মূল সমস্যা কাঠামোগত by খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য অর্থের জোগান বাড়ানো হচ্ছে। ইব্রাহিম খালেদের নেতৃত্বাধীন
তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী একের পর এক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে না। এ নিয়ে আলোচনা করেছেন বাজার সংশ্লিষ্ট দু'জন বিশেষজ্ঞ
তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী একের পর এক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে না। এ নিয়ে আলোচনা করেছেন বাজার সংশ্লিষ্ট দু'জন বিশেষজ্ঞ
শেয়ারবাজারে সমস্যা রয়েছে এবং তার সমাধান জরুরি, এ নিয়ে দ্বিমত করা চলে না। এক সময়ে মতিঝিল এলাকায় নিয়মিত মিছিল-সমাবেশ হয়েছে শেয়ারবাজার চাঙ্গা করার দাবিতে। কিন্তু এখন অপেক্ষকৃত শান্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। এ থেকে অবশ্য কেউ বলবে না যে বাজার স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। ঢাকা ও স্টক এক্সচেঞ্জের লেনদেন এক-দেড় বছর আগের তুলনায় সীমিত রয়ে গেছে। সূচক অনেক নিচে নেমে গেছে। কেন পরিস্থিতির উন্নতির জন্য নেওয়া কোনো দাওয়াই কাজে আসছে না, এ প্রশ্ন অনেকেরই।
এ ক্ষেত্রে সমস্যা কীভাবে দেখা হচ্ছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। বাজারে ভালো শেয়ারের সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, এটা যদি সমস্যা হয় তাহলে সমাধানের একটি পথ আমরা দেখাতে পারি। আবার সমস্যা যদি হয় অর্থের সংস্থানজনিত, তাহলে আরেকভাবে সমাধান হবে। আবার সমস্যা যদি কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে হয়, তাহলে সেদিকে নজর দিতে হবে। মনে হয় গত বছরে শেয়ারবাজারে ধসের পর থেকে চাহিদা ও জোগানের ক্ষেত্রে ঘাটতিকেই অনেকে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন। সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তার ভিত্তিতে সমাধান দিচ্ছেন এবং তা কার্যকরে কিছু পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে। তারা বলছেন, বাজারে অর্থের জোগান কমে গেছে_ এ কারণে অর্থ সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়ে বাজারকে ফের স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাজার সংশ্লিষ্টদের বৈঠকেও এ পথেই সমাধান খোঁজার চেষ্টা হয়েছে বলে ধারণা করা যায়। সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন এ পর্যন্ত যেসব নির্দেশনা দিয়েছে তাতেও ফোকাসে রয়েছে এসব সমস্যা_ অর্থে সরবরাহ বাড়াতে হবে। স্মরণ থাকতে পারে যে, এক বছরেরও কিছু আগে বাজারে ধস নামার পরপরই আইসিবি ৫০০-৬০০ কোটি টাকার তহবিলের ঘোষণা দেয়। কিছু দিন পর শোনা গেল, ৫ হাজার কোটি টাকার বাংলাদেশ ফান্ডের কথা। এ জন্য কয়েকশ' কোটি টাকা তোলা হয়ে গেছে বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়।
বাজারে অর্থ সরবরাহ বাড়ানোর জন্য অপ্রদর্শিত আয় বা কালো টাকা বিনিয়োগেরও সুযোগ করে দেওয়া হয়। সেকেন্ডারি বাজারে লেনদেনের জন্য কর মওকুফের ঘোষণা আসে এ সময়ে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এ জন্য দেওয়া হয় বিশেষ সুবিধা।
এসব পদক্ষেপের কিছু কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে, আরও কিছু হওয়ার পথে। কিন্তু বাজার চাঙ্গা হচ্ছে না। বরং সীমিতভাবে নতুন করে যারা বাজারে যুক্ত হয়েছিলেন, তাদেরও একটি অংশ গত এক বছরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
