প্রিয় বন্ধুর মুখোশ খুলে দিলেন বিস্ফোরক সুদীপ্তা
তাঁকে অনেকেই বলেছিল, ‘রুদ্র মানুষ হিসেবে খুব উন্নত মানের নয়’! প্রিয় বন্ধু সম্পর্কে সে সব কথা বিশ্বাস করেননি।
সদ্য
সদ্য বিগ বস-এর বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে এর প্রশ্নের মুখে সামলে রাখতে পারলেন
না নিজেকে অকপট সুদীপ্তা। জানিয়ে দিলেন, ‘রুদ্রর মুখোশটা খুলে গেল’।
- : হ্যাঁ। আপনি কাঁদতে কাঁদতে সবার সামনে থেকে চলে গেলেন…
সুদীপ্তা : হুমম! যদিও কী বলেছি তখন, আমার না একটুও মনে নেই!
- : আপনি একা থাকার কথা বলছিলেন…
সুদীপ্তা : মনে পড়েছে! (একটু চুপ করে থেকে) আসলে আপনি যদি কোনও দিন একা হয়ে যান, একা থাকেন, তখনই তার ক্রাইসিস-টা বুঝতে পারবেন। তার আগে নয়। তাছাড়া আমি সব সময়ই লোকজনের মাঝে থাকতে পছন্দ করি, তাদের ছেড়ে বেরিয়ে আসতে সব সময়ই আমার খারাপ লাগে। এটা আমার পিকনিকে গেলেও হয়, বেড়াতে গেলেও হয়, শ্যুটিং-এর পর প্যাক-আপ হয়ে গেলেও হয়। প্যাক-আপ হয়ে গেলেই সবাই যত তাড়াতাড়ি পারে, সাধারণত বাড়ির দিকে দৌড় দেয়। আমার কিন্তু মোটেই ভাল লাগে না। মনে হয়, আবার সেই বোরিং বাড়িতে ফিরতে হবে?
- : তা, বিগ বসের বাড়িতে চেনা মুখগুলো কি অচেনা হয়ে গেছে, না নতুন করে খুঁজে পেলেন বন্ধুত্ব?
সুদীপ্তা : ওখানে যাদের সঙ্গে ছিলাম, তাদের অনেকের সঙ্গেই আমার আগে থাকতে চেনাজানা ছিল, বন্ধুত্বও ছিল; আবার অনেকের সঙ্গেই ছিলও না! এই যেমন, বিগ বসের বাড়িতেই আমার মানবীর সঙ্গে প্রথম দেখা হল। এর আগে ওঁর কথা শুধুই খবরে পড়েছিলাম, দেখা কোনও দিনই হয়নি আমাদের।
- : কেমন দেখলেন মানবীকে?
সুদীপ্তা : ওঁর যা শিক্ষার লেভেল, কথা বলার বুদ্ধিদীপ্ত ভঙ্গী, মার্জিত রুচি, সাহিত্যের জ্ঞান- তেমনটা খুব কম মানুষের থাকে। আমি তো ওঁকে দেখে ছিটকে ছাপ্পান্ন হয়ে গেছিলাম! সত্যি বলতে কী, ওঁর মতো শিক্ষা বিগ বসের বাড়ির কারও নেই- এটা আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি।
- : সে কী?
সুদীপ্তা : একদমই ঠিক বলছি। আরে বাবা, লোকের সঙ্গে কথা বললে তো বোঝা যায় যে কার পেটে কতটা বিদ্যা আছে! মানবীদির মতো হাইলি এডুকেটেড মহিলা আমি খুব কমই দেখেছি। এভাবেই অচেনা মানুষ চেনা হয়ে গেল বলতে পারেন!
- : আর কেউ?
সুদীপ্তা : আরও অনেকেই আছে। সম্পূর্ণার সঙ্গে এর আগে আমার সম্পর্কটা ছিল শুধুই হাই-হ্যালোর; পার্টিতে দেখা হলে আমরা শুধু ওটুকুই কথা বলতাম। বিগ বসের বাড়িতে ওকে নতুন করে আবিষ্কার করলাম। ও যে এত কিউট একটা মেয়ে, এটা আমার জানাই ছিল না। বিগ বসের বাড়িতে থাকতে গিয়ে দেখলাম, ওর সঙ্গে আমি নিজেকে, আমার চিন্তাভাবনাগুলোকে সুন্দর করে কানেক্ট করতে পারছি। এটা আমি আগে থেকে আশা করিনি; কিন্তু সেটা তো হল!
