স্বামী-স্ত্রীর ঝুলন্ত লাশ ঘিরে রহস্য by রুদ্র মিজান
পারিবারিকভাবেই
বিয়ে হয়েছিল তাদের। ছয় মাস যেতে না যেতেই শুরু হয় দ্বন্দ্ব। শেষ পরিণতি
হিসেবে এই নবদম্পতি জীবনের ইতি টেনেছেন আত্মহত্যার মাধ্যমে। রাজধানীর
ডেমরার বামৈল পূর্বপাড়ায় জসিম উদ্দিনের বাড়ি থেকে মুহাম্মদ আসলাম ও তার
স্ত্রী প্রিয়া আক্তারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সিলিংয়ে ফ্যানের একই হুকের
সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয় তাদের। পুলিশের
ধারণা, দুটি পরিবারের অনমনীয় মনোভাবের কারণেই তারা আত্মহত্যা করতে বাধ্য
হয়েছেন। তবে আসলামের স্বজনদের অভিযোগ, প্রিয়া আত্মহত্যা করার পর
পরিকল্পিতভাবে আসলামকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে প্রিয়ার স্বজনরা। তবে এই
অভিযোগও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ। এছাড়া স্ত্রীকে হত্যার পর আসলাম নিজে
আত্মহত্যা করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলেই এ
বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ নিয়ে কথা হয় নিহতদের
স্বজন ও আশপাশের লোকজনের সঙ্গে। প্রিয়ার পিতার বাড়িতে আসলাম ও প্রিয়া
আত্মহত্যা করেছেন খবর পেয়ে সেখানে গিয়েছিলেন আসলামের নানী সত্তরোর্ধ্ব
বৃদ্ধা রহিমা বেগম, মা খোদেজা বেগম, ভাই আবদুস সালামসহ স্বজনরা। প্রিয়াদের
বাড়ির জনৈক প্রতিবেশীর বরাত দিয়ে রহিমা বেগম জানান, আসলামকে খবর দিয়ে ওই
বাড়িতে নিয়ে বেদম প্রহার ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে প্রিয়ার পিতা মুহাম্মদ
নাহিদ ও তাদের স্বজনরা। পরে ফ্যানের হুকের সঙ্গে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার নাটক
সাজানো হয়। এই ঘটনার পর নাহিদ ফোনে আসলামের মাকে জানান, যে তার পুত্র
আত্মহত্যা করেছে। অন্যের মোবাইলফোনে ধারণ করা ঝুলন্ত অবস্থায় আসলাম-প্রিয়ার
ছবি দেখিয়ে আসলামের ভাই আবদুস সালাম বলেন, আসলামের এক পায়ের স্যান্ডেল
তিনি বারান্দায় পড়ে থাকতে দেখেছেন। অন্য স্যান্ডেল তার পায়ে ছিল। তার ধারণা
আসলামকে মারধর করার কারণেই তার পায়ের স্যান্ডেল পৃথকভাবে ছিল। মারধরের পরে
তাকে হত্যা করা হয়েছে। ওই ছবিতে দেখা গেছে, একই হুকে ঝুলে থাকার কারণে
স্বামী-স্ত্রী একে-অপরের বুক মিশে ছিল। পাশেই রয়েছে ঘুমানোর খাট।
আসলামের স্বজনদের ধারণা, প্রিয়ার পিতা নাহিদ চেয়েছিলেন তার কন্যা যেন আসলামকে ডিভোর্স দেয়। এতে রাজি না হওয়ায় প্রিয়াকে নির্যাতন করেছেন তিনি। এই কারণে প্রিয়া আত্মহত্যা করেছেন। নিজ কন্যাকে হারিয়ে আসলামকে হত্যা করে প্রতিশোধ নিয়েছেন নাহিদ। ধোলাইখাল এলাকায় পুরানো মটর পার্টস ও ভাঙারির ব্যবসা করতেন আসলাম। আসলামের সহকর্মীদের বরাত দিয়ে তার বোন রোকসানা আক্তার রানী জানান, মঙ্গলবার বেলা ১১টায় আসলামের মোবাইল ফোনে একটি কল আসে। কথা বলার আধা ঘণ্টা পরেই তিনি শ্বশুড়বাড়ির উদ্দেশে বের হয়ে যান। পরে বেলা ২টার দিকে তারা জানতে পারেন আসলাম শ্বশুড়বাড়িতে আত্মহত্যা করেছে।
