বিদ্যুৎ খাতের অন্ধকার ঘুচবে কবে? by সোহেল নওরোজ
মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশবাসী নিরবচ্ছিন্ন না হলেও বিদ্যুৎ পরিস্থিতির তুলনামূলক উন্নতির প্রত্যাশা করেছিল। কারণ, তাদের ইশতেহারে মোটা দাগে থাকা 'বিদ্যুৎ' ইস্যু নির্বাচনে জয়লাভের অন্যতম প্রভাবক হয়ে উঠেছিল। বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকারের বেশ কিছু পদক্ষেপ আমাদের প্রত্যাশার পালে হাওয়া দিয়েছিল।
আমদানি ভিত্তিতে এবং চড়ামূল্যে কেনা বিদ্যুতে 'মাঝে মধ্যে তব দেখা পায়' অবস্থার যৎকিঞ্চিৎ উন্নতি হয়েছে এ কথা স্বীকার্য। কিন্তু নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি পুরনো কেন্দ্রগুলো চালু না করে উল্টো আমদানিনির্ভর কুইক রেন্টাল (দ্রুত ভাড়াভিত্তিক) দিয়ে মুমূর্ষু বিদ্যুৎ খাতকে বেশিদিন লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা যায় না। চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনের অসামঞ্জস্যতায় সেচ মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই লোডশেডিং, দিনের অর্ধেকের বেশি সময় বিদ্যুৎহীন থাকা, লো-ভোল্টেজের বিড়ম্বনায় জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা হঠাৎ করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেনি। বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার সঙ্গে আবাসন ও শিল্প-কারখানার প্রসারে বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। বিগত দুই দশকে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ, বাড়ানো হয়েছে খুঁটির সংখ্যা, সে তুলনায় উল্লেখযোগ্যহারে উৎপাদন বাড়েনি। বরং বিদ্যমান কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস, যথাযথ পর্যবেক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, সর্বোপরি দুর্নীতির বিস্তারে একেবারেই নাজুক হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ খাত। বিদ্যুৎ উৎপাদন থেমে না থাকলেও চাহিদার তুলনায় তা অপর্যাপ্ত। হিসাব মতে, ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত এক হাজার ৭৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। ২০০ মেগাওয়াট পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। অন্যদিকে গ্যাস, তেল, কয়লা এবং মেরামতের অভাবে বন্ধ রয়েছে দুই হাজার ৫৬৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন। দ্রুত বিদ্যুৎ সংকট নিরসনের পথ খুঁজতে গিয়ে তেলভিত্তিক কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্প এখন সরকারের গলায় ফাঁসের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছোট আকৃতির এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র্রে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় না আবার এর উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি। গ্রীষ্মকাল না আসতেই নির্বিশেষে গ্রাম-শহরে বেড়ে যাওয়া লোডশেডিংয়ে দুর্ভোগ বেড়েছে। খরা মৌসুমে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে তা আঁচ করা যায়। যেখানে সরবরাহ অপেক্ষাকৃত বেশি, সেখানে সর্বোচ্চ চাহিদার অর্ধেকের মতো বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। এমনকি সেচের কারণে রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের সরকারি ঘোষণাও কার্যকর হচ্ছে না। বোরো মৌসুমে সারাদেশে সচল হতে চলেছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ সেচ পাম্প। সেচে ব্যাঘাত ঘটলে বোরো ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে। বিঘি্নত হবে খাদ্য নিরাপত্তা। শিল্পক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সংকটের প্রভাব আরও মারাত্মক। বিগত কয়েক বছর ধরে বিদ্যুৎ ঘাটতির ফলে বিনিয়োগ ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পথ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। উপরন্তু বেশকিছু কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছে অনেকে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থা স্থিতিশীল রাখতে কেবল নতুন কেন্দ্র স্থাপন আর উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ আমদানির মতো উচ্চাভিলাষী সিদ্ধান্ত নিলেই হবে না। পুরনো, জরাজীর্ণ কেন্দ্রগুলো সংস্কার ও বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা ত্রুটিমুক্ত করতে হবে। যে খাতের ওপর আমাদের কৃষি, শিক্ষা, শিল্প সর্বোপরি দৈনন্দিন জীবনযাত্রা বহুলাংশে নির্ভরশীল, সেটির উন্নয়নে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়া বাঞ্ছনীয়।
য় শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ
বিদ্যুৎ সমস্যা হঠাৎ করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেনি। বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার সঙ্গে আবাসন ও শিল্প-কারখানার প্রসারে বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। বিগত দুই দশকে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ, বাড়ানো হয়েছে খুঁটির সংখ্যা, সে তুলনায় উল্লেখযোগ্যহারে উৎপাদন বাড়েনি। বরং বিদ্যমান কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস, যথাযথ পর্যবেক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব, সর্বোপরি দুর্নীতির বিস্তারে একেবারেই নাজুক হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ খাত। বিদ্যুৎ উৎপাদন থেমে না থাকলেও চাহিদার তুলনায় তা অপর্যাপ্ত। হিসাব মতে, ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত এক হাজার ৭৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। ২০০ মেগাওয়াট পরীক্ষামূলকভাবে চলছে। অন্যদিকে গ্যাস, তেল, কয়লা এবং মেরামতের অভাবে বন্ধ রয়েছে দুই হাজার ৫৬৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন। দ্রুত বিদ্যুৎ সংকট নিরসনের পথ খুঁজতে গিয়ে তেলভিত্তিক কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্প এখন সরকারের গলায় ফাঁসের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছোট আকৃতির এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র্রে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় না আবার এর উৎপাদন ব্যয় অনেক বেশি। গ্রীষ্মকাল না আসতেই নির্বিশেষে গ্রাম-শহরে বেড়ে যাওয়া লোডশেডিংয়ে দুর্ভোগ বেড়েছে। খরা মৌসুমে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে তা আঁচ করা যায়। যেখানে সরবরাহ অপেক্ষাকৃত বেশি, সেখানে সর্বোচ্চ চাহিদার অর্ধেকের মতো বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। এমনকি সেচের কারণে রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের সরকারি ঘোষণাও কার্যকর হচ্ছে না। বোরো মৌসুমে সারাদেশে সচল হতে চলেছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ সেচ পাম্প। সেচে ব্যাঘাত ঘটলে বোরো ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে। বিঘি্নত হবে খাদ্য নিরাপত্তা। শিল্পক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সংকটের প্রভাব আরও মারাত্মক। বিগত কয়েক বছর ধরে বিদ্যুৎ ঘাটতির ফলে বিনিয়োগ ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পথ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। উপরন্তু বেশকিছু কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকার হয়ে পড়েছে অনেকে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ ব্যবস্থা স্থিতিশীল রাখতে কেবল নতুন কেন্দ্র স্থাপন আর উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ আমদানির মতো উচ্চাভিলাষী সিদ্ধান্ত নিলেই হবে না। পুরনো, জরাজীর্ণ কেন্দ্রগুলো সংস্কার ও বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা ত্রুটিমুক্ত করতে হবে। যে খাতের ওপর আমাদের কৃষি, শিক্ষা, শিল্প সর্বোপরি দৈনন্দিন জীবনযাত্রা বহুলাংশে নির্ভরশীল, সেটির উন্নয়নে সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়া বাঞ্ছনীয়।
য় শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ
No comments