জনপ্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্রের বিকল্প নেই-এরশাদের সামরিক শাসন
১৯৮২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৮৬ সালের ১১ নভেম্বর পর্যন্ত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জনগণ একজন সেনাপ্রধান দ্বারা যে ব্যবস্থায় শাসিত হয়েছে, তা যে অবৈধ ছিল এ নিয়ে জনগণের মনে কোনো সন্দেহ ছিল না। সংবিধানের সপ্তম সংশোধনীর মাধ্যমে এরশাদের সেই সামরিক শাসনকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বটে, কিন্তু রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ
আদালতে তা নাকচ হয়ে গেছে। গত রোববার আপিল বিভাগ সাবেক সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সামরিক শাসনকে বৈধতাদানকারী সংবিধানের সপ্তম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় সমুন্নত রেখেছেন। এর মধ্য দিয়ে এই বার্তা সবার কাছে পৌঁছে যাওয়া উচিত যে, সাংবিধানিক বিধিবিধানের ব্যত্যয় ঘটিয়ে বলপূর্বক ক্ষমতা দখল কোনো অজুহাতেই উচিত নয়।
সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন, তাতে বলা হয়েছে, সামরিক শাসন জারির জন্য হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ করেছেন। এ জন্য তাঁর বিচার হওয়া উচিত। ভবিষ্যতে কেউ যাতে সামরিক শাসন জারির চেষ্টা না করেন, সে জন্য অতীতে যাঁরা সামরিক শাসন জারি করেছিলেন, তাঁদেরও বিচার হওয়া আবশ্যক। রোববার আপিল বিভাগের দেওয়া সংক্ষিপ্ত রায়ে অবশ্য এরশাদের বিচার প্রসঙ্গে কিছু বলা হয়নি। তবে আশা করা যায়, পূর্ণাঙ্গ রায়ে হাইকোর্টের বক্তব্যের অনুরূপ বক্তব্যই থাকবে। এরশাদের সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে সে সময় অসংখ্য মানুষ অন্যায়-অবিচারের শিকার হয়েছেন; ছাত্র, শ্রমিক, পেশাজীবীদের অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন, অনেকে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারিয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন। তাই তাঁর শাসন অবৈধ ছিল—আদালত কর্তৃক এই ঘোষণাই যথেষ্ট নয়। ভুক্তভোগীরা আইনি প্রতিকার আশা করেন এবং রাষ্ট্রের উচিত, সে প্রতিকারের উদ্যোগ নেওয়া।
সামরিক শাসন কখনোই সাংবিধানিকভাবে অনুমোদিত ব্যবস্থা নয়; সেনাশাসকেরা সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছেন, তারপর সংবিধান সংশোধন করে তাঁদের অবৈধ শাসনকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু জনগণ কখনো সেসব বৈধতা মনেপ্রাণে মেনে নেয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা এবং বিরোধ-বৈরিতার সুযোগ নিয়ে সামরিক স্বৈরশাসকেরা ক্ষমতা দখল করেছেন। ভবিষ্যতে সামরিক শাসনসহ যেকোনো ধরনের অসাংবিধানিক পদক্ষেপকে রোধ করতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর মতৈক্য ও সহিষ্ণুতা। আদর্শ বা মতপথ যাই হোক না কেন, সাংবিধানিক পন্থার বাইরে কোনো কিছুই ঘটতে দেওয়া যাবে না—রাজনৈতিক দলগুলোর এই অনড় দৃষ্টিভঙ্গিই কেবল ভবিষ্যতের সামরিক শাসন ঠেকাতে পারে। সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থ যদি জনস্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান পায় এবং দলীয় স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যেই যদি তারা পরস্পরকে ঘায়েল করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়, তাহলে যে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়, তার ফলে অসাংবিধানিক শক্তির ক্ষমতা জবরদখলের পথ খুলে যায়। আমরা আশা করি, এই বাস্তবতা রাজনৈতিক নেতারা উপলব্ধি করেছেন, জনপ্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিকব্যবস্থাকে নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে তাঁরা গণতান্ত্রিক বহুত্ববাদের অনুশীলন করবেন। বাংলাদেশ আর কখনো অসাংবিধানিক শাসনের শিকার হবে না।
সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন, তাতে বলা হয়েছে, সামরিক শাসন জারির জন্য হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ করেছেন। এ জন্য তাঁর বিচার হওয়া উচিত। ভবিষ্যতে কেউ যাতে সামরিক শাসন জারির চেষ্টা না করেন, সে জন্য অতীতে যাঁরা সামরিক শাসন জারি করেছিলেন, তাঁদেরও বিচার হওয়া আবশ্যক। রোববার আপিল বিভাগের দেওয়া সংক্ষিপ্ত রায়ে অবশ্য এরশাদের বিচার প্রসঙ্গে কিছু বলা হয়নি। তবে আশা করা যায়, পূর্ণাঙ্গ রায়ে হাইকোর্টের বক্তব্যের অনুরূপ বক্তব্যই থাকবে। এরশাদের সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে সে সময় অসংখ্য মানুষ অন্যায়-অবিচারের শিকার হয়েছেন; ছাত্র, শ্রমিক, পেশাজীবীদের অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন, অনেকে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারিয়ে চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন। তাই তাঁর শাসন অবৈধ ছিল—আদালত কর্তৃক এই ঘোষণাই যথেষ্ট নয়। ভুক্তভোগীরা আইনি প্রতিকার আশা করেন এবং রাষ্ট্রের উচিত, সে প্রতিকারের উদ্যোগ নেওয়া।
সামরিক শাসন কখনোই সাংবিধানিকভাবে অনুমোদিত ব্যবস্থা নয়; সেনাশাসকেরা সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছেন, তারপর সংবিধান সংশোধন করে তাঁদের অবৈধ শাসনকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু জনগণ কখনো সেসব বৈধতা মনেপ্রাণে মেনে নেয়নি। রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা এবং বিরোধ-বৈরিতার সুযোগ নিয়ে সামরিক স্বৈরশাসকেরা ক্ষমতা দখল করেছেন। ভবিষ্যতে সামরিক শাসনসহ যেকোনো ধরনের অসাংবিধানিক পদক্ষেপকে রোধ করতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর মতৈক্য ও সহিষ্ণুতা। আদর্শ বা মতপথ যাই হোক না কেন, সাংবিধানিক পন্থার বাইরে কোনো কিছুই ঘটতে দেওয়া যাবে না—রাজনৈতিক দলগুলোর এই অনড় দৃষ্টিভঙ্গিই কেবল ভবিষ্যতের সামরিক শাসন ঠেকাতে পারে। সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থ যদি জনস্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান পায় এবং দলীয় স্বার্থ হাসিলের লক্ষ্যেই যদি তারা পরস্পরকে ঘায়েল করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়, তাহলে যে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়, তার ফলে অসাংবিধানিক শক্তির ক্ষমতা জবরদখলের পথ খুলে যায়। আমরা আশা করি, এই বাস্তবতা রাজনৈতিক নেতারা উপলব্ধি করেছেন, জনপ্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিকব্যবস্থাকে নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে তাঁরা গণতান্ত্রিক বহুত্ববাদের অনুশীলন করবেন। বাংলাদেশ আর কখনো অসাংবিধানিক শাসনের শিকার হবে না।
No comments