উচ্চ মূল্যস্ফীতি: রাশিয়ার বহু সুপার মার্কেট 'মহার্ঘ' মাখন তুলে রাখছে তালাবন্ধ ক্যাবিনেটে

আমেরিকানরা গত কয়েক বছর ধরে মূল্যস্ফীতির অভিযোগ করে আসছে। কিন্তু রাশিয়ায় মূল্যবৃদ্ধি তুলনামূলকভাবে উদ্বেগজনক। সরকারি তথ্য অনুসারে মাখন, মাংস এবং পেঁয়াজ এক বছর আগের তুলনায় প্রায় ২৫% বেশি ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে। দোকান থেকে চুরি হয়ে যাচ্ছে মাখন। তাই কিছু সুপারমার্কেট তালাবদ্ধ ক্যাবিনেটে মাখন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতির হার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রত্যাশিত হারের তুলনায় অনেক বেশি। প্রায় ১০ শতাংশ। সামরিক শিল্পে বিলিয়ন বিলিয়ন বিনিয়োগ এবং ইউক্রেনের যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ পুরুষকে পাঠানোর জেরে  মজুরির দ্রুত বৃদ্ধির কারণে মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছে। আসলে  লক্ষ লক্ষ রুশ সেনা মোতায়েন যুদ্ধে। যুদ্ধে সেনামৃত্যুর জন্য যে বিপুল আর্থিক সাহায্য (পুতিনের ডেথোনমিস্ক) দিতে হচ্ছে তার পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রে কর্মী পিছু খরচও বেড়ে যাচ্ছে কর্মীর অপ্রতুলতার জন্য। আর এই পরিস্থিতি চলছে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে। এত দীর্ঘ সময় ধরে এমন অবস্থা চলারই খেসারত এখন দিতে হচ্ছে রুশ অর্থনীতিকে।

বার্লিনের কার্নেগি রাশিয়া ইউরেশিয়া সেন্টারের আলেকজান্দ্রা প্রোকোপেনকো সিএনএনকে বলেন, 'যুদ্ধের কারণে দাম বাড়ছে।  অর্থনীতিতে চাহিদা অনুৎপাদনশীল ব্যয়কে প্রভাবিত করে । মজুরি বৃদ্ধি পায় কারণ নিয়োগকারীদের শ্রমিকদের জোগাড় করতে  হিমশিম খেতে  হয়।”

অন্যান্য অর্থনীতিবিদরা এটাকে উন্নয়ন ছাড়া প্রবৃদ্ধি বলে অভিহিত করেন। জাতীয় আয় বাড়লেও স্বাস্থ্য, শিক্ষা, প্রযুক্তি ও অবকাঠামোর ব্যাপক কোনো উন্নতি হয়নি। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার প্রয়াসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অক্টোবরে তার মূল সুদের হার ২১% এর রেকর্ড সর্বোচ্চে উন্নীত করেছে। তবে রাশিয়ান অর্থনীতিবিদদের একটি প্রভাবশালী গ্রুপ এই সপ্তাহে টেলিগ্রামে বলেছে যে, ‘বর্ধিত মুদ্রাস্ফীতির  চাপ কেবল অব্যাহত থাকবে না বরং বাড়তেও পারে।’

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট  ভ্লাদিমির পুতিন এই মাসের শুরুতে বলেছিলেন, রাশিয়ান অর্থনীতিতে প্রায় ১ মিলিয়ন নতুন শ্রমিকের প্রয়োজন কারণ বেকারত্বের হার মাত্র ২.৪% , কার্যত কোনো বেকারত্ব নেই।

পুতিন রাশিয়ার শ্রম ঘাটতিকে ‘বর্তমানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান বাধা’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। উচ্চ শ্রম ব্যয় এবং সুদের হার কোম্পানিগুলোকে চাপে রেখেছে । রাশিয়ার আলফা ব্যাংক গত মাসে বলেছিল, কোম্পানিগুলি ইতিমধ্যেই কঠিন সময় পার করছে। বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদদের সাথে, আলফা আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হার পরের মাসে ২৩% বৃদ্ধি পাবে। অতিরিক্ত উত্তাপের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ক্রেমলিনের ব্যয়। ২০২৫ সালে সামরিক বাজেট প্রায় এক চতুর্থাংশ বৃদ্ধি পাবে, যা সমস্ত রাষ্ট্রীয় ব্যয়ের এক-তৃতীয়াংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের ৬.৩ শতাংশ। অন্যান্য ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ ব্যয় যোগ করলে এটি ফেডারেল বাজেটের ৪০%।

সূত্র : সিএনএন

mzamin

No comments

Powered by Blogger.