(একটু ভেবে) আর আমার অনীককেও বেশ ভাল লেগেছে। ও এত সুইট, এত গুবলু একটা ছেলে! এর আগে তো ওর সঙ্গে আমার কোনও পরিচয়ই ছিল না। কিন্তু দেখলাম, অনেক খুবই মিষ্টি একটা ছেলে। এভাবেই বিগ বসের বাড়িতে নতুন নতুন বন্ধু হল। অনেকের ক্ষেত্রেই আগে মোটে ২টো লাইন জানতাম, একসঙ্গে থাকতে গিয়ে ২০০ লাইন জানা হয়ে গেল।
- : বিগ বসের বাড়ির সবচেয়ে পজিটিভ দিক কোনটা বলে মনে হয়?
সুদীপ্তা : কমিউনিটি লিভিং। বাচ্চাদের হস্টেলে তো এজন্যই পাঠানো হয় যাতে সে সবার সঙ্গে মানিয়ে-গুছিয়ে নিয়ে থাকতে পারে। আজকাল বেশির ভাগ বাচ্চাই একা একা বড় হয়ে বলে দেখবেন, কীরকম একটা সেলফিশ-সেল্ফ সেন্টার্ড মতো হয়। বিগ বসের বাড়ির কথাই বলছি; ধরুন ওখানে টয়লেটে গেলাম। গিয়ে দেখলাম, ঠিক দু’ মিনিট আগেই কেউ একজন কমোডটা ব্যবহার করে সিট-টা না নামিয়েই চলে গেছে, বা ফ্লাশ করেনি! এই পরিস্থিতিটার সঙ্গে তো না-মানিয়ে নিয়ে কোনও উপায় নেই।
- : একটুও বিরক্তি লাগেনি বলছেন?
সুদীপ্তা : বিরক্তি তো লাগেইনি; উল্টে সেটার সঙ্গে মানিয়ে নিতে গিয়ে আমি নিজের অনেক গুণের কথা জানতে পারলাম; নিজেকে নতুন করে চিনলামও।
- : কী রকম?
সুদীপ্তা : (হাসতে হাসতে) আমি জানতামই না যে আমি রান্নাও করতে পারি! ওখানে তো করতেই হল। তাও এক-দুজনের জন্য নয়- একেবারে ১৩জন লোকের রান্না! এখন তো এরকম সংসার খুব কমই আছে যেখানে একসঙ্গে ১৩জন মানুষ বাস করেন; ফলে ওই পরিমাণে রান্না করার অভ্যেস কারওরই নেই। তাছাড়া আমরা যারা ওয়ার্কিং উওম্যান, তারাও যে রান্না-টান্না করার জন্য যথেষ্ট সময় পাই- এমনটাও তো নয়। ১৩ জন লোকের রান্নাটা সেই কারণেই একটা ডিফিকাল্ট ব্যাপার। আমার ধারণাই ছিল না যে ১৩জন মানুষের ভাত রান্নার জন্য ঠিক ক’বাটি চাল নিতে হয়! তার ওপর আবার বাটিটাও এখানে নতুন; চালটাও নতুন, কিন্তু করতে তো হবেই। তার জন্য টেনশনটাও প্রচুর- যদি আমি রান্নাটা ঝুলিয়ে দিই, বাকিরা সবাই তো রেগে যাবে; খাওয়াটাও হবে না। কিন্তু দেখলাম, ঠিক পেরে গেলাম তো!
- : আচ্ছা, বিগ বসের বাড়িতে কার সঙ্গে থাকতে একদমই ভাল লাগছিল না?
সুদীপ্তা : না, এরকম কেউ নেই। বলছি না, মাত্র চোদ্দ দিনে ওরকম অসহ্যকর অবস্থায় আমি পৌঁছাইনি। তাছাড়া, আমি বরাবরই মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতে পছন্দ করি; রোজ দশটা করে নতুন লোকের সঙ্গে আলাপ হলেই আমার পক্ষে ভাল হয়! তাই দিব্যি ছিলাম ওখানে।
- : তাহলে চলে আসার আগে যাকে যত নম্বর দিলেন, কীসের ভিত্তিতে?
