প্রাচীন গ্রিসে প্রেম ও যৌনজীবন
কোনো গ্রিক স্বামীর জন্য বিয়েতে ব্যভিচার
বলে কোনো কিছুর স্থান ছিল না। বিয়ের কারণে তাকে যাবতীয় নান্দনিক ও যৌন
উপভোগ থেকে বঞ্চিত হতে হবে এমন কোনো যুক্তি কারো চিন্তারও বাইরে ছিল।
তখনকার গ্রিক সমাজ ও নৈতিকতা পুরুষের বহুগামিতাকে অনুমোদন করত এবং গ্রিক
পুরুষরা সেভাবে জীবন কাটাতে অভ্যস্ত ছিল। কিন্তু এ পরিস্থিতি সত্ত্বেও
সংখ্যায় স্বল্প হলেও কিছু কিছু কণ্ঠ, যারা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে নৈতিকতা
বজায় রাখার দিকটিকে গুরুত্ব দিতেন তাদের মধ্যে অ্যারিস্টটল, আইসোক্রেটস,
প্লটাস উল্লেখযোগ্য।
কিন্তু মেয়েদের ব্যভিচার যদি কখনো ধরা পড়ত তাহলে গ্রিক সমাজ কী করত? এর নিশ্চিত সমাধান ছিল বিবাহ বিচ্ছেদ। যার অনিবার্য পরিণতি স্বামীর গৃহ থেকে সংশ্লিষ্ট স্ত্রীকে বহিষকার। কারণ, ব্যভিচারী নারীর গর্ভে জন্মগ্রহণকারী সন্তানের বৈধতা নিশ্চিত করা সম্ভব ছিল না। তাছাড়া স্ত্রীর ব্যভিচারকে স্বামীর মর্যাদার ওপর চরম আঘাত হিসেবে বিবেচনা করা হতো এবং সম্পত্তির মালিকানার অধিকারের ওপর হুমকিস্বরূপ ছিল। আমাদের বিস্মৃত হলে চলবে না যে, ট্রোজান যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল শুধু মেনেলাসের মর্যাদা রক্ষার জন্য।
প্রাচীন গ্রিক সমাজে ‘মর্যাদা’ এবং ‘অসমমান’ এমন দুটি ধারণা অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করত। স্বামীর মর্যাদা এত গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে এথেন্সের আইনপ্রণেতা ড্রাকোনের (ড্রাকোন ঃ খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীর এথেনীয় আইনপ্রণেতা, যিনি সর্বপ্রথম লিখিত আইন তৈরি করেন। এই আইন এত কঠোর ছিল যে, আইনের শব্দগুলো লিখিত হয়েছিল রক্ত দ্বারা) আইন অনুসারে পরিচালিত এক মামলার বিবরণীতে দেখা যায় যে, স্ত্রী ব্যভিচারে লিপ্ত থাকা অবস্থায় স্ত্রীর প্রেমিকাকে স্বামী ধরে ফেলে এবং হত্যা করে। কিন্তু বিচারে স্বামীকে নির্দোষ সাব্যস্ত করা হয়। ক্লাসিক্যাল যুগেও একই আইন কার্যকর ছিল বলে প্রতীয়মান হয়। কারণ ইউফেলিটাসের মামলায়ও সেই আইনের উল্লেখ আছে। জনৈক ইউফেলিটাসকে তার স্ত্রীর ব্যভিচার সম্পর্কে জানানো হলে সে স্ত্রীকে চোখে চোখে রাখে এবং স্ত্রীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত অবস্থায় স্ত্রীর প্রেমিক ইরাটোসথেনিসকে ধরে হত্যা করে। বিচারে আইনজীবী ঘাতক স্বামীর পক্ষেই যুক্তি প্রদর্শন করেন। তাছাড়া অ্যারিস্টটল তার ‘এথেনীয় রাষ্ট্র’ গ্রন্থে আমাদের অবহিত করেছেন যে, একই আইন তার সময়েও কার্যকর ছিল।কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যভিচারী নিষকৃতি পেতে পারত জরিমানা দিয়ে। কিন্তু তার কপাল মন্দ হলে শাস্তি হিসেবে তার গুহ্যদ্বার দিয়ে একটি মুলা ঢুকিয়ে দেয়া হতো। এসবের মধ্যেও যারা প্রভাবশালী ছিল ও ফন্দিফিকির জানত, তারা বিনা শাস্তিতেই পার পেয়ে যেত। জনৈক অ্যালসিবিয়াডেসের ঘটনাটি ছিল এরকম-তিনি সপার্টায় নির্বাসিত জীবন কাটানোর সময় রাজা অ্যাগিসের স্ত্রী তিমাইয়ার সাথে যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং তিমাইয়ার গর্ভজাত সন্তানে অ্যালসিবিয়াডেসের সন্তান বলে পরবর্তীতে ধারণা করা হয়। তার স্ত্রী হিপারেটি যখন তাকে পরিত্যাগ করে এবং আইনানুগভাবে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘোষণা দেয় তখন অ্যালসিবিয়াডেস সমাজপতিদের সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করে জোর করে তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় এবং শাস্তি থেকে নিজেকে রক্ষা করে।
আইনপ্রণেতা সলোনের মতে, ‘কোনো মহিলা যদি ব্যভিচারে লিপ্ত অবস্থায় ধরা পড়ে তাহলে সে অলংকার পরতে পারবে না এবং কোনো মন্দিরেও তার গমন করা উচিত নয়। তাহলে সে অন্য মহিলাদের ব্যভিচারে প্ররোচিত করতে পারে। কিন্তু সে যদি তা করে অথবা নিজেকে সাজায় তাহলে তার সাথে যে পুরুষের সাক্ষাৎ হবে তার উচিত তার পরিধেয় বস্ত্র ছিঁড়ে ফেলা, অলংকার খুলে নেয়া এবং তাকে প্রহার করা। কিন্তু তাকে হত্যা করা অথবা পঙ্গু করে দেয়া উচিত হবে না।’
ব্যভিচারী স্ত্রীকে গৃহ থেকে বহিষকার ও পরে বিবাহ বিচ্ছেদের অর্থ দাঁড়াবে, স্ত্রীর পরিবার যে উপহারসামগ্রী প্রদান করেছিল তা আবার তাদের ফিরিয়ে দেয়া, যা এক ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির শামিল। এ পরিস্থিতিতে অনেক স্বামী-স্ত্রীর ব্যভিচারের অপমান হজম করে স্ত্রীর অনুশোচনাকে অনুমোদন করে তাকে গ্রহণ করত।অবশ্য বিবাহ বিচ্ছেদের একমাত্র কারণ যে শুধু ব্যভিচার ছিল তা নয়। অনেক কারণেই কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে পরিত্যাগ করতে পারত। যেমন- স্ত্রীর বন্ধ্যাত্ব। বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ দুজন সাক্ষীর সামনে বর্ণনা করতে হতো। কিন্তু কোনো স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীকে পরিত্যাগ করার প্রক্রিয়া কঠিন ছিল। কারণ আইনগত দিক থেকে মহিলাদের সারাক্ষণ প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে কাটাতে হতো। ফলে তাদের পক্ষে আইনগত প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব হতো না। তাকে আরকনের (Archon) কাছে লিখিতভাবে জানাতে হতো যে, সে কেন বিবাহ বিচ্ছেদ চাচ্ছে। আরকন অন্যান্য দায়িত্বের মধ্যে নাগরিক অধিকারবঞ্চিতদের বিষয়ে দায়িত্বশীল ছিলেন। যা হোক লিখিত বিবৃতি পাওয়ার পর আরকন সেই বিবৃতির সত্যতা যাচাই করে তার সিদ্ধান্ত প্রদান করতেন।
