পুরনো যুদ্ধের নতুন দামামা by জামান সরদার
বৃহস্পতিবারের গার্ডিয়ানে একটি আলোকচিত্র ছাপা হয়েছে_ নদীর পাড়ে দাঁড়ানো এক প্রাচীন মহীরুহের অর্ধেক শিকড়ের মাটি পানিতে ধুয়ে গেছে। বাকি অর্ধেকেও ভাঙনের ধ্বনি। বাংলাদেশে এমন দৃশ্য বিরল নয়। কত বটগাছ এভাবে নদী ও ভূমির বন্ধন হয়ে বছরের পর বছর টিকে আছে! কিন্তু ছবিটা যে গাঙ্গেয় অববাহিকার নয়_ গাছের গোড়ায় হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে কোমরে গামছামতো কিছু একটা জড়িয়ে গা মাজতে ব্যস্ত লোকটিকে দেখলে টের পাওয়া যায়।
আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ আফ্রিকান অধিবাসী। ক্ষুধা-দারিদ্র্যে যেন খানিকটা ম্লান দেহভঙ্গি। কিন্তু এক গজ দূরে গাছে শিকড়ের ওপর রাখা উর্দি, গুলিভর্তি ম্যাগাজিন ও একে-৪৭ দেখলে প্রকৃত পরিচয় বোঝা যায়। তিনি ইথিওপিয়ার কারো উপজাতির সদস্য। পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীটির নাম ওমো। ওই নদীতে তিনটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের পরিকল্পনা চলছে। গার্ডিয়ানের আশঙ্কা, তাতে যে পানি সংকট দেখা দেবে, তা দ্রুতই সহিংস সংঘাতে পরিণত হতে পারে। অস্ত্রধারীর নিমগ্ন স্নান দেখানোর মধ্য দিয়ে পানি ও যুদ্ধের প্রতীকী সম্পর্ক পরিষ্কার_ আপাত অন্য কারণে ব্যবহৃত এই মারণাস্ত্র সহসাই ঝলসে উঠতে পারে পানির জন্য।
যে নিবন্ধের অংশ হিসেবে ছবিটি ছাপা হয়েছে, সেখানে উদৃব্দত হয়েছেন যুক্তরাজ্যের জ্বালানি ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এড ডেভির আরও সরাসরি বক্তব্য। উচ্চপদস্থ রাজনীতিক ও কূটনীতিকদের এক সম্মেলনে তিনি বলেছেন, তার ভয় হচ্ছে, বিভিন্ন দেশের মধ্যে পানির জন্য যুদ্ধ বোধ হয় দরজার ওপাশে অপেক্ষা করছে মাত্র। কাকতালীয়ভাবে একই দিন বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে প্রকাশিত হয়েছে একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন। তাতে বলা হয়েছে, আগামী ১০ বছরের মধ্যে একেবারে যুদ্ধ বেধে না গেলেও পানি নিয়ে রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে এবং একই দেশের অঞ্চলে অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়বে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আমেরিকায়।
কেউ কেউ বলতেন বটে যে, একুশ শতকে যুদ্ধ হবে পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। কেউ তাতে গা করত বলে মনে হয় না। গত দুই দশক ধরে বিশ্বজুড়ে বরং জ্বালানির জন্য যুদ্ধই দৃশ্যমান। পেন্টাগনের পণ্ডিতরা যদিও নানা ব্যাখ্যা দিয়ে চলছেন; কে না জানে যে ইরাক, আফগানিস্তান এবং হালের মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে যেসব লড়াই ও কারসাজি চলছে, তার নেপথ্যে আসলে তেলের তেলেসমাতি। অপেক্ষাকৃত 'সবুজ' জ্বালানি গ্যাসও এখন যুদ্ধের উপলক্ষ। সে যুদ্ধও খানিকটা বায়বীয়। ইরাক, আফগানিস্তান কিংবা আফ্রিকার বাইরেও যে গ্যাস নিয়ে যুদ্ধ চলছে_ খুব হুশিয়ার না হলে বোঝা কঠিন। বহুকাল অবহেলায় পড়ে থাকা সমুদ্রসীমা কী কারণে হঠাৎ আন্তর্জাতিক হাঙ্গামার কারণ হয়ে ওঠে, তার হিসাব সহজ। সব দেখেশুনে মনে হওয়া অস্বাভাবিক ছিল না যে, পানির জন্য যুদ্ধ বোধ হয় হনুজ দূরঅস্ত। মনে হতে পারে, পানির লড়াই নেহাত পরিবেশবাদীদের বিষয়। আফ্রিকাজুড়ে পানির হাহাকার, দক্ষিণ এশিয়ার হিসাব-নিকাশ বড়জোর ইউএনওয়াটার (পানি বিষয়ক জাতিসংঘ সংস্থা) ও সেটার পার্টনারদের মাথাব্যথা। ২২ মার্চ পালিত হওয়া বিশ্ব পানি দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়ও লক্ষণীয়_ ওয়াটার অ্যান্ড ফুড সিকিউরিটি। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের পর এখন দেখা যাচ্ছে, সেটা সিকিউরিটি বা নিরাপত্তা তো বটেই, রীতিমতো যুদ্ধের বিষয়।
বিশ্ব পানি দিবসে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে ছাড় পাওয়া ওই প্রতিবেদনে নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি যে, ঠিক কোন কোন দেশের মধ্যে পানি নিয়ে যুদ্ধ অত্যাসন্ন। তবে কোন কোন নদী নিয়ে তারা সমীক্ষা চালিয়েছেন, তার উল্লেখ আছে। এর মধ্যে রয়েছে নীল নদ, দজলা ও ফোরাত, মেকং, জর্ডান, আমু দরিয়া, সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্র।
তাহলে, পুরাতন যুদ্ধের দামামাই কি নতুন করে বেজে উঠল? আমরাই-বা কতটা প্রস্তুত?