সুদীপ্তা : আমার ঠিক মনে নেই সেটা!
- : সে কী?
সুদীপ্তা : দেখুন, আপনারা বাইরে থেকে যা দেখছেন, সেটা তো রেকর্ড করা; কিন্তু আমরা ওখানে কে কী করছে, কিছুই বুঝতে পারতাম না। ওখানে গান শুনিনি, সিনেমা দেখিনি, বাইরের কোনও লোকের মুখ দেখিনি- চেনাজানা মানুষজন কেমন দেখতে তাও যেন ভুলে গিয়েছিলাম। সব সময় একটা ভয় কাজ করত, ওই যে কাচের ওপারে যারা কথা বলছে, আমায় নিয়ে কথা বলছে না তো? আমায় সরিয়ে দেওয়ার মতলব নেই তো ওদের? যদি ভোট না আসে- এসব ভাবনা একটা ঘোরের মধ্যে রেখেছিল আমায়। বেরিয়ে এসেও প্রায় চার-পাঁচ দিন পর আমি নর্ম্যাল লাইফে ফিরি। সেজন্যই কিছু ঠিকভাবে মনে নেই।
- : কিছুই মনে পড়ছে না?
সুদীপ্তা : (একটু ভেবে) মানবীদিকে দশে দশ দেব- এটা স্পষ্ট মনে আছে। ওঁর মতো মানুষ হয় না। আমার মাথায় টুপি থাকলে ওটা খুলে ওঁর সামনে দাঁড়িয়ে পড়তাম! হ্যাঁ, রুদ্রকে দশে দুই দিয়েছিলাম, এটাও মনে পড়ছে।
- : মাত্র দুই?
সুদীপ্তা : হ্যাঁ। রুদ্র যে মানুষ হিসেবে খুব উন্নত মানের নয়, সেটা আমায় আগে অনেকেই বলেছিল; আমি বিশ্বাস করিনি। কিন্তু বিগ বসের বাড়িতে গিয়ে সেটা আমি বুঝতে পারলাম, রুদ্রর মুখোশটা খুলে গেল। এটা আমার গ্রাজ নয় কিন্তু। আমি খাতায় লিখেও এসেছিলাম যে, রুদ্র তুই যদি ভাল মানুষ হতিস, তাহলে অনেক ভাল অভিনেতা হতে পারতিস! আমি জানি না, ও আমায় কতটা বন্ধু মনে করে, আমি কিন্তু বন্ধু হিসেবেই মন্তব্যটা করে এসেছি। আরে, এটাই তো বন্ধু হিসেবে আমার কর্তব্য। ওরা চাইছিল, আমি ‘শালা তোকে দেখে নেব’ গোছের মন্তব্য করি; কিন্তু সেটা আমার দ্বারা সম্ভব নয়। আমার ওরকম স্ট্যান্ডার্ড নয়!
- : তা, কে জিতবে বলে মনে হয়?
সুদীপ্তা : এখনই বলা যায় নাকি? সবে তো তিন সপ্তাহ পার হয়েছে, এখনও তিন মাস বাকি! দেখা যাক, কার স্ট্যামিনা কীরকম, কে কতটা চাপ নিতে পারে।
- : আর কে জিতলে আপনি খুশি হবেন?
সুদীপ্তা : অন্তত অনীক শ্যুড উইন! আমি ওকে যতটুকু দেখেছি, মনে হয়েছে, ওর মধ্যে সেই গুণ আছে। সেভাবেই অনীক আমার কাছে নিজেকে চিনিয়েছে। এখন আমি জানি না, এটাও ওর অন্য চেহারা নাকি; হয়তো ভবিষ্যতে ওর মধ্যে থেকে এমন একটা সেল্ফ বেরিয়ে আসবে, যেটা আমি কল্পনাই করিনি! কে বলতে পারে? তবে আশা করি, অনীক আমায় ভুল প্রমাণ করে হতাশ করবে না!
- : সমাজও তো মাঝে মাঝে বিগ বসের মতো চোখ রাঙায়, সেটার সঙ্গে কীভাবে মানিয়ে নেন?
