয়াকে মানবতাবিরোধী কাজ বলে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে, খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে খাবার সরবরাহে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বাধা দেয়া হচ্ছে। বিগত কয়েকদিন ধরে কার্যালয়ে অবস্থানরত স্টাফ, নিরাপত্তা কর্মীসহ নেতাকর্মীরা না খেয়ে মানবতের জীবনযাপন করছেন।
No comments