বুয়েটের সমীক্ষা-নামী কোম্পানির দামি ভবনও ভূমিকম্প প্রতিরোধক নয় by ইফতেখার মাহমুদ
এত দিন বলা হচ্ছিল, পুরান ঢাকার বেশির ভাগ ভবন ভূমিকম্প প্রতিরোধক নয়। কিন্তু বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েটের) সামপ্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, রাজধানীর অভিজাত আবাসিক এলাকার ভবনগুলোর অর্ধেকই ভূমিকম্প প্রতিরোধক হিসেবে নির্মিত হচ্ছে না।
৯০ শতাংশ ভবনের গাড়ি রাখার স্থানটির (কার পার্কিং) অবকাঠামো এমনভাবে নির্মিত হচ্ছে, যা ভূমিকম্পের সময় ভবনটিকে সুরক্ষা দিতে পারবে না।
বুয়েটের ওই সমীক্ষায় ২০০৮ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে নির্মিত ১৫০টি ভবন পরীক্ষা করা হয়েছে। পুরান ঢাকার ৬০টি মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন পরীক্ষা করে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের প্রকৌশলীরা দেখতে পেয়েছেন, সেগুলোর বেশির ভাগেরই ভূমিকম্প প্রতিরোধকব্যবস্থা নেই। এই ভবনগুলো মাঝারি থেকে তীব্র মাত্রার অর্থাৎ সাড়ে ছয় থেকে সাত মাত্রার ভূমিকম্পের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের পক্ষ থেকে ‘ঢাকা শহরের ভবনের ভূমিকম্প বিপন্নতা যাচাইকরণ’ শীর্ষক এক গবেষণা সমীক্ষায় এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর আরবান সেফটি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সহায়তায় পরিচালিত ওই সমীক্ষা পরিচালিত হয়। দৈবচয়নের ভিত্তিতে ১৫০টি ভবন নির্বাচন করে পরীক্ষা করা হয়েছে।
একই গবেষণা প্রকল্পের আওতায় বুয়েট থেকে ২০০৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব আবাসিক হল এবং ২০০৭ সালে বুয়েটের ৪৬টি ভবনের ভূমিকম্প প্রতিরোধক ক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়। তাতে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একুশে হল এবং বুয়েটের তড়িৎ কৌশল ভবন, নতুন শিক্ষক কোয়ার্টার ও দুর্ঘটনা গবেষণাকেন্দ্রের (এআরসি) ভবন ছাড়া বাকি ৪৩টি ভবনে ভূমিকম্প প্রতিরোধকব্যবস্থা নেই।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, একটি ভবনকে ভূমিকম্প প্রতিরোধক করতে প্রতি বর্গফুটে অতিরিক্ত ৫ থেকে ১০ টাকা খরচ পড়ে। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ওই খরচ কমাতে ভবনগুলোতে ভূমিকম্প প্রতিরোধকব্যবস্থা রাখছে না। অনেক ক্ষেত্রে ভবনের সৌন্দর্য বাড়াতে ও অসচেতনতার কারণেও ভবনে ভূমিকম্প প্রতিরোধকব্যবস্থা রাখা হচ্ছে না।
সমীক্ষার প্রয়োজনে বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট কোম্পানি নির্মিত রাজধানীর বনানী, মিরপুর, ইব্রাহিমপুর, লালমাটিয়া ও উত্তরা এলাকার ১৫০টি ভবন পরীক্ষা করা হয়। বেশ কিছু নামী-দামি নির্মাতাপ্রতিষ্ঠানের ভবন ভূমিকম্পের কারণে বিপন্ন হতে পারে বলে ওই পরীক্ষায় দেখা গেছে।
এই ভবনগুলোর ক্ষেত্রে মূলত তিনটি বিষয় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রথমত, ভূমিকম্পের সময় ভবনের নিচের মাটি যে মাত্রায় কেঁপে উঠবে, ভবনটিও একই মাত্রায় কেঁপে উঠছে কি না। কেঁপে উঠলে বুঝতে হবে, ভবনটি ভূমিকম্পের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দ্বিতীয়ত, ভূমিকম্প সহনশীল ভবনের বিম ও কলামের সংযোগস্থলে চার ইঞ্চি পর পর রডের রিং দিতে হয়। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা গেছে, অর্ধেক ভবনেই সাত থেকে আট ইঞ্চি পর পর রডের রিং দেওয়া হয়েছে। এতে ভবনটির ভিত্তি শক্ত হয় না। তৃতীয়ত, বেশির ভাগ নতুন ভবনের নিচতলা গাড়ি রাখার জন্য ফাঁকা রাখা হয়েছে। এ ধরনের ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ওপরের তলার চেয়ে নিচতলার ফাঁকা স্থানের বিম অপেক্ষাকৃত মোটা হতে হবে। কিন্তু ৯০ শতাংশ ভবনে নিচ ও ওপরের তলার বিমের আকৃতি সমান রাখা হয়েছে। ভবনের চারপাশ ফাঁকা ও দেয়াল না থাকায় নিচের তলাটি দুর্বল থেকে যায়।
