বিশেষ সাক্ষাৎকার: মাহবুবুর রহমান ও হারুন-অর-রশিদ-র্যাব থেকে সেনাসদস্যদের সরিয়ে নেওয়া উচিত by হারুন-অর-রশিদ
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ভেঙে দেওয়ার কথা বলেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক দুই সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান ও লে. জেনারেল (অব.) হারুন-অর-রশিদের সাক্ষাৎকার ছাপা হলো।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: মশিউল আলম ও ফারুক ওয়াসিফ
প্রথম আলো অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের হিসাবে র্যাব এ পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে প্রায় ৬০০। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ র্যাবকে ‘খুনে বাহিনী’ আখ্যা দিয়ে এর ব্যাপক সংস্কারের দাবি তুলেছে। আপনার মন্তব্য?
হারুন-অর-রশিদ আমরা যদি নিজেদের সভ্য জাতি হিসেবে পরিচয় দিতে চাই, তাহলে বিচারবহির্ভূত যেকোনো হত্যাকাণ্ডই অবৈধ। কেউ যত বড় অপরাধীই হোক না কেন, র্যাব হোক বা পুলিশ হোক—কোনো বাহিনীর তাকে হত্যা করার অধিকার নেই। তবে কেউ যদি তাদের ওপর আক্রমণ চালায়, আত্মরক্ষার জন্য তারা গুলি চালাতে পারে। কিন্তু গুলি এমনভাবে ছুড়তে হবে যেন আক্রমণকারী আহত হয়, তাকে একদম মেরে ফেলা যাবে না। র্যাব এনকাউন্টারের কথা বলে, কিন্তু এনকাউন্টারে দুই পক্ষে গোলাগুলি হয়। এক পক্ষের গুলিতে শুধু একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তি মারা যাবে, আর কেউ হতাহত হবে না—এটাতে বোঝা যায় যে র্যাব যেভাবে এই প্রাণহানির ঘটনাগুলো বর্ণনা করতে চায়, সেটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। ‘ক্রসফায়ার’ বা ‘এনকাউন্টার’ সেই কারণে মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। তাই এগুলোকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বলা হয়।
প্রথম আলো র্যাব গঠন করা হয়েছে পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে। তারা একসঙ্গে মিলে সন্ত্রাস দমন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করে। সামরিক বাহিনীর সদস্যদের কি দৈনন্দিন ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োগ করা উচিত?
হারুন-অর-রশিদ না। এই সিদ্ধান্তকে আমি যুক্তিযুক্ত মনে করি না। কারণ, সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনা ও মানসিক গঠন (ট্রেনিং, মোটিভেশন, সাইকোলজিক্যাল বিল্ডআপ) সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। তাঁরা অস্ত্র চালনায় অত্যন্ত পারঙ্গম। তাঁদের শেখানো হয় শ্যুট টু কিল: হত্যা করার জন্যই গুলি করা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ সে রকমের নয়। তাঁদের শেখানো হয় শ্যুট টু ইনজিউর, হত্যা করার উদ্দেশ্যে গুলি করা নয়, আহত করা (প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে)। এই দুয়ের মধ্যে তো পার্থক্য আছে। এখন আমরা যা দেখতে পাচ্ছি, র্যাব সদস্যদের হাতে প্রচুরসংখ্যক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ থেকে মনে হয়, সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনা ও মানসিক গঠনের প্রতিফলন রয়েছে। আমি এটাকে সমর্থন করতে পারি না। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব পুলিশ বাহিনীর। পুলিশকে শক্তিশালী করতে হবে।
প্রথম আলো কিন্তু পুলিশ বাহিনীকে দিয়ে সন্ত্রাস দমন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ প্রত্যাশিত মাত্রায় হচ্ছে না! সে জন্যই তো র্যাব গঠনের প্রয়োজন হয়েছে বলে বলা হয়।
হারুন-অর-রশিদ পুলিশের জন্য যত রকমের আধুনিক ও উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন, তা দিতে হবে। তাদের অস্ত্র, যানবাহন, যত রকমের সরঞ্জাম প্রয়োজন, সেসব দিতে হবে। তাদের প্রণোদনামূলক যত কাজ আছে, তা করতে হবে। জানতে হবে, পুলিশ কেন সন্ত্রাস দমন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সফল হচ্ছে না। তাদের প্রশিক্ষণের অভাব আছে, প্রণোদনার অভাব আছে। এগুলো দূর করতে হবে। পুলিশ বিভাগকে সংস্কার করে এই বাহিনীকে শক্তিশালী করতে হবে। দেখুন, র্যাব যখন একটা ঘটনা ঘটায়, তখন আইনি কার্যকলাপ করার জন্য দায়িত্বটা পুলিশকে দিয়ে দেওয়া হয়। এটা না করে একটি শক্তিশালী রিজার্ভ পুলিশ বাহিনী গঠন করা উচিত, যারা সাধারণ পুলিশকে বিশেষ সহায়তা দেবে এবং দায়দায়িত্ব সব পুলিশ বাহিনীর ওপরই থাকবে, তাহলে জবাবদিহি নিশ্চিত করা সম্ভব।
প্রথম আলো আপনি কি তাহলে র্যাব থেকে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন?