সুদীপ্তা : বিগ বস আসলে সমাজেরই একটা মিনিয়েচার! তফাতের মধ্যে, ওখানে কে আপনার পিঠে ছুরি মারছে পেছন থেকে, সেটা বেরিয়ে এসে জানতে পারবেন। সমাজে সব সময় সেটা জানা যায় না।
- : হ্যাঁ। আপনি কাঁদতে কাঁদতে সবার সামনে থেকে চলে গেলেন…
সুদীপ্তা : হুমম! যদিও কী বলেছি তখন, আমার না একটুও মনে নেই!
- : আপনি একা থাকার কথা বলছিলেন…
সুদীপ্তা : মনে পড়েছে! (একটু চুপ করে থেকে) আসলে আপনি যদি কোনও দিন একা হয়ে যান, একা থাকেন, তখনই তার ক্রাইসিস-টা বুঝতে পারবেন। তার আগে নয়। তাছাড়া আমি সব সময়ই লোকজনের মাঝে থাকতে পছন্দ করি, তাদের ছেড়ে বেরিয়ে আসতে সব সময়ই আমার খারাপ লাগে। এটা আমার পিকনিকে গেলেও হয়, বেড়াতে গেলেও হয়, শ্যুটিং-এর পর প্যাক-আপ হয়ে গেলেও হয়। প্যাক-আপ হয়ে গেলেই সবাই যত তাড়াতাড়ি পারে, সাধারণত বাড়ির দিকে দৌড় দেয়। আমার কিন্তু মোটেই ভাল লাগে না। মনে হয়, আবার সেই বোরিং বাড়িতে ফিরতে হবে?
- : তা, বিগ বসের বাড়িতে চেনা মুখগুলো কি অচেনা হয়ে গেছে, না নতুন করে খুঁজে পেলেন বন্ধুত্ব?
সুদীপ্তা : ওখানে যাদের সঙ্গে ছিলাম, তাদের অনেকের সঙ্গেই আমার আগে থাকতে চেনাজানা ছিল, বন্ধুত্বও ছিল; আবার অনেকের সঙ্গেই ছিলও না! এই যেমন, বিগ বসের বাড়িতেই আমার মানবীর সঙ্গে প্রথম দেখা হল। এর আগে ওঁর কথা শুধুই খবরে পড়েছিলাম, দেখা কোনও দিনই হয়নি আমাদের।
- : কেমন দেখলেন মানবীকে?
সুদীপ্তা : ওঁর যা শিক্ষার লেভেল, কথা বলার বুদ্ধিদীপ্ত ভঙ্গী, মার্জিত রুচি, সাহিত্যের জ্ঞান- তেমনটা খুব কম মানুষের থাকে। আমি তো ওঁকে দেখে ছিটকে ছাপ্পান্ন হয়ে গেছিলাম! সত্যি বলতে কী, ওঁর মতো শিক্ষা বিগ বসের বাড়ির কারও নেই- এটা আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি।
- : সে কী?
সুদীপ্তা : একদমই ঠিক বলছি। আরে বাবা, লোকের সঙ্গে কথা বললে তো বোঝা যায় যে কার পেটে কতটা বিদ্যা আছে! মানবীদির মতো হাইলি এডুকেটেড মহিলা আমি খুব কমই দেখেছি। এভাবেই অচেনা মানুষ চেনা হয়ে গেল বলতে পারেন!
- : আর কেউ?
সুদীপ্তা : আরও অনেকেই আছে। সম্পূর্ণার সঙ্গে এর আগে আমার সম্পর্কটা ছিল শুধুই হাই-হ্যালোর; পার্টিতে দেখা হলে আমরা শুধু ওটুকুই কথা বলতাম। বিগ বসের বাড়িতে ওকে নতুন করে আবিষ্কার করলাম। ও যে এত কিউট একটা মেয়ে, এটা আমার জানাই ছিল না। বিগ বসের বাড়িতে থাকতে গিয়ে দেখলাম, ওর সঙ্গে আমি নিজেকে, আমার চিন্তাভাবনাগুলোকে সুন্দর করে কানেক্ট করতে পারছি। এটা আমি আগে থেকে আশা করিনি; কিন্তু সেটা তো হল!