কেন বাজার স্বাভাবিক হচ্ছে না, এর কারণ খুঁজতে গেলে দেখা যাবে যে, চাহিদা ও সরবরাহে ঘাটতিই বাজারের মূল সমস্যা নয়। কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতা, মনিটরিং সমস্যা, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ_ এসবের প্রতি মনোযোগ না দিলে শেয়ারবাজার স্বাভাবিক হবে না। সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনে কর্মী বেড়েছে। কিন্তু দক্ষতা বাড়ানোর জন্য তাদের আরও অনেক কিছু করার রয়েছে। তাদের অডিট ও আইন সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ নিয়োগদান জরুরি হয়ে পড়েছে। অত্যাধুনিক মনিটরিং সফটওয়্যার চালুর সুপারিশ রয়েছে অনেক দিন থেকেই। কেন তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না? ইনসাইড ট্রেডিং বন্ধ করার প্রস্তাবিত আইনও কেনই-বা হিমাগারে? ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা বোর্ডকে ব্রোকারদের প্রভাবমুক্ত রাখার পদক্ষেপও কেন নেওয়া হচ্ছে না? আরেকটি পদক্ষেপ প্রত্যাশিত ছিল_ অডিট কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা। বিনিয়োগকারীরা তাদের প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেয়। এতে ব্যবসায় সম্পর্কে যদি ভুল তথ্য থাকে, যদি বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করে ফাঁদে ফেলার মতো প্রতিবেদন তৈরি করা হয়_ সে জন্য মাস্তির ব্যবস্থা থাকা চাই। কিন্তু এ পথে চলায় কোনো অগ্রগতি নেই।
এখন পর্যন্ত যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা কেবল ক্ষুদ্র ও বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছু সুবিধা প্রদান। কিন্তু করপোরেট সুশাসনের জন্য আইন প্রণয়ন মোটেই গুরুত্ব পাচ্ছে না। এর ফলে বাজারে কোনো ইতিবাচক লক্ষণ নেই। মাঝে মধ্যে বাজার অজ্ঞাত কারণে চাঙ্গা হয়, কিন্তু স্থায়ী হয় না।
সাম্প্রতিক শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির হোতাদের লেনদেন ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে বিস্তারিত তদন্তের কথা বলা হয়েছিল তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা দেখছি, সীমিত কয়েকটি মামলা এবং তাতে বিনিয়োগকারীরা আশ্বস্তবোধ করতে পারছে না। বাজারে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে_ এটা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই। কারণ, অনেকেই তা করেছে বেপরোয়া মনোভাব নিয়ে। যেসব কারণে অনিয়ম ঘটতে পেরেছে তা দূর করতে না পারলে ভবিষ্যতে একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। এসব দুর্বলতার প্রতি মনোযোগ দেওয়া না হলে এখন যেসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে তা থেকে কাঙ্ক্ষিত ফল মিলবে না। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে অর্থের অপচয়ও ঘটতে পারে। আইসিবি ধসের পরপরই যে বিশেষ তহবিল নিয়ে বাজারে নেমেছিল, তা নিয়ে একটু তদন্ত করলেই পরিস্থিতি সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া যাবে।
স ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম :সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, সিপিডি
এ ক্ষেত্রে সমস্যা কীভাবে দেখা হচ্ছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। বাজারে ভালো শেয়ারের সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে, এটা যদি সমস্যা হয় তাহলে সমাধানের একটি পথ আমরা দেখাতে পারি। আবার সমস্যা যদি হয় অর্থের সংস্থানজনিত, তাহলে আরেকভাবে সমাধান হবে। আবার সমস্যা যদি কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে হয়, তাহলে সেদিকে নজর দিতে হবে। মনে হয় গত বছরে শেয়ারবাজারে ধসের পর থেকে চাহিদা ও জোগানের ক্ষেত্রে ঘাটতিকেই অনেকে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন। সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তার ভিত্তিতে সমাধান দিচ্ছেন এবং তা কার্যকরে কিছু পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে। তারা বলছেন, বাজারে অর্থের জোগান কমে গেছে_ এ কারণে অর্থ সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়ে বাজারকে ফের স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাজার সংশ্লিষ্টদের বৈঠকেও এ পথেই সমাধান খোঁজার চেষ্টা হয়েছে বলে ধারণা করা যায়। সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশন এ পর্যন্ত যেসব নির্দেশনা দিয়েছে তাতেও ফোকাসে রয়েছে এসব সমস্যা_ অর্থে সরবরাহ বাড়াতে হবে। স্মরণ থাকতে পারে যে, এক বছরেরও কিছু আগে বাজারে ধস নামার পরপরই আইসিবি ৫০০-৬০০ কোটি টাকার তহবিলের ঘোষণা দেয়। কিছু দিন পর শোনা গেল, ৫ হাজার কোটি টাকার বাংলাদেশ ফান্ডের কথা। এ জন্য কয়েকশ' কোটি টাকা তোলা হয়ে গেছে বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়।
