মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার -ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাই চূড়ান্ত লক্ষ্য
আন্তর্জাতিক অপরাধবিষয়ক ট্রাইব্যুনাল গঠনের চার মাস পর মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের আনুষ্ঠানিক বিচার-প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার খবরটি নিঃসন্দেহে সুখবর। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে এ দেশের নিরস্ত্র, নিরপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার বিচারের দাবিতে দেশজুড়ে প্রবল জনমতের প্রেক্ষাপটে ট্রাইব্যুনালের এই কর্মতৎপরতা এমন প্রতীতি সৃষ্টি করবে যে শেষ পর্যন্ত অপরাধীদের বিচার হচ্ছে, তাঁদের শাস্তির মাধ্যমে অনেক দেরিতে হলেও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পেতে যাচ্ছে।
তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত সোমবার প্রথমবারের মতো শুনানি করেন। ট্রাইব্যুনাল মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করার অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আরেক নেতা আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে। এই আসামিরা অন্য কয়েকটি মামলায় এখন কারাগারে আটক রয়েছেন, তাঁদের মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার করার জন্য ট্রাইব্যুনাল ২ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন এবং ওই সময়ের মধ্যে এ আদেশ কার্যকর হয়েছে কি না তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এই আসামিরা দেশের একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা। জামায়াতে ইসলামী নামের সেই দলটি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম-প্রক্রিয়াকে ব্যর্থ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু দলটির এই রাজনৈতিক অবস্থানের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো, তার নেতা-কর্মীদের দ্বারা খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও নির্যাতনসহ এমন কিছু অপরাধ সংঘটন, যা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনে বিচারযোগ্য। কিন্তু স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৩৯ বছরেও সেই বিচার সংঘটিত হয়নি; তার কারণ ছিল রাজনৈতিক এবং বলা বাহুল্য, সে রাজনীতি আইনের শাসনকে অস্বীকার করেছে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকারীদের সুরক্ষা দিয়েছে। তবে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এমনই এক অপরাধ, যা বিচারের সময়সীমা কখনো শেষ হয়ে যায় না। অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের পর আজ যখন সেই অপরাধীদের বিচার-প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো, তখন আমাদের মনে রাখা ভালো যে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাই এ বিচার-প্রক্রিয়ার লক্ষ্য। বাংলাদেশ সেই অন্যায় রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে, এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আইনের শাসনকেই যথার্থ পন্থা হিসেবে গ্রহণ করেছে।
জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে এই বিচার-প্রক্রিয়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা, ট্রাইব্যুনালের বিচার-প্রক্রিয়া সম্পাদনের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হবে যে জামায়াতের এ অভিযোগ ভিত্তিহীন, এখানে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। বিচার-প্রক্রিয়ার আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করা, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সর্বাধিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে বিচারকে সর্বমহলে প্রশ্নাতীতভাবে গ্রহণযোগ্য করার দায়িত্ব বর্তেছে রাষ্ট্রপক্ষ, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন শাখার ওপর। ১৯৭১ সালের নয় মাসজুড়ে উল্লিখিত আসামিদের মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কার্যকলাপের অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর এখনো জীবিত থাকার কথা। সাক্ষ্য দিয়ে তদন্ত সংস্থা প্রসিকিউশন শাখাকে সহযোগিতা করতে তাঁদেরও এগিয়ে আসা উচিত।
আমরা আশা করি, আইনের শাসনের প্রতি সর্বোচ্চ অঙ্গীকার নিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার-প্রক্রিয়াকে সর্বাধিক দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে এগিয়ে নেওয়া হবে।
তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত সোমবার প্রথমবারের মতো শুনানি করেন। ট্রাইব্যুনাল মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করার অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আরেক নেতা আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে। এই আসামিরা অন্য কয়েকটি মামলায় এখন কারাগারে আটক রয়েছেন, তাঁদের মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার করার জন্য ট্রাইব্যুনাল ২ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন এবং ওই সময়ের মধ্যে এ আদেশ কার্যকর হয়েছে কি না তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এই আসামিরা দেশের একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা। জামায়াতে ইসলামী নামের সেই দলটি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম-প্রক্রিয়াকে ব্যর্থ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু দলটির এই রাজনৈতিক অবস্থানের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো, তার নেতা-কর্মীদের দ্বারা খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও নির্যাতনসহ এমন কিছু অপরাধ সংঘটন, যা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনে বিচারযোগ্য। কিন্তু স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৩৯ বছরেও সেই বিচার সংঘটিত হয়নি; তার কারণ ছিল রাজনৈতিক এবং বলা বাহুল্য, সে রাজনীতি আইনের শাসনকে অস্বীকার করেছে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকারীদের সুরক্ষা দিয়েছে। তবে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এমনই এক অপরাধ, যা বিচারের সময়সীমা কখনো শেষ হয়ে যায় না। অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের পর আজ যখন সেই অপরাধীদের বিচার-প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো, তখন আমাদের মনে রাখা ভালো যে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাই এ বিচার-প্রক্রিয়ার লক্ষ্য। বাংলাদেশ সেই অন্যায় রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে, এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আইনের শাসনকেই যথার্থ পন্থা হিসেবে গ্রহণ করেছে।
জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে এই বিচার-প্রক্রিয়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা, ট্রাইব্যুনালের বিচার-প্রক্রিয়া সম্পাদনের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হবে যে জামায়াতের এ অভিযোগ ভিত্তিহীন, এখানে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই। বিচার-প্রক্রিয়ার আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করা, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সর্বাধিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে বিচারকে সর্বমহলে প্রশ্নাতীতভাবে গ্রহণযোগ্য করার দায়িত্ব বর্তেছে রাষ্ট্রপক্ষ, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন শাখার ওপর। ১৯৭১ সালের নয় মাসজুড়ে উল্লিখিত আসামিদের মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কার্যকলাপের অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর এখনো জীবিত থাকার কথা। সাক্ষ্য দিয়ে তদন্ত সংস্থা প্রসিকিউশন শাখাকে সহযোগিতা করতে তাঁদেরও এগিয়ে আসা উচিত।
আমরা আশা করি, আইনের শাসনের প্রতি সর্বোচ্চ অঙ্গীকার নিয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার-প্রক্রিয়াকে সর্বাধিক দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে এগিয়ে নেওয়া হবে।
No comments