রাজনীতি-বাধা পেয়েও ঢাকায় এলো, অতঃপর? by এম আবদুল হাফিজ
যে কোনো দল যখন রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়াপ্রাপ্ত হয় এবং রাজনীতিতে তাদের ইতিবাচক কিছুই দেওয়ার থাকে না, তখন এমনই রাজনৈতিক আচরণে তারা লিপ্ত হয়_ যেমনটা ২০০১-০৭ পর্যন্ত চারদলীয় জোটের অবস্থা ছিল। ২০০৯ থেকে অদ্যাবধি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আচরণও ওই চারদলীয় জোটের কার্যকলাপেরই পুনরাবৃত্তি
স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগই প্রথম গণতন্ত্রকে শূলবিদ্ধ করেছিল এবং এ জন্য দলটি মূল্যও কম দেয়নি। দীর্ঘদিন দলটিকে মূলত এই কারণেই রাজনৈতিক নির্বাসনে কাল কাটাতে হয়েছিল। অনেক কাঠখড় আওয়ামী লীগকে পোড়াতে হয়েছে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে যে তারা বহুদলীয় গণতন্ত্রেই বিশ্বাসী। বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসার কারণেই সম্ভবত একুশ বছরের চড়াই-উতরাই অতিক্রম করার পর জনগণ একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে তাদের পুনর্বাসনের সুযোগ করে দিয়েছিল। সেই আওয়ামী লীগ যে আবার সেই গণতন্ত্রের মৌলিক রীতিনীতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ প্রদর্শন করে গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরবে যেমনটি আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের একটি তুচ্ছ গতানুগতিক কর্মসূচিকে বানচাল করতে প্রবৃত্ত হয়েছে_ 'ঘর পোড়া গরু' এই দলটির কাছ থেকে তা দেশবাসী আশা করেনি। এ জন্যই করেনি, এই আওয়ামী লীগ তো মাত্র ৭-৮ বছর আগে এ দেশকে কী করে গণতান্ত্রিক অধিকার রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আদায় করতে হয় তা শিখিয়েছিল।
তাহলে ব্যাপারটি কী দাঁড়াল? আওয়ামী লীগের জন্য সবকিছু হালাল এবং তা বিরোধী দল করতে গেলেই জঙ্গিবাদ বা যুদ্ধাপরাধ বিচার ঠেকানোর কারসাজি? এ কেমন উদ্ভট যুক্তি? ক্ষমতার দম্ভে আওয়ামী লীগ হয়তো এখনই বুঝবে না যে এতে দলটি তাদেরই রাজনৈতিক পরিসরের (চড়ষরঃরপধষ ঝঢ়ধপব) খানিকটা হারিয়েছে এবং সেই পরিমাণ রাজনৈতিক মাইলেজ (চড়ষরঃরপধষ সরষবধমব) অর্জন করেছে বিরোধী দল। আমি চারদলীয় জোটের আমলে আওয়ামী লীগের এক্টিভিস্টদের চোখে রাজপথের প্রতিরোধ আন্দোলনে যে স্ফুলিঙ্গ দেখতাম, তা এখন বিএনপি কর্মীদের চোখে-মুখে প্রদীপ্ত। আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতাদের কণ্ঠে তর্জন-গর্জন থাকলেও তা কবি এলিয়ট বর্ণিত নাকি কান্নার (যিরসঢ়বৎ) মতো।
শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সবিনয়ে নিবেদন করি যে, এ দেশের মানুষ যথেষ্টই সাবালক এবং তাদের বিচার-বুদ্ধিও পরিপকস্ফ। তারা জানে, কোন যুক্তিটি গ্রহণীয় এবং কোনটি পরিত্যাজ্য। উভয় শীর্ষ নেত্রীর কাছেই নিবেদন, বিচার-বিবেচনার ভার কিছুটা জনগণের হাতেই ছেড়ে দিন। শুধু শূন্যগর্ভ বক্তৃতায় তাদের নিয়ে এই বলে টানা-হেঁচড়া করবেন না যে আপনারা নিজ নিজ স্থান থেকে যা করছেন তার সবকিছুই শুধু জনগণের খাতিরে এবং তাদের কল্যাণেই নিবেদিত। সরকারের ঘুম হারাম এ জন্য যে, মহাসমাবেশে জনগণের নিরাপত্তার কী হবে। এ জন্য হাজার হাজার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য জড়ো করা হয়েছিল রাজধানীতে। অথচ এই সরকারই সাগর-রুনির নিরাপত্তার পরিবেশ দিতে পারেনি। বিদেশি কূটনীতিকের হত্যার কোনো ক্লু বের করতে এখনও পারেনি। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা তো সরকারের কাছে কোনো ধর্তব্যের বিষয়ই নেই। বিরোধীদলীয় নেত্রীকেও সবিনয়ে বলতে চাই যে, তিনি কোনো ধোয়া তুলসী পাতা নন। তার শাসনামলেও রাজধানীর পথে একাধিক করুক্ষেত্র হয়েছে। তার আমলেও হত্যা, গুম, অপহরণ, ছিনতাই, নির্যাতন ইত্যাদি কোনো অজ্ঞাত বিষয় ছিল না।
তবে হ্যাঁ, তখন আওয়ামী লীগের যে আন্দোলন-সংগ্রামের অধিকার ছিল, এখন বিরোধী দলেরও অবশ্য তেমনই অধিকার থাকার কথা। আমার বোধগম্য নয় যে, আওয়ামী লীগ কেন বিএনপি নেত্বত্বাধীন চারদলীয় জোটের কর্মসূচি নিয়ে তিলকে তাল বানাচ্ছে। আমি নিশ্চিত যে, নির্বিঘ্নে বিএনপির পূর্ব ঘোষিত এই কর্মসূচি কোনো তরঙ্গ সৃষ্টি ব্যতিরেকেই শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হতো। আওয়ামী লীগ তো একটি প্রচণ্ড আতঙ্কের আবহ সৃষ্টি করে বিরোধী দলের গুরুত্ব অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।
যে কোনো দল যখন রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়াপ্রাপ্ত হয় এবং রাজনীতিতে তাদের ইতিবাচক কিছুই দেওয়ার থাকে না, তখন এমনই রাজনৈতিক আচরণে তারা লিপ্ত হয়_ যেমনটা ২০০১-০৭ পর্যন্ত চারদলীয় জোটের অবস্থা ছিল। ২০০৯ থেকে অদ্যাবধি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আচরণও ওই চারদলীয় জোটের কার্যকলাপেরই পুনরাবৃত্তি। জানি না ভবিষ্যতে আবার যে-ই দল ক্ষমতাসীন হোক তারাও পূর্ববর্তীদের ট্রাডিশন অনুসরণেই চলবে।
এ দেশের বড় মাপের নেতৃত্ব এ দেশকে দীর্ঘ সংগ্রামের পথ ধরে (যা শুধু '৫২ সাল থেকে একাত্তরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়) অস্তিত্বে এনেছিল। আমাদের এ প্রজন্মে আমাদের মতো অদূরদর্শী, প্রজ্ঞাবর্জিত ও ইতিহাসবিমুখ লোকেরা এর নেতৃত্বে এসেছি। সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু, ভাসানী বা ফজলুল হকের বিশাল হৃদয় এখানে ক্রিয়াশীল নয়। তাই কিছু সংলাপ-সমঝোতাপাগল বিদগ্ধজন দুই নেত্রীকে বারবার মুখোমুখি হওয়ার যে তাগিদ দেন, তারা জানেন না সে জন্যও উভয়ের মধ্যে এক প্রকার রসায়নের (ঈযবসরংঃৎু) প্রয়োজন, তা তাদের মধ্যে নেই বিধায় অতীতে তা সফল হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না।
