কামরুল ৮ দিনের রিমান্ডে: নাজিরের কার্যালয় ভাঙচুর

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলামকে ৮ দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর  রহমানের আদালত শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। এ সময় কামরুল ইসলামের ছেলে তানজির ইসলাম অদিতকে আদালতের এজলাস কক্ষের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আইনজীবীরা উত্তেজিত হয়ে পড়লে তিনি বের হয়ে যান। এ ছাড়া রিমান্ড শুনানিতে কামরুল ইসলামের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের অভিযোগে ঢাকা মহানগর আদালতের নাজির শাহ মো. মামুনের কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। শুনানি চলাকালে আদালতে কামরুল ইসলাম বলেন, সব দিন তো একরকম যায় না। এই দিন দিন নয়, সামনে ভালো দিন আসবে।

এদিন সকাল ৯টায় কামরুল ইসলামকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর নিউমার্কেট থানার ব্যবসায়ী আব্দুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা জোনাল টিমের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আরিফ। আবেদনে বলা হয়, কামরুল ইসলাম আইন প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বহু নিরপরাধ মানুষকে জেল-জুলুমের মাধ্যমে নির্যাতন করতেন। এই আসামি ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যতম কলঙ্কিত চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। তিনি ফ্যাসিস্ট সরকারের বহু অপকর্মের ঘনিষ্ঠ সহচর বলে দেশে ও বিদেশে জনশ্রুতি আছে। তার গ্রেপ্তারে এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে শান্তি ফিরে এসেছে।

রিমান্ড আবেদনে উল্লেখ করা হয়, কামরুল ইসলামসহ অন্য আসামিদের নির্দেশে গত ১৯শে জুলাই বিকালে নিউমার্কেট থানাধীন নীলক্ষেত এলাকায় মাহফুজুর রহমান, নাসির উদ্দিন, শামীম উসমান, মো. আবু মূসা, মাঈনুদ্দিন, শাহাদাত হোসেন, আবির হোসেনসহ অনেক নিরস্ত্র ছাত্র-জনতা ও সাধারণ পথচারী আহত ও চিরতরে পঙ্গু হয়। আব্দুল ওয়াদুদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। প্রাথমিক তদন্তে এ আসামি মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। তিনি দেশ ছেড়ে বিদেশে পলায়নের বিভিন্ন চেষ্টা অব্যাহত রাখেন। তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের অতি গুরুত্বপূর্ণ একজন দলীয় পলিসি মেকার ছিলেন।

শুনানি চলাকালে আদালতে কামরুল ইসলাম বলেন, সব দিন তো একরকম যায় না। এই দিন দিন নয়, সামনে ভালো দিন আসবে। নিউমার্কেট এলাকা আমার অধীনে না। ওই এলাকার এমপি আমি নিজেও না। এ মামলায় আমাকে ৫৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে। আমার নামটি হয়তো শেষ মুহূর্তে ভুলে এজাহারে লিখে দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ কামরুল ইসলামের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমানের আদালত তার ৮ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। এর আগে গত সোমবার রাতে কামরুল ইসলামকে রাজধানীর উত্তরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মহানগর নাজিরের কার্যালয় ভাঙচুর: রিমান্ড শুনানিতে সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলামের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের অভিযোগে ঢাকা মহানগর আদালতের নাজির শাহ মো. মামুনের কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। গতকাল বেলা ১টার পর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের দ্বিতীয়তলায় অবস্থিত এই কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এরপর ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি প্রসিকিউশন বিভাগ ও কোতোয়ালি থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, নাজির শাহ মামুনের অনিয়মের বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেনকে অবহিত করেন ক্ষুব্ধ আইনজীবীরা। বিচারক তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান। এর আগে ঢাকা আইনজীবী সমিতির আইনজীবী মারজিয়া হিরা নাজির মামুনের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর অভিযোগ দেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সকালে কামরুল ইসলামের রিমান্ড শুনানিতে তার ছেলে ডা. তানজির ইসলাম অদিত ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমানের আদালতের লাল সালুর ভেতরে দাঁড়িয়েছিলেন। তখন কামরুল ইসলামকে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করেন মহানগর আদালতের নাজির শাহ মো. মামুন। আসামির ছেলেকে আদালতের ভেতরে প্রবেশে সহযোগিতা করেন। নাজির গত ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে আসামি কামরুল ইসলামের নির্বাচন পরিচালনায় সহযোগিতা করে।

এদিন দুপুর ১টা ১০ মিনিটের দিকে কিছু ক্ষুব্ধ আইনজীবী এসে নাজির মামুনের অফিসে ভাঙচুর করে। এই বিষয়ে নাজির শাহ্‌ মো. মামুন সাংবাদিকদের বলেন, মহানগর আদালতে কামরুল ইসলাম যখন আসতেন তখন আমার অফিসে বসতেন। এইভাবে তার সঙ্গে আমার পরিচয়। আজকে সকালে একটি কাজে সিএমএম আদালতে যাই। হঠাৎ সাবেক মন্ত্রী কামরুলের সঙ্গে দেখা হয়। তখন তিনি আমাকে ডেকে বলেন, এই নাজির কেমন আছো? আমি কাজ শেষে চলে এসেছি। কামরুলের ইসলামের ছেলেকে নাজির মামুন চিনে না বলে জানান।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.