হারুন-অর-রশিদ দেখুন, পুলিশ বাহিনীকে সাংবিধানিকভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জাতির আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার। এই বাহিনীর কাঠামোর মধ্যেই যদি শক্তিশালী বিশেষ কিছু টিম গঠন করা হয় এবং তাদের সদস্যদের সেভাবে উন্নত ও আধুনিক প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করা হয়, তাহলে কিন্তু র্যাবের মতো এলিট ফোর্সের প্রয়োজন পড়ে না। এখন র্যাব থাকতে পারে, কিন্তু সেটি হওয়া উচিত পুলিশ বাহিনীরই একটি অংশ, পুলিশের কাঠামোর মধ্যেই, সম্পূর্ণভাবে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে। এই বাহিনীতে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের রাখা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়।
প্রথম আলো পুলিশ চাইলে সন্ত্রাস বা অপরাধ দমন করতে পারে না, এটা সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে না। পুলিশের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ভীষণ কমে গেছে। তা ছাড়া প্রচলিত আইনি ব্যবস্থায় পুলিশকে দিয়ে গুরুতর অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের দমন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে র্যাবের প্রতি সাধারণ মানুষের কিছু সমর্থন লক্ষ করা গেছে। কেউ কেউ বলেন, র্যাব না থাকলে এই দেশে বাস করাই যেত না...।
হারুন-অর-রশিদ দেখুন, এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে রাজনীতি। সন্ত্রাসী, অপরাধীদের রাজনৈতিকভাবে লালন-পালন। যখন একটা সরকার আসে, তখন একদল লোক স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। উপজেলা পর্যায়ে পুলিশ নিজে থেকে কোনো সন্ত্রাসী-অপরাধীর বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করতে পারে না। কারণ, সন্ত্রাসীদের গডফাদাররা তাদের রাজনৈতিক সমর্থন দেয়। এই গডফাদাররা ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা। এই যখন অবস্থা, তখন পুলিশ সন্ত্রাসী-অপরাধীদের দমন করবে কীভাবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজই বা করবে কীভাবে? এ রকম পরিস্থিতিতে র্যাব গঠন করা হয়েছে পরিস্থিতির কিছু উন্নতি ঘটানোর লক্ষ্যে। কিন্তু সেই লক্ষ্যও পূরণ হয়নি; বরং প্রচুর সমালোচনা হয়েছে। তাই আমি মনে করি, সর্বপ্রথমে যেটা দরকার, তা হচ্ছে একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সব দলকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে কোনো সন্ত্রাসী, অপরাধী এবং যাঁরা তাদের লালন-পালন করেন—কেউই কোনো রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পাবেন না। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে থাকবে পারবেন না—এই অবস্থান যদি সবাই রাজনৈতিকভাবে গ্রহণ করতে পারি, তাহলে র্যাব বা কোনো ধরনের বিশেষ বাহিনীর প্রয়োজন পড়বে না; প্রচলিত সাধারণ আইনে, পুলিশ বাহিনীকে দিয়েই সন্ত্রাস ও অপরাধ দমন করা সম্ভব হবে।
প্রথম আলো আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
হারুন-অর-রশিদ ধন্যবাদ।
প্রথম আলো অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের হিসাবে র্যাব এ পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে প্রায় ৬০০। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ র্যাবকে ‘খুনে বাহিনী’ আখ্যা দিয়ে এর ব্যাপক সংস্কারের দাবি তুলেছে। আপনার মন্তব্য?