যদিও পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টিতে দুই দলের প্রতিই জনসমর্থন এখন ৫০:৫০ কিন্তু তারপরেও ওসঢ়ড়হফবৎধনষব অনেক কিছুই থেকে যায়। আওয়ামী লীগ স্বভাবতই এখন সেই ওসঢ়ড়হফবৎধনষব (অনিশ্চিত-অদৃশ্য) গুলোকেই প্রভাবান্বিত করায় সচেষ্ট। সেই প্রক্রিয়ায় ক্ষমতাসীনরা হয়তো আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে এবং ক্ষমতার পুনর্দখলে বা প্রলম্বকে ফন্দি-ফিকিরে লিপ্ত হবে, যেমনটি চারদলীয় জোটে হয়েছিল। ক্ষমতা একটি ঃড়ীরপ নৎব িযার প্রভাব মুক্ত রাজনীতি এ দেশে কেন, সারাবিশ্বেই এখন বিরল।
ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম আবদুল হাফিজ মহাপরিচালক, বিআইআইএসএস ও
কলাম লেখক
তাহলে ব্যাপারটি কী দাঁড়াল? আওয়ামী লীগের জন্য সবকিছু হালাল এবং তা বিরোধী দল করতে গেলেই জঙ্গিবাদ বা যুদ্ধাপরাধ বিচার ঠেকানোর কারসাজি? এ কেমন উদ্ভট যুক্তি? ক্ষমতার দম্ভে আওয়ামী লীগ হয়তো এখনই বুঝবে না যে এতে দলটি তাদেরই রাজনৈতিক পরিসরের (চড়ষরঃরপধষ ঝঢ়ধপব) খানিকটা হারিয়েছে এবং সেই পরিমাণ রাজনৈতিক মাইলেজ (চড়ষরঃরপধষ সরষবধমব) অর্জন করেছে বিরোধী দল। আমি চারদলীয় জোটের আমলে আওয়ামী লীগের এক্টিভিস্টদের চোখে রাজপথের প্রতিরোধ আন্দোলনে যে স্ফুলিঙ্গ দেখতাম, তা এখন বিএনপি কর্মীদের চোখে-মুখে প্রদীপ্ত। আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতাদের কণ্ঠে তর্জন-গর্জন থাকলেও তা কবি এলিয়ট বর্ণিত নাকি কান্নার (যিরসঢ়বৎ) মতো।
শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সবিনয়ে নিবেদন করি যে, এ দেশের মানুষ যথেষ্টই সাবালক এবং তাদের বিচার-বুদ্ধিও পরিপকস্ফ। তারা জানে, কোন যুক্তিটি গ্রহণীয় এবং কোনটি পরিত্যাজ্য। উভয় শীর্ষ নেত্রীর কাছেই নিবেদন, বিচার-বিবেচনার ভার কিছুটা জনগণের হাতেই ছেড়ে দিন। শুধু শূন্যগর্ভ বক্তৃতায় তাদের নিয়ে এই বলে টানা-হেঁচড়া করবেন না যে আপনারা নিজ নিজ স্থান থেকে যা করছেন তার সবকিছুই শুধু জনগণের খাতিরে এবং তাদের কল্যাণেই নিবেদিত। সরকারের ঘুম হারাম এ জন্য যে, মহাসমাবেশে জনগণের নিরাপত্তার কী হবে। এ জন্য হাজার হাজার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য জড়ো করা হয়েছিল রাজধানীতে। অথচ এই সরকারই সাগর-রুনির নিরাপত্তার পরিবেশ দিতে পারেনি। বিদেশি কূটনীতিকের হত্যার কোনো ক্লু বের করতে এখনও পারেনি। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা তো সরকারের কাছে কোনো ধর্তব্যের বিষয়ই নেই। বিরোধীদলীয় নেত্রীকেও সবিনয়ে বলতে চাই যে, তিনি কোনো ধোয়া তুলসী পাতা নন। তার শাসনামলেও রাজধানীর পথে একাধিক করুক্ষেত্র হয়েছে। তার আমলেও হত্যা, গুম, অপহরণ, ছিনতাই, নির্যাতন ইত্যাদি কোনো অজ্ঞাত বিষয় ছিল না।