বাজারে অর্থ সরবরাহ বাড়ানোর জন্য অপ্রদর্শিত আয় বা কালো টাকা বিনিয়োগেরও সুযোগ করে দেওয়া হয়। সেকেন্ডারি বাজারে লেনদেনের জন্য কর মওকুফের ঘোষণা আসে এ সময়ে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এ জন্য দেওয়া হয় বিশেষ সুবিধা।
এসব পদক্ষেপের কিছু কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে, আরও কিছু হওয়ার পথে। কিন্তু বাজার চাঙ্গা হচ্ছে না। বরং সীমিতভাবে নতুন করে যারা বাজারে যুক্ত হয়েছিলেন, তাদেরও একটি অংশ গত এক বছরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
কেন বাজার স্বাভাবিক হচ্ছে না, এর কারণ খুঁজতে গেলে দেখা যাবে যে, চাহিদা ও সরবরাহে ঘাটতিই বাজারের মূল সমস্যা নয়। কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতা, মনিটরিং সমস্যা, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ_ এসবের প্রতি মনোযোগ না দিলে শেয়ারবাজার স্বাভাবিক হবে না। সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনে কর্মী বেড়েছে। কিন্তু দক্ষতা বাড়ানোর জন্য তাদের আরও অনেক কিছু করার রয়েছে। তাদের অডিট ও আইন সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ নিয়োগদান জরুরি হয়ে পড়েছে। অত্যাধুনিক মনিটরিং সফটওয়্যার চালুর সুপারিশ রয়েছে অনেক দিন থেকেই। কেন তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না? ইনসাইড ট্রেডিং বন্ধ করার প্রস্তাবিত আইনও কেনই-বা হিমাগারে? ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা বোর্ডকে ব্রোকারদের প্রভাবমুক্ত রাখার পদক্ষেপও কেন নেওয়া হচ্ছে না? আরেকটি পদক্ষেপ প্রত্যাশিত ছিল_ অডিট কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা। বিনিয়োগকারীরা তাদের প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নেয়। এতে ব্যবসায় সম্পর্কে যদি ভুল তথ্য থাকে, যদি বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করে ফাঁদে ফেলার মতো প্রতিবেদন তৈরি করা হয়_ সে জন্য মাস্তির ব্যবস্থা থাকা চাই। কিন্তু এ পথে চলায় কোনো অগ্রগতি নেই।
এখন পর্যন্ত যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা কেবল ক্ষুদ্র ও বিনিয়োগকারীদের জন্য কিছু সুবিধা প্রদান। কিন্তু করপোরেট সুশাসনের জন্য আইন প্রণয়ন মোটেই গুরুত্ব পাচ্ছে না। এর ফলে বাজারে কোনো ইতিবাচক লক্ষণ নেই। মাঝে মধ্যে বাজার অজ্ঞাত কারণে চাঙ্গা হয়, কিন্তু স্থায়ী হয় না।
সাম্প্রতিক শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির হোতাদের লেনদেন ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে বিস্তারিত তদন্তের কথা বলা হয়েছিল তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা দেখছি, সীমিত কয়েকটি মামলা এবং তাতে বিনিয়োগকারীরা আশ্বস্তবোধ করতে পারছে না। বাজারে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে_ এটা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই। কারণ, অনেকেই তা করেছে বেপরোয়া মনোভাব নিয়ে। যেসব কারণে অনিয়ম ঘটতে পেরেছে তা দূর করতে না পারলে ভবিষ্যতে একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। এসব দুর্বলতার প্রতি মনোযোগ দেওয়া না হলে এখন যেসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে তা থেকে কাঙ্ক্ষিত ফল মিলবে না। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে অর্থের অপচয়ও ঘটতে পারে। আইসিবি ধসের পরপরই যে বিশেষ তহবিল নিয়ে বাজারে নেমেছিল, তা নিয়ে একটু তদন্ত করলেই পরিস্থিতি সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া যাবে।
স ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম :সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, সিপিডি
No comments