হেরেও জেতা যায় by শামীমুল হক
নানা শঙ্কা। নানা আলোচনা-সমালোচনা। নানা বিতর্ক, সন্দেহ আর অভিযোগ। এর মধ্য দিয়েই আগামীকাল হবে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন।
কমিশনও
প্রস্তুত। তবে তাদের সামনে বিরাট এক অগ্নিপরীক্ষা এই নির্বাচন। এ পরীক্ষায়
তারা কি উত্তীর্ণ হতে পারবেন? এরই মধ্যে বিরোধী দল নানা প্রশ্ন তুলেছে
নির্বাচন নিয়ে। পোলিং অফিসার, সহকারী পোলিং অফিসার নিয়োগ নিয়ে আপত্তি
জানিয়েছেন তারা। সরকার তাদের সমর্থিত প্রার্থীর জয় তুলে নিতে নানা কসরত
করছে- এ অভিযোগও উত্থাপন করেছে। আর প্রচারণায় গিয়ে ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থী
আজমত উল্লার সমর্থকরা হামলার শিকার হয়েছেন। আজমত এ জন্য বিরোধী দলকে দায়ী
করেছেন। সব মিলিয়ে টান টান উত্তেজনার মধ্যে পার হয়েছে গত ক’দিন। এ
উত্তেজনার মধ্যেই কাল ভোট গ্রহণ। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, বাতাসে যা ভেসে
বেড়াচ্ছে তা কতটুকু সত্য? সরকার কি আসলেই নিজেদের পিঠে দাগ লাগাতে চান? যে
শঙ্কা চারদিকে, আওয়ামী লীগ কি সেই শঙ্কাকে সত্য প্রমাণ করবে? আমি অন্তত এটা
বিশ্বাস করি না। প্রধানমন্ত্রী এটা করতে পারেন না। যে গণতন্ত্রের জন্য শেখ
হাসিনার দীর্ঘ সংগ্রাম, যে গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে তার ত্যাগ, যে গণতন্ত্র
টিকিয়ে রাখতে রাজপথে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে লড়াই করেছেন, গ্রেপ্তার
আতঙ্ক নিয়ে দিনের পর দিন কাটিয়েছেন- সেই শেখ হাসিনার হাতে গণতন্ত্রের
মৃত্যু হবে- এটা আমি বিশ্বাস করি না। কাজেই যারা যে শঙ্কা করছেন, তাদের
বলছি, আপনারা নিশ্চিত থাকুন। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এমন কিছু হবে
না যা নিয়ে আপনারা হইচই করতে পারেন। সমপ্রতি হয়ে যাওয়া সিলেট, রাজশাহী,
খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগেও এমন কথা অনেক শুনেছি। কেউ
কেউ বলেছেন, সরকার অন্তত ২টা সিটি করপোরেশন জোর করে নিয়ে যাবে। কেউ বলেছেন,
একটিও বিরোধী দলকে দেবে না। কই নির্বাচনের পর তো তাদের মুখ বন্ধ হয়ে গেছে।
এখন যারা গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিয়েও এমন শঙ্কা করছেন- তাদের বলছি,
নির্বাচনের পর আপনারাও চুপ হয়ে যাবেন। সহজ কথাটি কেন সহজে বুঝে না কেউ কেউ।
বিরোধী দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অনড়। ইতিমধ্যে হরতাল হয়েছে। হয়েছে
লং-মার্চ। সমাবেশ। আলটিমেটামও দেয়া হয়েছে। সরকার কি বোকা নাকি যে নির্বাচনে
গোল পাকিয়ে বিরোধী দলের হাতে অস্ত্র তুলে দেবে? আমি এটা বিশ্বাস করি না।
তাছাড়া এ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে দেশ-বিদেশের সকল মিডিয়া, পর্যবেক্ষক।
তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে তো কিছুই করা সম্ভব নয়। তারপরও যদি মাগুরা, কিংবা
সখীপুর উপনির্বাচনের মতো হয় তাহলে তো কথা নেই। সরকার তার নিজের পায়ে নিজেই
কুড়াল মারবে। এরশাদ সরকারের আমলে বিভিন্ন নির্বাচনে দেখেছি, ব্যালট পেপার
ছিনিয়ে নিতে। ব্যালট বাক্স কেড়ে নিতে। ভোটারদের লাইনে দাঁড়িয়ে রেখে ভেতরে
প্রকাশ্যে সিল মারতে। নিকট অতীতে তো এমন দৃশ্য আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এটা
সম্ভব হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের কঠোরতা, সরকারের সদিচ্ছা আর সাধারণ মানুষের
সচেতনতায়। এ তিনে মিলে সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন হয়েছে। ’৯০-এর দশকের পর
জাতীয় নির্বাচন তো হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। আর স্থানীয় নির্বাচন
হয়েছে দলীয় সরকারের অধীনে। মাগুরা, সখীপুর ছাড়া তেমন কোন অঘটন ঘটেনি
নির্বাচনগুলোতে। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন
আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন চৌধুরী আর সিলেটে বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। বর্তমান
সরকারের আমলে ৪ সিটি তো আমরা দেখলাম। গাজীপুরেও দৃষ্টি সবার। এ অবস্থায় চোখ
বন্ধ করে খড়ের চালায় কাক খাবার লুকিয়ে ভাবছে কেউ দেখেনি। অথচ কাক ভাবছে
না- নিজের চোখ বন্ধ করলে কি হবে, আরও হাজারো চোখ তো তাকে দেখছে। সরকার যদি
মনে করে চোখ বন্ধ করে সব করা যাবে তাহলে সেটা কি ঠিক হবে? বিষয়টি নিশ্চয়ই
সরকার ভাবছে। আসলে হেরেও জেতা যায় এ কথার প্রমাণ ৪ সিটিতে দেখা গেছে। শেষ
পর্যন্ত গণতন্ত্রেরই জয় হবে- এটা সবাই আশা করেন।
samim.mzamin@gmail.com
No comments