এই তিনটি শর্ত অনুসরণ না করে নির্মাণ করলে, ছয় থেকে আট মাত্রার ভূমিকম্পে পুরো ভবনটি ভেঙে পড়তে পারে বলে উল্লেখ করে সমীক্ষাটির তত্ত্বাবধানকারী বুয়েটের অধ্যাপক মেহেদী আহম্মদ আনসারি প্রথম আলোকে বলেন, নামী কোম্পানির অপেক্ষাকৃত দামি ভবনগুলোর ওপর এই সমীক্ষা পরিচালিত হয়েছে। তাতেই অর্ধেক ভবন ভূমিকম্পের ঝুঁকির মুখে আছে বলে দেখা গেছে। অখ্যাত প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিগতভাবে নির্মাণ করা ভবনগুলোর ক্ষেত্রে এ ধরনের ঝুঁকি আরও বেশি।
পুরান ঢাকার ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডের ২৫টি মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন পরীক্ষা করা হয়। পুরান ঢাকার বেশির ভাগ ভবন ৫০ থেকে ১০০ বছর আগে নির্মিত এবং এতে ভূমিকম্প প্রতিরোধকব্যবস্থা নেই। ভাবা হয়েছিল, ভূমিকম্প হলে সাধারণ মানুষকে মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হবে। সেই লক্ষ্যে ওই ভবনগুলো পরীক্ষা করে দেখা গেছে, কোনো মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনেই ভূমিকম্প প্রতিরোধকব্যবস্থা নেই।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নগরায়ণ ও সুশাসন বিভাগের সদস্যসচিব স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ও ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডে ভূমিকম্প প্রতিরোধকব্যবস্থা নিশ্চিত করার বিধান রয়েছে। নির্মাণশিল্পে জবাবদিহির অভাবের কারণে বেশির ভাগ ভবন নির্মাণে তা অনুসরণ করা হচ্ছে না। জরিপ করে দেখা গেছে, রাজধানীর সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ ভবন প্রকৌশলীদের মাধ্যমে নির্মিত হয়। বাকি ৭০ শতাংশের ক্ষেত্রে স্থপতি ও প্রকৌশলীর সহায়তা নেওয়া হয় না। কিন্তু প্রকৌশলীদের মাধ্যমে নির্মিত ভবনেরই এই অবস্থা। অন্য ভবনগুলোর ভূমিকম্প প্রতিরোধের কী অবস্থা, তা তো বোঝাই যাচ্ছে।
ইকবাল হাবিবের মতে, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী ভবনগুলো নির্মিত হচ্ছে কি না, তা নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করতে হবে। সরকারের উচিত টাস্কফোর্স গঠন করে একটি কারিগরি দলের মাধ্যমে ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করা। রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প সহ্য করতে পারবে না এমন ভবনগুলোকে ভূমিকম্প-সহনশীল করতে সরকারকেও সহায়তা দিতে হবে।
বুয়েটের ওই সমীক্ষায় ২০০৮ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে নির্মিত ১৫০টি ভবন পরীক্ষা করা হয়েছে। পুরান ঢাকার ৬০টি মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন পরীক্ষা করে বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের প্রকৌশলীরা দেখতে পেয়েছেন, সেগুলোর বেশির ভাগেরই ভূমিকম্প প্রতিরোধকব্যবস্থা নেই। এই ভবনগুলো মাঝারি থেকে তীব্র মাত্রার অর্থাৎ সাড়ে ছয় থেকে সাত মাত্রার ভূমিকম্পের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের পক্ষ থেকে ‘ঢাকা শহরের ভবনের ভূমিকম্প বিপন্নতা যাচাইকরণ’ শীর্ষক এক গবেষণা সমীক্ষায় এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর আরবান সেফটি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সহায়তায় পরিচালিত ওই সমীক্ষা পরিচালিত হয়। দৈবচয়নের ভিত্তিতে ১৫০টি ভবন নির্বাচন করে পরীক্ষা করা হয়েছে।
একই গবেষণা প্রকল্পের আওতায় বুয়েট থেকে ২০০৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব আবাসিক হল এবং ২০০৭ সালে বুয়েটের ৪৬টি ভবনের ভূমিকম্প প্রতিরোধক ক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়। তাতে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একুশে হল এবং বুয়েটের তড়িৎ কৌশল ভবন, নতুন শিক্ষক কোয়ার্টার ও দুর্ঘটনা গবেষণাকেন্দ্রের (এআরসি) ভবন ছাড়া বাকি ৪৩টি ভবনে ভূমিকম্প প্রতিরোধকব্যবস্থা নেই।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, একটি ভবনকে ভূমিকম্প প্রতিরোধক করতে প্রতি বর্গফুটে অতিরিক্ত ৫ থেকে ১০ টাকা খরচ পড়ে। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ওই খরচ কমাতে ভবনগুলোতে ভূমিকম্প প্রতিরোধকব্যবস্থা রাখছে না। অনেক ক্ষেত্রে ভবনের সৌন্দর্য বাড়াতে ও অসচেতনতার কারণেও ভবনে ভূমিকম্প প্রতিরোধকব্যবস্থা রাখা হচ্ছে না।
