কখনোই নিরাপদ আশ্রয় পাবেন না স্নোডেন!
যুক্তরাষ্ট্রের
গোপন নজরদারি ফাঁস করে ফেরারি হয়েছেন এডওয়ার্ড স্নোডেন। লাতিন আমেরিকার
তিনটি দেশ তাঁকে আশ্রয় দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কিন্তু মস্কোর
শেরেমেতিয়েভো বিমানবন্দর থেকে যাওয়ার একমাত্র পথ কিউবা। সেই কিউবা নীরব
থাকায় তাঁর আশ্রয় নিয়ে রয়ে গেছে অনিশ্চয়তা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয়
নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) সাবেক কর্মী এডওয়ার্ড স্নোডেনের রাজনৈতিক
আশ্রয়লাভের আশায় দুঃস্বপ্ন ভর করেছে। রাশিয়া থেকে লাতিন আমেরিকার কোনো
দেশে যাওয়ার পথে তাঁর সামনে এখন নানা প্রতিবন্ধকতা। ইতিমধ্যে লাতিনের
তিনটি দেশ তাঁকে আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। স্নোডেনকে গত শনিবার
বলিভিয়া আশ্রয় দেওয়ার হাত বাড়িয়ে দেয়। এর আগে ভেনেজুয়েলা ও
নিকারাগুয়া তাঁর প্রতি অনুরূপ সহায়তার হাত বাড়ায়। ওয়াশিংটনের সঙ্গে এ
তিন দেশের সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরে টানাপোড়েন রয়েছে। রাজনৈতিক আশ্রয় পেতে
স্নোডেন গত সপ্তাহে ২১টি দেশে আবেদন করেন। তবে অধিকাংশ দেশই তাঁর আবেদন
প্রত্যাখ্যান করে। এ অবস্থায় সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়া এ তিন দেশই এখন
আশ্রয়লাভে স্নোডেনের জন্য সবচেয়ে ভালো বিকল্প। হংকং থেকে মার্কিন
নজরদারি ফাঁকি দিয়ে রাশিয়ায় পাড়ি জমানোর পর থেকেই স্নোডেন মস্কোর একটি
বিমানবন্দরের ট্রানজিট এলাকায় লোকচক্ষুর অন্তরালে অবস্থান করছেন। গতকাল
রোববার সেখানে তিনি ১৫তম দিনটি কাটান। এ অবস্থায় গতকাল তিনি সংবাদমাধ্যমে
দাবি করেন, যেসব পশ্চিমা দেশ এখন এনএসএর গোপন নজরদারির বিরুদ্ধে অভিযোগ
করছে, এ কর্মসূচির সঙ্গে তারাও জড়িত রয়েছে। এদিকে রাশিয়া ও
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকলেও ওয়াশিংটন
সৌহার্দ্যের নিদর্শন হিসেবে স্নোডেনকে ফেরত পাঠাতে মস্কোর প্রতি অনুরোধ
জানিয়েছে। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ওয়াশিংটনের অনুরোধ সরাসরি
নাকচ করে ইঙ্গিত দিয়েছেন, স্নোডেন কোথায় যেতে চান, সে ব্যাপারে তাঁকেই
দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু মস্কোর শেরেমেতেয়েভো বিমানবন্দরে থাকা
স্নোডেনের সামনে বিকল্প বেছে নেওয়ার সুযোগ সীমিত। কারণ, এ বিমানবন্দর থেকে
আকাশপথে লাতিন আমেরিকা যাওয়ার একটাই পথ কিউবা হয়ে যাওয়া। স্নোডেন
বিতর্ক শুরুর পর থেকে কিউবা তাঁকে নিয়ে অস্বাভাবিক নীরবতা বজায় রাখছে।
ইউরোপের দেশে স্নোডেনকে বহনকারী উড়োজাহাজের বাধ্যতামূলক অবতরণের ঝুঁকিও
রয়েছে। যেমনটা ঘটেছে বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেসের ক্ষেত্রে। মস্কো
থেকে স্নোডেনকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে—এমন সন্দেহে গত সপ্তাহের শুরুর দিকে
প্রেসিডেন্ট মোরালেসকে বহনকারী উড়োজাহাজ দেশে ফেরার পথে ভিয়েনায় অবতরণে
বাধ্য করা হয়। গত ২৪ জুন স্নোডেন অজ্ঞাত কারণে মস্কো থেকে কিউবা অভিমুখী
উড়োজাহাজে ওঠেননি। বিশ্লেষকদের ধারণা, স্নোডেনের মার্কিন ভ্রমণ পাসপোর্ট
বাতিল হওয়ার পর বিমানবন্দর ত্যাগে তাঁর কাছে কোনো বৈধ কাগজপত্র না থাকায়
হয়তো রুশ কর্তৃপক্ষ তাঁকে ওই উড়োজাহাজে ওঠার অনুমতি দেয়নি। তা ছাড়া
স্নোডেনকে আশ্রয় দিতে রাজি বলিভিয়া ও ভেনেজুয়েলার মতো দেশের
শেরেমেতিয়েভো বিমানবন্দরে কনস্যুলার শাখা নেই; যাতে স্নোডেনকে প্রয়োজনীয়
কাগজপত্রের জোগান তারা দিতে পারে। এমনকি, মস্কোয় নিযুক্ত ভেনেজুয়েলা বা
অন্য দেশের কূটনীতিকদের মাধ্যমেও যদি স্নোডেনের কাছে ভ্রমণ কাগজপত্র পৌঁছে
দেওয়া হয়, তবু তাঁর সব সমস্যার সমাধান হবে না। ফরাসি ঐতিহাসিক
সেবাস্তিয়েন লরেন বলেন, ‘আলংকারিক অর্থে তিনি মৃত। তিনি যা করেছেন তার
গুরুত্ব বিবেচনায় তিনি কখনোই নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পাবেন না।’ এএফপি।
No comments