আমার নামের আগে কেউ দেশনায়ক, রাষ্ট্রনায়ক ব্যবহার করবেন না -তারেক রহমান

জনগণকে সচেতন করে যেকোনো মূল্যে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, ষড়যন্ত্র এখনো থেমে যায়নি। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে  বোঝা যাচ্ছে- দেশের কোথাও কিছু একটা ষড়যন্ত্র চলছে। তাই জনগণকে সচেতন করতে হবে। জনগণকে সঙ্গে রাখতে হবে, থাকতে হবে। একই সঙ্গে দেশ ও জনগণকে নিয়ে আমাদের যে লক্ষ্য, সেই ৩১ দফার প্রত্যেকটি কথা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আমাদেরকে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনপ্রতিনিধিরা জানবে যে তাদেরকে জনগণের কাছে ফিরে যেতে হবে। সেটি ভোটের জন্য হোক কিংবা জবাবদিহিতার জন্য হোক।

মঙ্গলবার রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে বিএনপি’র প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটির আয়োজিত ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’- শীর্ষক ঢাকাবিভাগীয় কর্মশালা লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি ঘোষিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে ৩১ দফা নিয়ে ঢাকা বিভাগের প্রত্যেকটি মহানগর, জেলা, উপজেলা মূল দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা কর্মশালায় অংশ নেন। বিএনপি’র প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটির নেতারা দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দেন। এ সময় রাষ্ট্রকাঠামো সংস্কার নিয়ে বিভিন্ন  প্রশ্নের উত্তর দেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও প্রশিক্ষকরা। এর আগে সকালে কর্মশালা উদ্বোধন করেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।

তারেক রহমান বলেন, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দেখেছি, অনেকেই অনেক সংস্কারের কথা বলছেন। দেশ ও জাতি নিয়ে বিএনপি দুই বছর আগে ২৭ দফা নিয়ে প্রস্তাবনা দিয়েছে। বিএনপি’র দেয়া ৩১ দফা আমাদেরকে (নেতাকর্মী) মাঠে নিয়ে যেতে হবে। শুধু ঘরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। দফায় উল্লেখ থাকা বিষয়গুলো প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে। বিএনপি’র মূল দলের নেতৃত্বে অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন মিলে ভাগে ভাগে গ্রামে থেকে ইউনিয়নে ছোট ছোট উঠান বৈঠকের প্রস্তুতিও নিতে হবে।

তিনি বলেন, আগামী দিনে বাংলাদেশে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে, আমরা যদি দল ও নেতাকর্মীদের ঐক্য বজায় রাখতে পারি, জনগণের চাহিদা অনুযায়ী চলতে পারি তাহলে বিএনপি সরকার গঠন করবে। এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে নেতাকর্মীদের নেতৃত্বের উপর। অতীতে যেভাবে আমরা ১৯ দফার আলোকে দেশ পরিচালনা করেছি, এর সঙ্গে আরও কিছু ধারা যোগ করে ৩১ দফা দিয়েছি। যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে আমরা দেশ পরিচালনা করতে চাই। প্রথমে ছিল ২৭ দফা, পরবর্তীতে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে যেসব দল আমাদের সঙ্গে শরিক ছিল তাদের মতামতের ভিত্তিতে ৩১ দফা গঠিত হয়েছে। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বাংলাদেশে যতগুলো দল আছে তাদের সম্মিলিত চিন্তার ফসলই হচ্ছে ৩১ দফা।

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি যদি না হয় তাহলে যে সংস্কারই করি না কেন কোনোটি কাজে লাগবে না। রাজনৈতিক মুক্তি হচ্ছে জনগণের কাছে জবাবদিহি। যার যা ইচ্ছা করে যাবে, সেটি হবে না। সরকারি দল, বিরোধী দল, এমপি, মন্ত্রী যেই হোক, জনগণের কাছে এর জবাব দিতে হবে। আর এটি নিশ্চিত করতে হলে ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ভোটের মাধ্যমেই জবাবদিহিতা তৈরি হবে। যার জন্য আমাদের হাজারো সহকর্মী গুম, খুন হয়েছেন। আমরা যুদ্ধ করেছি ভোটের অধিকার, কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। কাজেই যে কোনো মূল্যে এই অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, জনগণকে সচেতন করার মাধ্যমে।

তিনি বলেন, একটি রাজনীতি রুগ্‌ণ হলে অর্থনীতি রুগ্‌ণ হয়। রাজনীতি ও অর্থনীতি রুগ্‌ণ হলে, স্বাস্থ্য, শিক্ষা সব ব্যবস্থাই রুগ্‌ণ হবে। মানুষ কোনো সুফল পাবে না। কাজেই প্রথম কাজ হচ্ছে- দেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, জবাবদিহিতাকে প্রতিষ্ঠিত করা। স্বৈরাচারের সময়ে দেশে কোনো জবাবদিহিতা ছিল না, যার কারণে মানুষ গুম-খুন হয়েছে, নিশিরাতে ভোট হয়েছে, ডামি নির্বাচন হয়েছে। জবাবদিহিতা ছিল না বলেই প্রশাসনে ও বিচার বিভাগে অবস্থার অবনতি হয়েছে, দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এসব কিছু আমাদেরকে ঠিক করতে হলে অবশ্যই জবাবদিহিতাকে আমাদের প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। সেটি সম্ভব সঠিক ভোট প্রয়োগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।

বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, একজন সহকর্মী হিসেবে আমার অনুরোধ রইলো, আপনাদের নেতা হিসেবে দয়া করে আমার নামের সঙ্গে আজকের পর থেকে ‘দেশনায়ক, ‘রাষ্ট্রনায়ক, ব্যবহার করবেন না। এর আগে প্রশ্নোত্তর পর্বে তারেক রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী দু’বারের বেশি হতে পারবেন না, তবে সংসদ সদস্যের মেয়াদ নির্ধারণের বিষয়টি জনগণের ওপর নির্ভরশীল। যদি জনগণ কাউকে বিশ্বাস করে ও ভালোবাসে তাহলে তিনি বারবার সংসদ সদস্য হতে পারবেন। না হলে তা সম্ভব হবে না।

বিএনপি ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুলের সভাপতিত্বে কর্মশালায় সঞ্চালনা করেন- প্রশিক্ষণ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য সচিব এবিএম মোশাররফ হোসেন। ৩১ দফা নিয়ে দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। কমিটির সদস্য ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ প্রমুখ।

এর আগে সকালে উদ্বোধনী বক্তব্যে মঈন খান বলেন, আজকে আমরা দেখছি, যারা বিখ্যাত লোক, বড় বড় টেলিভিশনে বক্তব্য দিচ্ছেন, বিগত বছরগুলোতে যখন বিএনপি’র নেতাকর্মীরা পুলিশ, এসবি, ডিবি’র অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়েছিল, যাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে এক লাখ, ৬০ হাজার আসামি করা হয়েছে। রাতের অন্ধকারে ধান ক্ষেত দিয়ে পালিয়ে যেতে হতো তাদের কথা ভাবুন। আজকে যারা সংস্কারের কথা বলেছেন, তাদের অনেককে আন্দোলন ও সংগ্রামে দেখি নাই। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের বিপ্লবের মূল সত্য, এই সত্যকে অস্বীকার করতে পারবে না।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.