হংকংয়ে গণতন্ত্রপন্থী শীর্ষ নেতাদের কারাদণ্ড দিল আদালত

চীনের ন্যাশনাল সিকিউরিটি ল (এনএসএল) লঙ্ঘনের অপরাধে এক বিতর্কিত রায়ের মাধ্যমে হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী শীর্ষ নেতাদের কারাদণ্ড দিয়েছে সেখানের একটি আদালত। সাজাপ্রাপ্ত নেতারা হচ্ছেন বেনি তাই এবং জোশুয়া ওং। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে তারা স্থানীয় নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থী বাছাইয়ে বিদ্রোহী দলের কর্মী এবং আইন প্রণেতাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কথিত এই অপরাধে বেনি তাইকে ১০ বছর এবং জোশুয়া ওংকে চার বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এ খবর দিয়ে অনলাইন বিবিসি বলছে, বিক্ষোভে অংশ নেয়া গণতন্ত্রপন্থী নেতাদের বিরুদ্ধে চীনের চাপিয়ে দেয়া এনএসএল লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযুক্তদের মাত্র দুই জনকে খালাস দিয়েছে আদালত। ২০১৯ সালে হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভ দমনে এনএসএল আইন প্রণয়ন করে চীন।

মূলত হংকংয়ে নিজেদের শাসন বলবৎ করতেই এই আইন করেছে চীন। তবে চীনের চাপিয়ে দেয়া এই আইন থেকে মুক্ত হয়ে নিজেদের স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলন করছে গণতন্ত্রকামী নেতারা। তাদের বিক্ষোভে হংকংয়ের রাস্তায় নেমে আসে সেখানের কয়েক হাজার জনগণ। এর মধ্য দিয়ে হংকংয়ের জনগণের মধ্যে গণতান্ত্রিক অভিলাষ ফুটে উঠেছে।

আদালতের এই রায়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পর্যবেক্ষকরা। তারা বলছেন, এনএসএল আইনের ভিত্তিতে এই বিচারিক ফলাফল হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলন এবং আইনের শাসনকে দুর্বল করে তুলেছে। অন্যদিকে আইনটির মাধ্যমে চীন এই শহরে তাদের নিয়ন্ত্রণ মজবুত করেছে। গণতন্ত্রকামী নেতাদের সাজা দেয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া। যুক্তরাষ্ট্র বলছে এই রায় ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া বলছে হংকংয়ের গণতন্ত্রকামী জনগণের বিরুদ্ধে এমন বিচারিক কার্যক্রমে ‘কঠিনভাবে আপত্তিকর’। যদিও বেইজিংয়ের যুক্তি হচ্ছে হংকংয়ে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতেই তারা জাতীয় নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করেছে।
তবে বিশ্লেষকদের ধারণা, নিজেদের শাসন মজবুত করতেই এমন আইন করেছে চীন। বেইজিংয়ের দাবি জাতীয় নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন করার প্রচেষ্টায় জড়িত ব্যক্তিদের জন্য এই বিচার কঠোর হুঁশিয়ারি হিসেবে কাজ করবে। গণতন্ত্রপন্থীদের বিরুদ্ধে ন্যাশনাল সিকিউরিটি ল লঙ্ঘনের অভিযোগে যে মামলা হয়েছে তা অনেকের মধ্যেই বেশ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। তারা রায়ের সময় আদালতের বাইরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। মঙ্গলবার অভিযুক্তদের চার থেকে দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।

বেনি তাই সাবেক আইন বিশেষজ্ঞ। গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বিপ্লবে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগে তাকে দীর্ঘতম সাজা দেয়া হয়েছে। জোশুয়া ওং দোষ স্বীকার করার পর তার সাজা কমিয়ে চার বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য অভিযুক্তদের দাবি হচ্ছে বিচারকরা ওংকে একজন খারাপ মানুষ হিসেবেই চিহ্নিত করেছে। বিক্ষোভ দমনে ব্যাপক ধরপাকড় চালিয়েছে হংকংয়ের স্থানীয় প্রশাসন। জোশুয়া ওংকে আগেই গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছিল।

উল্লেখ্য, হংকং চীনের আধা স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। আগে অঞ্চলটি যুক্তরাজ্যের একটি উপনিবেশ ছিল। ১৯৯৭ সালে চুক্তির মাধ্যমে হংকংকে চীনের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেই চুক্তিতে হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। যার দাবিতেই বিক্ষোভ শুরু করেছেন গণতন্ত্রপন্থী এই নেতারা।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.