হারুন-অর-রশিদ আমরা যদি নিজেদের সভ্য জাতি হিসেবে পরিচয় দিতে চাই, তাহলে বিচারবহির্ভূত যেকোনো হত্যাকাণ্ডই অবৈধ। কেউ যত বড় অপরাধীই হোক না কেন, র্যাব হোক বা পুলিশ হোক—কোনো বাহিনীর তাকে হত্যা করার অধিকার নেই। তবে কেউ যদি তাদের ওপর আক্রমণ চালায়, আত্মরক্ষার জন্য তারা গুলি চালাতে পারে। কিন্তু গুলি এমনভাবে ছুড়তে হবে যেন আক্রমণকারী আহত হয়, তাকে একদম মেরে ফেলা যাবে না। র্যাব এনকাউন্টারের কথা বলে, কিন্তু এনকাউন্টারে দুই পক্ষে গোলাগুলি হয়। এক পক্ষের গুলিতে শুধু একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তি মারা যাবে, আর কেউ হতাহত হবে না—এটাতে বোঝা যায় যে র্যাব যেভাবে এই প্রাণহানির ঘটনাগুলো বর্ণনা করতে চায়, সেটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। ‘ক্রসফায়ার’ বা ‘এনকাউন্টার’ সেই কারণে মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। তাই এগুলোকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বলা হয়।
প্রথম আলো র্যাব গঠন করা হয়েছে পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে। তারা একসঙ্গে মিলে সন্ত্রাস দমন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করে। সামরিক বাহিনীর সদস্যদের কি দৈনন্দিন ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োগ করা উচিত?
হারুন-অর-রশিদ না। এই সিদ্ধান্তকে আমি যুক্তিযুক্ত মনে করি না। কারণ, সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনা ও মানসিক গঠন (ট্রেনিং, মোটিভেশন, সাইকোলজিক্যাল বিল্ডআপ) সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। তাঁরা অস্ত্র চালনায় অত্যন্ত পারঙ্গম। তাঁদের শেখানো হয় শ্যুট টু কিল: হত্যা করার জন্যই গুলি করা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ সে রকমের নয়। তাঁদের শেখানো হয় শ্যুট টু ইনজিউর, হত্যা করার উদ্দেশ্যে গুলি করা নয়, আহত করা (প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে)। এই দুয়ের মধ্যে তো পার্থক্য আছে। এখন আমরা যা দেখতে পাচ্ছি, র্যাব সদস্যদের হাতে প্রচুরসংখ্যক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ থেকে মনে হয়, সামরিক বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনা ও মানসিক গঠনের প্রতিফলন রয়েছে। আমি এটাকে সমর্থন করতে পারি না। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার দায়িত্ব পুলিশ বাহিনীর। পুলিশকে শক্তিশালী করতে হবে।
প্রথম আলো কিন্তু পুলিশ বাহিনীকে দিয়ে সন্ত্রাস দমন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ প্রত্যাশিত মাত্রায় হচ্ছে না! সে জন্যই তো র্যাব গঠনের প্রয়োজন হয়েছে বলে বলা হয়।
হারুন-অর-রশিদ পুলিশের জন্য যত রকমের আধুনিক ও উন্নত প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন, তা দিতে হবে। তাদের অস্ত্র, যানবাহন, যত রকমের সরঞ্জাম প্রয়োজন, সেসব দিতে হবে। তাদের প্রণোদনামূলক যত কাজ আছে, তা করতে হবে। জানতে হবে, পুলিশ কেন সন্ত্রাস দমন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সফল হচ্ছে না। তাদের প্রশিক্ষণের অভাব আছে, প্রণোদনার অভাব আছে। এগুলো দূর করতে হবে। পুলিশ বিভাগকে সংস্কার করে এই বাহিনীকে শক্তিশালী করতে হবে। দেখুন, র্যাব যখন একটা ঘটনা ঘটায়, তখন আইনি কার্যকলাপ করার জন্য দায়িত্বটা পুলিশকে দিয়ে দেওয়া হয়। এটা না করে একটি শক্তিশালী রিজার্ভ পুলিশ বাহিনী গঠন করা উচিত, যারা সাধারণ পুলিশকে বিশেষ সহায়তা দেবে এবং দায়দায়িত্ব সব পুলিশ বাহিনীর ওপরই থাকবে, তাহলে জবাবদিহি নিশ্চিত করা সম্ভব।
প্রথম আলো আপনি কি তাহলে র্যাব থেকে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন?