(একটু ভেবে) আর আমার অনীককেও বেশ ভাল লেগেছে। ও এত সুইট, এত গুবলু একটা ছেলে! এর আগে তো ওর সঙ্গে আমার কোনও পরিচয়ই ছিল না। কিন্তু দেখলাম, অনেক খুবই মিষ্টি একটা ছেলে। এভাবেই বিগ বসের বাড়িতে নতুন নতুন বন্ধু হল। অনেকের ক্ষেত্রেই আগে মোটে ২টো লাইন জানতাম, একসঙ্গে থাকতে গিয়ে ২০০ লাইন জানা হয়ে গেল।
- : বিগ বসের বাড়ির সবচেয়ে পজিটিভ দিক কোনটা বলে মনে হয়?
সুদীপ্তা : কমিউনিটি লিভিং। বাচ্চাদের হস্টেলে তো এজন্যই পাঠানো হয় যাতে সে সবার সঙ্গে মানিয়ে-গুছিয়ে নিয়ে থাকতে পারে। আজকাল বেশির ভাগ বাচ্চাই একা একা বড় হয়ে বলে দেখবেন, কীরকম একটা সেলফিশ-সেল্ফ সেন্টার্ড মতো হয়। বিগ বসের বাড়ির কথাই বলছি; ধরুন ওখানে টয়লেটে গেলাম। গিয়ে দেখলাম, ঠিক দু’ মিনিট আগেই কেউ একজন কমোডটা ব্যবহার করে সিট-টা না নামিয়েই চলে গেছে, বা ফ্লাশ করেনি! এই পরিস্থিতিটার সঙ্গে তো না-মানিয়ে নিয়ে কোনও উপায় নেই।
- : একটুও বিরক্তি লাগেনি বলছেন?
সুদীপ্তা : বিরক্তি তো লাগেইনি; উল্টে সেটার সঙ্গে মানিয়ে নিতে গিয়ে আমি নিজের অনেক গুণের কথা জানতে পারলাম; নিজেকে নতুন করে চিনলামও।
- : কী রকম?
সুদীপ্তা : (হাসতে হাসতে) আমি জানতামই না যে আমি রান্নাও করতে পারি! ওখানে তো করতেই হল। তাও এক-দুজনের জন্য নয়- একেবারে ১৩জন লোকের রান্না! এখন তো এরকম সংসার খুব কমই আছে যেখানে একসঙ্গে ১৩জন মানুষ বাস করেন; ফলে ওই পরিমাণে রান্না করার অভ্যেস কারওরই নেই। তাছাড়া আমরা যারা ওয়ার্কিং উওম্যান, তারাও যে রান্না-টান্না করার জন্য যথেষ্ট সময় পাই- এমনটাও তো নয়। ১৩ জন লোকের রান্নাটা সেই কারণেই একটা ডিফিকাল্ট ব্যাপার। আমার ধারণাই ছিল না যে ১৩জন মানুষের ভাত রান্নার জন্য ঠিক ক’বাটি চাল নিতে হয়! তার ওপর আবার বাটিটাও এখানে নতুন; চালটাও নতুন, কিন্তু করতে তো হবেই। তার জন্য টেনশনটাও প্রচুর- যদি আমি রান্নাটা ঝুলিয়ে দিই, বাকিরা সবাই তো রেগে যাবে; খাওয়াটাও হবে না। কিন্তু দেখলাম, ঠিক পেরে গেলাম তো!
- : আচ্ছা, বিগ বসের বাড়িতে কার সঙ্গে থাকতে একদমই ভাল লাগছিল না?
সুদীপ্তা : না, এরকম কেউ নেই। বলছি না, মাত্র চোদ্দ দিনে ওরকম অসহ্যকর অবস্থায় আমি পৌঁছাইনি। তাছাড়া, আমি বরাবরই মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করতে পছন্দ করি; রোজ দশটা করে নতুন লোকের সঙ্গে আলাপ হলেই আমার পক্ষে ভাল হয়! তাই দিব্যি ছিলাম ওখানে।
- : তাহলে চলে আসার আগে যাকে যত নম্বর দিলেন, কীসের ভিত্তিতে?
সুদীপ্তা : আমার ঠিক মনে নেই সেটা!
- : সে কী?