সমীক্ষার প্রয়োজনে বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট কোম্পানি নির্মিত রাজধানীর বনানী, মিরপুর, ইব্রাহিমপুর, লালমাটিয়া ও উত্তরা এলাকার ১৫০টি ভবন পরীক্ষা করা হয়। বেশ কিছু নামী-দামি নির্মাতাপ্রতিষ্ঠানের ভবন ভূমিকম্পের কারণে বিপন্ন হতে পারে বলে ওই পরীক্ষায় দেখা গেছে।
এই ভবনগুলোর ক্ষেত্রে মূলত তিনটি বিষয় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রথমত, ভূমিকম্পের সময় ভবনের নিচের মাটি যে মাত্রায় কেঁপে উঠবে, ভবনটিও একই মাত্রায় কেঁপে উঠছে কি না। কেঁপে উঠলে বুঝতে হবে, ভবনটি ভূমিকম্পের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দ্বিতীয়ত, ভূমিকম্প সহনশীল ভবনের বিম ও কলামের সংযোগস্থলে চার ইঞ্চি পর পর রডের রিং দিতে হয়। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা গেছে, অর্ধেক ভবনেই সাত থেকে আট ইঞ্চি পর পর রডের রিং দেওয়া হয়েছে। এতে ভবনটির ভিত্তি শক্ত হয় না। তৃতীয়ত, বেশির ভাগ নতুন ভবনের নিচতলা গাড়ি রাখার জন্য ফাঁকা রাখা হয়েছে। এ ধরনের ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ওপরের তলার চেয়ে নিচতলার ফাঁকা স্থানের বিম অপেক্ষাকৃত মোটা হতে হবে। কিন্তু ৯০ শতাংশ ভবনে নিচ ও ওপরের তলার বিমের আকৃতি সমান রাখা হয়েছে। ভবনের চারপাশ ফাঁকা ও দেয়াল না থাকায় নিচের তলাটি দুর্বল থেকে যায়।
এই তিনটি শর্ত অনুসরণ না করে নির্মাণ করলে, ছয় থেকে আট মাত্রার ভূমিকম্পে পুরো ভবনটি ভেঙে পড়তে পারে বলে উল্লেখ করে সমীক্ষাটির তত্ত্বাবধানকারী বুয়েটের অধ্যাপক মেহেদী আহম্মদ আনসারি প্রথম আলোকে বলেন, নামী কোম্পানির অপেক্ষাকৃত দামি ভবনগুলোর ওপর এই সমীক্ষা পরিচালিত হয়েছে। তাতেই অর্ধেক ভবন ভূমিকম্পের ঝুঁকির মুখে আছে বলে দেখা গেছে। অখ্যাত প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিগতভাবে নির্মাণ করা ভবনগুলোর ক্ষেত্রে এ ধরনের ঝুঁকি আরও বেশি।
পুরান ঢাকার ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডের ২৫টি মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন পরীক্ষা করা হয়। পুরান ঢাকার বেশির ভাগ ভবন ৫০ থেকে ১০০ বছর আগে নির্মিত এবং এতে ভূমিকম্প প্রতিরোধকব্যবস্থা নেই। ভাবা হয়েছিল, ভূমিকম্প হলে সাধারণ মানুষকে মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হবে। সেই লক্ষ্যে ওই ভবনগুলো পরীক্ষা করে দেখা গেছে, কোনো মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবনেই ভূমিকম্প প্রতিরোধকব্যবস্থা নেই।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) নগরায়ণ ও সুশাসন বিভাগের সদস্যসচিব স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ও ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডে ভূমিকম্প প্রতিরোধকব্যবস্থা নিশ্চিত করার বিধান রয়েছে। নির্মাণশিল্পে জবাবদিহির অভাবের কারণে বেশির ভাগ ভবন নির্মাণে তা অনুসরণ করা হচ্ছে না। জরিপ করে দেখা গেছে, রাজধানীর সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ ভবন প্রকৌশলীদের মাধ্যমে নির্মিত হয়। বাকি ৭০ শতাংশের ক্ষেত্রে স্থপতি ও প্রকৌশলীর সহায়তা নেওয়া হয় না। কিন্তু প্রকৌশলীদের মাধ্যমে নির্মিত ভবনেরই এই অবস্থা। অন্য ভবনগুলোর ভূমিকম্প প্রতিরোধের কী অবস্থা, তা তো বোঝাই যাচ্ছে।
ইকবাল হাবিবের মতে, ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী ভবনগুলো নির্মিত হচ্ছে কি না, তা নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করতে হবে। সরকারের উচিত টাস্কফোর্স গঠন করে একটি কারিগরি দলের মাধ্যমে ভূমিকম্প ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করা। রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প সহ্য করতে পারবে না এমন ভবনগুলোকে ভূমিকম্প-সহনশীল করতে সরকারকেও সহায়তা দিতে হবে।
No comments