দুটি পরিবারের দ্বন্দ্বের বিষয়ে জানা গেছে, প্রায় ছয় মাস আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় আসলাম ও প্রিয়ার। আসলামের মা খোদেজা বেগম রোগাক্রান্ত। স্ত্রী প্রিয়াকে অসুস্থ মায়ের সেবা করার জন্য বলতেন আসলাম। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো বলে প্রতিবেশীরা জানান। এই ঝগড়ার জের ধরেই প্রায় এক মাস আগে দুই পরিবারের মধ্যে সালিশ হয়। এসময় প্রিয়া ও আসলামকে পরিবার থেকে পৃথক হতে বলেন প্রিয়ার পিতা নাহিদ। কিন্তু আসলাম তাতে রাজি হননি। এমনকি এই দম্পতিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন নাহিদ। এ নিয়েই দুই পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। তবে নাহিদ জানিয়েছেন, স্বামীর বাড়ির লোকজনের নির্যাতনের কারণে পিতার বাড়িতে ছিলেন প্রিয়া। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য প্রিয়াকে নির্যাতন করতেন আসলামের পরিবারের লোকজন। তাকে দিয়ে বাড়ির সব কাজ করানো হতো। মৃত্যুর পাঁচ দিন আগে প্রিয়াকে মারধর করেন আসলাম। এ ঘটনার দুই দিন পরে প্রিয়াকে বামৈল পূর্বপাড়ায় শ্বশুর নাহিদের বাসায় দিয়ে যান তিনি। ঘটনার দিন বেলা সাড়ে ১১টার পর শ্বশুড়বাড়িতে যান আসলাম। এ সময় নিজ বাড়ি থেকে প্রতিবেশী ফুফুর বাড়িতে যাচ্ছিলেন প্রিয়া। পথেই স্বামী-স্ত্রীর দেখা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এ সময় প্রিয়াকে বাড়িতে নিতে চাইলে প্রিয়া বোরকা আনতে স্বামীকে নিয়ে বাড়িতে যান। প্রিয়ার মা নাসিমা বেগম জানান, তখন তিনি রান্নার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। প্রিয়া বোরকা নিয়ে আসলামের সঙ্গে যেতে চাইলে তিনি তার স্বামী নাহিদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। নাহিদের কথামতো নাসিমা মেয়ে জামাইকে বলেন, তোমার মা-বাবা এলে প্রিয়াকে যেতে দেয়া হবে। তোমাদের বাড়িতে নিয়ে প্রিয়াকে বারবার নির্যাতন করা হয়। এর মীমাংসা না করে মেয়েকে দেয়া যাবে না। পরবর্তীকালে আসলাম ও প্রিয়া ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। বেলা ২টার দিকে প্রিয়াকে ডাকাডাকি করে কোন সাড়া পাননি প্রিয়ার বড় বোন প্রিয়াংকা আক্তার নাদিয়া। একপর্যায়ে তাদের মা নাসিমাও প্রিয়াকে ডাকাডাকি করেন। পরবর্তীকালে জানালার গ্লাস দিয়ে দেখতে পান ফ্যানের হুকের সঙ্গে প্রিয়া ও আসলাম ঝুলন্ত অবস্থায়। তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবেশী মনোয়ারা বেগমসহ কয়েকজন জানালা ভেঙে ভেতরে গিয়ে দেখতে পান দুজনেই আত্মহত্যা করেছেন। খবর পেয়ে প্রিয়ার পিতা নাহিদ ও ডেমরা থানার পুলিশ নিহতদের লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেন।
