বীর মুক্তিযোদ্ধা-তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না
৩৪৯ স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন। মু শামসুল আলম, বীর প্রতীক কুশলী এক মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিতে আক্রমণ চালালেন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তসংলগ্ন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক ক্যাম্পে। মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে মু শামসুল আলম। পাকিস্তানি সেনারাও পাল্টা আক্রমণ শুরু করল।
তুমুল গোলাগুলিতে গোটা এলাকা প্রকম্পিত। যুদ্ধ চলল অনেকক্ষণ। পরে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে গেলেন। এ ঘটনা চান্দু ভূঁইয়া বিওপিতে। ১৯৭১ সালের অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে।
চান্দু ভূঁইয়া বিওপি (সীমান্ত চৌকি) শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ির অন্তর্গত। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে। জুন মাসের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এই সীমান্ত চৌকি ঘিরে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা অবস্থান গড়ে তোলে। তারা সীমান্ত এলাকায় কঠোর নজরদারি প্রতিষ্ঠা করে। ফলে সীমান্ত এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের অবাধ যাতায়াতে সমস্যা হতে থাকে। সীমান্ত চৌকিতে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগীদের ভীতসন্ত্রস্ত করার জন্য মু শামসুল আলম সেখানে আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেন।
সিদ্ধান্ত মোতাবেক মু শামসুল আলম একদল মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে সেখানে আক্রমণ করেন। তাঁর দলে ছিলেন মাহবুব আলম, আবদুল গণি, জিয়াউল হক (সুবেদার), আবদুল হাই, আনোয়ার হোসেন, হেলালউদ্দিন, মুসলেম উদ্দিন প্রমুখ।
মুক্তিযোদ্ধারা আকস্মিক আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি করতে সক্ষম হন। শক্তির বিচারে ওই যুদ্ধ ছিল অসম যুদ্ধ। কারণ, বিওপিতে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের কাছে ছিল অত্যাধুনিক অস্ত্র ও অসংখ্য গোলাবারুদ। অন্যদিকে মু শামসুল আলম ও তাঁর সহযোদ্ধাদের কাছে ছিল সাধারণ অস্ত্র। তাই কৌশলগত কারণে মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে কিছুক্ষণ যুদ্ধ করে পিছু হটে যান।
মু শামসুল আলম ১৯৭১ সালে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। ২৮ মার্চ তিনি একদল প্রতিরোধযোদ্ধা নিয়ে রাজশাহীর নন্দনগাছি সেতুর কাছে প্রতিরোধ গড়ে তুলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দলের সঙ্গে দুই দিন যুদ্ধ করেন। যুদ্ধে তাঁদের হাতে সব পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢাকা থেকে একদল পাকিস্তানি সেনা রাজশাহীর দিকে আসার সময় তিনি বনপাড়া থেকে ঝলমলিয়া পর্যন্ত শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ঝলমলিয়া সেতুর কাছে যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তবে বেশ কয়েকজন প্রতিরোধযোদ্ধা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে শহীদ হন। মু শামসুল আলম অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান। রাজশাহীর পতন হলে তিনি ভারতে চলে যান। মুর্শিদাবাদ জেলার নন্দীরভিটা ক্যাম্পে অবস্থান করে বেশ কয়েকটি গেরিলাযুদ্ধে অংশ নেন। পরে যোগ দেন প্রথম বাংলাদেশ ওয়ার কোর্সে। প্রশিক্ষণ শেষে ১১ নম্বর সেক্টরের অধীন পুরখাসিয়া সাব-সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জামালপুর জেলার একাংশ ও শেরপুর জেলার বৃহৎ অংশ নিয়ে ছিল এই সাব-সেক্টর।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য মু শামসুল আলমকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ৩৩।
মু শামসুল আলম স্বাধীনতার পর কিছুদিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ভূগোল বিভাগে) যোগ দেন। এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। মু শামসুল আলমের পৈতৃক নিবাস ভারতে। বর্তমানে বাস করেন রাজশাহী মহানগরে। ঠিকানা অরণ্য, ১৩১ কাজলা, তালাইমারির মোড়। তাঁর বাবার নাম আলমাস উদ্দিন মণ্ডল। মা সালেহা খাতুন। স্ত্রী হোসনে আরা বেগম। তাঁদের দুই মেয়ে।