ইতিমধ্যে বলা হয়েছে যে, কোনো মহিলা তার স্বামীর ব্যভিচারের বিষয় উল্লেখ করতে পারত না, যদিও বিবাহ বিচ্ছেদের প্রকাশ্য কারণ তাই থাকত। এছাড়াও স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে শারীরিক যাতনা ও প্রহারের ঘটনা প্রমাণিত হলেও তা বিবাহ বিচ্ছেদে গড়াত। বিবাহ বিচ্ছেদ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট মহিলার নাম প্রকাশ্যে আলোচিত হতো এবং এটা সবচেয়ে অবাঞ্ছিত একটি ব্যাপার ছিল। তালাকপ্রাপ্তা মহিলাদের পুনঃবিবাহে যদিও কোনো বাধা ছিল না, কিন্তু তাদের সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা হতো।
সপার্টায় যেখানে আইন এবং নৈতিকতা সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের ছিল সেখানে বিদ্যমান পরিস্থিতি সম্পর্কে প্লুটার্ক আমাদের জানিয়েছেন যে, ‘প্রবীণ এক সপার্টান, গেরাডসকে এক বিদেশী প্রশ্ন করেছিল যে সপার্টানরা ব্যভিচারীদের কিভাবে শাস্তি দেয়? তিনি তাকে উত্তর দিয়েছেন- আমাদের মধ্যে কোনো ব্যভিচারী নেই। বিদেশী আবার প্রশ্ন করে, কিন্তু যদি কোনো ব্যভিচারী থাকে? গেরাডসের উত্তর ছিল-তাহলে শাস্তি হিসেবে ব্যভিচারীকে নির্দেশ দেয়া হয় যে, তাকে টেগেটাস পর্বতের ওপর দিয়ে মাথা দেখা যাবে, এমন একটি বড় ষাঁড় দিতে হবে। বিদেশীর তৃতীয় প্রশ্ন ছিল পৃথিবীর কোথায় পাওয়া যাবে এত বিরাট একটি ষাঁড়? এবং গেরাডস উত্তর দেন ঃ অতএব সপার্টায় কোনো ব্যভিচারীর সাক্ষাৎ পাওয়া সম্ভব নয়।’
এছাড়া আরেকটি পদ্ধতি অনুসরণ করতে দেখা যায়, লাইকারগাসের আইন অনুসারে কোনো বয়স্ক অনুর্বর স্বামী তার স্ত্রীর সাথে কোনো যুবকের পরিচয় করিয়ে দিতে পারত, যাতে সেই যুবকের বীর্যে সুন্দর ও বলবান সন্তানের জন্ম ঘটে। এই প্রক্রিয়ায় বিবাহের কোনো ক্ষতি হতো না। অভিজাত বংশোদ্ভূত কোনো পুরুষ বিবাহিত রমণীর গুণে বিমুগ্ধ হয়ে তার স্বামীর অনুমতি চাইতে পারত তার সাথে যৌনমিলনের জন্য, যাতে সে উত্তম বংশের শক্তিশালী সন্তান নগরীকে উপহার দিতে পারে।
এই আইনটি সম্ভবত সুপ্রজননতত্ত্ব হতে উদ্ভূত, যা প্রাচীন গ্রিসে প্রচলিত ছিল এবং এর দ্বারাই নির্ধারিত হতো বিয়ে এবং সন্তানের জন্মদান। এর ফলে দম্পতির মধ্যে ঈর্ষার অনুপস্থিতিও ছিল লক্ষণীয়। তাছাড়া কোনো সপার্টান পুরুষ যদি মনে করত যে, স্ত্রী তাকে যথেষ্ট সন্তান দিয়েছে তাহলে তার জন্য এটা অতি সাধারণ ব্যাপার ছিল স্ত্রীকে তার বন্ধুর কাছে ন্যস্ত করা, যাতে বন্ধুটি তার স্ত্রীর সাথে মিলনের সুখ উপভোগ করতে পারে।এথেন্স এবং অন্যান্য গ্রিক নগর রাষ্ট্রেও দেখা গেছে যে, কোনো স্বামীর সাথে যদি তার স্ত্রীর গুরুতর বিবাদ উপস্থিত হয় অর্থাৎ স্ত্রী যদি সন্তান ধারণে অক্ষম হয় অথবা পুত্রসন্তান জন্ম দিতে না পারে তাহলে স্বামী সাধারণত স্ত্রীকে তালাক দিতে চায় না, যৌতুক হিসেবে প্রাপ্ত সম্পদ ফিরিয়ে দিতে হবে বলে। বরং সে রক্ষিতার কাছে যায়।
