জনপ্রত্যাশা সামলাতে পারবেন কেজরিওয়াল? by শুভম ঘোষ
দিলি্লর
বিধানসভা নির্বাচনে অরবিন্দ কেজরিওয়াল ফিরে এসেছেন অবিশ্বাস্যভাবে। গত বছর
১৪ ফেব্রুয়ারি আকস্মিক পদত্যাগ করেছিলেন এবং পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে
তিনি বিপর্যয়করভাবে হেরেছিলেন। ওই নির্বাচনে তার দল আম আদমি পার্টি বা এএপি
মাত্র চারটি আসনে জয়ের দেখা পেয়েছিল। ফলে এক বছর আগে ছেড়ে যাওয়া পদে ফেরার
পথে এই অ্যাক্টিভিস্ট-পলিটিশিয়ানের সামনে সটান দাঁড়িয়ে ছিল খুবই শক্তিশালী
বিজেপি। প্রত্যাশার চেয়েও বেশি বিক্রমে তিনি সেই বিজেপিকে বিপুল ব্যবধানে
ধরাশায়ী করে ফিরেছেন। তার দল অনায়াসে ৭০ আসনের মধ্যে ৬৭টি বাগিয়ে নিতে
সক্ষম হয়েছে। কেজরিওয়ালের মুখ্যমন্ত্রিত্ব এখন কেবল শপথের ব্যাপার নয়,
ভূমিধস সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাকে সামান্য বেগও পেতে
হবে না। কিন্তু এর মধ্য দিয়েই আসলে তার আরও কঠিন লড়াই শুরু হলো। আম
আদমি পার্টি তাদের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে,
প্রত্যেক পরিবারকে মাসে ২০ হাজার লিটার পানি বিনামূল্যে দেওয়া হবে এবং
বিদ্যুৎ বিল অর্ধেক মওকুফ করা হবে। এই রাজধানী রাজ্যে ছড়িয়ে পড়া ঘুষ
সংস্কৃতির অবসানেরও অঙ্গীকার করেছে দলটি। এখন সেখানকার রাজনৈতিক, প্রশাসনিক
ও শিল্প মহলগুলো অধীর অপেক্ষা নিয়ে দেখতে চাইবে যে, বিজয় মুকুট পরা
অরবিন্দ কেজরিওয়াল কীভাবে তার প্রতিশ্রুতিগুলো কাজে পরিণত করেন। তারা এও
দেখতে ব্যগ্র যে, রাজধানী দিলি্লর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবির
প্রভাবে গোটা ভারতেই মোদিবিরোধী রাজনৈতিক পক্ষগুলো চাঙ্গা হয়ে ওঠে কি-না।
ঘটনাচক্রে সেই জোয়ারের কারণে মোদি সরকারের প্রতিশ্রুত ও বহুল আলোচিত
সংস্কার প্রক্রিয়ার পথে গুরুতর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় কি-না। পশ্চিমবঙ্গের
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যে দিলি্লতে আম আদমি পার্টির
গগনবিদারি বিজয়কে গোটা দেশের রাজনীতির পটপরিবর্তক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।
অবশ্য দিলি্ল বিজয়ের এ নির্বাচনের পর থেকে খোদ অরবিন্দ কেজরিওয়াল রয়েছেন হালকা মেজাজে। তিনি তার দলের নেতাকর্মীদের বলেছেন কঠিন পরিশ্রমের পর এখন একটু বিশ্রাম নিতে। কিন্তু আসলেই কি এটা বিশ্রাম নেওয়ার সময়? অন্তত রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তা মনে করছেন না। আম আদমি পার্টি এই নির্বাচনে ৫৪ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, বিপুল জনগোষ্ঠী মাফলারম্যান ও তার দলের প্রতি আস্থা রেখেছে। সেই সঙ্গে রেখেছে প্রত্যাশা। প্রত্যাশার সেই চাপ সামাল দেওয়া নতুন সরকারের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিতে পারে।
এর একটি কারণ হচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকারে থাকবে দিলি্ল রাজ্য সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ বিজেপি। রাজ্য সরকারের নির্ভরতা থাকবে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি। তারা চাইলেই কেন্দ্রীয় সরকার সহযোগিতার অবারিত হাত বাড়িয়ে দেবে, এমন নিশ্চয়তা নেই। নিশ্চয়তা নেই কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সামর্থ্যেরও। একটি রাজ্যের জন্য তারা বিপুল ব্যয় করতে পারে না। তখন দিলি্ল রাজ্য সরকার কেবল নাগরিকদের পিঠ চাপড়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে না। অন্যদিকে জনপ্রত্যাশার পারদ কখনও কমে না। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, জনপ্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হতে থাকলে এক পর্যায়ে কেজরিওয়াল সরকার তাদের অভিযোগের তর্জনী কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে ফেরাতে পারে। বলতে পারেন যে, কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতার অভাবেই কোনো কাজ করা যাচ্ছে না।
আম আদমি পার্টির বিনামূল্যের পানি ও অর্ধেক দামের বিদ্যুৎকে উদাহরণ হিসেবে নেওয়া যাক। নির্বাচনী ইশতেহারে তো বলেই দেওয়া হয়েছে যে, বিদ্যুতের বিল অর্ধেক দিতে হবে নাগরিকদের। তার মানে বাকি অর্ধেক সরকারকেই দিতে হবে। ভর্তুকি দেওয়া ছাড়া এই বিল মেটানোর আর কোনো উপায় নেই। ভর্তুকির অর্থ কোথা থেকে আসবে? সেই বোঝা চূড়ান্ত অর্থে জনগণকেই বহন করতে হবে। উপরন্তু কেজরিওয়াল বলেছেন, বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোতে তার সরকার অডিট চালাবে। এর আগের ৪৯ দিনের সরকার চালানোর সময় তিনি সেই চেষ্টা চালিয়েছিলেনও। এই উদ্যোগ বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোকে ইতিমধ্যে উদ্বিগ্ন করেছে। তারা যদি উৎপাদন কমিয়ে দেয়? পরিবারপ্রতি বিনামূল্যে মাসিক ২০ হাজার লিটার পানিই বা কোথা থেকে আসবে? দিলি্ল তার পানি সরবরাহের জন্য হরিয়ানার মতো রাজ্যের ওপর নির্ভরশীল। ওই রাজ্য কি কেজরিওয়াল সরকারকে বিনামূল্যে পানি দিতে প্রস্তুত?
নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দেওয়া সহজ, তাতে অর্থ প্রয়োজন হয় না। কিন্তু সরকার পরিচালনায় অর্থের প্রয়োজন হয়। ফলে নির্বাচন পর্যন্ত যে আম আদমি পার্টি ভোটারদের জন্য 'আশীর্বাদ' হিসেবে হাজির হয়েছে, নির্বাচনের পর সেটা 'হুমকি' হিসেবে দেখা দেবে না তো?
ওয়ান ইন্ডিয়া ডটকম থেকে ভাষান্তরিত
ভারতীয় সাংবাদিক
অবশ্য দিলি্ল বিজয়ের এ নির্বাচনের পর থেকে খোদ অরবিন্দ কেজরিওয়াল রয়েছেন হালকা মেজাজে। তিনি তার দলের নেতাকর্মীদের বলেছেন কঠিন পরিশ্রমের পর এখন একটু বিশ্রাম নিতে। কিন্তু আসলেই কি এটা বিশ্রাম নেওয়ার সময়? অন্তত রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তা মনে করছেন না। আম আদমি পার্টি এই নির্বাচনে ৫৪ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, বিপুল জনগোষ্ঠী মাফলারম্যান ও তার দলের প্রতি আস্থা রেখেছে। সেই সঙ্গে রেখেছে প্রত্যাশা। প্রত্যাশার সেই চাপ সামাল দেওয়া নতুন সরকারের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিতে পারে।
এর একটি কারণ হচ্ছে, কেন্দ্রীয় সরকারে থাকবে দিলি্ল রাজ্য সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ বিজেপি। রাজ্য সরকারের নির্ভরতা থাকবে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি। তারা চাইলেই কেন্দ্রীয় সরকার সহযোগিতার অবারিত হাত বাড়িয়ে দেবে, এমন নিশ্চয়তা নেই। নিশ্চয়তা নেই কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সামর্থ্যেরও। একটি রাজ্যের জন্য তারা বিপুল ব্যয় করতে পারে না। তখন দিলি্ল রাজ্য সরকার কেবল নাগরিকদের পিঠ চাপড়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে না। অন্যদিকে জনপ্রত্যাশার পারদ কখনও কমে না। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, জনপ্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হতে থাকলে এক পর্যায়ে কেজরিওয়াল সরকার তাদের অভিযোগের তর্জনী কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে ফেরাতে পারে। বলতে পারেন যে, কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতার অভাবেই কোনো কাজ করা যাচ্ছে না।
আম আদমি পার্টির বিনামূল্যের পানি ও অর্ধেক দামের বিদ্যুৎকে উদাহরণ হিসেবে নেওয়া যাক। নির্বাচনী ইশতেহারে তো বলেই দেওয়া হয়েছে যে, বিদ্যুতের বিল অর্ধেক দিতে হবে নাগরিকদের। তার মানে বাকি অর্ধেক সরকারকেই দিতে হবে। ভর্তুকি দেওয়া ছাড়া এই বিল মেটানোর আর কোনো উপায় নেই। ভর্তুকির অর্থ কোথা থেকে আসবে? সেই বোঝা চূড়ান্ত অর্থে জনগণকেই বহন করতে হবে। উপরন্তু কেজরিওয়াল বলেছেন, বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোতে তার সরকার অডিট চালাবে। এর আগের ৪৯ দিনের সরকার চালানোর সময় তিনি সেই চেষ্টা চালিয়েছিলেনও। এই উদ্যোগ বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোকে ইতিমধ্যে উদ্বিগ্ন করেছে। তারা যদি উৎপাদন কমিয়ে দেয়? পরিবারপ্রতি বিনামূল্যে মাসিক ২০ হাজার লিটার পানিই বা কোথা থেকে আসবে? দিলি্ল তার পানি সরবরাহের জন্য হরিয়ানার মতো রাজ্যের ওপর নির্ভরশীল। ওই রাজ্য কি কেজরিওয়াল সরকারকে বিনামূল্যে পানি দিতে প্রস্তুত?
নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দেওয়া সহজ, তাতে অর্থ প্রয়োজন হয় না। কিন্তু সরকার পরিচালনায় অর্থের প্রয়োজন হয়। ফলে নির্বাচন পর্যন্ত যে আম আদমি পার্টি ভোটারদের জন্য 'আশীর্বাদ' হিসেবে হাজির হয়েছে, নির্বাচনের পর সেটা 'হুমকি' হিসেবে দেখা দেবে না তো?
ওয়ান ইন্ডিয়া ডটকম থেকে ভাষান্তরিত
ভারতীয় সাংবাদিক
No comments