সুদীপ্তা : দেখুন, আপনারা বাইরে থেকে যা দেখছেন, সেটা তো রেকর্ড করা; কিন্তু আমরা ওখানে কে কী করছে, কিছুই বুঝতে পারতাম না। ওখানে গান শুনিনি, সিনেমা দেখিনি, বাইরের কোনও লোকের মুখ দেখিনি- চেনাজানা মানুষজন কেমন দেখতে তাও যেন ভুলে গিয়েছিলাম। সব সময় একটা ভয় কাজ করত, ওই যে কাচের ওপারে যারা কথা বলছে, আমায় নিয়ে কথা বলছে না তো? আমায় সরিয়ে দেওয়ার মতলব নেই তো ওদের? যদি ভোট না আসে- এসব ভাবনা একটা ঘোরের মধ্যে রেখেছিল আমায়। বেরিয়ে এসেও প্রায় চার-পাঁচ দিন পর আমি নর্ম্যাল লাইফে ফিরি। সেজন্যই কিছু ঠিকভাবে মনে নেই।
- : কিছুই মনে পড়ছে না?
সুদীপ্তা : (একটু ভেবে) মানবীদিকে দশে দশ দেব- এটা স্পষ্ট মনে আছে। ওঁর মতো মানুষ হয় না। আমার মাথায় টুপি থাকলে ওটা খুলে ওঁর সামনে দাঁড়িয়ে পড়তাম! হ্যাঁ, রুদ্রকে দশে দুই দিয়েছিলাম, এটাও মনে পড়ছে।
- : মাত্র দুই?
সুদীপ্তা : হ্যাঁ। রুদ্র যে মানুষ হিসেবে খুব উন্নত মানের নয়, সেটা আমায় আগে অনেকেই বলেছিল; আমি বিশ্বাস করিনি। কিন্তু বিগ বসের বাড়িতে গিয়ে সেটা আমি বুঝতে পারলাম, রুদ্রর মুখোশটা খুলে গেল। এটা আমার গ্রাজ নয় কিন্তু। আমি খাতায় লিখেও এসেছিলাম যে, রুদ্র তুই যদি ভাল মানুষ হতিস, তাহলে অনেক ভাল অভিনেতা হতে পারতিস! আমি জানি না, ও আমায় কতটা বন্ধু মনে করে, আমি কিন্তু বন্ধু হিসেবেই মন্তব্যটা করে এসেছি। আরে, এটাই তো বন্ধু হিসেবে আমার কর্তব্য। ওরা চাইছিল, আমি ‘শালা তোকে দেখে নেব’ গোছের মন্তব্য করি; কিন্তু সেটা আমার দ্বারা সম্ভব নয়। আমার ওরকম স্ট্যান্ডার্ড নয়!
- : তা, কে জিতবে বলে মনে হয়?
সুদীপ্তা : এখনই বলা যায় নাকি? সবে তো তিন সপ্তাহ পার হয়েছে, এখনও তিন মাস বাকি! দেখা যাক, কার স্ট্যামিনা কীরকম, কে কতটা চাপ নিতে পারে।
- : আর কে জিতলে আপনি খুশি হবেন?
সুদীপ্তা : অন্তত অনীক শ্যুড উইন! আমি ওকে যতটুকু দেখেছি, মনে হয়েছে, ওর মধ্যে সেই গুণ আছে। সেভাবেই অনীক আমার কাছে নিজেকে চিনিয়েছে। এখন আমি জানি না, এটাও ওর অন্য চেহারা নাকি; হয়তো ভবিষ্যতে ওর মধ্যে থেকে এমন একটা সেল্ফ বেরিয়ে আসবে, যেটা আমি কল্পনাই করিনি! কে বলতে পারে? তবে আশা করি, অনীক আমায় ভুল প্রমাণ করে হতাশ করবে না!
- : সমাজও তো মাঝে মাঝে বিগ বসের মতো চোখ রাঙায়, সেটার সঙ্গে কীভাবে মানিয়ে নেন?
সুদীপ্তা : বিগ বস আসলে সমাজেরই একটা মিনিয়েচার! তফাতের মধ্যে, ওখানে কে আপনার পিঠে ছুরি মারছে পেছন থেকে, সেটা বেরিয়ে এসে জানতে পারবেন। সমাজে সব সময় সেটা জানা যায় না।
No comments