হারুন-অর-রশিদ দেখুন, পুলিশ বাহিনীকে সাংবিধানিকভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জাতির আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার। এই বাহিনীর কাঠামোর মধ্যেই যদি শক্তিশালী বিশেষ কিছু টিম গঠন করা হয় এবং তাদের সদস্যদের সেভাবে উন্নত ও আধুনিক প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করা হয়, তাহলে কিন্তু র্যাবের মতো এলিট ফোর্সের প্রয়োজন পড়ে না। এখন র্যাব থাকতে পারে, কিন্তু সেটি হওয়া উচিত পুলিশ বাহিনীরই একটি অংশ, পুলিশের কাঠামোর মধ্যেই, সম্পূর্ণভাবে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে। এই বাহিনীতে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের রাখা কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়।
প্রথম আলো পুলিশ চাইলে সন্ত্রাস বা অপরাধ দমন করতে পারে না, এটা সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে না। পুলিশের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ভীষণ কমে গেছে। তা ছাড়া প্রচলিত আইনি ব্যবস্থায় পুলিশকে দিয়ে গুরুতর অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের দমন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে র্যাবের প্রতি সাধারণ মানুষের কিছু সমর্থন লক্ষ করা গেছে। কেউ কেউ বলেন, র্যাব না থাকলে এই দেশে বাস করাই যেত না...।
হারুন-অর-রশিদ দেখুন, এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে রাজনীতি। সন্ত্রাসী, অপরাধীদের রাজনৈতিকভাবে লালন-পালন। যখন একটা সরকার আসে, তখন একদল লোক স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। উপজেলা পর্যায়ে পুলিশ নিজে থেকে কোনো সন্ত্রাসী-অপরাধীর বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগ করতে পারে না। কারণ, সন্ত্রাসীদের গডফাদাররা তাদের রাজনৈতিক সমর্থন দেয়। এই গডফাদাররা ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা। এই যখন অবস্থা, তখন পুলিশ সন্ত্রাসী-অপরাধীদের দমন করবে কীভাবে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজই বা করবে কীভাবে? এ রকম পরিস্থিতিতে র্যাব গঠন করা হয়েছে পরিস্থিতির কিছু উন্নতি ঘটানোর লক্ষ্যে। কিন্তু সেই লক্ষ্যও পূরণ হয়নি; বরং প্রচুর সমালোচনা হয়েছে। তাই আমি মনে করি, সর্বপ্রথমে যেটা দরকার, তা হচ্ছে একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সব দলকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে কোনো সন্ত্রাসী, অপরাধী এবং যাঁরা তাদের লালন-পালন করেন—কেউই কোনো রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পাবেন না। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে থাকবে পারবেন না—এই অবস্থান যদি সবাই রাজনৈতিকভাবে গ্রহণ করতে পারি, তাহলে র্যাব বা কোনো ধরনের বিশেষ বাহিনীর প্রয়োজন পড়বে না; প্রচলিত সাধারণ আইনে, পুলিশ বাহিনীকে দিয়েই সন্ত্রাস ও অপরাধ দমন করা সম্ভব হবে।
প্রথম আলো আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
হারুন-অর-রশিদ ধন্যবাদ।
No comments