কিন্তু মেয়েদের ব্যভিচার যদি কখনো ধরা পড়ত তাহলে গ্রিক সমাজ কী করত? এর নিশ্চিত সমাধান ছিল বিবাহ বিচ্ছেদ। যার অনিবার্য পরিণতি স্বামীর গৃহ থেকে সংশ্লিষ্ট স্ত্রীকে বহিষকার। কারণ, ব্যভিচারী নারীর গর্ভে জন্মগ্রহণকারী সন্তানের বৈধতা নিশ্চিত করা সম্ভব ছিল না। তাছাড়া স্ত্রীর ব্যভিচারকে স্বামীর মর্যাদার ওপর চরম আঘাত হিসেবে বিবেচনা করা হতো এবং সম্পত্তির মালিকানার অধিকারের ওপর হুমকিস্বরূপ ছিল। আমাদের বিস্মৃত হলে চলবে না যে, ট্রোজান যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল শুধু মেনেলাসের মর্যাদা রক্ষার জন্য।
প্রাচীন গ্রিক সমাজে ‘মর্যাদা’ এবং ‘অসমমান’ এমন দুটি ধারণা অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করত। স্বামীর মর্যাদা এত গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীতে এথেন্সের আইনপ্রণেতা ড্রাকোনের (ড্রাকোন ঃ খ্রিস্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীর এথেনীয় আইনপ্রণেতা, যিনি সর্বপ্রথম লিখিত আইন তৈরি করেন। এই আইন এত কঠোর ছিল যে, আইনের শব্দগুলো লিখিত হয়েছিল রক্ত দ্বারা) আইন অনুসারে পরিচালিত এক মামলার বিবরণীতে দেখা যায় যে, স্ত্রী ব্যভিচারে লিপ্ত থাকা অবস্থায় স্ত্রীর প্রেমিকাকে স্বামী ধরে ফেলে এবং হত্যা করে। কিন্তু বিচারে স্বামীকে নির্দোষ সাব্যস্ত করা হয়। ক্লাসিক্যাল যুগেও একই আইন কার্যকর ছিল বলে প্রতীয়মান হয়। কারণ ইউফেলিটাসের মামলায়ও সেই আইনের উল্লেখ আছে। জনৈক ইউফেলিটাসকে তার স্ত্রীর ব্যভিচার সম্পর্কে জানানো হলে সে স্ত্রীকে চোখে চোখে রাখে এবং স্ত্রীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত অবস্থায় স্ত্রীর প্রেমিক ইরাটোসথেনিসকে ধরে হত্যা করে। বিচারে আইনজীবী ঘাতক স্বামীর পক্ষেই যুক্তি প্রদর্শন করেন। তাছাড়া অ্যারিস্টটল তার ‘এথেনীয় রাষ্ট্র’ গ্রন্থে আমাদের অবহিত করেছেন যে, একই আইন তার সময়েও কার্যকর ছিল।কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যভিচারী নিষকৃতি পেতে পারত জরিমানা দিয়ে। কিন্তু তার কপাল মন্দ হলে শাস্তি হিসেবে তার গুহ্যদ্বার দিয়ে একটি মুলা ঢুকিয়ে দেয়া হতো। এসবের মধ্যেও যারা প্রভাবশালী ছিল ও ফন্দিফিকির জানত, তারা বিনা শাস্তিতেই পার পেয়ে যেত। জনৈক অ্যালসিবিয়াডেসের ঘটনাটি ছিল এরকম-তিনি সপার্টায় নির্বাসিত জীবন কাটানোর সময় রাজা অ্যাগিসের স্ত্রী তিমাইয়ার সাথে যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং তিমাইয়ার গর্ভজাত সন্তানে অ্যালসিবিয়াডেসের সন্তান বলে পরবর্তীতে ধারণা করা হয়। তার স্ত্রী হিপারেটি যখন তাকে পরিত্যাগ করে এবং আইনানুগভাবে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘোষণা দেয় তখন অ্যালসিবিয়াডেস সমাজপতিদের সিদ্ধান্ত অগ্রাহ্য করে জোর করে তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় এবং শাস্তি থেকে নিজেকে রক্ষা করে।
আইনপ্রণেতা সলোনের মতে, ‘কোনো মহিলা যদি ব্যভিচারে লিপ্ত অবস্থায় ধরা পড়ে তাহলে সে অলংকার পরতে পারবে না এবং কোনো মন্দিরেও তার গমন করা উচিত নয়। তাহলে সে অন্য মহিলাদের ব্যভিচারে প্ররোচিত করতে পারে। কিন্তু সে যদি তা করে অথবা নিজেকে সাজায় তাহলে তার সাথে যে পুরুষের সাক্ষাৎ হবে তার উচিত তার পরিধেয় বস্ত্র ছিঁড়ে ফেলা, অলংকার খুলে নেয়া এবং তাকে প্রহার করা। কিন্তু তাকে হত্যা করা অথবা পঙ্গু করে দেয়া উচিত হবে না।’
ব্যভিচারী স্ত্রীকে গৃহ থেকে বহিষকার ও পরে বিবাহ বিচ্ছেদের অর্থ দাঁড়াবে, স্ত্রীর পরিবার যে উপহারসামগ্রী প্রদান করেছিল তা আবার তাদের ফিরিয়ে দেয়া, যা এক ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতির শামিল। এ পরিস্থিতিতে অনেক স্বামী-স্ত্রীর ব্যভিচারের অপমান হজম করে স্ত্রীর অনুশোচনাকে অনুমোদন করে তাকে গ্রহণ করত।অবশ্য বিবাহ বিচ্ছেদের একমাত্র কারণ যে শুধু ব্যভিচার ছিল তা নয়। অনেক কারণেই কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে পরিত্যাগ করতে পারত। যেমন- স্ত্রীর বন্ধ্যাত্ব। বিবাহ বিচ্ছেদের কারণ দুজন সাক্ষীর সামনে বর্ণনা করতে হতো। কিন্তু কোনো স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামীকে পরিত্যাগ করার প্রক্রিয়া কঠিন ছিল। কারণ আইনগত দিক থেকে মহিলাদের সারাক্ষণ প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে কাটাতে হতো। ফলে তাদের পক্ষে আইনগত প্রক্রিয়া শুরু করা সম্ভব হতো না। তাকে আরকনের (Archon) কাছে লিখিতভাবে জানাতে হতো যে, সে কেন বিবাহ বিচ্ছেদ চাচ্ছে। আরকন অন্যান্য দায়িত্বের মধ্যে নাগরিক অধিকারবঞ্চিতদের বিষয়ে দায়িত্বশীল ছিলেন। যা হোক লিখিত বিবৃতি পাওয়ার পর আরকন সেই বিবৃতির সত্যতা যাচাই করে তার সিদ্ধান্ত প্রদান করতেন।