তবে হ্যাঁ, তখন আওয়ামী লীগের যে আন্দোলন-সংগ্রামের অধিকার ছিল, এখন বিরোধী দলেরও অবশ্য তেমনই অধিকার থাকার কথা। আমার বোধগম্য নয় যে, আওয়ামী লীগ কেন বিএনপি নেত্বত্বাধীন চারদলীয় জোটের কর্মসূচি নিয়ে তিলকে তাল বানাচ্ছে। আমি নিশ্চিত যে, নির্বিঘ্নে বিএনপির পূর্ব ঘোষিত এই কর্মসূচি কোনো তরঙ্গ সৃষ্টি ব্যতিরেকেই শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হতো। আওয়ামী লীগ তো একটি প্রচণ্ড আতঙ্কের আবহ সৃষ্টি করে বিরোধী দলের গুরুত্ব অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে।
যে কোনো দল যখন রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়াপ্রাপ্ত হয় এবং রাজনীতিতে তাদের ইতিবাচক কিছুই দেওয়ার থাকে না, তখন এমনই রাজনৈতিক আচরণে তারা লিপ্ত হয়_ যেমনটা ২০০১-০৭ পর্যন্ত চারদলীয় জোটের অবস্থা ছিল। ২০০৯ থেকে অদ্যাবধি আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক আচরণও ওই চারদলীয় জোটের কার্যকলাপেরই পুনরাবৃত্তি। জানি না ভবিষ্যতে আবার যে-ই দল ক্ষমতাসীন হোক তারাও পূর্ববর্তীদের ট্রাডিশন অনুসরণেই চলবে।
এ দেশের বড় মাপের নেতৃত্ব এ দেশকে দীর্ঘ সংগ্রামের পথ ধরে (যা শুধু '৫২ সাল থেকে একাত্তরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়) অস্তিত্বে এনেছিল। আমাদের এ প্রজন্মে আমাদের মতো অদূরদর্শী, প্রজ্ঞাবর্জিত ও ইতিহাসবিমুখ লোকেরা এর নেতৃত্বে এসেছি। সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু, ভাসানী বা ফজলুল হকের বিশাল হৃদয় এখানে ক্রিয়াশীল নয়। তাই কিছু সংলাপ-সমঝোতাপাগল বিদগ্ধজন দুই নেত্রীকে বারবার মুখোমুখি হওয়ার যে তাগিদ দেন, তারা জানেন না সে জন্যও উভয়ের মধ্যে এক প্রকার রসায়নের (ঈযবসরংঃৎু) প্রয়োজন, তা তাদের মধ্যে নেই বিধায় অতীতে তা সফল হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না।
যদিও পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টিতে দুই দলের প্রতিই জনসমর্থন এখন ৫০:৫০ কিন্তু তারপরেও ওসঢ়ড়হফবৎধনষব অনেক কিছুই থেকে যায়। আওয়ামী লীগ স্বভাবতই এখন সেই ওসঢ়ড়হফবৎধনষব (অনিশ্চিত-অদৃশ্য) গুলোকেই প্রভাবান্বিত করায় সচেষ্ট। সেই প্রক্রিয়ায় ক্ষমতাসীনরা হয়তো আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে এবং ক্ষমতার পুনর্দখলে বা প্রলম্বকে ফন্দি-ফিকিরে লিপ্ত হবে, যেমনটি চারদলীয় জোটে হয়েছিল। ক্ষমতা একটি ঃড়ীরপ নৎব িযার প্রভাব মুক্ত রাজনীতি এ দেশে কেন, সারাবিশ্বেই এখন বিরল।
ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম আবদুল হাফিজ মহাপরিচালক, বিআইআইএসএস ও
কলাম লেখক
No comments