যে নিবন্ধের অংশ হিসেবে ছবিটি ছাপা হয়েছে, সেখানে উদৃব্দত হয়েছেন যুক্তরাজ্যের জ্বালানি ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এড ডেভির আরও সরাসরি বক্তব্য। উচ্চপদস্থ রাজনীতিক ও কূটনীতিকদের এক সম্মেলনে তিনি বলেছেন, তার ভয় হচ্ছে, বিভিন্ন দেশের মধ্যে পানির জন্য যুদ্ধ বোধ হয় দরজার ওপাশে অপেক্ষা করছে মাত্র। কাকতালীয়ভাবে একই দিন বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে প্রকাশিত হয়েছে একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন। তাতে বলা হয়েছে, আগামী ১০ বছরের মধ্যে একেবারে যুদ্ধ বেধে না গেলেও পানি নিয়ে রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে এবং একই দেশের অঞ্চলে অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়বে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আমেরিকায়।
কেউ কেউ বলতেন বটে যে, একুশ শতকে যুদ্ধ হবে পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। কেউ তাতে গা করত বলে মনে হয় না। গত দুই দশক ধরে বিশ্বজুড়ে বরং জ্বালানির জন্য যুদ্ধই দৃশ্যমান। পেন্টাগনের পণ্ডিতরা যদিও নানা ব্যাখ্যা দিয়ে চলছেন; কে না জানে যে ইরাক, আফগানিস্তান এবং হালের মধ্যপ্রাচ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে যেসব লড়াই ও কারসাজি চলছে, তার নেপথ্যে আসলে তেলের তেলেসমাতি। অপেক্ষাকৃত 'সবুজ' জ্বালানি গ্যাসও এখন যুদ্ধের উপলক্ষ। সে যুদ্ধও খানিকটা বায়বীয়। ইরাক, আফগানিস্তান কিংবা আফ্রিকার বাইরেও যে গ্যাস নিয়ে যুদ্ধ চলছে_ খুব হুশিয়ার না হলে বোঝা কঠিন। বহুকাল অবহেলায় পড়ে থাকা সমুদ্রসীমা কী কারণে হঠাৎ আন্তর্জাতিক হাঙ্গামার কারণ হয়ে ওঠে, তার হিসাব সহজ। সব দেখেশুনে মনে হওয়া অস্বাভাবিক ছিল না যে, পানির জন্য যুদ্ধ বোধ হয় হনুজ দূরঅস্ত। মনে হতে পারে, পানির লড়াই নেহাত পরিবেশবাদীদের বিষয়। আফ্রিকাজুড়ে পানির হাহাকার, দক্ষিণ এশিয়ার হিসাব-নিকাশ বড়জোর ইউএনওয়াটার (পানি বিষয়ক জাতিসংঘ সংস্থা) ও সেটার পার্টনারদের মাথাব্যথা। ২২ মার্চ পালিত হওয়া বিশ্ব পানি দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়ও লক্ষণীয়_ ওয়াটার অ্যান্ড ফুড সিকিউরিটি। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের পর এখন দেখা যাচ্ছে, সেটা সিকিউরিটি বা নিরাপত্তা তো বটেই, রীতিমতো যুদ্ধের বিষয়।
বিশ্ব পানি দিবসে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে ছাড় পাওয়া ওই প্রতিবেদনে নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি যে, ঠিক কোন কোন দেশের মধ্যে পানি নিয়ে যুদ্ধ অত্যাসন্ন। তবে কোন কোন নদী নিয়ে তারা সমীক্ষা চালিয়েছেন, তার উল্লেখ আছে। এর মধ্যে রয়েছে নীল নদ, দজলা ও ফোরাত, মেকং, জর্ডান, আমু দরিয়া, সিন্ধু ও ব্রহ্মপুত্র।
তাহলে, পুরাতন যুদ্ধের দামামাই কি নতুন করে বেজে উঠল? আমরাই-বা কতটা প্রস্তুত?
No comments