ইতিমধ্যে বলা হয়েছে যে, কোনো মহিলা তার স্বামীর ব্যভিচারের বিষয় উল্লেখ করতে পারত না, যদিও বিবাহ বিচ্ছেদের প্রকাশ্য কারণ তাই থাকত। এছাড়াও স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে শারীরিক যাতনা ও প্রহারের ঘটনা প্রমাণিত হলেও তা বিবাহ বিচ্ছেদে গড়াত। বিবাহ বিচ্ছেদ প্রক্রিয়ায় সংশ্লিষ্ট মহিলার নাম প্রকাশ্যে আলোচিত হতো এবং এটা সবচেয়ে অবাঞ্ছিত একটি ব্যাপার ছিল। তালাকপ্রাপ্তা মহিলাদের পুনঃবিবাহে যদিও কোনো বাধা ছিল না, কিন্তু তাদের সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা হতো।
সপার্টায় যেখানে আইন এবং নৈতিকতা সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের ছিল সেখানে বিদ্যমান পরিস্থিতি সম্পর্কে প্লুটার্ক আমাদের জানিয়েছেন যে, ‘প্রবীণ এক সপার্টান, গেরাডসকে এক বিদেশী প্রশ্ন করেছিল যে সপার্টানরা ব্যভিচারীদের কিভাবে শাস্তি দেয়? তিনি তাকে উত্তর দিয়েছেন- আমাদের মধ্যে কোনো ব্যভিচারী নেই। বিদেশী আবার প্রশ্ন করে, কিন্তু যদি কোনো ব্যভিচারী থাকে? গেরাডসের উত্তর ছিল-তাহলে শাস্তি হিসেবে ব্যভিচারীকে নির্দেশ দেয়া হয় যে, তাকে টেগেটাস পর্বতের ওপর দিয়ে মাথা দেখা যাবে, এমন একটি বড় ষাঁড় দিতে হবে। বিদেশীর তৃতীয় প্রশ্ন ছিল পৃথিবীর কোথায় পাওয়া যাবে এত বিরাট একটি ষাঁড়? এবং গেরাডস উত্তর দেন ঃ অতএব সপার্টায় কোনো ব্যভিচারীর সাক্ষাৎ পাওয়া সম্ভব নয়।’
এছাড়া আরেকটি পদ্ধতি অনুসরণ করতে দেখা যায়, লাইকারগাসের আইন অনুসারে কোনো বয়স্ক অনুর্বর স্বামী তার স্ত্রীর সাথে কোনো যুবকের পরিচয় করিয়ে দিতে পারত, যাতে সেই যুবকের বীর্যে সুন্দর ও বলবান সন্তানের জন্ম ঘটে। এই প্রক্রিয়ায় বিবাহের কোনো ক্ষতি হতো না। অভিজাত বংশোদ্ভূত কোনো পুরুষ বিবাহিত রমণীর গুণে বিমুগ্ধ হয়ে তার স্বামীর অনুমতি চাইতে পারত তার সাথে যৌনমিলনের জন্য, যাতে সে উত্তম বংশের শক্তিশালী সন্তান নগরীকে উপহার দিতে পারে।
এই আইনটি সম্ভবত সুপ্রজননতত্ত্ব হতে উদ্ভূত, যা প্রাচীন গ্রিসে প্রচলিত ছিল এবং এর দ্বারাই নির্ধারিত হতো বিয়ে এবং সন্তানের জন্মদান। এর ফলে দম্পতির মধ্যে ঈর্ষার অনুপস্থিতিও ছিল লক্ষণীয়। তাছাড়া কোনো সপার্টান পুরুষ যদি মনে করত যে, স্ত্রী তাকে যথেষ্ট সন্তান দিয়েছে তাহলে তার জন্য এটা অতি সাধারণ ব্যাপার ছিল স্ত্রীকে তার বন্ধুর কাছে ন্যস্ত করা, যাতে বন্ধুটি তার স্ত্রীর সাথে মিলনের সুখ উপভোগ করতে পারে।এথেন্স এবং অন্যান্য গ্রিক নগর রাষ্ট্রেও দেখা গেছে যে, কোনো স্বামীর সাথে যদি তার স্ত্রীর গুরুতর বিবাদ উপস্থিত হয় অর্থাৎ স্ত্রী যদি সন্তান ধারণে অক্ষম হয় অথবা পুত্রসন্তান জন্ম দিতে না পারে তাহলে স্বামী সাধারণত স্ত্রীকে তালাক দিতে চায় না, যৌতুক হিসেবে প্রাপ্ত সম্পদ ফিরিয়ে দিতে হবে বলে। বরং সে রক্ষিতার কাছে যায়।
No comments