আসলাম ও প্রিয়ার আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে নাসিমা জানান, প্রিয়াকে তার শ্বশুড়বাড়ির লোকজন নির্যাতন করতেন। পিতার বাড়িতে যাওয়ার সময় আসলামের মা খোদেজা বেগম আসলামকে বলেছিলেন, প্রিয়াকে যেন আর কখনও তাদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া না হয়। তাকে বাড়িতে নিয়ে গেলে তিনি বিষ পান করবেন। যে কারণে প্রিয়ার পিতা নাহিদ কিছুতেই তার কন্যাকে ওই বাড়িতে দিতে রাজি ছিলেন না। এই কারণেই তারা দুজন আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রিয়ার স্বজনদের ধারণা।
এ বিষয়ে ডেমরা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল ইসলাম বলেন, পারিবারিক বিরোধের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে দুই পরিবারের অভিযোগ আমলে নিয়েই তদন্ত করা হচ্ছে। নিহত আসলামের পিতার নাম আবদুর রহিম। তিন ভাই, এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। ডেমরার ডগাইর ভূঁঞা মসজিদ সংলগ্ন ইসলামবাগ সড়কের আট নম্বর লেনের ১১৮ নম্বর বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তিনি। অন্যদিকে, তার স্ত্রী নিহত প্রিয়া আক্তারের পিতা মুহাম্মদ নাহিদের বাড়ি একই এলাকার বামৈল পূর্বপাড়ায়। দুই বোনের মধ্যে প্রিয়া ছিলেন ছোট।
আসলামের স্বজনদের ধারণা, প্রিয়ার পিতা নাহিদ চেয়েছিলেন তার কন্যা যেন আসলামকে ডিভোর্স দেয়। এতে রাজি না হওয়ায় প্রিয়াকে নির্যাতন করেছেন তিনি। এই কারণে প্রিয়া আত্মহত্যা করেছেন। নিজ কন্যাকে হারিয়ে আসলামকে হত্যা করে প্রতিশোধ নিয়েছেন নাহিদ। ধোলাইখাল এলাকায় পুরানো মটর পার্টস ও ভাঙারির ব্যবসা করতেন আসলাম। আসলামের সহকর্মীদের বরাত দিয়ে তার বোন রোকসানা আক্তার রানী জানান, মঙ্গলবার বেলা ১১টায় আসলামের মোবাইল ফোনে একটি কল আসে। কথা বলার আধা ঘণ্টা পরেই তিনি শ্বশুড়বাড়ির উদ্দেশে বের হয়ে যান। পরে বেলা ২টার দিকে তারা জানতে পারেন আসলাম শ্বশুড়বাড়িতে আত্মহত্যা করেছে।
দুটি পরিবারের দ্বন্দ্বের বিষয়ে জানা গেছে, প্রায় ছয় মাস আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় আসলাম ও প্রিয়ার। আসলামের মা খোদেজা বেগম রোগাক্রান্ত। স্ত্রী প্রিয়াকে অসুস্থ মায়ের সেবা করার জন্য বলতেন আসলাম। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো বলে প্রতিবেশীরা জানান। এই ঝগড়ার জের ধরেই প্রায় এক মাস আগে দুই পরিবারের মধ্যে সালিশ হয়। এসময় প্রিয়া ও আসলামকে পরিবার থেকে পৃথক হতে বলেন প্রিয়ার পিতা নাহিদ। কিন্তু আসলাম তাতে রাজি হননি। এমনকি এই দম্পতিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন নাহিদ। এ নিয়েই দুই পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত। তবে নাহিদ জানিয়েছেন, স্বামীর বাড়ির লোকজনের নির্যাতনের কারণে পিতার বাড়িতে ছিলেন প্রিয়া। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য প্রিয়াকে নির্যাতন করতেন আসলামের পরিবারের লোকজন। তাকে দিয়ে বাড়ির সব কাজ করানো হতো। মৃত্যুর পাঁচ দিন আগে প্রিয়াকে মারধর করেন আসলাম। এ ঘটনার দুই দিন পরে প্রিয়াকে বামৈল পূর্বপাড়ায় শ্বশুর নাহিদের বাসায় দিয়ে যান তিনি। ঘটনার দিন বেলা সাড়ে ১১টার পর শ্বশুড়বাড়িতে যান আসলাম। এ সময় নিজ বাড়ি থেকে প্রতিবেশী ফুফুর বাড়িতে যাচ্ছিলেন প্রিয়া। পথেই স্বামী-স্ত্রীর দেখা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এ সময় প্রিয়াকে বাড়িতে নিতে চাইলে প্রিয়া বোরকা আনতে স্বামীকে নিয়ে বাড়িতে যান। প্রিয়ার মা নাসিমা বেগম জানান, তখন তিনি রান্নার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। প্রিয়া বোরকা নিয়ে আসলামের সঙ্গে যেতে চাইলে তিনি তার স্বামী নাহিদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। নাহিদের কথামতো নাসিমা মেয়ে জামাইকে বলেন, তোমার মা-বাবা এলে প্রিয়াকে যেতে দেয়া হবে। তোমাদের বাড়িতে নিয়ে প্রিয়াকে বারবার নির্যাতন করা হয়। এর মীমাংসা না করে মেয়েকে দেয়া যাবে না। পরবর্তীকালে আসলাম ও প্রিয়া ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। বেলা ২টার দিকে প্রিয়াকে ডাকাডাকি করে কোন সাড়া পাননি প্রিয়ার বড় বোন প্রিয়াংকা আক্তার নাদিয়া। একপর্যায়ে তাদের মা নাসিমাও প্রিয়াকে ডাকাডাকি করেন। পরবর্তীকালে জানালার গ্লাস দিয়ে দেখতে পান ফ্যানের হুকের সঙ্গে প্রিয়া ও আসলাম ঝুলন্ত অবস্থায়। তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবেশী মনোয়ারা বেগমসহ কয়েকজন জানালা ভেঙে ভেতরে গিয়ে দেখতে পান দুজনেই আত্মহত্যা করেছেন। খবর পেয়ে প্রিয়ার পিতা নাহিদ ও ডেমরা থানার পুলিশ নিহতদের লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেন।
আসলাম ও প্রিয়ার আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে নাসিমা জানান, প্রিয়াকে তার শ্বশুড়বাড়ির লোকজন নির্যাতন করতেন। পিতার বাড়িতে যাওয়ার সময় আসলামের মা খোদেজা বেগম আসলামকে বলেছিলেন, প্রিয়াকে যেন আর কখনও তাদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া না হয়। তাকে বাড়িতে নিয়ে গেলে তিনি বিষ পান করবেন। যে কারণে প্রিয়ার পিতা নাহিদ কিছুতেই তার কন্যাকে ওই বাড়িতে দিতে রাজি ছিলেন না। এই কারণেই তারা দুজন আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রিয়ার স্বজনদের ধারণা।
এ বিষয়ে ডেমরা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল ইসলাম বলেন, পারিবারিক বিরোধের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে দুই পরিবারের অভিযোগ আমলে নিয়েই তদন্ত করা হচ্ছে। নিহত আসলামের পিতার নাম আবদুর রহিম। তিন ভাই, এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। ডেমরার ডগাইর ভূঁঞা মসজিদ সংলগ্ন ইসলামবাগ সড়কের আট নম্বর লেনের ১১৮ নম্বর বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তিনি। অন্যদিকে, তার স্ত্রী নিহত প্রিয়া আক্তারের পিতা মুহাম্মদ নাহিদের বাড়ি একই এলাকার বামৈল পূর্বপাড়ায়। দুই বোনের মধ্যে প্রিয়া ছিলেন ছোট।
No comments