সূত্র: মু শামসুল আলম, বীর প্রতীক এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ১১।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
চান্দু ভূঁইয়া বিওপি (সীমান্ত চৌকি) শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ির অন্তর্গত। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে। জুন মাসের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এই সীমান্ত চৌকি ঘিরে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা অবস্থান গড়ে তোলে। তারা সীমান্ত এলাকায় কঠোর নজরদারি প্রতিষ্ঠা করে। ফলে সীমান্ত এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের অবাধ যাতায়াতে সমস্যা হতে থাকে। সীমান্ত চৌকিতে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনা ও তাদের সহযোগীদের ভীতসন্ত্রস্ত করার জন্য মু শামসুল আলম সেখানে আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেন।
সিদ্ধান্ত মোতাবেক মু শামসুল আলম একদল মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে সেখানে আক্রমণ করেন। তাঁর দলে ছিলেন মাহবুব আলম, আবদুল গণি, জিয়াউল হক (সুবেদার), আবদুল হাই, আনোয়ার হোসেন, হেলালউদ্দিন, মুসলেম উদ্দিন প্রমুখ।
মুক্তিযোদ্ধারা আকস্মিক আক্রমণ চালিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি করতে সক্ষম হন। শক্তির বিচারে ওই যুদ্ধ ছিল অসম যুদ্ধ। কারণ, বিওপিতে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাদের কাছে ছিল অত্যাধুনিক অস্ত্র ও অসংখ্য গোলাবারুদ। অন্যদিকে মু শামসুল আলম ও তাঁর সহযোদ্ধাদের কাছে ছিল সাধারণ অস্ত্র। তাই কৌশলগত কারণে মুক্তিযোদ্ধারা সেখানে কিছুক্ষণ যুদ্ধ করে পিছু হটে যান।
মু শামসুল আলম ১৯৭১ সালে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। ২৮ মার্চ তিনি একদল প্রতিরোধযোদ্ধা নিয়ে রাজশাহীর নন্দনগাছি সেতুর কাছে প্রতিরোধ গড়ে তুলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দলের সঙ্গে দুই দিন যুদ্ধ করেন। যুদ্ধে তাঁদের হাতে সব পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। এপ্রিল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঢাকা থেকে একদল পাকিস্তানি সেনা রাজশাহীর দিকে আসার সময় তিনি বনপাড়া থেকে ঝলমলিয়া পর্যন্ত শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ঝলমলিয়া সেতুর কাছে যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তবে বেশ কয়েকজন প্রতিরোধযোদ্ধা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে শহীদ হন। মু শামসুল আলম অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান। রাজশাহীর পতন হলে তিনি ভারতে চলে যান। মুর্শিদাবাদ জেলার নন্দীরভিটা ক্যাম্পে অবস্থান করে বেশ কয়েকটি গেরিলাযুদ্ধে অংশ নেন। পরে যোগ দেন প্রথম বাংলাদেশ ওয়ার কোর্সে। প্রশিক্ষণ শেষে ১১ নম্বর সেক্টরের অধীন পুরখাসিয়া সাব-সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। জামালপুর জেলার একাংশ ও শেরপুর জেলার বৃহৎ অংশ নিয়ে ছিল এই সাব-সেক্টর।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য মু শামসুল আলমকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ৩৩।
মু শামসুল আলম স্বাধীনতার পর কিছুদিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করেন। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ভূগোল বিভাগে) যোগ দেন। এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। মু শামসুল আলমের পৈতৃক নিবাস ভারতে। বর্তমানে বাস করেন রাজশাহী মহানগরে। ঠিকানা অরণ্য, ১৩১ কাজলা, তালাইমারির মোড়। তাঁর বাবার নাম আলমাস উদ্দিন মণ্ডল। মা সালেহা খাতুন। স্ত্রী হোসনে আরা বেগম। তাঁদের দুই মেয়ে।
সূত্র: মু শামসুল আলম, বীর প্রতীক এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ১১।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
No comments